Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-২

: | : ২৪/১১/২০১৩

অনিমেষ বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।হঠাৎ করে মাথা ব্যথা হবে কেন?বিয়ের দিনটা অন্তত মেয়েটার শরীরটা ভাল থাকা উচিৎ।ভগবানের এ কেমন লীলা,বুঝতে পারে না।
আনন্দি সব দিক সামলে পেরে উঠছে না।একবার এদিক যাচ্ছেতো,ওদিক থেকে ডাক আসছে।ওদিক থাকলে এদিক থেকে ডাক আসছে।মেয়েটার কাছেই এখন পর্যন্ত যাওয়া হচ্ছে না।পাশের বাড়ির কাকীমাদের বাড়িতে যাওয়া দরকার।পাশাপাশি বাড়িতে বিয়ে অথচ তাদের দেখা যাচ্ছে না।কি এক ঝগড়া হয়েছিল অনেকদিন আগে,সেটা ধরে আজকে বসে থাকলে হয়?চন্দ্রার বাবাকে সকালেতো একবার ডাকার জন্য যেতে বলা হয়েছিল,যে বেখেয়ালি মানুষ,হয়তো ভুলেই গেছে।এত বেখেয়ালি মানুষ দিয়ে সংসার চালানো যে কি কষ্ট তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
-কাকীমা,কাকীমা?
একজন বয়স্ক মহিলা বের হয়ে এল।মাথার সব চুল গেছে পেকে।তবে শরীরে বয়সের ছাপ অতটা পড়েনি।আনন্দি হাত ধরে নরম হয়ে বলল-কাকীমা,আজ আর রাগ করে থাকবেন না।ওই একটা মাত্র মেয়ে আমার,ছেলেটা কেবল এতটুকু।আমাদের উপর রাগ করে না গেলে বিয়ের আনন্দই যে মাটি হবে।
কাকীমা হাত সরিয়ে নিল।মুখটা অন্যদিকে করল।আনন্দি আবার হাত ধরল-কাকীমা,আমায় না করবেন না।
-যাও আসছি।
-তবে এখনি চলুন।
কাকীমা হেসে বলল-বিয়ে বাড়ি।আমি এই অবস্থায় গেলে হবে না বউমা।নাতনীর বিয়ে বলেতো কথা।
-তবে তাই আসুন।আমি যাই।

