Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

প্রিয়ন্তী-১২ (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙ্গা তরুণী)

: | : ২৪/১০/২০১৩

Priontiরাজশাহী সাহেব বাজার মোড় থেকে একটা রাস্তা ডান দিকে চলে গেছে। সেই রাস্তার পাশে হাতের ডানে এবং বাঁয়ে কয়েকটা আবাসিক হোটেল আছে। ভালো উন্নত মানের কি না তা সুশান্ত কিংবা প্রিয়ন্তী কেউ জানে না কারণ কেউ কোনদিন আবাসিক হোটেলে থাকেনি।
একটা আবাসিক হোটেলের সামনে রিক্সা এসে দাঁড়ালো। দুজনে রিক্সা থেকে নেমে ভিতরে ঢুকলো।
একটা হাতল চেয়ারে একজন মধ্যবয়সী লোক বসে আছে, সম্ভবতঃ তিনিই ম্যানেজার। সুশান্ত জিজ্ঞেস করল, দাদা একটা ডাবল রুম হবে।
ম্যানেজার গম্ভীর কণ্ঠেবলল, কে থাকবে?
আমরা।
ম্যানেজার সুশান্তকে ইঙ্গিত করে বলল, উনি আপনার কে হয়?
আমার ওয়াইফ।
ম্যানেজার তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আপনার ওয়াইফ?
সুশান্ত বলল, হ্যাঁ।
দেখুন আমরা সাধারণত ফ্যামিলি ভাড়া দিই না। আজ বৃহষ্পতিবার অনেক রুম খালি, আচ্ছা ঠিক আছে, তিন’শ টাকা ভাড়া পড়বে।
সুশান্ত বলল, ঠিক আছে।
ম্যানেজার রেজিস্টার খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বলল, নাম ঠিকানা লিখুন।
সুশান্ত প্রথমে তার নাম, ঠিকানা লিখল তারপর নিচের সারিতে প্রিয়ন্তী ঠিকানা লিখল।
দু’জনের নাম, ঠিকানা লেখা শেষে ম্যানেজার খাতাটা তার দিকে নিয়ে সুশান্তকে ইঙ্গিত করে বলল, আপনার নাম সুশান্ত দত্ত তারপর প্রিয়ন্তীকে ইঙ্গিত করে বলল, আপনার নাম প্রিয়ন্তী চক্রবর্তী।
প্রিয়ন্তী মৃদু কণ্ঠে বলল, হ্যাঁ।
ম্যানেজার আপন মনে ফিস্ফিস করে বলল, হিন্দু বউ অথচ শাঁখা সিঁদুর নেই। কেমন যেন রহস্যজনক মনে হচ্ছে। যাক আমার টাকা পেলেই হলো।
ম্যানেজার কলিং বেল টিপে একজন বয়কে ডাক দিয়ে বলল, এই কুদ্দুস তিন’শ চার নাম্বাররুমটার বেড সিটটা বদলে দে তো।
একজন বয় এসে ম্যানেজারের কাছ থেকে একটা চাবি নিয়ে বলল, আসুন।
দু’জনে বয়-এর পিছনে পিছনে উপরে উঠে গেল।
বয় তিন’শ চার নাম্বাররুমটা খুলে বেড সিটটা পরিবর্তন করে দিয়ে বলল, আমার নাম কুদ্দুস, আমি এই ফ্লোরে ডিউটি করি, কোনকিছু দরকার হলে এই সুইচটা টিপ দিবেন বলে সে কলিং বেল-এর সুইচটা দেখিয়ে দিল।
আচ্ছা ঠিক আছে, সুশান্ত বলল।
কুদ্দুস চলে গেল।
সুশান্ত দরজা বন্ধ করল। প্রিয়ন্তী কিছু বলল না।
রুমে বড় আকারের একটা চৌকি। পাশাপাশি দু’টা বালিশ ছড়ানো আছে। টি.ভি স্ট্যাণ্ডে একটা ছোট ১৪ ইঞ্চি রঙীন টি.ভি। একটা কাঠের আলমারীর ভিতরে কয়েকটা হ্যাঙ্গার ঝুলানো আছে। সুশান্ত টি.ভি চালু করে দিল। বাথ রুম থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এলো। ততক্ষণে প্রিয়ন্তী ব্যাগ থেকে কাপড়-চোপড় বের করে কাঠের আলমারীতে সাজিয়েছে।
সুশান্ত বাথ রুম থেকে বের হয়ে আসার পর প্রিয়ন্তী বাথ রুমে ঢুকল।
সুশান্ত একবার মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকাল, রাত দশটা বাজে।
দু’জনে হোটেলে আসার আগে ভাত খেয়ে এসেছে। সুশান্ত প্রিয়ন্তী বলে আস্তে ডাক দিল।
প্রিয়ন্তী বের হয়ে এলো, কিছু বলবে?
