ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো ?????
পূর্ব প্রকাশের পর
টেলিফোন টা উচ্স্বচস্ররে বেজে উঠলো। নীল্ লাপ দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।
কয়টা বাজে এখন রাত ৩ টা। এত রাতে কে ফোন করলো। বর্ষা গভীর ঘুমে, নীল্ বাথরুম এ এসে নম্বর চেক করে দেখল রনি চাচার সেল নম্বর , এত রাতে !!
বারান্ধায় এসে কল করতে ফোন ধরল মুকুল ওনার প্রাইভেট অ্যাসিস্ট্যান্ট। নীলভাই আমি মুকুল
হা মুকুল ব্যাপার কি চাচা কোথায় ? দুচ্চিন্তার স্বরে জিজ্ঞাসা করে নীল্।
স্যার রে গোয়েন্দা পুলিশ এরেস্ট করে নিয়ে গেছে। ওনার শরীর ভালনা স্যার, ওনার ফোন ফেলে গেছে। ওনার সাথে কাওরে দেখা করতে দিচ্ছে না। ওনার জামিন নাকচ করে সরাসরি হাজতে দিয়ে দিছে বলে মুকুল কেদে ফেলল।
মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। এই মুহুর্তে চাচাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তাড়াতাড়ি অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ল, অনেক দোআ করলো চাচার জন্য। কেমন জানি অস্থির লাগছে চাচার জন্য।
বর্ষা ঘুম থেকে উঠে এসে দাড়ালো পাশে .
কি হয়েছে তোমার ?উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করে বর্ষা।
বর্ষা আমি একঘন্টার জন্য বাহিরে যাচ্ছি ফিরে এসে সব বলব।
এই রাতে ?
আমি ডি আই জি চাচার সাথে যাব চিন্তা করনা। বলে বউ এর কপালে চুমু দিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে গেল।
অনেক কষ্টে ডি আই জি চাচার সহায়তায় অনেক কষ্ট করে প্রায় তিন ঘন্টা সকাল সাত টায় রনির সাথে দেখা করতে পারল নীল্।
একরাতের মধ্যে অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছেন তিনি। কথা বিশেষ বলতে চাচ্ছিলেন না প্রথমে।
চাচা আসুন নাস্তা করি, বর্ষা আপনার জন্য পরোটা বানিয়ে দিয়েছে।
ইশ এত সকালে মেয়েটাকে বুঝি কষ্ট দিয়েছ? এতক্ষণে উনি একটু স্বাভাবিক হলেন।
খেতে খেতে আরো কিছু কথা হলো, সব কিছু মিলে মনে হলো চাচার মনটা বিপর্যস্ত।
নীল্ আমাদের দেশের পলিটিক্স করে করাপ্টেড মানুষরা । এতদিনের এম পি কাজে দেখলাম আমাদের নির্বাচন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য। অথচ সাধারণ মানুষের চাহিদা,ভাবনা, চিন্তা কোনো কিছুর সাথে সংস্লিষ্টতা নাই আমাদের। সুধু জনসভায় গালভরা বক্তব্য আর ব্যাঙ্ক ব্যালান্স করা আমাদের পলিটিশিয়ান দের চরিত্র।.আমি ভাবছি এম পি পদ থেকে সরে দাড়াব। কোনো দলের সাথে আর থাকবনা।
কেন চাচা দলে থেকে ও তো আপনি ভালো কাজ করতে পারেন।
রনি চাচা হাসলেন বিমর্ষ ভাবে।
বাহির থেকে গার্ড এর তাগাদা দেওয়াতে ণীল কে বের হয়ে আসতে হলো।
বাসার দিকে যেতে যেতে ণীল গভীর চিন্তায় ডুবে গেল। তার মনে হলো এই মুহুর্তে একমাত্র কাজ হলো নিজেকে পলিটিক্স ইন্ভলভ করা, দেশের তথাকথিত হিংসা ঘৃণার রাজনীতি না, সুধু অসহায় ভাগ্য বঞ্চিত মানুষের জন্য করা, বেকারদের কর্মসংস্থান,..শিক্ষার হার বাড়ানো..এমন কিছু যদি করা যেত আমার দেশের মানুষ গুলোর জন্য।
কিন্তু কি কিভাবে ? প্রশ্নটা তার ভিতরে তোলপাড় করতে লাগলো।