চন্দ্রা ভাবছে।বিয়ে সম্পর্কে ভাবনা।বলা যায় একসময় এ নিয়ে রোজ স্বপ্ন দেখত।অতি সাধারণ একটি স্বপ্ন।কমবেশি সবমেয়েই বোধ হয় দেখে।একটি ছেলে আকাশ হতে জাদুর গলিতে চড়ে আসছে।চুলগুলো স্পাইক করা,চোখে রঙ্গিন চশমা।পরনে জিন্সের প্যান্ট আর চাঁদলী সবুজ বর্ণের টি শার্ট ।এত সুন্দর লাগছে ছেলেটাকে,বোধহয় এমন সুন্দর ছেলে আর পৃথিবীতে আর একটা নেই।একসময় জাদুর গলি হতে সামনে এসে দাঁড়ায়।
-হাই চন্দ্রা।
-কে আপনি?
-আমি কে সেতো বলা যাবে না।
-বলুন না?
-আসলে আমরা কি কেউ জানি আমরা কে?
-এসব দার্শনিকমার্কা কথা বাদ দিবেন?এবার আপনার নামটা বলুন।
-কোন নামতো আমার নেই।
-তোমার বাবা মা কোন নাম দেয়নি তোমার।
-তুমি দিবে বলে তারা কোন নামই রাখেনি।
চন্দ্রা এবার হাসল।বলল-তাই বুঝি?
-ইয়েস ম্যাডাম।তুমি নাম দিবে বলে কতদিন ধরে অপেক্ষা করছি।
-সে আমি কিছুতেই পারব না।তোমার নাম তুমিই ঠিক করে নাও।
-তুমি যখন দিবে না,তখন আর কি করার?তাহলে আগের মতই নামহীন থাকি,তাতে কার কি আসে যায়?
-তুমি রাগ করলে?
-আমার রাগে কার কি আসে যায়?আমিতো আর কার কেউ নই।
-আচ্ছা যাও।তোমার নাম,তোমার নাম,ধারাও ভাবছি।
চন্দ্রা ভাবতে থাকে।কি নাম দেয়া যেতে পারে,ভাবতে থাকে।
-কি হল?
-এত তাড়াতাড়ি কোনকিছু হয়?
-আমার যে দেরি সহ্য হচ্ছে না।একটু জলদি কর।
-এসব কাজ এভাবে হয় ?আচ্ছা পরে ঠিক করে রাখব।
-যা ভাল মনে করেন ম্যাডাম।
-দেখ,এরকম ম্যাডাম ম্যাডাম করবে না।ম্যাডাম ম্যাডাম করলেই মনে হয়,কাউকে পড়াচ্ছি।
-আচ্ছা চাঁদ দি।
-আমার নাম আবার চাঁদ হলো কবে?আমি তোমার দিদি হই কিভাবে?
-না এমনেই বললাম।
-না এরকম ফাযলামি তুমি করবে না।এরকম ফাযলামি আমার পছন্দ না।
-আমি তোমার হাতটা একটু ধরি।
চন্দ্রা হাতটা বাড়িয়ে দেয়।ছেলেটাও হাত বাড়িয়ে দেয়।দুজনের হাত খুব কাছাকাছি আসে।কিন্তু ছোয়া লাগে না।ঠিক এই সময়েই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়।প্রতিবার ঠিক এমন সময়েই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায় কেন,বুঝতে পারে না।ছোয়া লাগলে দোষ কি ছিল?মনে মনে আফসোস থেকে যায়।মনে করে আবার যখন আসবে,তখন প্রথমেই ছোয়ে দিবে।কোনভাবেই লজ্জাশরম করে দেরি করবে না।কিন্তু কোনবারই তা হয়ে উঠেনা।এমন সময় পাশের বাড়ির কর্তা ধাক্কা দিয়ে বলে-কি দিদিভাই,চোখ বন্ধ করে, মনে মনে কি মন কলা খাওয়া হচ্ছে?
চন্দ্রা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলে-না কর্তা,কিছু না।
-বুঝি সবই বুঝি,বসে বসে বরের স্বপ্ন দেখছিলে বুঝি?
-কি যে বল কর্তা?
-বুঝি সবই বুঝি,বয়সতো আমারও ছিল একদিন।
-বুঝ,কচু বুঝ।
কর্তা হাসে।বলে-নাতজামাই আমার নাকি বেশ,রাজরাণী হয়ে থাকবি শুনলাম।
-রাজরাণী না ছাই।ওরকম বুড়োর সাথে বিয়ের হওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল।
-ওরকম কথা বলে না দিদিভাই,বর হচ্ছে দেবতার মত।
-দেবতা না ছাই।তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিব,ওমন দেবতা আমার দরকার নেই।
-আমিতো বিয়ে করতেই চাই।কত দিন আগে বিয়ে করেছিলাম,আজ আবার,ও কি যে মজা লাগছে দিদি ভাই।
কর্তা একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে।মাঝে মাঝে অশোভন কথাও।বাসর রাতে বর বধূর সাথে কি করে,কিভাবে কথা বলে এসব।
-তুই কিন্তু একদম পাত্তা দিবি না।বিড়াল মারতে হয় প্রথম রাতেই।নইলে সারাজীবন ম্যাও ম্যাও করতেই থাকবে।বুঝলি?মনে থাকবেতো?
চন্দ্রা মাথা নাড়ল।হা হু তেমন কিছু করল না।কর্তা অন্যদিকে গেল।চন্দ্রা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।যেন বেশ বাঁচা বাঁচল।
বিকেলবেলা।সুশীল বাড়ি হতে কিছু দূরে মাঠে গিয়ে একবার এদিক যাচ্চেতো আরেকবার ওদিক যাচ্চে।মেয়ের যে বিয়ে একথা ভাবলেই তার যেন কেমন লাগছে।বুকের ভিতরটা ধক করে উঠছে।যেন কি যে ধন তার হারিয়ে যাচ্ছে,এ ধন যে সে আর ফিরে পাবে না।খুব অস্থির অস্থির লাগছে।বাড়িতে যাওয়ার কোন ইচ্ছেই হচ্ছে না।মাঠের এক পাশে বসে।সামনে পুকুর।পুকুরে খুব বেশি পানি নেই।বড়জোর হাটুপানি হবে।কয়েকটা হাঁস বেশ আলস্য ভঙ্গিতে সাতার কাটছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে,বেশ আরামে আছে।সুশীল একটা ঢিল ছুড়ে।এদিকে কত কি কান্ড হয়ে যাচ্ছে,এদের যেন আনন্দ ধরে না।বাবা মেয়ে কতদিন যে এই মাঠ দিয়ে হেটেছে,দৌড়িয়েছে,পুকুরের পাশে বসেছে,তার ইয়ত্তা নেই।দুইজনে পুকুরে ঝাপাঝাপি করেছে,হাঁসের পিছনে ছুটেছে।একবারতো হাঁস ধরতে না পারায় যে কান্না,পরে বাজার থেকে হাঁস কিনে এনে শান্ত করতে এসেছে।বশি দিয়ে বাবা মেয়ে মিলে মাছ ধরেছে।মাছ ধরতে পারলে মেয়ে যে কি খুশি হত,মনে হত পৃথিবীতে স্বর্গ নেমে এসেছে।
-বাবা পুকুরে নামি চল।
-চল।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top