Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “নিয়োগ পত্র”-একাদশ পর্ব

: | : ০৪/১১/২০১৩

একাদশ পর্ব
(বার)
তিমির পথ চলে। অথচ পথ ফুরোয় না।
একখন্ড লৌহাকে যদি প্রতিনিয়ত একই জায়গায় আঘাত করা হয় লৌহাও ঠিক একসময় তার আকার পরিবর্তন করে। তদ্রুপ একজন মানুষের মনেও যদি প্রতিনিয়ত একই অস্থিরতা বিরাজ করে তবে সে আর মানুষ থাকে না। ক্রমশঃ তার দেহ মন দু’টোই ক্ষয় হতে থাকে।

আজ দু’দিন ধরে প্রচুর অবসর। টিউশনির কোন ঝামেলা নেয়। তবুও বসে থাকেনি। ঘোষ বাবু রেফারেন্স নিয়ে একটা শিপিং কোম্পানীতে গিয়েছিল।
অনেক্ষন ওযেটিং রুমে অপেক্ষার পর এম ডি সাহেব ডাকলেন। সম্ভবত ঘোষ বাবু ফোনও করেছেন। নয়তো সরাসরি এম ডি সাহেবের রুমে যাওয়া সম্ভব হতো না। অফিস তো নয় যেন স্বর্গরাজ্য। সবিই আর্টিফিসিয়াল। সুর্যের আলো নেয়। তবুও এতটুকু আলোর অভাব নেয়। মন প্রাণ মুহুর্তেই সতেজ হয়ে উঠে। সারা ঘর জুড়ে ¯িœগ্ধ গোলাপের সুভাস। তিমির ঢুকেই সম্ভোধন জানিয়ে ঘোষ বাবুর চিঠিটা হাতে দিলেন। এম ডি সাহেব সোফায় বসতে বললেন। পাশের টি টেবিলে অনেকগুলো ম্যাগাজিন। এম ডি সাহেব দামী ব্রান্ডের সিগারেট জ্বালালেন। জিজ্ঞাসা করলেন-
– এখন কি করেন।
– টিউশানি।
– ইংরেজী বলতে পারেন। চোখ কপালে তুলে অবজ্ঞার হাসি হাসলেন।
তিমির কিছুই বলতে পারলো না। কথায় কথায় যে রকম বাংলার সাথে ইংরেজী শব্দ মিশে যায় তাতে হ্যাঁ বা মোটামুটি কোনটায় বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া বাঙ্গালী, যারা বাল্যশিক্ষাও জানে না তাদের কথায়ও কেমন করে ইংরেজী ভাষার মিশ্রণ এসে যায়। তিমির এর চেয়ে বেশী জানলেও পুরোপুরি হ্যাঁ বলেতে পারছে না।
এম ডি সাহেব কি বুঝে মাথা নাড়লেন। তারপর বললেন-ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কোর্সে ভর্তি হয়ে যান। পারলে কম্পিউটারটা শিখে নিন। তারপর হয়তো একটা চাকরী পেতে অসুবিধা হবে না। তিমির ভদ্রতার খাতিরে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। এসব পরামর্শ তার প্রয়োজন নেই। তিমির বিনয়ের সুরে বলল-স্যার ইচ্ছা আছে কিন্তু সামর্থ নেই।
এম, ডি আর কথা বাড়ালেন না। সময়ের যথেষ্ট মূল্য আছে। হাতের খামটার দিকে তাকিয়ে বললেন-ঠিক আছে। এপ্লিকেশনটা রেখে যান, সম্ভব হলে পরে আপনাকে জানাবো।

আজই একটা ইন্টারভিউ কার্ড পেয়েছে তিমির। আগামী ১৭ জানুয়ারী লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষা হবে ঢাকায়। মতিঝিল মডেল হাই স্কুলে। অনেকদিন আগে পিডিবি-তে সহকারী হিসাব রক্ষক পদে আবেদন করেছিল। জানুয়ারীতে যাওয়া সম্ভব হবে কিনা তাই ভাবছে। এ মাসে যা আয় হয়েছে তাতে মাসের মাঝামাঝি ঢাকা যাওয়ার খরচ থাকবে না। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল পরীক্ষা দেবে না। চুলোয় যাক পরীক্ষা।