যখন কোনো উপায় খুঁজে পেলনা তখন বুক চিরে দীর্ঘনিশ্বাস বের হয়ে আসল, প্রাথ্থনা ছাড়া আর কোনো পথ দেখতে পেলনা।
এদেশে দরকার একজন সপ্নদ্রস্টা, ভাগ্যপ্রনেতার সৎ লোহমানব। ..কে আছে এরকম আমার দেশে যার উপর ভরসা করা যায়।
নাই নাই। .হাহাকার এর মত এই উত্তর বেরিয়ে আসে বুকের গভীর থেকে।
==========================================
রাশেদ চোখ খুলে তাকালো,এটা কোন প্লেস চিনতে পারলনা। উঠে বসতে যাবে কেউ একজন বাধা দিয়ে তাকে শুইয়ে দিল।
এখন নড়াচড়া করবেননা প্লিস, আপনার স্যালাইন চলছে
মাথা একটু উপরের দিকে তুলতে সামনে চেয়ার এ বসা মেয়েটির সাথে চোখা চোখি হয়ে গেল। মেয়েটিকে কোথায় যেন দেখেছে ঠিক এই মুহুর্তে মনে করতে পারছেনা। মেয়েটির চোখে মুখে একটা চঞ্চলতা কাজ করছে রাশেদ এর সাথে চোখা চোখি হওয়ার পর। মেয়েটি ছুটে প্রায় তার বেড এর কাছে এলো।
যাক আপনার জ্ঞান ফিরেছে,আপনার মাকে জানাই বলল সে আনন্দের সুরে।
মেয়েটিকে এখনো সে চিনতে পারছেনা কেন? বিব্রত হয়ে বলল সে আপনাকে নিশ্চয় ভালো করে চিনি কিন্তু এই মুহুর্তে মনে করতে পারছিনা।
আপনি আমাকে ভালো করে কিভাবে চিনবেন মাত্র পাচ মিনিট সময়ের কথোপকথন। আমি রেহনুমা আপনি ফেন্ট হয়ে পড়েছিলেন অজকে বিকাল রাস্তায়, তার আগে আপনার সাথে আমার আপনার বাসায় দেখা হয়েছিল বলে খুব স্নিগ্ধ ভাবে হাসলো।
ওহ হ এতক্ষণে রাশেদ এর সব মনে পড়ল, অনুশকার বাসায় যাওয়া ওদের বাসায় না পাওয়া, চিঠি টা কোথায় পকেট হাতড়াতে দেখে রেহনুমা একটা খাম হাতে দিয়ে বলল এটা কি খুজছেন ?
জি বলে রাশেদ ব্যগ্র ভাবে হাত বাড়িয়ে কাগজ টা নিল।
তার মানি কি আপনি এখানে কেন? এখানে কে এনেছে আমাকে?
কে আনবে? আমি,আপনি আমার রিকশার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। বলে রেহনুমা হাসলো।
বাহ আপনি তো ভালো পরোপকারী।
রাশেদ এর কথার ধরনে রেহনুমা লজ্জা পেয়ে গেল, না এতে পরোপকারের কি আছে।
পরোপকার ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যাচ্ছেনা একদিনের পরিচয়ে।
স্যালাইন শেষ হওয়াতে নিডেল টা বের করে হাতের ওই জায়গা ম্যাসেজ করে দিয়ে ডিউটি ডাক্তার এর রুম এ আসল
ডাক্তার সব চেক করে দেখল,ওকে ,বেশি বেশি করে পানি খাবেন,আপনার বডি ডি হায়দ্রেট হয়ে যাওয়াতে আপনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। আর দুর্বল লাগলে এই ভিটামিন টা খাবেন।
ট্যাক্সি তে উঠে বসলো দুজনে। অনেক রাত হয়ে গেছে আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় যাব
আমার মা আপনাদের বাসায় ,
ওহ হ সরি এটা তো মনে ছিলনা। রাশেদ লজ্জা পেয়ে বলে।
ট্যাক্সির ড্রাইভার এর সামনে যে মিরর আছে হটাত রাশেদ চোখ পরে যায় একই সময়ে রেহনুমা মিরর এ রাশেদ এর দিকে চোখ পরে যায়। দুজনের চোখের মিলন হয় একপলকের জন্য। দুজন ই লজ্জা পেয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেই।
রাশেদ আশর্য হয়ে ভাবে এই মেয়ের সাথে মাত্র একদিনের পরিচয়, অথচ কোনো খারাপ লাগছেনা, মনে হচ্ছে এই রেহনুমা তার অতি পরিচিত। হয়তবা একদিন এ তার সবচেয়ে কাছের একজন হয়ে যাবে। দৃঢ় বিশ্বাস এর মত এটা বারবার মনে হচ্ছে।
(পরবর্তীতে)