ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-৬
দীনেশ হেসে হেসে এগোতে থাকে।যেন পৃথিবীর সবচেয়ে মজার কর্মকান্ডটা করছে।দীনেশ লুঙ্গির প্যাচ ধীরে ধীরে টান দিচ্ছে।
-দীনেশ,এটা কিন্তু ভাল হচ্ছে না।একবার ছাড়া পেলে কিন্তু তোর খবর আছে।
সুমন বলে- তাড়াতাড়ি কর,আর ধরে রাখতে পারছি না।
-শৈল্পিক উপায়ে করত দে,যেন তেন মানুষের লুঙ্গিতো খুলছি না।লেখক মানুষের লুঙ্গি।
এমন সময় দীনেশ লুঙ্গিটা একেবারে খুলে দিয়ে দৌড় দিয়ে রুমের বাইরে চলে গেল।বাকি দুইজন ওর পিছু পিছু ছুটতে লাগল।সমুদ্র লুঙ্গিটা ঠিক করে একটা হকিস্টিক নিয়ে ধাওয়া করল।এতক্ষণে বোধহয় ওরা নিচে নেমে গেছে।চারতলা হতে নামতে ইচ্ছে হল না।নিচে নামলেও বোধহয় লাভ হবে না।এতক্ষণে এমন জায়গায় চলে গেছে যে খুজে পাওয়া যাবে না।রুমে ঢুকে।ঠিক তখনি রিংটোনটা বেজে উঠে।বুকটা ধক করে উঠে।মোবাইলের দিকে ভীত নয়নে তাকায়।
-হু অর্ণব।
-এখন আমাকে কল দে।আমি তোকে ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি।
সমুদ্র কল কেটে দিল।এরপর কল দিল।
-সমুদ্র,ও চন্দ্রা;চন্দ্রা আমার বন্ধু সমুদ্র।
-নমস্কার ভাইয়া।
-নমস্কার।
অর্ণব বলল-তোমরা কথা বল।
-আপনি কেমন আছেন?
-এই তো ভাল।আমাকে আপনি আপনি করবেন না,আমি আপনার অনেক জুনিয়র।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-আপনি কেমন আছেন?
-বেশ ভাল।
কিছুক্ষণ চুপচাপ।চন্দ্রা নীরবতা কাটিয়ে বলল-কিছু জানার থাকলে বলুন।
-আ আ চাকরি করার ইচ্ছে আছে?
-বাবার পয়সা খরচ করে পড়াশুনা করছি,চাকরি করব না,তা কি হয়?
-আপনার আ তোমার কিছু বলার থাকলে বল।
-পড়াশুনা শেষ করে বিদেশে যাবেন?
-না,দেশেই কিছু করে খাওয়ার ইচ্ছে আছে।তোমার?
-বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করব।দেখা যাক।
-ভাল।অর্ণব তোর কি অবস্থা?
-এইতো ভাল।তোর কি খবর?
-ভাই চাপের উপর আছি।থিসিসের কাজে এত ঝামেলা,আর ভাল লাগে না।
-থিসিসের কাজে চাপ তো থাকবেই।
-তার উপর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস।একদম অবস্থা খারাপ।
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ দুই বন্ধুর মধ্যে কথা চলতে থাকে।চন্দ্রা অবশেষে বিরক্ত হয়ে বলল-ভাই আমি রাখি।আপনাদের বন্ধুর মধ্যে আমিতো তৃতীয় পক্ষ।
-আরে না, কথা বল।
-না ভাইয়া।
-আরে কথা বল।সমুদ্র ওর সাথে কথা বল।
-তোমার ফেসবুক আইডি আছে?
-ফেসবুকেই তো সারাক্ষণ থাকি।
-ইমেইল টা দেওয়া যাবে?
চন্দ্রা ইমেইল এ্যাড্রেসটা দিল।সমুদ্র বলল-থ্যাংক ইউ।
-আর কিছু জানার আছে।
-না,আরতো জানার মত কিছু খুজে পাচ্ছি না।আজকের মত রাখি।ভাল থেকো।
-আচ্ছা,ভাল থাকবেন।
এই বলে সমুদ্র ফোন কেটে দিল।আকাশের বেশ রাগ উঠছে।বলদ একটা,কথার মধ্যেই কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে।প্রেস্টিজ একেবারে শেষ করে দিল।আরে বাবা,কথা বলবি ওর সাথে,তা রেখে যত কথা আমার সাথে শুরু করেছে।এত কমনসেন্সের অভাব হলে কেমন হয়?
সমুদ্র রুমে এসে সব সবিস্তারে বর্ণনা করল।দেখা গেল,ওর থেকে রুমম্যাটদের চন্দ্রা সম্পর্কে আগ্রহ বেশি।সুমন কিউবির মডেম অন করেই ফেসবুকে ঢুকে।
-কি যেন বললি?