শ্রষ্টা মানুষের মনে আশা নিরাশার দোলাটা যদি না দিত তবে মানুষ বোধ হয় আরও বেশী সুখী হতে পারতো। পরীক্ষা দেবেনা ভাবছে। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে যদি চাকরীটা হয়ে যায়। নিশ্চয় কোন মফস্বল শহরে পোষ্টিং হবে। তাতে কোন অসুবিধা নেয়। নতুন চাকরী, নতুন পরিবেশ। ভালোই হবে। জীবনটা তখন ঘড়ির কাটায় কাটায় চলবে। উঃ সে কি আনন্দ। শুধু একটা চাকরী। তারপর জীবনের অনেকগুলো কল্পনা সব বাস্তব হয়ে ধরা দেবে।

মানুষের যা হবার নয় তাই ভাবে। তাতেই অধিকাংশ সময় ক্ষয়ে যায়। চেষ্টাটা কল্পনার মত এত দ্রুত এগুতে পারে না। থমকে যায়। পথ আঁকড়ে ধরে অনেক না পাওয়ার ক্লান্তি।
তিমির খাটের উপর পা টেনে দেয়। বালিশে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট জ্বালায়। বেলা পরে আসছে। অনন্ত দা নেয়। বাজারে যেতে হবে। আজ রান্নাটা নিজের হাতে করবে।

আসার পথে দেখল রাস্তার মোড়ে বেশ কিছু লোকের কোলাহল। অনেক গুলো লোক জড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে। সবার দৃষ্টি একজন মাত্র লোকের দিকে। জোকার টাইপের লোকটি কি যেন দেখাচ্ছে। অঙ্গভঙ্গি আর বাচন ভঙ্গি দিয়ে এতগুলো লোককে অনেক্ষন দাড় করিয়ে রেখেছে। এরা কি বোকা। কিংবা ওদেরও প্রচুর অবসর। কোন কাজ নেয়। তাদের মধ্যে অনেকেই যুবক। ওরাও কি বেকার।
দরজায় খট খট শব্দ হয়। তিমিরের খেয়াল হলো দরজাটা ভেজানো। হুক দেওয়া হয়নি। তিমির বিছানা থেকেই বললো দরজা খোলা আছে।
– তুমি আবার সিগারেট খাচ্ছো। কি বিচ্ছিরি গন্ধরে বাবা। ঘরটাকে দোজখ বানিয়ে রেখেছো। চৈতী ঘরে ঢুকেই নাক সিটকিয়ে বলল।
– হ্যাঁ। কিন্তু এই অসময়ে তুমি। তিমিরের চোখে বিস্ময়।
– কেন আসতে নেয় নাকি।
– না। খুব একটা আসো না, তাই বলছিলাম। বসো।
– আর বলতে হবে না। নিজেই যখন এসেছি তখনতো বসতে হবে। তার আগে দয়া করে সিগারেটটা ফেলে দাও। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। নয়তো চলে যাবো।
– বেশতো যাও। তিমির ইচ্ছা করেই আর একটা লম্বা টান দেয়।
– কিন্তু কেন এসেছি জানতে চাইলে না।
– না বললে কি করে জানবো। তাড়াতাড়ি বলো।
– তুমি কি কোথাও বেরুবে।
– না। কেন।
– আমার কিছু কথা আছে।
– শোনাতে চাইলে শুনতে পারি।
– এভাবে বলছো কেন।
– কিভাবে বলছি।
– কেমন কাঠ খোট্টা। যেন আমি দায়ে পরে তোমার কাছে সাহায্য চাইতে এসেছি।
– সে সামর্থ্য তো আমার নেয়। তুমি অযথা কষ্ট পাচ্ছ।
তিমিরের মন ভালো নেয়। মন ভালো না থাকলে ভালো ব্যবহার আশা করা যায় না। তিমির বাড়ী যাওয়ার কথা ভাবছে। সেই সাথে ভাইয়ের ফরম ফিলাপ, ছোট বোনের জামা, সাথে ঢাকার ইন্টারভিউ ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠছে। তিমির সিগারেটের অবশিষ্ট অংশটা ফেলে দেয়। নাকে রুমাল চাপা দেয় চৈতী। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চৈতী চেয়ার ছেড়ে খাটের একপাশে বসল। চিন্তিত মনে হচ্ছে। খুব শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করল-
– বাড়ী যাচ্ছো কবে।
– কাল।
– আমাকে নিয়ে যাবে।
– ঠাট্টা করছো। তিমিরের চোখে অবাক বিস্ময়।

