আমার বর্ষা ১
খুব ছোটবেলা থেকেই আমি বর্ষা ভালবাসি। বলতে পারেন আষাঢ় মাস কবে শুরু হবে তার জন্য প্রতীক্ষা করে থাকি । এই যেমন আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন । আমি ধরেই নিয়েছি বৃষ্টি হবে । আমার কাটানো বেশীরভাগ আষাঢ়ের প্রথম দিনেই এমন হয়েছে। আমি অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষার ডিউটি দিচ্ছিলাম । মাঝে মাঝে আকাশের পানে দেখছিলাম। তখনো রোদ ছিল । দ্বিতীয় হাফে আমার সিনিয়র এক ম্যাডাম যিনি আমার সাথে ছিলেন তাকে জিজ্ঞেস করলাম আজ কি বৃষ্টি হবে না? উনি হেসে ফেললেন । বললেন হবার তো কথা । এই কথা বলার মিনিট দশেক পড়েই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি শুরু হলো । উনি আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাসলেন । এই হলো আমার অবস্থা ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি একমনে। ছোটবেলার বৃষ্টির দিন গুলো খুব মনে পরে এখন। আমি যখন খুব ছোট । মাছ ধরি (অবশ্যই লুকিয়ে )। আমার বাড়ির পাশে বেশ কয়েকটি পুকুর। বৃষ্টি হলেই একটা গামছা হাতে বেরিয়ে পরতাম। পুকুর গুলো সব জলে পূর্ণ থাকত। আর মাছ গুলো সেই সুযোগে এক পুকুর থেকে আরেক পুকুরে যাবার চেষ্টা করতো। আমারা জলের উজানে গামছা রাখতাম। ফলে ছোট ছোট পুঁটি ,খলশে আমার গামছাতে উঠে আসতো। খলশে মাছ গুলো সব রং বে রঙের। সেই মাছ ধরে এনে একটা সাদা বোতলে জল ভরে তার মধ্য ছেড়ে দিতাম। পুরো বর্ষা এভাবে মাছ ঘরে সাজিয়ে রাখতাম ।এর পর দল বেঁধে মটকাতে যেতাম গোসল করতে। মটকা হল জল যখন এক সাথে এক দিক দিয়ে পরে। আমাদের বাড়ির পাশে শুধু পাটের গুদাম । অনেক দিনের পুরনো । সেখান দিয়ে জল তীব্র বেগে পরত। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভিজতাম। কখনও ফুটবল নিয়ে ছুটতাম মাঠে। সবচাইতে মজা পেতাম যদি নদীতে নামার পর বৃষ্টি আসতো । কারণ যখন উপর থেকে বৃষ্টি পরে তখন নদীর জলে গোসল এক অন্য রকম অনুভূতি। মনে আছে একবার খুব বৃষ্টির মধ্য আমি ফুটবল খেলে ফেরাতে আমার বই খাতা সব মাটিতে ফেলে দিয়েছিলো আমার মা । অনেক বকা শুনেছিলাম সেদিন । কাগজের নৌকা বানাতাম অনেক । আমার বাড়ির ঢাল ধরে যখন বৃষ্টির জল গড়িয়ে যেত তখন ওগুলো ছেড়ে দিতাম । কোনটা ঠিক পথ খুঁজে নিত আবার কোনটা মুখ থুবড়ে পরত ।
আর প্রকৃতি তখন অপূর্ব সাজে সাজত।আমার বাড়ীতে বিরাট কদম গাছ ছিল পাশেই ছিল কূপ । সেই ফুল বর্ষার জলে মিশে যেত বৃষ্টিতে । এছাড়া আমার এই ছোট পাড়াতেও আর কয়েকটা কদম ফুলের গাছ ছিল । বৃষ্টিতে কদমের রেনু গুলো ভিজত আর এক মিষ্টি গন্ধ ছড়াত। ভিজে শালিক বা কাক দেখতাম জড় হয়ে বসে আছে কোনও ডালে।