Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-৯

: | : ০৫/১২/২০১৩

আকাশের মুখ আটকে যায়।
-কি রে,এমন চুপ করে আছিস কেন?
-তুই চন্দ্রার পেছনে ঘুরা ছেড়ে দে।
সমুদ্র গম্ভীর হয়ে বলে-চন্দ্রা তোকে কিছু বলেছে?
-না,কিছু বলেনি।
-তাহলে?
-ওর রিলেশন হয়ে গেছে এক ছেলের সাথে।
-আরে এই ব্যাপার,ভাল খবর তো।যাক মেয়েটার একটা সুগতি হয়েছে।
খুব সহজেই কথাটা বলে ফেলল।কিন্তু তখনি বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল।
-আচ্ছা রাখি।
-ভাল থাকিস।
সপ্তাহখানেক কেটে গেল।সমুদ্রের কিছুতেই কিছু মন বসছে না।ফাইনাল পরীক্ষা সামনে।পড়াশুনা কিছু হচ্ছে না।থিসিসের এক গাদা কাজ বাকি।ম্যাডাম ডেকে একদিন বেশ ঝাড়ি দিয়েছে।তবুও যাচ্ছে না।যেতে ইচ্ছে করে না।সবসময় মনে হয়,জীবন হতে কী যেন বোধহয় চলে গেছে।চন্দ্রাকে লিখলেও ঠিকমত উত্তর দেয় না।ম্যাসেজ পাঠায় এখন,অনলাইনে থাকলেও উত্তর দেয় পরের দিন।ফেসবুকে ঢুকে।চন্দ্রা অনলাইনে নাই।এখন আর আগের মত পাওয়া যায় না।ম্যাসেজ করে-বেশ কয়েকদিন ধরে তোমার চিন্তায় মাথা সবসময় ঘুরপাক খাচ্ছে।তবু কেন জানি মনে হয়,বিয়ে আমার তোমার সাথেই হবে।এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।এর পিছনে কোন লজিক নেই।এমন দৃঢ় বিশ্বাস কিভাবে মনের ভিতর বাসা বাধল,সে আমি জানি নে।খুজতে খুজতে সেদিন কুষ্টিটা হাতে পড়ল।আমার বিয়ে নিয়ে একটি ভবিষ্যৎ বাণী আছে।যে মেয়ের সাথে বিয়ে হবে তার নামের মধ্যে চ,ন,দ থাকবে।তোমার নামের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে।তাতে বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় হল।গত রাত্রে একটা স্বপ্ন দেখলাম।আমি আর তুমি বসে আছি।মাঝখানে আমাদের মেয়ে তটিনী বসে।দুইজনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি মেয়ের দিকে।তবে কীসের জন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি,তা বুঝার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আকাশকে অনলাইনে দেখা যাচ্ছে।
-কি রে কি করিস?
-এইতো মুভি দেখতেছিলাম।তুই কি করিস?
-এইতো বসে আছি।একটা ভাল খবর আছে।
-চন্দ্রার সাথে আমার বিয়ে হবে।
আকাশ বিরক্ত হয়ে বলল-ফাযলামি ছাড়বি?
-বিশ্বাস না হলে কিছু করার নেই।বিয়ে যে হবে এটা ঠিক।আজ থেকে চন্দ্রাকে বউদি বলে ডাকবি।
আকাশের মনে বেশ আশার সঞ্চার হল।কিছু একটা ঘটনা হয়তো ঘটেছে।–আচ্ছা ডাকব।দাড়া এখনি কল দিচ্ছি।
সমুদ্রকে কিছু লেখার সুযোগ না দিয়েই চন্দ্রাকে কল দেয় –অর্ণব বল।
-বউদি ভাল আছেন।
চন্দ্রা প্রথমে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।–মানে কি?
– সমুদ্র বউদি বলতে বলল।
-সমুদ্র বউদি বলতে বলল,আর তুমি বউদি বলা শুরু করলে?তোমাদের বন্ধুদের মাথা কি দুইজনের একসাথে আউট হয়েছে?তোমার বন্ধু শুনবে কি ম্যাসেজ পাঠিয়েছে?এমন বাজে ম্যাসেজ,দেখলেই ঘৃণা লাগে।বলাতো পরের ব্যাপার।
রাগে আকাশ কল কেটে দিল।সাথে সাথেই সমুদ্রকে কল দেয়।
-হু বল।
-তুই কি মানুষ,না অন্যকিছু?
-কেন,কি হয়েছে?