চৈতী উঠে দাড়ায়। তিমিরের খুব সামনে এসে চোখে চোখ রাখে। সারা শরীর কাঁপছে। সব কিছু খোলাখুলি বলতে গিয়েও পারছে না। কিছুক্ষন নির্বাক পাথরের মত দাড়িয়ে থেকে বলল-আমার দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখ তো।

তিমির তাকায়। আর যেন হেয়ালী মনে হচ্ছে না। নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। নয়তো চৈতী এভাবে কখনও বলত না। বড় জোড় কখনও জিজ্ঞাসা করেছে-আজ এই পোষাকটা কেমন মানিয়েছে বললে না তো। ব্যাস। তিমিরের মনে হলো চৈতীর এ রুপ যেন আর কখনও দেখেনি। অপূর্ব সুন্দর লাগছে। এই মুহুর্তে যার কোন বিশেষণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যতই সুন্দরের নান্দনিক বিশেষণ মনে পরুক না কেন তবুও যেন সুন্দরের স্বয়ং সম্পুর্নতা আসছে না। তিমির মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন কতকাল পরে দেখা। তিমির ডান হাত দিয়ে চৈতীর হাত স্পর্শ করে বললো-
– বসো। কি হয়েছে তোমার।
– আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয়। আমি কি তোমার কেউ নই।
– ও কথা বলছো কেন।
– কারন আছে। আগে আমার কথার উত্তর দাও।
– কথাটা কি এতদিন পর আবার নতুন করে শুনতে চাও। এতেও তোমার তৃপ্তি মেটেনি।
– কিছু কথা আছে হাজার বছর শুনলেও সাধ মিটে না। ভালোবাসা তেমনই এক জিনিষ।
– শাড়ী পরে কেন এসেছি জিজ্ঞাসা করলে না।

