Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

কর্ম কাণ্ড

: | : ০৩/১১/২০১৩

রসিক জনের দরবারে ”জ্ঞান কাণ্ড” নিবেদনের সময় মনের ভেতর অতি ক্ষীণ একটা আশা ছিলো বাঙালীর অন্য দুই মার্গ সাধনার বৃত্তান্তও নিবেদন করবো। ব্লগার মহানাম ”জ্ঞান কাণ্ড” পাঠ করে ”কর্ম কাণ্ড” নিবেদনের ছহিহ কুমন্ত্রণা দেন। সে কারণে অনতিবিলম্বে ”কর্ম কাণ্ড” নিবেদনে ব্রতী হলাম।

কর্মের সাথে ক্রিয়ার একটি অতিক্ষীণ হলেও রোমান্টিক সম্পর্ক আছে। বাঙালীর কর্মের প্রতি বৈরাগ্য না থাকলেও ক্রিয়ার প্রতি চরম বিদ্বেষভাব আছে। ক্রিয়ার বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে বাঙালীর নিষ্ক্রিয়তা চোখে পড়বে না।

বাঙালীর কর্ম নিপুনতা ও কর্মপ্রিয়তার সাত কাণ্ড নিম্নবিধ-

পরচর্চা
বাঙালীর কর্ম মার্গের শীর্ষে আছেন অতিনিপুনতায় ভাস্কর ”পরচর্চা”।  পরের ছিদ্রান্বেষণে, দোষ বর্ণনায় যে কর্মনিপুনতা আমরা দেখাতে পারি তার খুব বেশী তুলনা নেই। পরচর্চায় আমরা যে বিমলানন্দ লাভ করি তা বর্ণনার শক্তি বাঙলা কেন পৃথিবীর কোন ভাষারই নেই। এই আনন্দ শুধু অনুভব করাই সম্ভব। সুতরাং যতক্ষণ জেগে আছি ততক্ষণ আমাদের প্রধান কাজ পরচর্চা।
রাজনীতি
পরচর্চার সাথে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতি আমাদের অন্যতম প্রধান কর্মে পরিণত হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে তো রাজনীতি হালাল। সেখানেও রাজনীতিতো হরহামেশাই করি। স্থানীয় নির্বাচনে রাজনীতি হারাম হলেও আমরা চুটিয়ে রাজনীতি করি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার আনন্দ আমরা সবসময় বুঁদ হয়ে ভোগ করি। অবশ্য কিছুদিন আগে আদালত স্থানীয় নির্বাচনে রাজনীতি হালাল ঘোষণা করায় গন্ধম খাওয়ার আনন্দ হারাবার বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছি। তবে রাজনীতি আমরা করি সর্বত্র। শিক্ষাঙ্গন, ক্রীড়াঙ্গন, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, স্কুল,কলেজের কমিটি, পাড়ার ক্লাব এমনকি সামাজিকতায়ও রাজনীতি করি। রাজনীতিকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগের এমন গণতান্ত্রিক চর্চা গণতন্ত্রের জনকরাও ভাবেন কিনা জানি না।

টিভি দর্শন
আকাশ সংস্কৃতির যুগে কতো চ্যানেল তা আর আঙুলে গোনা যায় না। ক্যালকুলেটরের সাধ্যেরও বাইরে চলে গেছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা শুধু বিটিভি দেখে সন্তুষ্ট থাকলেও আমরা বিটিভি দেখে সময় নষ্ট করি না, কাজেরও ”ক্ষতি” করি না। আমরা দেশী চ্যানেলে শুধু খবর দেখি। তাও সেটা পরচর্চা আর রাজনীতির মালমসলা সংগ্রহের কঠিন কাজটির স্বার্থে। সাধারণত আমরা হিন্দি চ্যানেল দেখি। মাঝে মাঝে ইংরেজী চ্যানেল দেখি। তা না হলে জাতে ওঠার ”কাজটা” শেষ হয় না।

