উপন্যাস ” অমর প্রেম ” পর্বঃ ৭
বিথি ও জাহিদ ফুটবল মাঠের গোল রক্ষক হিসেবে দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে রইল । আর স্বয়ন সাথী মাঠের কেন্দ্রে যাচ্ছে সেন্টার করতে । স্বল্প ক্ষণ পর দু জন সামনা সামনি হল । দু জনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেউ কারো চোখে তাঁকাতে সাহস পাচ্ছে না । স্বয়ন ভাবল মেয়ে মানুষের অধিক লজ্জা তাই ওকে আগেই বলতে হবে । অন্য দিকে তাঁকিয় জিজ্ঞাসা করল ,
কেন ডেকেছেন ? স্বয়ন জিজ্ঞাসা করল ।
কাকে বলছেন ?
কেন আপনাকে ।
তাহলে আমার দিকে তাঁকান । তবেই বুঝব আমার সাথে কথা বলছেন ।
স্বয়ন তাই করল লাজ ভর্তি চোখে তাঁকিয়ে বলল ,
এবার বলুন ।
আচ্ছা , আমি কি আপনার বড় ?
না ।
তাহলে আপনি করে বলছেন কেন ? আপনি মেধাবী ছাত্র নিশ্চই জানেন ছোটদের তুমি করে বলতে হয় ।
তা ঠিক ।
তাহলে তুমি করে বলেন ।
আচ্ছা , কি জন্য ডেকেছ বলো ?
সাথী একটু মজা করে বলল ,
এমনিতেই ।
সরল সোজা ছেলেটি কোন অভিমান না বুঝে বলল ,
আমি তাহলে আসি । এ বলেই পা বাড়াল ।
সাথী হেসে হেসে বলল ,
আপনার মত বোকা ও সোজা ছেলে আর নেই ।
স্বয়ন দাঁড়াল এবং বলল ,
কেন ?
যে জন্য ডেকেছি সেটা না শুনেই চলে যাচ্ছেন ।
এবার বলো ।
আচ্ছা , কার সাথে আপনার সম্পর্ক আছে ?
কিসের সম্পর্ক ?
সাথী বুঝতে পারল স্বয়ন বুঝেনি ,তাই সহজ করে বলল –
আপনি কোন মেয়েকে ভালবাসেন ?
না , স্বয়ন উত্তর দিল ।
আপনার মনে কি ভালবাসা নেই ?
সব মানুষের যদি থাকে তাহলে আমারও আছে ।
স্বয়নের সঙ্গে কারো সম্পর্ক নেই জেনে ভীষণ খুশি হলো । তাই অনতিবিলম্বে বলল ,
আপনার কাছে একটা কিছু চাইব , দিবেন তো ?
কি দিতে হবে ?
বলেন দিবেন কি না ?
থাকলে দেব ।
কসম করে বলেন ।
খোদার কসম করে বলছি ,
আমার কাছে থাকলে অবশ্যই দেব ।
সাথী কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ,
তোমার ভালবাসা চাই ।
আমি তোমাকে …..।
শেষ শব্দটি বলার সুযোগ দিলনা স্বয়ন ।
একটা ধমক দিয়ে বলল ,
চুপ করো আর একটা কথাও বলবে না ।
তুমি হয়তো জান না আমি সামান্য এক কৃষকের ছেলে আর তুমি বড় লোকের মেয়ে ।
সাথী বলল ,
বুঝতে চেষ্টা করো , বড় লোক কি গায়ে লেখা আছে ?
তুমি মাফ করে দাও , আমি পারব না ।
তাহলে কসম করলে কেন ?
তুমি বেঈমান মুনাফিক ।
ক্ষমা করে দিও , সরি ।
এ বলেই স্বয়ন চলে গেল ।
সাথী উচ্চস্বরে বলল ,
আমি সারা জীবন তোমার অপেক্ষায় থাকব , আমার প্রেমের কসম ।
স্বয়ন কোন উত্তর না দিয়ে দ্রুত চলে গেল ।
জাহিদ বলল , ছি ..ছি… তুই এটা কি করলি ?
মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে তোর একটুও কষ্ট হল না ?
সে তুই বুঝবি না ওর আর আমার মাঝে অনেক ফারাক ।
প্রেম অন্ধ এর মাঝে ফারাকের কোন মূল্য নাই ।
প্রকৃতপক্ষে যারা টাকা-পয়সা , অর্থ-সম্পদ , বংশ মর্যাদা ও ক্ষমতার ব্যবধান দেখায় তাদের মনুষ্যত্ব নেই ।
পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবি তো আল্লাহর । কিছু দিনের জন্য মানুষ হয় এর পাহাড়াদার । প্রেম টাকা পয়সা সাদা কালো সুন্দর কুত্সিত চেনে না শুধু চেনে মন । জাহিদ সুন্দরভাবে বুঝাল । আজ আর ক্লাস করল না দু জনে বাড়ি চলে গেল ।
এদিকে সাথী ফুকরে ফুকরে কাঁদছে শব্দ হচ্ছে না কিন্তু চোখ থেকে আষাঢ়েড় বৃষ্টি ঝড়ছে । মনে জ্বলছে না পাওয়ার যাতনার অনল । বিথি বুঝিয়ে বলল ,
কাঁদিস না , এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না , নিরাশ হবে না ।
ধৈর্য্য ধরো ,একদিন হয়তো তোমাকে বুঝবে । আর একটা কথা মনে রাখো , ধৈর্য্যহীন মানুষ সফল হতে পারে না । বিথি বিভিন্নভাবে বুঝাল আর স্বহস্তে চোখের লোনা জল মুছে দিয়ে বলল –
ক্লাস করবে নাকি বাড়ি যাবে ?
বাড়ি যাব ।
তাহলে চল ।
বাড়িতে ফিরে স্বয়ন জ্বরে আক্রান্ত হলো । অসুস্থতার ফলে স্কুল যাওয়া হচ্ছে না স্বয়নের ।
মা সর্বক্ষণ ওর সেবা যত্নে ব্যস্ত পাশে থাকে যাতে কোন সমস্যা না হয় । শুধু স্বয়নের মা নয় পৃথিবীর সব মা সন্তানের সবচেয়ে আপনজন । আমার মতে প্রথম আপনজন মা-বাবা দ্বিতীয় স্বামী-স্ত্রী আর তৃতীয় হলো সন্তান ।
এদিকে সাথী দৈনিক স্কুলে আসছে কিন্তু স্বয়নের দেখা মিলছে না । দুঃশ্চিন্তায় সাথী ঠিক মত খায় না ঘুম না । এ অবস্থা দেখে বিথি বললো চিন্তা করিস না রোকছেনা আপাকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারব ।
রোকছানা আপা কে ?
স্বয়ন ভাইয়ার ক্লাসমেট তাছাড়া ওদের বাড়ি একই গ্রামে ।
তাহলে চল জিজ্ঞাসা করে দেখি ।
কমনরুমে গিয়ে রোকছানার দেখা পেল । বিথি সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করল ,
স্বয়ন ভাইয়ের বাড়ি নাকি আপনাদের ওদিকে ?
হ্যাঁ ।
ওনার ব্যাপারে কিছু জানেন ?
না তো , কি হয়েছে ?
জানি না , ওনি তিন দিন ধরে স্কুলে আসে না ।
রোকছানা বলল, ঠিক তো ! আমিও ক্লাসে দেখিনা ।
সাথী অনুরোধ করে বলল , আপা আমার উপকার্থে স্বয়নের সংবাদ নিয়ে আসবেন ?
রোকছানা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল ,
আগামীকাল এসো ওদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেব ।
সাথী ও বিথি সমস্বরে বলল ,
ঠিক আছে ।