কাঁচা ঘুম ভাঙিও না
রাজধানী শহরের দেওয়ালে যেমন মানুষের ভাল চেয়ে লিখে রাখে, ‘বাঙালি জাগো’, তেমনই তার নিচে ওই বাঙালিরাই বড় বড় করে লিখে রাখতে ভোলে না- ‘কাঁচা ঘুম ভাঙিও না’! শহরের বাঙালি বোধহয় একটু বেশি রকমেরই ঘুম পিয়াসী; ঘুম-পাগল বা ঘুম সেনসেটিভ বললেও ক্ষতি নেই! তা, বাঙালিরও নিদ্রার সঙ্গে গহন সম্পর্ক বহু শতকের, না শতক বললে হয়তো কম হবে, এ আত্মীয়তা যেন পুরাণ থেকেই বিরাজমান। বাঙালির ঘুমকাতুরেপনার দায়ভার কিছুটা চাপিয়ে দেওয়া যেতে পারে ৬মাসের একটানা ঘুম ঘুমানো কৃত্তিবাসী রামায়ণের বাঙালি কুম্ভকর্ণকেও। সকালবেলার নাছোড় অ্যালার্মের কর্কশ আওয়াজটাকে কোনও মতে থামিয়ে দিয়ে পাশবালিশ জড়িয়ে আরও এক দফা ওপাশ ফিরে পেয়ে যাওয়া একটু স্বর্গসুখ-ঘুম বাঙালির যেন না-হলেই নয়। কিন্তু দরকারি কাজের সময় সময়মতো উঠতে না পেরে সোহাগভরে অ্যালার্মে ‘স্নুজ’ বোতামটি টিপে দিলে বিপত্তি বাড়বে আপনারই… তাই না?
এই সময়মতো উঠতে না পারাটা মানুষের ‘বডি ক্লক’ বা ‘সারকাডিয়ান রিদম্’-এর ওপরেই নির্ভর করে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুমের এক্সপার্ট ডা: লিওন সি ল্যাক। কিন্তু প্রত্যহ কাজ ও দায়িত্বের চাপে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার পরে বাধ্য সন্তানের মতো সময়মাফিক ঘুমটিকে সরিয়ে রেখে উঠে পড়তে পারেন না তো আপনি? চিন্তা নেই; বলে দিলাম কিছু সিম্পল টিপ্স। আহা, একটিবার ট্রাই করেই দেখুন না, ঘুম কেমন ‘বাপ বাপ’ করে ছুটে যায়!
প্রথমেই বলি অ্যালার্ম ঘড়িটির অবস্থান বদলে ফেলুন। চিরাচরিত রাখা হাতের কাছের জায়গাটিতে থেকে ঘুম চোখে ‘স্নুজ’ বোতাম টিপে দেওয়া সহজ হয়ে যায়, তাই একটু দূরে রাখলে সুবিধে হবে আপনারই। খেটে উঠে ‘স্নুজ’ করতে হলেও তো কিছুটা নড়েচড়ে বসতেই হবে; তাতেই কিছুটা কেটে যাবে সাধের ঘুম। বাকিটুকু নির্ভর করছে আপনার মনোবলের ওপর!
দ্বিতীয় টিপ্স, বিকেল থেকে সন্ধের মধ্যের সময়ে কাজের চাপটিকে একটু কমিয়ে নিন। সারাদিনের মধ্যে শুরুর দিকটা বা সকালের দিকে বেশি স্ট্রেসফুল ও হেকটিক কাজগুলোকে সেরে ফেললেই ভাল, কারণ অনেকসময় বেশি রাত অবধি বা সন্ধের অনেকটা সময়ই হেকটিক কাজ করলে ঘুম পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় না। তার থেকেই আসে ক্লান্তি এবং বেশি ঘুমানোর ইচ্ছে।
স্লিপ এক্সপার্টদের মতে খুব ঝলমলে আলোর সামনে থাকলে গভীর ঘুমও ক্রমে হাল্কা হয়ে ভেঙে যায়, কারণ বডি ক্লক মেনে নিতে থাকে সেটিকে। তাই ঘুমের সময় মাথার কাছের বা ঘরের কোনও পর্দা খুলে রাখতে পারেন, অন্যথায় ল্যাপটপ বা টিভিটিকে টাইমার দিয়ে চালু করে রাখুন (মিউট করতেও পারেন)। দেখবেন অনেকটা ব্রাইট আলো জ্বলে থাকলে ঘুম হয়ে যাবেই যাবে অনেকটা হাল্কা।
প্রিয় গ্যাজেটগুলিকে গোটাতে থাকুন ঘুমানোর ঘন্টা খানেক আগেই। পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বেশি রাত অবধি ল্যাপটপ, পামটপ, টি ভি’র মতো গ্যাজেট ব্যবহার করলে প্রত্যাশিত ঘুম হয় না। ফলে ঘুমানোর বেশ আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু করে দিন সবকিছু ‘সুইচ অফ’ করে।
সকালে উঠতে হলে আগের দিন থেকেই ভেবে রাখুন কী কী কারণে কতটা প্রাধান্য দেবেন সকালে একের পর এক কাজগুলিকে। ঘুমের আগে সেগুলো ভালভাবে চিন্তা করে রুটিন বানিয়ে ফেলুন। অবচেতন মনের মাঝে গেঁথে থাকা চিন্তার দরকারের ওপরও নির্ভর করে ভাঙতে পারে আপনার ঘুম।
এছাড়া খুব প্রয়োজন পড়লে কোনও স্লিপ এক্সপার্টের সঙ্গে আলোচনা করে খেতে পারেন ‘মেলাটোনিন’ ট্যাবলেট; চিকিৎসকের মত নিয়েই পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন ঘুমের ডিজঅর্ডারটির কারণ।
আর কী! ব্যস, এগুলো মেনে চলতে পারলেই কেল্লা ফতে। ঘুম থেকে ওঠা এবারে নিশ্চয়ই আর কষ্টের কাজ নয়?