মুক্তি যুদ্ধের গল্প (৩য় পর্ব )
৩য় পর্ব
_______________
গুড মর্নিং শুভ।
গুড মর্নিং মামা। কেমন আছেন?
আমিতো ভাল আছি। তোমরা কেমন আছ?
জি মামা, আমরাও ভাল আছি।
আজ কি বার মামা?
হ্যা ভাগ্নে, জানিতো আজ শুক্রবার।
তাহলে আজ কি হবে?
হ্যা হবে। তবে আজ রাতে নয়। আজ হবে দুপুরে খাওয়ার পর।
ঠিক আছে মামা তাই হবে। শুভ বলল।
আচ্ছা শুভ অনিরুদ্ধ কই?
মামা, ভাইয়া তো পড়তে গেছে।
ঠিক আছে, সে আসলে প্রথম খাওয়া দাওয়া হবে। তারপর হবে এদেশের মুক্তি যুদ্ধের
গল্প। কথা বলতে বলতেই অনিরুদ্ধ প্রবেশ করলো।
আসসালামুয়ালাইকুম মামা ।
ওয়ালায়কুম আসসালাম । ভাগ্নে, কেমন আছ তুমি?
জি মামা ভাল আছি।আপনি কখন এলেন?
এইতো অল্পক্ষণ আগে । শুভর সাথে কথা হচ্ছিল। ঠিক আছে তোমরা তাহলে খেয়ে নাও।
চলুন মামা আগে খেয়ে আসি । তার পর কথা হবে নিরিবিলিতে।
শুভ তোমরা শুয়ে পর । আর আমি সে দিন কার কথা বলেছিলাম মনে আছে?
জি মামা । শহীদ তিতুমীরের কথা । সে দিন না মামা তিতুমীরের জন্য আমার খুব খরাপ
লাগছিল।
হ্যা তাইতো হওয়া উচিত । কোন দেশ প্রেমিক লোকের আত্ব ত্যাগের কথা শুনে যদি তোমার খারাপ লাগে তাহলেই ধরে নিতে হবে দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য তোমার ভাল বাসা আছে । যাই হউক তিতুমীর শহীদ হওয়ার পরই যে স্বাধীনতা সংগ্রাম থেমে গেল তা কিন্তু নয় । এর পরও ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকে । ভারত বর্ষে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে মুসলমান সমাজে চরম দুর্দশা নেমে আসে । ফলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারনে আন্দোলন গড়ে উঠে । তন্মদ্ধে ফরায়েজী আন্দোলন অন্যতম । ইংরেজ শাসন,নীলকর ও স্হানীয় জমিদারদের অত্যাচারে তখন বাংলার মানুষ মুক্তি পাগল হয়ে উঠে। বাংলাদেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধ একের পর এক আন্দোলন গড়ে উঠায় ইংরেজ শাসক গন বাংলার মুসলমানদের উপর থেকে বিশ্বাস হাড়িয়ে ফেলে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজ বিদ্বেষ ছড়িয়ে পরে ।কাজেই সাধারন মানুষ ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন রাস্তা খুঁজে বেড়ায়।
ইতোমধ্যে ১৮৫৭ সালে ঘটে যায় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা । ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এটা ছিল সর্বাত্বক স্বাধীনতার সংগ্রাম । বিভিন্ন কারনে এ মহা বিদ্রোহ সংঘঠিত হলেও সামরিক কারনই এই বিদ্রোহ কে তরান্বিত করে । দেশীয় সিপাহীরা বিভিন্ন কারনে কোম্পানী সরকারের উপর অতিষ্ট হয়ে উঠে।বেতন ভাতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৃটিশ সৈন্য ও দেশীয় সৈন্যদের মধ্যে বৈষম্য ছিল পর্বত প্রমান। এর মধ্যে ১৮৫৬ সালে লর্ড ক্যানিং এক নতুন আইন পাশ করেন যে দেশীয় সিপাহীদের প্রয়োজনে সমুদ্র পারি দিয়ে দূর দেশে যেতে হবে। এ ছাড়াও ১৮৫৬ সালে ” এনফিল্ড” নামে এক প্রকার বন্দুকের ব্যবহার চালু করা হয়। এ বন্দুকের কার্তুজ দাঁত দিয়ে কেঁটে বন্দুকে ব্য বরহার করতে হয়। গুজব রটে যে এ কার্তুজ শুয়োরের ও গরুর চর্বি দিয়ে তৈরী। হিন্দু মুসলমান সিপাহীদের মনে এই ধারনা বদ্ধমূল হয়েছিল যে তাদের ধর্ম বিনষ্ট করে দেওয়ার জন্য ঈংরেজ সরকার এ কার্তুজ প্রচলন করেছে। এ কারনে সিপাহীদের মধ্যে বিদ্রোহ আরম্ভ হয় এবং দেশময় স্বাধীনতার যুদ্ধ ছড়িয়ে পরে। শাসক গন বাংলার মুসলমানদের উপর থেকে বিশ্বাস হাড়িয়ে ফেলে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে ইংরেজ বিদ্বেষ ছড়িয়ে পরে। কাজেই সাধারন মানুষ ইংরেজদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন রাস্তা খুঁজে বেড়ায়।