চৈতী তিমিরের পাশে বসল। মেয়ে কন্ঠের আওয়াজ শুনে পাশের বাসার একজন উকিঁ দিয়ে দেখে আবার চলে গেল।
– তোমার প্রশ্ন গুলো খুব এলোমেলো মনে হচ্ছে। সত্যি করে বলতো তুমি শাড়ী পরে কেন এসেছো। তুমি কি জান তোমার শাড়ীর রংটায় আমার সবচেয়ে প্রিয় রং।
– আজ আমি এই শাড়ী পরেই ওদের সামনে দাড়িয়েছি। ইন্টারভিউ দিয়েছি। আমাকে পছন্দ করানোর জন্য বাড়ীর লোকেরা চেষ্টার ত্রুটি করেনি। আমার ছোট পিসী জোড় করে পার্লার থেকে এই খোঁপা বাঁধিয়ে এনেছে। আমাকে ইচ্ছামতো সাজিয়েছে। আমাদের পরিবারের এতসব চেষ্টা মোটেও ব্যার্থ হয়নি।
কথাগুলো অনেক বিরক্তির সাথে নিমিষেই শেষ করলো চৈতী। তিমিরের বুঝতে কষ্ট হয়নি।
– তুমি কি জান, তোমাকে সাজিয়ে ওরা তোমার আসল রুপটাকেই চাপা দিয়ে রেখেছে। তোমার যা রুপ তাতে সাঁজতে হয়না। এমনিতেই তুমি অনেক সুন্দর।
পাশের রুমের ছাত্তার আর ধৈর্য ধরতে পারছে না। ব্যাচেলর কলোনীর ছেলেরা ওরকমই। একটা কৌতুহল কাজ করছে। ব্যাচেলর ঘরে সুন্দরী যুবতী আসলে সন্দেহ তো হবেই। ছাত্তার দরজা ফাঁক করে ভিতরে পা দিয়েই থমকে দাঁড়ায়। যেন সে কিছুই জানে না। এই মুহুর্তে আসাটা একদম উচিত হয়নি। অপরাধীর মতো বলল-তিমির ভাই চলি।
– আরে যাবে কেন। বসো।
বসার ইচ্ছা থাকলেও বসাটা যেন অশোভনীয়। শুভ মুহুর্তে অযথা বিঘœ সৃষ্টি করা। ছাত্তার বলল-
– না না, আমি পরে আসব। আপনারা গল্প করেন।
– তাহলে পরিচয়টা অন্তত জেনে যাও। এ হচ্ছে চৈতী। বি.এ ফাইনাল ইয়ারে। আমার খুব ভালো বন্ধু। বিয়ের নিমন্ত্রন করতে এসেছে। আমরা যাবো কিন্তু।
– ও আচ্ছা। থ্যাংকস।
চৈতী মাথা নাড়ল। ছাত্তার বেরিয়ে গেল। ওর কৌতুহল দেখে তিমিরের হাসি পায়। চৈতীর দিকে থাকিয়ে মৃদু হেসে জিজ্ঞাসা করে-
– তারপর। ওদের খুব পছন্দ হয়েছে বুঝি। আমি হলে তো নিশ্চয় বলতাম যে কালই বিয়ে।
– পছন্দ না হওয়ার মত মেয়ে নিশ্চয় আমি নয়।
– তবে এখানে এসেছো কেন। লোকে মন্দ বলবে।
– আমি লোকের খায় না পড়ি।
তিমিরের অন্তরে চাপা কষ্ট। এ মুহুর্তে এটায় তার পাওয়া। কিছুই করার নেয়। অথচ এমনটি সে কখনও চায়নি। আজ তাই যেন হয়ে যাচ্ছে। না বলতেও পারছে না। প্রতিবাদও করতে পারছে না। নিজেকে আরও সহজ করে নিয়ে জিজ্ঞাসা করল-
– শুভ দিনটি কবে বলেছে কিছু।
– জানুয়ারী বিশ তারিখে।
– ভালোয় হলো। আমাকে নিশ্চয় নিমন্ত্রন করবে। আমার আশীর্বাদ রইলো।
– তার প্রয়োজন হবে না। সময় হলে আমি নিজেই চেয়ে নেবো।

চৈতী অনেক্ষন থামল। কোন কথা বলল না। চোখ দুটো জলে ছল ছল করছে। দৃষ্টি ঝাপসা। আলতো করে শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছে নিল। দু’হাতে আঁচল চেপে ধরে ঠোট কামড়াল। অপ্রত্যাশিতভাবে দু’টো হাত দিয়ে চেপে ধরলো তিমিরের ডান হাত। তিমিরের কিছুই বলার নেই। সে নির্বাক। অসহায়। আর এই অসহায়ত্বের জন্য নিজের বেকারত্বকে দায়ী করল। তিমির স্বচ্ছল হলে কিছুতেই চৈতীকে হারাতে হতো না। এখন শুধু চৈতীকে সান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কি-ইবা করার আছে।

চৈতী কাঁদছে। এ কান্না অনর্থক। যার কোন সমাধান নেই। কষ্ট আছে। দারুন কষ্ট। বুকের ভেতরটা কেমন চিন চিন করে উঠে। ব্যর্থতা আছে। তাতে কষ্টটা আরও বাড়ে। মানুষ মানুষকে জয় করে। সৃষ্টি হয় বন্ধন। সে বন্ধন আবার ছিন্ন হয়। কষ্ট পেতে হয়। অবিন্যস্ত মনের ভেতর থেকে ফুঁসে উঠে হাজারো প্রশ্ন। কেন এমন হয়। কোন উত্তর নেই। সমাধান নেই। শুধু মনে হয় কারও না কারও ব্যর্থতা। এক্ষেত্রে তিমিরের ব্যর্থতা। চৈতীর স্বপ্ন সুখ। সাময়িক বেদনা। যা আগামীর ¯্রােতধারায় হারিয়ে যাবে।

