ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-৬
-দোস্ত কেমন আছিস?
-ভাল।তুই?
-আছি কোনরকম।এই সামনে সপ্তাহে কি পরীক্ষা?
-ইকোলজি।
-সিলেবাস?
-প্রথম দুই চ্যাপ্টার।
-পড়া শুরু করেছিস?
-আরে না,এত আগে পড়া শুরু করার ইচ্ছে নেই।এই রাখি,পড়ে কথা হবে।
-আচ্ছা।
এই বলে মোহিত কল কেটে দিল।সিলেবাস,পরীক্ষা সবই জানতো,তবুও কল দিয়েছে।কেন জানি,মেয়েটার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে হয়।প্যান্টটা পড়ে।সাথে লাল রংয়ের টি শার্ট।অলককে ডাক দিল।ছেলেটা ঘুমালে ডাক দিয়ে উঠানো খুব কঠিন।এত গভীর ঘুম।ওরা এক বেডে দুইজনে থাকে।বাকি তিন বেডে মাস্টার্সের তিন দাদা থাকে।অলককে ডেকে লাভ হল না।তাই সে একাই টিএসসির দিকে রওনা হল।ক্যাম্পাসের আশে পাশে ঘুরতে বেশ লাগে।বেশির ভাগ সময় একা একায় ঘুরে।মাঝে মাঝে মনে হয়,সাথে একটা মেয়ে থাকলে বেশ হত।দুই জনে বসে চা খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া যেত।
চন্দ্রা ব্রাশ করছে।এসময়ে নরমালি ব্রাশ করে না।সকালে একবার করে,রাতে একবার করে।বিকাল বেলার ঘুম শেষে,দাঁতগুলো হতে কেমন জানি গন্ধ বের হচ্ছে,মনে হচ্ছিল।তাই।দাঁত ব্রাশ করে স্যান্ডেলিনা সাবান দিয়ে কয়েকবার মুখ ধৌত করে।গামছা দিয়ে হাত মুখ মুছে বেডের উপর বসে।নীলিমা বলে-চাঁদ পানির বোতলটা দেতো।
চন্দ্রা পানির বোতলটা এগিয়ে দেয়।
-তোর মজনুর কি খবর?
-আরে বলিস না,এর জ্বালায় মরছি।
– কেন?
-আরে পিছনে সবসময় লেগেয় আছে।যখনি ফেসবুকে ঢুকি,তখনি দেখি অনলাইনে।ম্যাসেজ পাঠাতে এক সেকেন্ড দেরি করবে না।এত বিরক্ত লাগে।
চন্দ্রার মুখটা হাসি হাসি,বিরক্ত লাগে এটা শুধু যে কথার কথা,মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়।
-তাহলে ছেলেতো পুরো কুপোতকাত করে ফেলেছ।
-কুপোতকাত মানে আবার কি?
-মানে ছেলেতো তোমাতে মন্ত্রমুগ্ধ।এখন তুই যা বলবি তাই হবে।ধর,তুই যদি বলিস,কাক পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পাখি।সে বলবে,ঠিক,একদম ঠিক,কাকের মত সুন্দর পাখি পৃথিবীতে থাকতে পারে না।
চন্দ্রা হেসে উঠে।
-এতেই হেসে দিলি।মূল কথাতো এখনো বাকি।ধর তুই ছেলেটার সামনে ধূম করে প্রাকৃতিক গ্যাস ছেড়ে দিলি।ছেলেটা কি বলবে জানিস?
-কি?
-ও এমন মধুর শব্দ কোনদিন শুনিনি।এমন সুগন্ধ যেন পৃথিবীর সমস্ত সুগন্ধ হার মানবে।
এই বলে নীলিমা হাসতে হাসতে নিজের বেডে বসে পরে।চন্দ্রার মুখ হতেও হাসি থামছে না।চন্দ্রা ফেসবুকে ঢুকে।মোহিত তার প্রোফাইলে পক লিখে দিয়েছে।এভাবে সবাইকে দেখিয়ে পক লেখার মানে কি?গাধা একটা।চন্দ্রা কমান্টে লিখল-এভাবে পক দেওয়ার মানে কি?
