সাহসিকতার প্রাপ্তি কি শুধু একটি দিবসই ?
বাংলাদেশের গনতন্ত্রের মুক্তির জন্য এই ১০ই নভেম্বর একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসাবে পালিত হয় ।এই দিনে নূর হোসেন বুক চিতিয়ে দিয়ে গনতন্ত্র মুক্তি পাক অঙ্কিত দেহ পুলিশের গুলির সামনে মেলে ধরেছিলেন । হাজারো মানুষ সে আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছিলো শুধু আমাদের গনতন্ত্র রক্ষার জন্য । নূর হোসন সেদিন শহীদ হন । তার সাথে আরো কয়েকজন । রক্ত দিয়ে অর্জনে অভ্যস্থ হয়ে পড়া গনতন্ত্র আজো শুধু ডুকরে ডুকরে কাঁদে ।নূর হোসের শহীদ হওয়ার পর প্রতিটি বছরই এই দিবসটি পালন করা হয় গনতন্ত্র মুক্তির দিন হিসাবেই । এবারও তার ব্যতিক্রম নয় । সকালে ঘুম থেকে উঠেই যে কয়টা সংবাদ পত্র দেখেছি তার সবগুলোতেই নূর হোসেন নিয়ে বিশষ প্রতিবেদন ।প্রতিটি ব্লগ, ফেইসবুক, টুইটার সব জায়গায় শহীদ নূর হোসেনে সেই গনতন্তের মুক্তির সনদ সংবলিত নগ্ন শরীরের সাহসী ছবি । আজ ২৬ বছর পরও এই মানুষটির নাম আজও ভাস্বর কারন তিনি গনতন্ত্রের জন্য প্রান অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিলেন । আমাদের রাজনীতিবিদরাও তাঁর নাম শ্রদ্ধার সাথেই উচ্চারন করেন ! কিন্তু এই শ্রদ্ধার দাম কতটুকু আমাদের কাছে আছে ?আমরা কি শুধু শ্রদ্ধাবোধই দেখাচ্ছি ? আজ যে জন্য তার এই অকাতরে জীবন দান তার কোন প্রতিফলনই নাই । ২৬ বছর পরও ঠিক এই দিনেই হরতালের সমর্থনকারীদের ধাওয়ায় নিহত হল এক সিএনজি চালক । তার কি দোষ ছিলো ? সে হরতালের দিন গাড়ি বের করেছে এই টুকুইতো । কিন্তু তার প্রান দিতে হল । তার নামতো এদেশের কোন ইতিহাসে লেখা থাকবেনা । সে কোন বিখ্যাত মানুষও হতে পারলোনা । সে অভাগা নামের পাশে নিজেকে সংযুক্ত করে আরেকজন অভাগা হিসেবে যুক্ত হল । এভাবে প্রতিটি হরতাল, অবরোধ, রাজনৈতিক কর্মসূচী অথবা দলীয় কোন মিছিল মিটিংয়েই কোন কোন প্রানহানী ঘটেই চলেছে । গনতন্ত্রের নামে বার বারই পিষ্ট হচ্ছে জনগনের অধিকার । কিন্তু এখন কি আর সাহসী মানুষ নাই ?
অবশ্যই এখনও সাহসী মানুষ আছে, যারা মনে প্রানে চায় বাংলাদেশ সত্যিকারের একটি গনতান্ত্রিক দেশে পরিনত হোক ।কিন্তু এই চাওয়ার জন্য যদি জীবন দিতে হয় ? তবে কিলাভ এই চাওয়া দিয়ে ? জীবন চলে গেলে হয়ত তাকে সম্মাননা দেওয় হবে সারাজীবন কিন্তু তার ফলাফল যদি না আসে ? কত শহীদের বিনিময়ে আজ বাংলাদেশের প্রাপ্তি কিন্তু এ স্বাধীন দেশেও কারও প্রান যাবে এটা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য । আমরা কেন দিনদিনই একে অপরের শত্রু হয়ে উঠছি ?আমাদের স্বার্থ শুধু গনতন্ত্র রক্ষা । কিন্তু গনতন্ত্রের সঙ্গার সম্পূর্ন উল্টা রুপ নেওয়া গনতন্ত্র আমাদের আজ মৃত্যুর মিছিল দেখায় । শহীদ নূর হোসেন দিবস পালন হয় একদিকে অন্যদিকে চলে গনতন্ত্রের নামে মানুষ হত্যা । আসুন আমরা সবাই শ্রদ্ধাবোধ জানাই নূর হোসেনের প্রতি এবং এই দিবসটির সঠিক তাৎপর্য অনুধাবন করে সামনের দিনগুলোতে সহিংশতা থেকে বের হয়ে আসি । একজন মানুষ কমপক্ষে একহাজার জনের প্রতিনিধি হতে পারে । আমরা যারা সচেতন মানুষ রয়েছি তাদের উচিৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া মানুষ গুলোকে পথে ফিরিয়ে আনা । গনতান্ত্রিক অধিকার সম্পূর্ন ভোগ করার জন্য অবশ্যই দিবস পালনের সাথে সাথে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার প্রক্রিয়াও চলমান করতে হবে । একটি একটি করে পাড়া, মহল্লা এবং গ্রামে সহিংশতা, চুড়ি, ডাকাতি, মানুষ খুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করি । তাহলেই একদিন গনতন্ত্রের সঠিক স্বাদ পাওয়া শুরু হতে পারে । আবারও গভীর শ্রদ্ধাবোধ জ্ঞাপন করছি গনতন্ত্রের জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেওয়া শহীদ নূর হোসনের প্রতি ।
(সাঈদ চৌধুরী, রচনা কাল ১০ই সেপ্টেমবার-২০১৩ইং)