Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

রম্যর রুশ সংকলন আর আমার আষাঢ়ে ভাবনা

: | : ১৪/১১/২০১৩

ভাইয়া কতগুলো পুরনো বই কিনে এনেছে – ‘রুশ গল্প সংকলন’ তার একটি । বইটি খুব ভাবাচ্ছে আমাকে । সময়ের থাবায় তেলচটা পড়া-পোকায় খাওয়া-হলদে হয়ে যাওয়া বইটি নয়, বরঞ্চ বইয়ে হাতে লেখা উৎসর্গ টিকাটিই এই ভাবনার মুল কারন !
বইয়ের বান্ডিলটা থেকে প্রথমেই ছোটখাটো আকারের বইটা হাত বাড়িয়ে নিই, কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে দেখে বইয়ের কভার পেজ উল্টাতেই দৃষ্টি আটকালো জেল কলমে সুন্দর হস্তাক্ষরের লেখা উৎসর্গ পত্রে —–
” রম্য’র জন্মদিনে
জানু খালা ও খালু
৫ / ৫ / ৮২
সর্বপ্রথম যে কথাটি আমার মনে এল তা হল, ‘উপহারও কেও এতো অবহেলায় বিক্রি করে দেয় ! তাও এমন একটি বই !!’
সেই শুরু, এরপর কত কত ভাবনা যে এসে ভিড় করতে লাগল জোর করেও মাথা থেকে তাড়াতে পারছি না ! বইটা হাতে নিয়ে বসে আছি কিন্তু তা পড়ার কথা ভুলে ‘রম্য, জানু খালা আর খালু’ এদের চিন্তা ঘিরে ধরেছে আমাকে !

ভাবছি – হয়ত বইটা ঘরের কোন কোনায় পুরোনো কাগজের স্তুপে ঘাপটি মেড়ে ছিল, অথবা কেউ রম্যর কাছ থেকে বইটি নিয়ে আর ফেরত দেয়নি এরপর এভাবে একদিন কাগজ ফেরিওয়ালার মাধ্যমে নীলক্ষেতে !
কিংবা সেই ৮২’র রম্য হয়তো আর বেঁচে নেই ! এমনটাও হতে পারে কেননা – এরকম বই যাকে উপহার দেয়া হয়েছিল সে নিশ্চয়ই তখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া বা চাকুরীজিবী । অন্তত আশির দশকের প্রেক্ষাপটে এরকম বই ওই বয়সী কারোরই পড়ার কথা । তাই হয়তো রম্যর ব্যবহৃত পুরোনো কাগজপত্রের সাথে তাকে উপহার দেয়া এই বইটিও বাতিল জিনিষের খাতায় নাম লিখিয়েছিল !
এরকমও হতে পারে রম্য হয়ত কোনোদিন বইটা পড়েওনি । কারণ বইটি পুরোনো হলেও এর একটি পৃষ্ঠাতেও কোন ভাঁজ নেই, এমনকি সামন্যতম ছেঁড়াও নেই পর্যন্ত । হতে পারে রম্যর বই পড়া পছন্দ ছিল না, তাই উপহারটি অপঠিতই থেকে গিয়েছিল !
জানু খালা ও খালু :
আশির দশকের শুরুতে যে ব্যাক্তিদ্বয় এমন উপহার দেন ধারনাই করা যায় – তারা যথেষ্ঠ রুচিবোধ সম্পন্য ছিলেন । হয়ত তারা তৎকালীন কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের কর্তা-কর্ত্রী – যারা ভাগ্নের জন্মদিনে উপহার হিসেবে বই পাগল রম্যকে এটি দিয়েছিলেন ।
য়াবার এমনওতো হতে পারে – জানু খালা ও খালু নিজেদের রুচি অনুযায়ী বই এনেছিলেন, যার জন্য উপহার তার পছন্দের কথা না ভেবে !
কিন্তু তা হবার নয় কারণ একদম প্রথম পৃষ্ঠায় ভিন্য কলমে, ভিন্য হস্তাক্ষরে লেখা —- “রম্য রহিম”
যার দ্বারা বইটিতে রম্য তার দাবি প্রতিষ্ঠা করেছিল ।

এতোসব আষাঢ়ে চিন্তা-ভাবনার খানিক বাদেই অবশ্য রম্য রহিমের পরিচয় জানতে পেরেছিলাম । তিনি সম্ভবত আগের একুশে টিভির একজন প্রযোজক ছিলেন ।
ভাইয়ার ভাষায় – ‘ওরা যে রকম সাহিত্যপ্রেমী পরিবার তাতে এমন বই উপহার দেয়াই সমিচীন । আর বাংলাদেশে তৎকালীন স্বৈরশাসনের সময়টায় সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া এদেশের সচেতন নাগরিকদের কাছে ছিল আদর্শ স্বরুপ ।”

সেই জানু খালা, খালু, রম্যরা কি আজও বেঁচে আছেন ? তারা কখনো ভেবেছেন তাদের সেই ৮০’র দশকের একটি ছোট্ট বই নিয়ে ৩০ দশক পর ২০১২ সালে এক তরুণী এমন আষাঢ়ে ভাবনায় মগ্ন হবে ?

২৪.৯.১২

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top