সর্ব প্রথম বাংলায় এ বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ প্রথম ব্যারাক পুর বিদ্রোহ শুরু হয়। ঢাকা , চট্রগ্রাম, ভহরম পুর সহ বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পরে। সিপাহীদের দিয়ে এ বিদ্রোহ শুরু হলেও এর পিছনে জন সমর্থন ছিল। এ সংগ্রাম মূলত ভারত বর্ষের স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল। বিভিন্ন কারনে এ সংগ্রাম শুরু হলেও এ দেশ থকে ইংরেজ বিতারনে সকলেই ছিল এক মত। এ বিদ্রোহে সকলের সমর্থন থাকলেও সিপাহীদের দ্বারা এ বিদ্রোহ শুরু হয় বলে ইহা সিপাহী বিদ্রোহ নামে খ্যাত। এ বিদ্রোহের কারনে ভারত বর্ষে ইংরেজ শাসনের ভিত নড়ে উঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ স্বাধীনতার সংগ্রাম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কারণ সৈন্য বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়ে বিদ্রোহ শুরু হলেও তাদের পরিচালনার জন্য কোন সেনাপতি ছিলনা। বিদ্রোহ করার কারনে ইংরেজ সৈন্যদের সাথে ভারত বষীয় সৈন্যদের যুদ্ধ বেধ যায়। সেনাপতি হীন যুদ্ধে সৈন্যদের কেহ নিয়ন্রন করতে পারেনা। ফলে তারা ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায়। এ দেশীয় সৈন্যরা সেনা বাহিনী থেকে পলায়ন করে দেশের অভ্যন্তরে চলে আসে। বিরোহী সৈন্যরা যথাযথ সেনাধক্ষের নির্দেশ না পাওয়াতে ছত্র ভঙ্গ হয়ে দেশের মধ্যে আত্বগোপন করলো। কাজেই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ তথা স্বাধীনতার যুদ্ধ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল। দেশ স্বাধীন হলে জমিদারদের জমিদারী চলে যাবে। ফলে তারা স্বাধীনতা চাচ্ছিল না। তারা লাঠিয়ালদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে তল্লাশী চালিয়ে স্বাধীনতা কামী সিপাহীদের ধরে এনে ইংরেজদের নিকট জমা দিল। ইংরেজরা তাদের নির্মম ভাবে হত্যা করলো। বাংলাদেশের জমিদাররাও এই রকম অনেক স্বাধীনতাকামী সৈন্যদের ধরে এনে ইংরেজদের নিকট জমা দিয়েছিল। ইংরেজরা সেই সব সেনাদের জীবিত অবস্থাতেই গাছে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল। তোমরা ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বাহাদুর শাহ পার্কের নাম শোনেছ নিশ্চয়ই?
হ্যা মামা শুনেছি।
তখন সেটি পার্ক ছিল না, বন ছিল এবং সেখানে অনেক বড় বড় গাছ ছিল। ইংরেজরা আমাদের সেই সকল সেনাদের ধরে এনে ইচ্ছে মতো পিটিয়ে বাহাদুর শাহ পার্কের উঁচু গাছের ডালে জীবিত অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখেছিল। শোনা যায় সেই সকল সৈন্যরা পানি পানি করে চিৎকার করে করে এক সময় এ পৃথিবীর মায়া ত্যগ করে।গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থাতেই তাদের শকুনে খেয়েছে । তাদের চিৎকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে, ভারী হয়েছে পরিবেশ। আমরা সেই সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। তাইতো বলছিলাম-আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যেমন আমাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরুধী লোক ছিল, তেমনি পলাশীর প্রাণ্তরে যুদ্ধের সময়ও আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লোক ছিল। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় আমাদের স্বাধীনতা কামী সেনাদের বিরুদ্ধেও লোক ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বিরুধীতা করেছিল, তারা পলাশীর যুদ্ধের এবং সিপাহী বিদ্রোহের বিরুধীতা কারীদেরই বর্তমান প্রজন্ম। তারাতো বিরুধীতা করবেই। তাদের রক্তেই প্রবাহিত হচ্ছে স্বাধীনতা বিরুধীদের রক্ত। তারা পলাশীর যুদ্ধের পর থেকেই ধিকৃত হয়ে আসছে, ধিকৃত হবে এ পৃথিবী যত দিন বেঁচে থাকবে তত দিন। তোমাদের ঘুমের সময় হয়ে গিয়েছে। কাজেই আজ আর নয়। আগামী সপ্তাহে আবার আমি তোমাদের স্বাদধীনতা যুদ্ধের গল্প শুনাবো। এবার তোমরা ঘুমিয়ে পর। শুভ রাত্রি।