মোহিত তখন অনলাইনেই ছিল।–পক যখন করব,তখন সরাসরিই করি।সবাই জানা ভাল না?
-গোপনীয়তা বলে কিছু কথা আছে।
-আচ্ছা আর করব না।
-আচ্ছা তোর যা ইচ্ছা তুই কর।
চন্দ্রা কাল দুইটি ছবি আপলোড করেছিল।বেশ কমান্ট ও লাইক পড়েছে।সমুদ্র দুটি ছবিতেই কমান্ট করেছি।
-সে হাসি বিধাতা যাকে দিয়েছেন,তাহার আর বলিবার দরকার হয় না।রবি ঠাকুর বুঝি এমন কোন হাসি দেখেই লেখাটা লিখেছিলেন।
-রবি ঠাকুর ঐ লেখাটা লেখার আগে এমন হাসি দেখলে নিশ্চয় লিখতেন,এমন কুৎসিত হাসি তাকালে আর দ্বিতীয় বার দেখতে ইচ্ছে হয় না।
আরেকটা কমান্ট-মনে হচ্ছে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছ,যেখানে নীল পরি,লাল পরিরা ভেসে ভেসে বেড়ায়।
-আমারও তাই মনে হয়।পরিদের সাথে উড়ার শখ আমার ছোটবেলা হতে,দেখা যাক কি হয়?
সপ্তাহখানেক পর।সমুদ্র ছাত্রী পড়াচ্ছে।ইন্টারে পড়ে।ইংরেজী পড়ায়।সিভিলে পড়ে ইংরেজী পড়ায়,অনেকটা হাস্যকর বটে।কিভাবে পড়ায়,সে আর তার ছাত্রীই জানে,এর বাইরে কিছু বলিতে পারি না।শিক্ষক ছাত্রীর সম্পর্ক একেবারে ফ্রি,দুইজনেই দুইজনার কথা বলে।
-স্যার একটা গুড নিউজ আছে।
-কি?
-আমি এখন পুরোপুরি সিংগেল।বেশ ভাল হয়েছে।কত যে পেইন থেকে বাঁচলাম,বলে বুঝাতে পারব না।এখন একেবারে মুক্ত।
বলছে হেসে হেসে কিন্তু সে হাসির মাঝে কোন প্রাণ নেই।
-বেশতো,এমন পেইন যে ছেলে দেয়,তার কাছ হতে আরও আগেয় ভাগা উচিৎ ছিল।
-ছেলেটার খালাতো বোনের সাথে বিয়ে।ফ্যামিলি থেকে ঠিক করেছে।আর ছেলেটাও দেখেন,বাবা মায়ের কথামত ওই মেয়েকেই বিয়ে করতে চলেছে।ভাল থেকে কি লাভ বলেন?
-ভাল থাকাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।তোমার আশে পাশে যাই হোক।
-স্যার কয়েকজন ভালমানুষের নাম বলতে পারবেন?
-দাড়াও,ভেবে দেখি।
-দাড়াতে পারব না স্যার,বসেই থাকি।
কিছুক্ষণ পর সমুদ্র বলল-পেয়ে গেছি।
-কি?
-ভাল মানুষ।ঢাবির চন্দ্রা।আমার জানা সবচেয়ে ভাল মেয়ে।
-আপনি তাকে চিনেন?