তোর কি ক্ষিদে লেগেছে কিছু আনতে বলব?
এখনো ক্ষিদে লাগেনি, তবে কিছু এনে রাখলে ভালো হতো।
সুশান্ত কলিং বেল-এ টিপ দিল।
কুদ্দুস চলে এলো, স্যার।
সুশান্ত একটা এক’শ টাকার নোট দিয়ে বলল, নিচ থেকে এক হালি কমলা আর হাফ কেজি আপেল নিয়ে এসো।
কুদ্দুস চলে গেল।
সুশান্ত দরজা বন্ধ করে দিয়ে প্রিয়ন্তীর কাঁধে হাত রাখল। প্রিয়ন্তী সুশান্তর চোখে চোখ রাখল, কী?
আজ বোধ হয় শেষ হলো অপেক্ষার দিন।
প্রিয়ন্তী হাসল, এখনো শেষ হয়নি কুদ্দুস আরো একবার আসবে।
দু’জনে হাসল।
কিছুক্ষণ পর কুদ্দুস আপেল আর কমলা দিয়ে গেল।
সুশান্ত দরজা বন্ধ করে দিয়ে লাইটটা অফ করে দিল।
প্রিয়ন্তী মৃদু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, লাইটটা অফ করলি কেন?
এমনি।
অন্ততঃ ড্রিম লাইটটা দাও।
সুশান্ত ড্রিম লাইটটা অন করল।
ড্রিম লাইটের সামান্য লাল আলো প্রিয়ন্তীর মুখের ওপর পড়েছে। তার ফর্সা মুখ যেন জবা ফুলের মতো রক্তিম আকার ধারণ করেছে। সুশান্ত কিছুক্ষণ প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
প্রিয়ন্তী জিজ্ঞেস করল, কী দেখছিস?
কী দেখছিস না, কী দেখছ। কারণ আজ থেকে আমি তোমার হ্যাজবেণ্ড।
হ্যাঁ তুমি ঠিকই বলেছ।
তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
তাই নাকি?
হ্যাঁ।
আরো সুন্দর লাগতো যদি আমাদের ফুলশয্যার রাতে সমস্ত বিছানা ফুলে ফুলে ভরা থাকতো। অথচ দেখো আমাদের ফুলশয্যার রাতে একটা ফুলের গন্ধও নেই।
তাহলে ফুলশয্যার রাত বলো না, মধু চন্দ্রিমার রাত বলো।
না আজ আকাশে চাঁদও নেই, আজ আমাবশ্যার রাত।
সুশান্ত তুমি আজ খুব বেশি কথা বলছ, কোন কিছু না থাকলেও আমি তো আছি।
হ্যাঁ, আসলে তুমিই তো আমার কাছে সব, তুমি আছ আর আমার কিছু চাই না।
প্রিয়ন্তী রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, সুশান্ত তুমি তো জানো আমি সবাইকে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে তোমার সঙ্গে চলে এসেছি, আমাকে কোনদিন কষ্ট দিবে না তো?
আমিও তো সবাইকে ছেড়ে এসেছি প্রিয়ন্তী, তোমার যেমন পৃথিবীতে আমি ছাড়া কেউ নেই তেমনি আমারো তো তুমি ছাড়া কেউ নেই। পৃথিবীতে আমরা দুজ’নে শুধু দু’জনার।
প্রিয়ন্তী কামিজ সালোয়ার পরে ছিল, তার মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা বানানো ছিল। এবার সুশান্ত ঘোমটা সরিয়ে প্রিয়ন্তীর কপালে চুমু খেলো।
এমন সময় দরজা নক করার শব্দ।
সুশান্ত জিজ্ঞেস করল, কে?
দরজা খুলে দিন, আমরা পুলিশ।
সুশান্তর বুক কেঁপে উঠল। তার হৃৎপিণ্ড দ্রুত গতিতে চলতে লাগল। সে চাপাস্বরেপ্রিয়ন্তীকে জিজ্ঞেস করল, প্রিয়ন্তী এখন কী হবে?