চৈতীর চোখে পলক পরছে না। তাকিয়ে আছে। বড় মায়া হচ্ছে। ইচ্ছে করছে অনেক্ষন বুকে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে। তিমির তাও পারছে না। ভাবতে হচ্ছে চৈতী আর একজনের। অন্য কেউ একজন চৈতীকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে। এ দৃশ্যটা চোখের সামনে ভাসছে। প্রচন্ড ঘৃনায় তিমিরের সমস্ত শিরা উপশিরায় ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠলো। ডান হাতটা ছাড়িয়ে নিল তিমির।
– একটা সিগারেট জ্বালাবো। কিছু মনে করবে নাতো।
– না।

তিমির বালিশের পাশ থেকে প্যাকেট নিয়ে সিগারেট জ্বালাল। ম্যাচের আগুনটা ধরে রেখেছে। বিদ্যুত নেই। তেমন গরমও নেই। অথচ শরীর গামছে। এইতো ক’দিন আগে দূর্গাপূজা গেলো। লক্ষী পূর্নিমার চাঁদের আলোটা অসম্ভব সুন্দর আলো দেয়। বাম হাতে ধরা জলন্ত কাঠিটার উপর ডান হাতটা চেপে ধরেছে। প্রথমটা খেয়াল করেনি চৈতী। হাতের তালুতে কালচে দাগ পরে গেছে। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো চৈতী। নিজেই মুখ লুকালো তিমিরের বুকে। আজ যেন যাওয়ার কোন তাড়া নেই। তিমির নিজেও বলতে পারছে না চলে যেতে।
– তোমার কি কিছুই করার নেই। কাঁদতে কাঁদতে বলল চৈতী।
তিমিরের হাতে জলন্ত সিগারেট। এত ঘন সিগারেট সে কখনও খায়নি। সারা ঘরখানা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। অন্যদিন হলে চৈতী নিজেই নিষেধ করতো। কিংবা জোড় করে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিত। আজ তা করছে না।
– চৈতী তুমি সুখী হও। প্লিজ এর বাইরে আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। আর তুমি যা করার কথা বলছো, পালিয়ে যাবে এইতো। চৈতী নিশ্চুপ। বিশ্বাস করো চৈতী, আমি কি করে ভাববো যে ভালোবেসে রাস্তায় রাত কাটাবো। সে শুধু সিনেমায় মানায়। বাস্তবে তা হয় না।
– তুমি কি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ।
– না উৎসর্গ করছি। শুধু তোমার সুখের জন্য। আমার ব্যার্থতার জন্য তুমি আজীবন কষ্ট পাবে কেন।
– কষ্টটা তুমি বোঝ তাহলে।
– আগে বুঝিনি। এখন বুঝতে পারছি। শুধু মনে রেখো এ ফিরিয়ে দেওয়া আমার ইচ্ছাকৃত নয়। আমার অবস্থান তোমাকে সরিয়ে দিতে বাধ্য করছে। পালিয়ে গেলে সমাজ সংস্কার আমাদের কাউকে রেহায় দেবে না।
– আমি রেহায় চাই না। তোমাকে চাই।
– আমাকে চাইতে গেলে জীবন ধারনের জন্য একটা ন্যুনতম নিশ্চয়তা প্রয়োজন। আমার সামাজিক অবস্থান নিশ্চয় তোমার অজানা নয়। তিমির আর একটা সিগারেট জ্বালায়। বিষাক্ত নিকোটিনটা আজ অমৃত বলেই মনে হচ্ছে।
– তুমি কি আমাকে শাস্তি দিচ্ছো। চৈতীর তীক্ষ দৃষ্টি।
– না।
– তবে ?
– নিজেকে সান্তনা দিচ্ছি।
চৈতী টেবিলে মাথা রেখে ভীষন কাঁদছে। চোখের জলে ভালোবাসার প্রতিদান হয় না। কিছুটা সান্তনা পাওয়া যায় মাত্র। তিমির পুরুষ মানুষ। কান্নাটা মানায় না। আলতো করে চৈতীর মাথাটা নিজের বুকে টেনে নেয়। সান্তনা দেয় তিমির।
– আমাদের ভালোবাসাতো মিথ্যা নয় চৈতী।
চৈতী নিশ্চুপ। পাথরের মত ঠাঁই মুখ গুঁজে আছে তিমিরের বুকে। আজ যেন ফিরে যাবার তাড়া নেয়। আরো অনেকটা সময় এভাবে থাকতে চায়। থাকুক না। ক্ষতি কি।
চলবে——————–

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top