Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

কেবিন নাম্বার ৪০৩

: | : ২৬/১০/২০১৩

প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে মেয়েটিকে ভর্তি করানো হলো হাসপাতালে। কিছু ভয় দ্বিধা, উত্তেজনা অবশেষে কিছু সুখ পাওয়ার আশায় বার বার শিউরে ওঠতে থাকলো শরীর।
বেলা তিনটা কেবিনের সাদা পারমেট করা বিছানায় শুয়ে কত কল্পনা আসে মনের মনিকোঠায়। সন্ধ্যা থেকে ব্যাথাটা বাড়তে থাকে। মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হলো লেবার রুমে যেখানে আরো অনেক মেয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রিয় আত্মজা দেখার জন্য। ডাক্তারের পরামর্শ মত সিটে শুয়ে দেয়া হলো মেয়েটিকে। তারপর সিরিঞ্জ, সুইচ, ইনজেকশন, সেলাইন ঔষুধের ঝাঁঝালো গন্ধ। ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো সেই সাথে মেয়েটি কুঁকড়ে উচ্চস্বরে কাঁদতে লাগলো। ডাক্তার বলে এই ব্যাথায় হবে না আরো অনেক ব্যাথা লাগবে! জীবনে প্রথম মা হতে যাওয়া মেয়েটি ডাক্তারের কথায় চমকিৎ হলো। এর থেকে আরো বেশী ব্যাথা কেমন!
জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে পুরো একদিন একরাত পার হয়ে গেল। না কোন ফল পাওয়া গেল না। অবশেষে ডাক্তারের সিদ্ধান্ত মেয়েটিকে অপারেশন করতে হবে না হয় দুটো জীবনেই…! সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। মেয়েটিও কাঁদলো। মেয়েটির মনের সান্তনা ‘আমি যদিও মরে যাই আমার আতœজা যেন বেঁচে থাকে’। আর চোখ যেন চারদিকে খুঁজছে প্রিয় মানুষটিকে। মানুষটি হয়তো ব্যস্ত অথবা কাঁদছে কোন এক কোণে গিয়ে।
রমজান মাস পবিত্র দিন শুক্রবার বেলা ১২টা নিয়ে যাওয়া হলো অপারেশর থিয়েটার রুমে। মেয়েটি দেখে ডাক্তারের খুব মায়া হলো চোখের কোণে জমে থাকা জল মুছে দিলো সেবিকায়। একজন সেবিকা এসে মেয়েটির জামা ছাড়িয়ে গাউন পরিয়ে দিলো। শুয়ে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করানো হলো মেয়েটিকে। মনে তখন নানা শঙ্কা, ভয় আর যদি ফিরে আসা না হয় কষ্টতো মনে থেকে যাবে শেষবারের মত একবার দেখা হলো না প্রিয় মুখটি।
হাতে সময় একদম নেই ডাক্তাররা তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করলো। মেয়েটি অনুভব করলো আস্তে আস্তে তার শরীরে অর্ধেক অংশ যেন বাকী অর্ধেক থেকে আলাদা হয়ে গেল। তারপর কি হলো মেয়েটি কিছুই জানে না। একটা নবজাতকের কান্নার শব্দ আসলো কানে। ডাক্তার বললো তোমার ছেলে হয়েছে। মুর্হুত্বে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানালো মেয়েটি। দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে এলো। যখন জ্ঞান ফিরে এলো তখন মেয়েটি খুঁজছে তার কলিজার টুকরা, আত্মজকে। সেবিকাদের জিজ্ঞেস করলো- আমার বাচ্চা কোথায়? তারা মেয়েটিকে অভয় দিয়ে বলো তার বাচ্চা তার নিকটজনদের কাছে, কেবিন নাম্বার-৪০৩ এ আছে। তাকে ও দেয়া হবে কেবিনে তবে ২৪ ঘন্টা পর। আর ২৪ ঘন্টার অপেক্ষার প্রহর গুনে শেষ হওয়ার পর মেয়েটি পায় তার প্রিয় আত্মজ, প্রিয় মুখ আর প্রিয়জনদের।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top