ভ্রমন
আমরা এখন ভ্রমনপটু। নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে বেড়াতে যাই। দেশের ভেতরে দেশের বাইরে নানান ট্যুরিস্ট স্পটে যাই। দেখি। জ্ঞানলাভ করি। প্রতিটি কর্মে আমরা মহাব্যস্ত থাকি। আমরা অফিস/কাজ ফাঁকি দিয়েও ঘুরতে ভালোবাসি।

মোবাইল ব্যবহার
আমরা মোবাইলে আলাপ করি। নানারকম অফার গ্রহণ করে ”সাশ্রয়ী (!?)” কলরেটে কথা বলি। সারারাত জেগে কথা বলি। মোবাইল এসে আমাদের কাজের খুব সুবিধা হয়েছে। আমরা আড্ডায় থাকলেও মিটিংয়ে আছি/ক্লাসে আছি বলে সমস্যা কাটিয়ে কাজ অব্যাহত রাখতে পারি। প্রয়োজনে আমরা কলডাইভার্ট করে দিতে পারি। আরেকটা খুব বড়ো কাজ করি মোবাইলে-এসএমএস। সাধারণত ফ্রি এসএমএস করতে ভালোবাসি। *শর্ত প্রযোজ্য হলেও (গোপনে বাড়তি বিলকাটা) ক্ষতি নেই। এর মাধ্যমে আমরা ডিজিটালি কাজ শেষ করি। মোবাইলে হাজার হাজার গান লোড করে শিল্পীদের রয়্যাল্টির উৎপাত থেকে গা বাঁচিয়ে চলি। মোবাইলে এফএম রেডিও আমাদের নতুন কর্মযজ্ঞে ঘৃতাহুতি হয়ে এসেছে। মোবাইলে এখন ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা আর ৩২ জিবি মেমোরি এসে কাজ আরো গতিশীল করে দিয়েছে।

নেট ম্যানিয়া
সহজে/সুলভে নেট এসে আমাদের কাজের কতো সুবিধা হয়েছে। নেটে মেইল চেক, চ্যাট, ব্রাউজ,ডাউনলোড,আপলোড,ফেসবুক,ব্লগিং (সামু নহে) ইত্যাদি অতিগুরুত্বপূর্ণ কাজে আমরা মহাব্যস্ত থাকি। নেটে আয়ও করি কেউ কেউ।

বিশ্রাম গ্রহণ
পরচর্চা, রাজনীতি, নেটে কাজ ইত্যাদি করে আমাদের যে ক্লান্তি আসে তা দূর করতে আমরা বিশ্রাম গ্রহণ ”করি”।এটাও আমাদের ক্রিয়া, মানে কাজ। এ নিয়ে প্রয়াত ড.হুমায়ুন আজাদ একবার রসিকতা করেছিলেন। কিন্তু কর্মবীর বাঙালী তা গায়ে মাখেনি।


এসব গুরুতর কাজের বাইরে আমরা অর্থ আয়ের জন্য ”জব” করি বা ”ব্যবসা” করি। এছাড়া ”গেঁয়ো” লোকজন কৃষিসহ নানা পেশার অহেতুক কায়িক শ্রমপূর্ণ কাজ করেন। অফিসগুলোতে কিছু বোকা কিসিমের লোক কাজ করে। বুদ্ধিমানরা বসের তোয়াজ ও গল্পগুজব করে থাকে। তবে আমরা যে কাজই করি তাতে কোন না কোন সার্থকতা থাকেই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রিয়সখা অর্জুনকে ”নিষ্কাম কর্মের” উপদেশ দিয়েছিলেন। আমরা বুদ্ধিমান। আমরা জানি পার্থসারথীর উপদেশ পার্থ’র জন্যই প্রযোজ্য, আমাদের জন্য নয়।

কর্ম কাণ্ড সমাপ্ত

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top