বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম
বর্তমানে বাংলাদেশের বৃক্ষরোপণ আন্দোলন অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যার ফলে গত ১০ বছরে বনজ, ফলজসহ প্রচুর চারা সরকারি ও বেসরকারি ভাবে লাগানো হয়েছে। তবে আমাদের আরো বৃক্ষরোপণ করা উচিত। কারণ বৃক্ষ মানুষের তথা গোটা প্রাণী সমাজের পরম বন্ধু। দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে বৃক্ষের অবদান সবচেয়ে বেশি। বৃক্ষ আমাদেরকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, আশ্রয়, ফল, ফুলসহ অসংখ্য উপকার করে থাকে। মানব জীবনে বৃক্ষের উপকারিতা অপরিসীম। বৃক্ষ থেকে তৈরি হয় ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র, নৌকা, ট্রাক, স্টীমার, লঞ্চ ইত্যাদি। তাছাড়া কাগজ, রেয়ন, দিয়াশলাই, প্যাকিং বক্স ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল যোগান দেয় বৃক্ষ। বৃক্ষের কাছে অনেকভাবে আমরা ঋণী। কারণ বৃক্ষ আমাদেরকে জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয়। বৃক্ষ থেকে আমরা বিভিন্ন প্রকার ঔষধ পাই। আমাদের গ্রামাঞ্চালে জ্বালানি কাজে বৃক্ষের ব্যবহার অত্যাধিক। তাছাড়া পশু পাখির জীবন ধারণ নির্ভর করে বৃক্ষের উপর। বৃক্ষ পরিবেশ, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ভারসাম্য বজায় রাখে। বৃক্ষ নদীর ভাঙ্গন থেকে ভূ-ভাগকে রক্ষা করে। মোট কথা বৃক্ষ আমাদের জীবন। বৃক্ষ না থাকলে আমরা এ পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে পারতাম না। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী বৃক্ষকে আমরা নানা কারণে কেটে ফেলছি। প্রাকৃতিক জ্বালানির অভাব, হাজার হাজার ইটের ভাটায় পোড়ানো বিপুল জনগোষ্ঠীর জ্বালানী ও আসবাবপত্রের চাহিদা মেটানো, চোরাচালান প্রভৃতি কারণে বৃক্ষ আমাদের কাছ থেকে উজাড় হতে চলেছে। যেভাবে গাছ কাটা হচ্ছে সেভাবে কিন্তু গাছ লাগানো হচ্ছে না। আমরা অনেকে হয়তো জানি না যে, কোন কারণবশত একটি গাছ কাটলে তার পরিবর্তে তিনটি গাছ লাগাতে হয়। তাই জীবন ধারণ ও জাতীয় স্বার্থে বৃক্ষ সম্পদ রক্ষার্থে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। ‘ধবংস নয় সৃষ্টি’ এ মনোবৃত্তি নিয়ে প্রতিটি মানুষকে বনায়ন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান দেশের জনসংখ্যার চাপে ফসলের জমি, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, কলকারখানা, ব্যবসা, বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বৃক্ষ হ্রাস পাওয়ার ফলে পশুপাখি, বন্যপ্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে।