অভাব
ছোটকাল থেকেই মাসুমের মনটা সরলতা ও মায়ায় পূর্ণ। নামাজ পড়া ও রোজা রাখার যথাসাধ্য অভ্যাসও তার মধ্যে আছে।
সেই মাসুম ইন্টারমিডিয়েটে পড়াকালীন এক রাতে বন্ধুদের সাথে হিন্দি ফিল্ম দেখতে বসে। সেটা শেষ হলে আরো একটা অন্যরকম ফিল্ম দেখা শুরু করে। পরের ফিল্ম টা দেখে খুব লোভ লেগে যায়। এরপর বিভিন্ন কু-কাজের সাথে সে জড়িয়ে যায়। সিগারেট পান করা, কু চিন্তা এমনকি সুন্দরী মেয়ের জন্য লালায়িত হওয়াও বাদ যায় না।
একদিন সে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ঢাকায় গমন করে।
এলাকা থেকে একবার এক চাচা তার কাছে এলে তার একটা কাজে তার সাথে তিতুমীর কলেজে যায়।
কলেজের মাঠে বসে থাকার সময় খেয়াল করে কিছুটা দূরে চারজন মেয়ে গল্প করছে। ওদিকে তাকাতেই দেখে অসম্ভব ফর্সা, বেশ লম্বা, আকর্ষণীয় অবয়বের লাল পোশাক পরা এক মেয়ে মাসুমের দিকে তাকিয়ে জিহ্বা বের করে আলতোভাবে নাড়াচ্ছে। মেয়েটার চুলগুলিও সুন্দর, বাতাসে উড়ছে।
তার চাচা কলেজের অফিসে কাজে গেলে সে দোকান থেকে সিগারেট কিনে ধোঁয়া উড়াতে থাকে। দূর থেকে মেয়েটি মাসুমের সিগারেট পান করা দেখে। এরপর মাসুম আগের জায়গায় আসে। কিন্তু মেয়েটি মাসুমের দিকে আর ফিরেও তাকায় না। মাসুম ভাবে, সিগারেট পান করার কারণেই কি মেয়েটি আর তার দিকে তাকাচ্ছে না? মাসুমের খুব আফসোস হয়।
রাতে খেয়ে শুয়ে পরে। মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ে। কলেজে তার সাথে আবার দেখা হয়। মেয়েটা তার দিকে এগিয়ে আসে। পরিচয় পর্ব সেরে ফেলার জন্য কোন কথা বলতে হয় না। সব কথা যেন মনে মনে আগেই বলা হয়ে গেছে। তাই হাত ধরাধরি করে রিক্সায় বসে দুজন। চলে আসে মাসুমের রুমে। মেয়েটার নাম মাসুম ধরে নেয় মিতা।
মিতা মাসুমকে বলে, তুমি এতদিন কোথায় ছিলে প্রিয়! আমি যে তোমাকেই খুঁজে এসেছি এতদিন।
মিতার রূপে পাগল হয়ে মাসুম মিতার দিকে এগিয়ে যায়।
পাশে শুয়ে থাকা চাচা একটা কথা মাসুমকে জিজ্ঞেস করতেই কল্পনার রাজ্য থেকে বাস্তবে ফিরে আসে সে।
এভাবেই চলে মাসুমের জীবন।
পড়াশোনা শেষ করে সরকারী চাকরি পায়। সুন্দরী, ভালো পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করে। কিন্তু কাছে বউ থাকার পরও সে বাজে কাজ ত্যাগ করতে পারে না। আকর্ষণীয় মেয়ে দেখলেই তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
একসময় তার মধ্যে অনুশোচনা আসে যে পাপ কাজ ছাড়তে হবে। চেষ্টা করে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু না পেরে চিন্তা করে এমন কিছু নাই যা আল্লাহ্ পারেন না। তাই সে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করতে থাকে পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু সুন্দরী মেয়ে দেখলেই মাথা ঠিক রাখতে পারে না।
এভাবে দুই বছর কেটে যায়। অভাব এসে আঁকড়ে ধরে। বিভিন্ন দোকানে বাকী হয়ে যায়। অন্যের কাছে ঋণ করা শুরু করে। বউকে সে কিছু কিনে দিতে পারে না। বউয়ের কাছে সে অপদার্থ মানুষ হিসেবে গণ্য হতে থাকে।
মাসুম ভেবে পায় না যে কেন এই সংকট?
সে আল্লাহ্র কাছে অভাব দূর হওয়ার জন্য সাহায্য চাইতে থাকে। কিন্তু তার অভাব দূর হয় না। সে অবাক হয়ে ভাবে, আল্লাহ্ কেন তার অভাব দূর করছেন না?
এমন সময় সে একটা পত্রিকায় পড়ে যে দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন এলে তওবা করতে হয়।
সে ভেবে পায় না যে দুঃখ-দুর্দশা আর অভাব-অনটনের সাথে তওবার সম্পর্ক কি? তওবা তো করতে হয় পাপ কাজ করলে। আর দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন তো ভিন্ন বিষয়।
তখন সে গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হয়। একসময় সে দুঃখ-দুর্দশা আর অভাব-অনটনের সাথে তওবার সম্পর্কটা বুঝতে পারে।
দুঃখ-দুর্দশা ও অভাব-অনটন আসে পাপ করলে। কাজেই দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন এলে তওবা করতে হয়।
মাসুম বুঝতে পারে যে তার অভাবের কারণ হয়তো এই পাপ কাজ। তার মানে এতদিন পাপ করছিল বলেই আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাওয়া সত্ত্বেও হয়তো আল্লাহ্ তার অভাব দূর করছিলেন না। সুতরাং তাকে তওবা করতে হবে।
তখন সে পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়। মানুষ অভ্যাসের দাস তখন এ কথাটার সত্যতা সে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারে। অভ্যাসের কারণে সে পাপ করতেই থাকে। ওর অভাব আরো বেড়ে যায়। এমন পর্যায়ে সে উপনীত হয় যে না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা হয়।
পাপ কাজের প্রতি তার মনে ভয় তৈরী হয়। জীবন বাঁচানোর তাগিদে সে পাপ কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরপর পাপ কাজের সুযোগ থাকার পরও তা করতে ইচ্ছা জাগলেই ভয় এসে ভর করে যে পাপ করলেই আল্লাহ্ তার অভাব আরো বাড়িয়ে দেবেন।
তার মনে পড়ে সে তো অভাব আসার আগে আল্লাহ্র কাছে দোয়া করেছিল পাপ কাজ ছাড়ার জন্য। হতে পারে যে আল্লাহ্ অভাব দেওয়ার মাধ্যমেই তাকে পাপ কাজ ছাড়ালেন। তার মানে আল্লাহ্ তাকে ভালবাসেন।
মাসুমের অভাব-অনটন দূর হবে কিনা তা সে জানে না। কিন্তু একটা জিনিস তো বুঝলো যে অভাবের কষাঘাতই তাকে পাপ কাজ ছাড়ালো। সে বাস্তবে প্রমাণ পেল যে দুঃখ-দুর্দশা আর অভাব-অনটন মানুষের মঙ্গলও করে।