Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-৩

: | : ২৫/১১/২০১৩

-বাবা আমাকে একটা হাঁস ধরে দাও না?আমার হাঁস ছুতে বেশ ইচ্ছে করছে।
সুশীল পুকুরে নেমে চুপিচুপি হাঁসের পেছনে ছুটল।হাঁসগুলো বেশ চালাক।ধরার আগে নাগালের বাইরে চলে গেছে।কিন্তু তাকে যে হাঁস ধরতেই হবে।আজ মেয়ের বিয়ে,মেয়ে হাঁস ছুতে চেয়েছে,হাঁস না ধরে কিছুতেই পুকুর হতে উঠা যাবে না।সুশীল বেশ দৌড় ঝাপ পেড়ে প্রায় পনের বিশ মিনিট পর একটা হাঁস ধরে।ধরেই ডাক দেয়-বুড়ী,বুড়ী,সবচেয়ে ভাল হাঁসটা ধরে ফেলেছি।দেখ।
আশে পাশে কাউকে দেখতে পায় না।আবার ডাকে-বুড়ী,বুড়ী?
কোন সাড়া মিলে না।বুঝতে পারে এ তার মনের ভুল।হাঁসটা ছেড়ে দেয়।হূ হূ করে কেঁদে উঠে।
বাড়িতে লোকজন ভরা।চাঁদ কাপড় সম্পন্ন করার জন্য বরপক্ষের কিছু লোক এসে গেছে। চন্দ্রাকে উঠোনে বসানো হয়েছে।পড়েছে টকটকে লাল বর্ণের শাড়ি।তাকে ঘিরে আছে লোকজন।তার সামনে আছে বেশ বড় ধরণের রুই মাছ।মাছটার চোখের পাশে বড় করে দেওয়া হয়েছে সিন্দুরের ফুটা।চন্দ্রার কাকী বলল-বিয়াই এবার শুরু করেন।
বরের কাকা মঙ্গলদীপ হাতে নিয়ে কনের মাথার সামনে দিয়ে ঘুরাচ্ছে।মেয়েরা ওলুধ্বনি দিয়ে মাতিয়ে তুলে চারদিক।এরপর কিছু দূর্বা আর ধান কনের মাথায় দেয়।কনে প্রণাম করে।পাশ হতে এক প্রতিবেশী বলল-বিয়াইয়ের হাত কি খাটো নাকি যে মেয়ের মাথা স্পর্শ করল না।
-না না,কি যে বলেন?হঠাৎ করে আপনার এত সুন্দর মুখখানা দেখতে পেলাম আর সাথে সাথে ভুলে গেলাম হাত যে কনের মাথায় ছোয়াতে হবে।দোষ কার বলুন?
সাথে সাথে প্রচন্ড হাসাহাসি শুরু হল।
-তাই বুঝি,বুড়ো বয়সে আবার ভীমরতি।
আবার হাসাহাসি শুরু হল।
-ভীমরতি কি বলছেন,সৌন্দর্যের প্রতি সবারি দুর্বলতা আছে।
বরপক্ষের পর কনেপক্ষ আর্শিবাদ করল।এরপর কয়েকজন মিলে চন্দ্রাকে রুমে নিয়ে গেল।বরপক্ষের লোকজন এদিক ওদিক হাটাহাটি করছে।কেউবা বসে আছে।দুই একজন আফসোস করছে।কি দেখে ছেলেটা এ বাড়িতে বিয়ে করছে?একেবারে গেয়ো।এতক্ষণ ধরে যে এসেছে আদর যত্ন কিচ্ছু করছে না।চা পানি পর্যন্ত দেয়নি।একেবারে যে ছোটলোক তা হাড়ে হাড়ে বুঝা যাচ্ছে।
সন্ধ্যার আযান পড়ল।কনেপক্ষের লোকজন চন্দ্রাকে সাজাচ্ছে।চন্দ্রার বুক ফেটে কান্না আসছে।ওই বুড়োটাকে তার সত্যি সত্যি বিয়ে করতেই হচ্ছে।ওর পাশের বাড়ির বান্ধবী বলল-ও তোকে যে আজ লাগছে না?মনে হচ্ছে আমিই প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।তোর উলু চান দেখলেতো আজ চোখই ফিরাতে পারবে না।
বাকি সবাই এ কথা শুনে হেসে দিল।চন্দ্রা মনে মনে বলল-ঐ রূপই তো যত গন্ডগোল পাকালো।দূর ছাই তোর রূপ।
কিন্তু মুখে বলল-তোরা সব থামবি।মাথা ধরে যাচ্ছে।
আরেকজন বলল-ধরুক না মাথা।ব্যথানাশক তো এসেই গেছে।
চন্দ্রার কাকাতো ভাই এসে বলল-দিদি একটু হাসতো,একটা ছবি তুলি।
চন্দ্রা হাসার চেষ্টা করল।কিন্তু হাসি আসল না।
-দিদি কি হল?এরকম গুমরা মুখে ছবি তুললে ছবি একেবারে পেঁচার মত দেখা যাবে।
-এখান হতে যাবি?এমনেতেই যন্ত্রণায় আছি।
সন্ধ্যা বেলা।বিয়ের লগ্ন হতে আর আধা ঘন্টা বাকি।অনিমেষের মাথা বার বার গরম হয়ে যাচ্ছে।ছেলেগুলোকে এত বারবার করে বলা হল,বিয়ে সাতটার লগ্নে।তাড়াতাড়ি কর।কার কথা কে শুনে?
-তোমাদের কাজ কখন শেষ হবে?
-এইতো মামা,আর কিছুক্ষণ।
-এখন কয়টা বাজে দেখেছ?তোমরা দেখি সত্যি সত্যি বিয়ের বারটা বাজিয়ে ছাড়বে।জলদি কর।
এরপর অনিমেষ কনে সাজানোর রুমে ফুচকি মারল।কনেকে সাজানো কতদূর,দেখার জন্য।রুমে ঢুকল।
-কনে সাজানোর কি অবস্থা?
চন্দ্রার পাশ হতে একজন বলল-এইতো মামা।মিনিট পাঁচেক।
-তাড়াতাড়ি কর।সাড়ে ছয়টা কিন্তু বেজে গেছে।
এই বলে রুম হতে বের হল।এই সময়ে সানাই বাঁশি বন্ধ,এটা কোন কথা হল?লোকগুলোর কি কোন কমন সেন্স নেই?একটু পরে বিয়ে শুরু হবে অথচ বাজনা বাজছে না।এটা কোন কথা হল?এদের ভাড়া করাই ভুল হয়েছে।
-দাদারা বাজনা বাজান।এভাবে হাত গুটিয়ে পরেও রাখতে পারবেন।
-এইতো বাবু,একটু জিরাচ্ছি।শুরু করব।
বিয়ের লগ্ন শুরু হয়ে গেছে।চারদিকে হইচই পড়ে গেল।কনেকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।বরপক্ষকে এখনো জানানো হয় নি।বরপক্ষ বারবার বিয়ে শুরু করার তাগিদ দিচ্ছে।শুরু করছি-এই বলে অনিমেষ সরে এল।মানসম্মান বুঝি এবার সব গেল।আনন্দি কিছু না বলে কাঁদতে শুরু করল।অনিমেষ চার পাশে লোক পাঠালো।
-দিদি এখন কান্নার সময় নয়।চারপাশে লোক পাঠাচ্ছি।যেকোনভাবে ওকে খোঁজে বের করবই।
বরপক্ষের কানে খবরটা চলে গেল।বর শুনেতো হতবাক।তার মনটায় কেমন জানি খারাপ হয়ে গেল।একজন বলল-বেশ বাঁচা বাচলি দোস্ত,এই রকম মেয়ের সাথে বিয়ে হলেতো লাইফ শেষ হয়ে যেত।
পাশ হতে তৎক্ষণাৎ আরেকজন বলল-শুধু শুধু মেয়ের দোষ দিয়ে কি হবে?এ পরিবারের দোষ।
বুড়ো মতন এক লোক বলল-কি মেয়েরে বাবা,এই বয়সেই এত কিছু?
বরপক্ষ একরকম ঝগড়া শুরু করল।কিছু লোক অকথ্য ভাষায় ফ্যামিলি সম্পর্কে গালাগালি করল।আনন্দি বরের বাবাকে কড়জোড়ে বলল-দয়া করে আপনারা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন।মেয়ে আমার আশেপাশেই আছে।
-এক কাজ করেন,যে ছেলের কাছে গেছে তার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন না?শুধু শুধু অন্য ছেলের জীবন নষ্ট করে লাভ কি?
এই বলে বরের বাবা চলতে লাগল।সাথে সাথে অন্যরাও।আনন্দি বরের বাবার পা পর্যন্ত ধরল,তাতেও কাজ হল না।

সপ্তাহখানেক পর।আনন্দির অবস্থা এখনো নরম্যাল হয়ে উঠেনি।খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করছে না।সুশীল মনে মনে বেশ খুশী।কিন্তু তাকে অভিনয় করতে হচ্ছে দুঃখ পাওয়ার।জীবনে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছে ছিল।ছোটবেলায় অভিনয় করার প্র্যাকটিসও করত।সেটা যে এতদিনে কাজে লেগে যাবে,তা কখনো ভাবতে পারেনি।একেবারে যে রিয়েল লাইফ সো।চন্দ্রা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।মেয়েটার উপর বেশ ধকল গেছে।তার মা ওকে বেশ করে বকেছে।এরকম মেয়ে না থাকায় ভাল,বিষ খেয়ে মরে যাওয়া উচিৎ ইত্যাদি ইত্যাদি।চন্দ্রা অবশ্য মুখ ফুটে কিছু বলে নি।শুধু কান পেতে শুনে গেছে।তখন তার বলার সময় না।শুনার সময়।মেয়েকে পালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি অবশ্য সুশীলের।একটা সিএনজি ভাড়া করে রেখেছিল।হোটেলে রুম বুক করা ছিল।সিএনজিতে করে সরাসরি হোটেলে চলে যায়।ব্যস বিয়েটা ভেঙ্গে গেল।চন্দ্রা অবশ্য বলেছে শহরে এক বান্ধবীর বাসায় ছিল।এটাও বাপের পরামর্শে বলা।মা মামা মিলে যেভাবে জেরা শুরু করেছিল,তাতে প্রায় ধরা খেতে গেছিল।ধরা খেতে খেতেই খায়নি।
-বুড়ী,বুড়ী,উঠ।আমি গেলাম।সকাল দশটা বেজে গেছে।
চন্দ্রা তাকালো।মেয়ের মাথায় হাত ভুলালো সুশীল।কিছুদূরে একটি সরকারি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে।ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।যাত্রা শুরু করল।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top