-কি আর হবে,যে কান্ডখানা করেছ তার ফল পেলাম।
-চন্দ্রা কিছু বলেছে?
-না কি বলবে,কানের ভিতর যেন মধু ঢেলে দিয়েছে ।
সমুদ্র অতি শান্ত কন্ঠে বলল-ও নিয়ে ভাই তুমি রাগ করো না।বন্ধু হয়ে কত ক্ষমাই তো আমায় করেছ,প্লীজ এবারও কর।জানতো,প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ার আগে আকাশ ঘনকালো আধারে ভরে যায়।তাই বলে কি আকাশ আর কখনই দেখা যাবে না,তা ভাবলে হয় ভাই।
আকাশ এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বলল।কখনো তো সমুদ্রকে এমনভাবে কথা বলতে শুনেনি।মৃদু কন্ঠে বলল-ভাই অতকথা আমি বুঝি নে।আমি তোমাকে আরও একজনের সাথে কথা বলিয়ে দিচ্ছি।চন্দ্রার থেকে অনেক বেশি সুন্দর,আর অনেক বেশি ভাল।
-ভাই যাকে বউ হিসেবে মন থেকে মেনে নিয়েছি,অন্য মেয়েকে সে জায়গা দিয়ে দিব,সে আমি পারব না।সে আর হয় না।
-তুই কেন বুঝতে চাচ্ছিস না,মেয়েটার অন্য ছেলের সাথে রিলেশন হয়ে গেছে।
-হয়ে গেছে,তো কি?এখনকার যুগের রিলেশন,ভাঙ্গতে কয়দিন?চন্দ্রা আপনা আপনিই তখন নিজের ভুল বুঝতে পারবে?
আকাশ মনে মনে বলে,তাই যেন হয়।কিন্তু মুখে কিছু বলে না।সমুদ্র বলতে থাকে-জানেতো,আগে গডে খুব একটা বিশ্বাস করতাম না।মনে হত,চেষ্টা করলেই বুঝি সব পাওয়া যায়।চন্দ্রার রিলেশন হওয়ার পর বুঝতে পারলাম,শুধু চেষ্টা দিয়ে সবকিছু পাওয়া যায় না।চেষ্টা দিয়ে হয়তো অনেক কিছুই পাওয়া সম্ভব,তবে সব নয়।তাই বিশ্বাসে মিলায় বস্তু,তর্ক্কে বহুদূর কথাটার উপর খুব আস্থা।জানেতো,গডের কাছে কোন কিছু মন থেকে চাইলে,গড সে জিনিস দিয়ে দেন-সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি।গডের কাছে মন থেকে চন্দ্রাকে চেয়েছি,চন্দ্রা আমার হবেই।
আকাশের মনটা কেমন করে যেন উঠে।কি জন্যই যে মেয়েটার সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছিল,নিজের উপরই বড় রাগ হচ্ছে।যে ছেলেটা মেয়েটাকে এত ভালবাসল,মেয়েটা বুঝতেই পারল না,এর চেয়ে অভাগা মেয়ে আর কে হতে পারে পৃথিবীতে?
-একটা কিছু চাইব আকাশ,জীবনে তো অনেক কিছুই দিয়েছিস,এটাও না হয় বন্ধু হিসেবে দিলি।
-কি?
-চন্দ্রার নাম্বারটা দে। মেয়েটার সাথে বেশ কথা বলতে ইচ্ছে করে।
-আচ্ছা নে।
এই বলে চন্দ্রার নাম্বারটা বলে।
বিশ পঁচিশ দিন পর।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছে।দশটার সময় ফাইনাল পরীক্ষা।সাড়ে দশটা বাজল,তবু রুম হতে বের হল না।বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।বারান্দা হতে রুমে এসে আয়না দিয়ে মুখ দেখে।নিজের মুখ দেখে নিজেই চমকে উঠে।মুখে দাড়ি ভর্তি।মুখটা একেবারে মলিন।হাসির ছিটেফাটা নেই মুখে।চন্দ্রার নাম্বারে কল দেয়।কল ঢুকে না।কয়েকদিন কল দিয়েছিল,বোধহয় বিরক্ত হয়ে নতুন সিম চালু করেছে।ফেসবুকে ব্লক মেরে দিয়েছে,অর্ণবকেও।মেয়েটার সাথে যোগাযোগের কোন পথই রইল না।একটা মেয়ে কিভাবে এত নিষ্ঠুর হয়,মাথায় ঢুকে না।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top