-চন্দ্রা।
-আরে পেয়ে গেছিতো মনে হচ্ছে।ঢাবি।অণুজীব,প্রথম বর্ষ।
-হু।
-মেয়েতো সুন্দর,সেইরকম।
রাহাত বলে-এ মেয়েতো কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না।
দীনেশ হেসে বলে-বন্ধু তোমার তো রাজ কপাল,এমন মেয়ের সাথে,ও ভাবতেই পারছি না।
সমুদ্রের মনে আঁকা কল্পিত মেয়েটার সাথে চন্দ্রা মিলল না।তবু মুখ ফুটে কিছু বলল না।ওদের বাদরামি ভালই লাগছে।সুমন হাত তালি দিয়ে বলে উঠল-এই ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট এ্যাকসেপ্ট করেছে।অনলাইনেও আছে।
রাহাত বলল-একটা হাই দেতো।
সুমন হাই দিল।সাথে সাথেই হাই ব্যাক এল।
-কি কর?
-এইতো বসে বসে মুভি দেখি।আপনি কি করেন?
-তেমন কিছু না।তোমার কথা ভাবছি।
-ও তাই।আমায় নিয়ে এত ভাববেন না,শেষে পাগল হয়ে যাবেন।
-আমিতো পাগল-ই হতে চাই।
একথা লিখে ওরা একযোগে হাসা শুরু করে।একেকজনের তাও আবার কি হাসি,যেন সমগ্র পৃথিবী জয় করেছে।সমুদ্রের মাথাটা শুধু ভনভন করছে।এরা যে কি ভেজালে ফালায়,কে জানে?
-তাহলে আর দেরি না করে পাগলাগারদে চলে যান।
-তুমি বললে পাগলাগারদ কেন,পৃথিবীর সব জায়গায় যেতে রাজি আছি।
-আচ্ছা এখন বাই।পরে কথা হবে।
-ওকে বাই।
সুমন হেসে বলল-ভাই মেয়েটার সাথে আমি প্রেম করি,তুইতো প্রেম করবিই না।
-বন্ধু দিয়েছে।এখন আমি তোর কথা কিভাবে বলি?
-তুই মেয়েকে সোজাসাপ্টা বলে দে,তোর একদম পছন্দ হয় নাই।কিন্তু এক বন্ধু প্রচন্ড পছন্দ করেছে।
-আচ্ছা দেখি।
এই বলে ওর বেডে এসে বসে সমুদ্র।ওর পিসিটা অন করে।ফেসবুকে ঢুকে মেয়েটার একটা শাড়ি পড়া ছবি কপি করে।এরপর ভাল করে দেখে।বেশ তো।চেহারার মধ্যে আর্ট আছে।ভারি সুন্দর মুখ।মুখে ঝকঝকে সুন্দর হাসি।ওর সব ইনফরমেশন দেখছে।কি পোস্ট দিচ্ছে, কে কে পোস্টে কমান্ড দিচ্ছে,খুটিনাটি যা জানা যায়,সব জানার চেষ্টা করছে।মেয়েটার মোটে মাত্র দুইটা ছবি খুজে পেল।আরেকটা ছবিতে দুইহাত ছড়িয়ে দিয়েছে যেন মুক্ত বিহঙ্গের মত ডানা মেলে উড়াল দিবে।বেশ লাগল মেয়েটাকে।শাড়ি পড়া ছবিটাকে ডেস্কটপে পিকচার হিসেবে সেট করে।
নীলিমা গলা ছেড়ে গান গাইছে।মাঝে মাঝেই রুমের ভিতর গলা ছেড়ে গান গায়।মনে মনে রুমের অন্যরা বিরক্ত হয়।কিন্তু কিছু বলে না।গানের লাইনেরও ঠিক নেই।এক গান গাচ্ছে তো এই গানের,আরেক গান অন্যগানের।জগাখিচুড়ী যাকে বলে।শিলা চন্দ্রার পাশে এসে বসে-কি চাঁদ দি,তোমার তাহলে হয়ে যাচ্ছে?
চন্দ্রা হেসে বলে-কি?
-ছেলে না মেয়ে?
নীলিমা গান ছেড়ে বলল-তলে তলে এতদূর,শেষ পর্যন্ত এই ছিল তোর মনে?
মিলা হাসি চেপে রেখে বলে-তাইতো দিন দিন পেট বেড়ে যাচ্ছে।
নীলিমা কাছে এসে চন্দ্রার পেটের দিকে ভাল করে তাকাল।–মিলা সত্যিইতো?
মিলা বিজ্ঞের মত বলে-সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
-এই সত্যি করে বলতো তোর কয় মাস?
-তোরা ফাযলামি ছাড়বি?
-দেখ বিষয়টা জটিল।সববিষয় এমনভাবে উড়িয়ে দিলে হয় না।
মিলা মৃদু কন্ঠে বলে-কি পাওয়ার রে বাবা,একদিনেই মেয়েটার এমন বেগতিক করে দিল।বলতে হবে ছেলেটার আছে,বেশ জোর আছে।
নীলিমা বলে-আকাম যখন করেই ফেলেছ,তখন আর কি করার?দেখি বাবাজীর ছবি?
চন্দ্রা ফেসবুকে ঢুকল।সমুদ্রের প্রোফাইলে ঢুকে।নীলিমা প্রোফাইল পিকচারের দিকে বড় বড় করে তাকিয়েই চিৎকার দিয়ে বলল-দেখছিস কি হট?
মিলা,শিলা মাথা নাড়ে।
-এই ছেলেতো পুরাই বউ ভক্ত হবে।বউ ছাড়া কিছু বুঝবেই না।বউয়ের কথায় কান ধরে উঠবে আর বসবে।চাঁদ তুই যে কত বড় ভাগ্যবতী,বুঝতে পারিস?
-অনেক হয়েছে,যার যার বেডে যেয়ে এবার ঘুমা।আমাকে নিয়ে তোদের এত ভাবতে হবে না।
কয়েকদিন পর।সমুদ্র সময় পেলেই ফেসবুকে ঢুকে।ঢুকেই অনলাইনে কে কে আছে, চেক করে,চন্দ্রা না থাকলে কেমন কেমন জানি লাগে,নিজেও বুঝতে পারে না।মেয়েটার প্রোফাইল পিকচারটা দেখে।এরপর কিছুক্ষন ওয়েট করে।চ্যাটে না এলে লগ আউট করে দেয়।রাত্রি এগারোটা।ফেসবুকে ঢুকে।চন্দ্রা অনলাইনে আছে।
-হ্যালো চন্দ্রমুখী দেবী।
-আপনি আমার ওই সুন্দর ছোট নামটা ধরে ডাকেন।
-আচ্ছা,চন্দ্রা কেমন আছ?
-ভাল।আপনি?
-এইতো চলছে।তোমার বড় ভাই কেমন আছে?
-সর্দি লাগছে।আপনারা খুব ভাল বন্ধু?
-খুব ভাল বললেও ভুল হবে,এর থেকেও বেশি।তোমার সম্পর্কে বেশ ধারণা দিয়েছে।
-কি বলেছে?
-তোমার বাড়ি টাংগাইল সদরে।তোমরা এক ভাই এক বোন।
-আর?
-তুমি নাকি মেয়েই না?
-মানে কি?
-পরী।অসম্ভব ভাল মেয়েদের একজন।তোমার দিকে তাকালে নাকি চোখ ফেরানো যায় না?
-অর্ণব বলেছে?
-আর কত কি বলেছে?
-আর কি?
-লম্বায় পাঁচ ফুট দুই,ওজন ৪৭ কেজি।
-এসব বলেছে?
-হু।
সমুদ্র আরও কিছু লিখতে যাবে,চন্দ্রা ফেসবুক হতে বেরিয়ে গেল।পাঁচ সাত মিনিট পর রিংটোনটা বেজে উঠে।
-হু আকাশ?
-সমুদ্র,আমি তোমাকে ওসব কথা বলেছি,তুমি সুন্দর,তাকালে চোখ ফেরানো যায় না?
-ভাই আমিতো ওকে সরাসরি দেখিনি,তাই তুমি বলেছ,এভাবে বলেছি।
-ওসব বলো না।তাতে খারাপ ভাববে।ছবি দেখে তোমার যা ভাল লাগে,তাই বল।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-উচ্চতা ওজন এসব কি?
-ছবি দেখে ধারণা করছিলাম।তাই বলেছি।
-আচ্ছা রাখি।ভালভাবে চালিয়ে যাও।
-ওকে।
সমুদ্রের মনটা কিছুটা খারাপ হল।বন্ধু কোন কাজের জন্য এভাবে কোনদিন বলেনি।সুমন অভিনয় করে বলছে-ও চন্দ্রা,আমি তোমাকে ভালবাসি।খুব বেশি ভালবাসি।বল,কোনদিন আমায় ছেড়ে যাবে না।আমার বুকে হাতটা রেখে দেখ।আজকাল হৃদপিন্ডের কম্পন কত বেড়ে গেছে,যেন সাগরের উত্তাল ঢেউ।চন্দ্রা,চন্দ্রা,তুমি কই,এভাবে চলে যেও না।তুমি চলে গেলে আমি বাঁচব না।
এই বলে সুমন কাঁদতে শুরু করে।রাহাত আর দীনেশ বেশ জোরে জোরে হাত তালি দেয়।রাহাত একটা খালি মদের বোতল তুলে দেয়।সুমন ঢুলতে ঢুলতে বলে-তুই,তুই চন্দ্রা?ছি ছি ছি,এটা তুই কেমনে করলি?তোর মুখের দিকে তাকাতেও আজ আমার বড় ঘৃণা হয়।তুই চলে যা,আমার সামনে হতে চলে যা।
এই বলতে বলতে বিছানার উপর ঢলে পড়ে।
মোহিত ঘুম পাড়ার চেষ্টা করছে।আধা ঘন্টা যাবৎ শুয়েও আছে।তবুও ঘুমের কোন চিহ্ন খুজে পাচ্ছে না।মোবাইলটা বের করে।বিকেল চারটা বাজে।চন্দ্রাকে কল দিল।
-মোহিত বল।