অগ্নিদগ্ধ
একটি দুটি দেশ ছাড়া বাকী বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে সার্বিক উন্নয়নের পথে, তখন আমরা ক্রমাগতভাবে পিছিয়েই চলছি । মানুষ অন্ধকারে চলতে যেমন পথ খুঁজে পায়না, আমরাও ঠিক তাই । বিশ্বের উন্নত দেশগলো সমৃদ্ধির পথে যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেপথই খুঁজে পাচ্ছিনা আমরা । হুতু, তুতসিদের মত আমরা শুধু হানাহানিতে লিপ্ত । আমরা এমনই এক জাতি, যে জাতির মধ্যে নেই কোন সহনশীলতা । ক্ষমতা এবং অবৈধ অর্থ আমাদেরকে ক্রমাগতঃ অমানুষ করে তুলছে । রাস্তার কুকুর যেমন খাবারের জন্য ডাষ্টবিনের ভিতর স্বজাতির সাথে মরনযুদ্ধে লিপ্ত থাকে, বলতে লজ্জা লাগলেও এটাই সত্য যে, আমরাও হয়ে উঠছি সেরকমই ।
কিন্তু কেন, আমরা তো এরকম ছিলামনা । আমাদের নেতারা তো আগে বলতেন, দেখো, গরীব তথা, শ্রমজীবি মানুষের যেন কোন কষ্ট না হয় । ছাত্র-নেতারা স্কুল-কলেজগুলোতে যেতেন, রাস্তায় নামতে বলতেন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে, যারা নামার তারা নামতো, কোন জোর-জবরদস্তি ছিলোনা । যারা সমর্থন করতো, তারা নেমে আসতো, যারা না করত, তারা ক্লাশ করত, ব্যাস । কখনও কোথাও কোন সহিংসতা থাকতোনা, হোতনা । প্রাকৃতিক দুর্যোগে তখন মানুষ চাদর নিয়ে বাড়ী বাড়ী গিয়ে করুন সুরে সাহায্য চাইতেন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য এবং বিলিবন্টনও হোত সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে । সন্দেহ করার কোন বিষয়ই ছিলোনা তখন । মানুষের মানসিকতাই ছিলো অন্য ধাঁচের । মানুষ খুন করার চিন্তা তখন মানুষের কল্পনাতেও থাকতোনা ।
কোথায় গেলেন সেই মানুষগুলো আজ ? স্বর্গ থেকে কি অবাকবিষ্ময়ে অবলোকন করছেন তারা সব? কত প্রানের তাজা রক্ত লাগবে আজ আমাদের পুর্বপুরুষগনের মত হতে ? একানব্বইয়ে ডাক্তার মিলনের মৃত্যু স্বৈরাচারের পতন ত্বরান্বিত করেছিলো । আমাদের তরুন প্রজন্মকে জাগাতে এরকম অনেক মানুষের উৎসর্গীকৃত প্রান দরকার, যেসমস্ত প্রানের সন্মিলিত অনূবীজ হতে সৃষ্টি হবে নতুন বাংলাদেশ । জীবন অনেক মূল্যবান জানি, আত্মহত্যা মহাপাপ, জানি সেটাও । তবুও বালতিতে পেট্রোল নিয়ে গোসল করার মত করে তা শরীরে ঢেলে দিয়ে আত্মাহুতি যদি দিতে পারতাম, তাহলে কি প্রিয় পাঠক, হরতাল-অবরোধে মানুষ অগ্নিদগ্ধ হওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার মত কিঞ্চিৎ একটা আবহ তৈরী হতে পারতো ?
ধন্যবাদ সবাইকে ।