-সরাসরি চিনি না।বন্ধু কনফারেন্সে আলাপ করিয়ে দিয়েছে।
-একজনকে না জেনেই ভাল মেয়ের উপাধি দিয়ে দিলেন।
-বন্ধু বলেছে।খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু।ছোটবেলা হতে একসাথে পড়াশুনা করেছি।
-ব্যক্তিগতভাবে না জেনে এভাবে ঢালাওভাবে পৃথিবীর সেরা ভাল মেয়ে বানিয়ে দেয়া ঠিক না।
-ঠিক।আমি তোমার লজিকের কাছে হার মানছি।
-ওকে বলেছি,আমার ছাত্রী আমাকে ক্যারেক্টারলেস বলেছে।এটা শুনে সে কি খুশি,বলে একদম ঠিক বলেছে।
ফারিয়ার মুখে কিছুটা বিষাদের ছাপ।–স্যার সবসময় দোষ নিজের উপর নেন কেন?আমি বলেছি,ভার্সিটির ছেলেরা ক্যারেক্টারলেস,মেয়ে দেখলেই প্রেম করতে চায়।আপনার কথা বলি নি।
-আমিতো ভার্সিটিতেই পড়ি।
-বুঝেছি আপনার সাথে কথা বলে লাভ নেই।আপুর আইডিটা বলেন।আপুর কাছে আমাকে ফাসিয়ে যাবেন,তা হয় না।
সমুদ্র আইডিটা দিল।মেয়েটা তবুও শান্ত হোক।
-এই ন্যারেশনের রুলসগুলো পড়।
-স্যার,আগেতো খুব কমই ফেসবুকে পেতাম।ঘটনা কি বলেন তো?
-আগে বড় হও,বাচ্চামেয়েদের এসব বলতে হয় না।
-স্যার আমি বাচ্ছা না।কলেজে পড়ি।
-এখনো তো আঠারো হয় নি,বাচ্ছা তো না কি?
-স্যার কি ইচ্ছে করে জানেন,আপনার মাথার চুল সবগুলো একটা একটা করে ছিড়ি।
সমুদ্র মাথা এগিয়ে দিয়ে বলে-ইচ্ছে হলে ছিড়তে পার।আমার আপত্তি নেই।
ফারিয়া চুল ধরে টানতে থাকে।অবশেষে বিরক্ত হয়ে চুল টানা বন্ধ করল।
-বেশ লাগছিল।আর কিছুক্ষণ টেনে দে না?
-ধুৎ,মনে হচ্ছে মাথাটা একেবারে থেতলে দিতে।
-এমন কাজ করে না ফারিয়া,একটা মেয়ের জীবন যে এর সাথে রিলেটেড।
-আপনাকে বিয়া করবে এমন গাধী পৃথিবীতে আছে?
-কত গাধী আছে?
-এমনভাবে বললেন যেন আপনার পিছনে লাইন লেগে আছে।
-তা তো লেগে আছেই।
ফারিয়া হেসে বললেন-হাসালেন স্যার।
-যা সত্য তাই বললাম।
-গাধীদের নাম্বার দেন,এতবড় বোকামি করছে,তাদের সতর্ক করে দেয়।
-তা তো দেওয়া যাবে না?
-বুঝছি?
-কি?
-সবই যে আপনার চাপা।
-ভাল বুঝেছ,এত ভাল কিভাবে বুঝ?
সমুদ্র টিউশনি হতে বের হয়ে সরাসরি হলে চলে আসে।মিনিট বিশেক লাগে।পিসিটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে।চন্দ্রা অনলাইনে নেই।ওর কমান্টে কমান্ট করেছিল।তার উপরও মেয়েটা কমান্ট করেছে।চন্দ্রার কমান্ট-সারাপৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছু নও,কিন্তু কারও কাছে হয়তো তুমি সারাপৃথিবীর চেয়ে দামি।
-তোমার বুঝি oxytocin হরমোন এ্যাক্টিভ অবস্থায় আছে,সেই জন্য এমন আবেগী কমান্ট দেখতে পাচ্ছি।
-সাইকোলজিতে যে আপনার ভাল নলেজ আছে,তা সবাইকে এভাবে বলে বেড়াতে হবে না।
নতুন কি লেখা যায়,ভাবতে থাকে।মাথায় এসেও গেল কিছু একটা।–একেবারে ভুল ধারণা,সাইকোলজিতে আমার নলেজ একেবারে সীমিত।ভালবাসা যে হরমোনের কারসাজি,তা জানিয়ে দিলাম।
মোহিত নামে একটা ছেলেকে বেশ ঝামেলার মনে হচ্ছে।চন্দ্রা এ পর্যন্ত যা যা পোস্ট করেছে,সবকিছুতেই ছেলেটার লাইক কমান্ট আছেই।একই পোস্টে আবার একাধিক কমান্টও আছে।এই ছেলেটার সাথে কিছু একটা আছে বোধহয়,নইলে সবগুলো পোস্টের পেছনে এইরকম ঘুর ঘুর করে লেগে আছে কেন?বেশ লম্বা কথোপকথনও দেখা যাচ্ছে।
-ওই আজকে ক্লাসে আসিস নাই কেন?(মোহিত)
-ইচ্ছা হল না তাই।
-আজ বেশ মজা হয়েছে,লাড্ডু স্যার বলে,তার মেয়ের নাকি বয়ফ্রেন্ড হয়েছে?আরও কত কথা?
-শুনেছি,নীলিমা বলেছে।তোর জলপরীর খবর বল মুদ।
-ঐ এইরকম পাবলিক প্লেসে এরকম করলে আমিও কিন্তু হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিব।
-কি করবি তুই মুদ?
-ঐ তোর কিন্তু খবর আছে?
-কয়টার খবর মুদ?
-তোর বাবা যে নামে ডাকে সে নামটা সবাইকে বলে দিব।
-এটা না বলার কি আছে,আমিই বলে দিচ্ছি,বুড়ী।
-ক্লাসে একদিন কয়েকজন মিলে একটা নাম বের করেছিলাম।সেই নামটা কি ফ্লাশ করে দিব?
-দিস না রে ভাই?
-এখন কেমন লাগে?
-আচ্ছা তোকে ভাল নামেই ডাকব।তোর খবর বল,তোর জলপরী কেমন আছে?
-আছে সুখেই আছে।সামনে টিএসসিতে আসবে।
-আমার সাথে কিন্তু পরিচয় করিয়ে দিবি।
-ওকে ম্যাম।ওই শ্যালার পুতের কথা বল,তোর পিছনে যে সারাদিন ভরে ঘুরঘুর করে ঘুরে।
-আছে ও একই অবস্থা।ও জিনিস কোনদিন চেঞ্জ হবে না।একটার পর একটা কথা বলতেই থাকে।মাথাটা একেবারে গেছে।
চন্দ্রাকে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে।সমুদ্র সাথে সাথে পাঠাল-ওই,ভয়াবহ খবর আছে?
-কি?
-দাদা হলে আসছিল।
-তাতে কি হয়েছে?
-তাতেইতো যত অঘটন ঘটল।
-কি অঘটন?
-তোমার শাড়ি পড়া ছবিটি দেয়ালে প্রিন্ট করে লাগিয়েছিলাম।ডেস্কটপে ব্যাকগ্রাউন্ড ছবিও সেটাই দিয়েছিলাম।দেখে সে কি জারি?
-আপনে এটা কি করছেন?এখনও কি আছে?
-আছে।
-তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেলেন।আর দাদা কি বলেছে?
-এখন আর সরিয়ে কি লাভ?যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে।দাদা তোমার নাম্বার চেয়েছে।মনে হয় নাম্বার পেলে তোমাকেও ঝাড়বে।
-নাম্বার দিয়েছেন?
-আমি নাম্বার কই পাব?দাদা বিশ্বাস করে না।আমার মোবাইল নিয়ে সবগুলো ম্যাসেজ দেখল,কল লিস্ট দেখল।যখন পেল না,তখন বলে-বদতো হাড়ে হাড়ে হয়েছিস?কোন প্রমান রাখিস না।
চন্দ্রার উদ্বিগ্নের মাত্রা বাড়তে থাকে।মনে হচ্ছে,মাথার সব চুল ছিড়ে ফেলতে।–ভাই আপনিতো দেখি নিজেও মরবেন,আমাকেও মারবেন।প্রেম না করেই এই অবস্থা,প্রেম করলে যে কি হত?কেন যে অর্ণবকে বলেছিলাম?আপনার বন্ধুকে বলেছেন।
-ওকে বলে কি লাভ?
-যদি ওকে কল করে আমার নাম্বার চায়,যেন না দেয়।
-সেটা তুমিই বল।একটা কথা বলি।
-বলেন।
-কিছু মনে করব নাতো?
-এতো ভণিতা না করে বলে ফেলেন।
-সাহস দিচ্ছ।
-আরে বলে ফেলেন তো?