প্রিয়ন্তী বলল, কী হবে? আমরা সত্য কথা বলব।
আবার দরজা নক করার শব্দ।
সুশান্ত দরজা খুলে দিল।
দরজা খুলে দিতেই একজন পুলিশ অফিসার রুমে ঢুকল আর কয়েকজন কন্সটেবল দরজায় দাঁড়িয়ে রইল।
পুলিশ অফিসার জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম কী?
সুশান্ত দত্ত।
কী করো?
লেখাপড়া।
পুলিশ প্রিয়ন্তীর দিকে ইঙ্গিত করল, ও তোমার কে হয়?
ওয়াইফ।
তুমি একটু আমার সঙ্গে এসো, বলে পুলিশ অফিসার তাকে পাশের একটা রুমে নিয়ে গেল।
তোমার শ্বশুরবাড়ি কোথায়?
দিনাজপুর।
তোমার শ্বশুরের নাম, ঠিকানা আর মোবাইল নাম্বারদাও।
সুশান্ত চুপ করে রইল।
চুপ করে আছ কেন? তারমানে শ্বশুরের নাম, ঠিকানা পর্যন্ত জানো না। আর বলছ ও তোমার ওয়াইফ হয়।
সুশান্ত বিনয়ের সঙ্গে বলল, স্যার আমাদের আজকেই বিয়ে হয়েছে তাই আমার সবকিছু জানা নেই।
কোথায় বিয়ে হলো?
কোর্টে, এ্যাফিডেভিট করে।
এ্যাফিডেভিট সঙ্গে আছে?
না।
তুমি এ ঘরে বসো।
প্রিয়ন্তীর হৃৎপিণ্ড তখন দ্রুত গতিতে চলতে শুরু করেছে। তার মনে হাজার চিন্তা পুলিশ অফিসার সুশান্তকে কী জিজ্ঞেস করছে, ঠিকমতো বলতে না পারলে কী হবে? পুলিশ যদি তাদের থানায় ধরে নিয়ে যায় তবে মহাকেলেংকারী হবে। আত্মীয়-স্বজনদেরকাছে তার মুখ দেখানো কঠিন হবে। ক্ষণিক আগেই ড্রিম লাইটের লাল বাতি তার যে মুখকে রাঙ্গিয়ে তুলেছিল এখন উজ্জ্বল আলোতেও যেন তার সেই মুখ কালো মেঘে ঢেকে গেছে।
পুলিশ অফিসার এবার ঢুকল প্রিয়ন্তীর রুমে, দরজায় কয়েকজন কন্সটেবল দাঁড়িয়ে রইল।
ঢুকেই গম্ভীর কণ্ঠেবলল, তোমার নাম কী?
প্রিয়ন্তী চক্রবর্তী।
সুশান্ত তোমার কে হয়?
হ্যাজবেণ্ড।
তুমি একজন হিন্দু বিবাহিতা মেয়ে তোমার শাঁখা-সিঁদুর কোথায়?
প্রিয়ন্তী থতমত খেয়ে গেল, স্যার অনেকদিন আগে আমাদের ঠাকুরের কাছে বিয়ে হয়েছে তখন একবার সিঁদুর পরেছিলাম। তারপর থেকে আর সিঁদুর পরিনা।
কিন্তু সুশান্ত যে বলল, তোমাদের আজকেই কোর্টে এ্যাফিডেভিট করে বিয়ে হয়েছে?
ও ঠিক বলেছে স্যার।
পুলিশ অফিসার মাথা বাঁকিয়ে বলল, উহুঁ, তোমাদের কথা-বার্তা মিলছে না। কোর্টের এ্যাফিডেভিট আছে?
এ্যাফিডেভিট সঙ্গে নেই স্যার।
পুলিশ অফিসার মুহূর্তেই রেগে গেল, তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গেল। সে প্রচণ্ড রেগে বলল, এই দু’জনকে হ্যাণ্ডকাপ লাগা, থানায় নিয়ে চল।
প্রিয়ন্তী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, স্যার আমাদের থানায় নিয়ে যাবেন না, বাবা জানলে হার্ট এ্যাটাক করবে।
কেন? তোমরা যদি বিয়ে করেছ তবে বাবা হার্ট এ্যাটাক করবে কেন? এই নিয়ে চল।
পুলিশ দু’জনকে হ্যাণ্ডকাপ লাগিয়ে পিক আপ ভ্যানে তুলল।
চলবে…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top