ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-শেষ অংশ
বছর ছয়েক পর।অর্ণব গেছে আমেরিকাতে।পি,এইচ,ডি শেষ।কাল দেশে ব্যাক করবে।সমুদ্রকে কল দিয়েছে।
-এতদিন পরে তাহলে মনে পড়ল।
-না রে দোস্ত,তোর কথা সবসময়ই মনে পড়ে।কিন্তু তোর নাম্বারটা হারিয়ে ফেলেছি।আজকে একজনের কাছে পেলাম।ফেসবুকে কত যে তোকে নক করেছি,তার হিসেব নেই।
-ফেসবুক আছে!বসি না কয়েক বছর ধরে।বলেছিলাম না চন্দ্রার সাথে আমার বিয়ে হবেই।
আকাশ অবাক হয়ে বলল-চন্দ্রার সাথে বিয়ে হয়েছে?
-তুইতো দেখি আগের মতই আছিস,কোন কিছুই সহজে বিশ্বাস করতে চাস না।জানিস একটা মেয়ে হয়েছে।দেখতে একেবারে পরীর মত।স্বভাব আচরণে ঠিক চন্দ্রার মত হয়েছে।
-নাম কি তোর মেয়ের?
-তটিনী।অবশ্য আমি রাখিনি।চন্দ্রা রেখেছে।রোজ ঝগড়া হচ্ছে তোর বউদির সাথে।
-কেন,কি হয়েছে?
-বলেছি,আমিতো চাকরি করছি।তুমি আর চাকরি করে কি করবে?দুইজনে চাকরি করে মেয়েটার বড় অযত্ন হচ্ছে।তুই বল,অন্যের হাতে মেয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যায়?
-এতো কোনভাবেই ঠিক না।
-কে বুঝাবে ওকে বল?
-চিন্তা করিস না,আমি কাল দেশে আসছি।বউদিকে এমনভাবে বুঝাব যে,চাকরি করার নাম মুখে আনবে না।
-তোর কথায় বড় ভরসা পাই ভাই।তোর কথাও না শুনলে আমিই চাকরি ছেড়ে দিব।চাকরির থেকে মেয়ে আমার কাছে অনেক বড়।
-ঠিক বলেছিস।
-তুই কিন্তু এসেই আমার বাসায় আসবি।আর কালতো আমার মেয়ের জন্মদিন।
-ও গ্রেড নিউজ।অবশ্যই কালকেই তোর বাসায় আসব।
-আর শুন।তোর জন্য চন্দ্রা একটা মেয়ে ঠিক করে রেখেছে।আমিও মেয়েটার ছবি দেখেছি।বেশ ভাল।চন্দ্রা বলে-খুবই চমৎকার মেয়ে।তাই বলে মনে করে না,তোর বউদির থেকেও।তোর বউদি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে চমৎকার মেয়ে।
আকাশ হেসে বলে-সে আমি জানি ভাই।তোমার মত এমন রাজকপাল নিয়েতো সবাই জন্মায় না।
-ঠিক বলেছিস।
-এই তোর বউদির সাথে কথা বল।
এই বলে চন্দ্রাকে মোবাইল দেয়।–হ্যালো বউদি?
লাইনটা ঝি ঝি করছে।মাঝে মাঝে এত ঝামেলা করে?কিচ্ছু বুঝা যাচ্ছে না।
চন্দ্রা সমুদ্রের কাছে মোবাইলটা দেয়।–আকাশ শুনতে পাচ্ছিস?
-হু।লাইনটা বেশ ঝামেলা করছে।
-তটিনী তোর সাথে কথা বলবে।
আকাশ ওপাশ হতে বলে-হ্যালো মা।
আবার লাইনটা ঝি ঝি করে।আকাশ বেশ বিরক্ত হয়।তটিনী বাবার কাছে মোবাইলটা দেয়।–হু আকাশ শুনতে পাচ্ছিস?
-হু,লাইনটা বেশ ঝামেলা করছে রে।
-হু,কি আর করার,কালকে এসেই সরাসরি কথা বলিস।
-বিধি বাম,কি আর করার?আচ্ছা রাখি।কালকে এসে এতগুলো বছরের সব জমানো কথা শুনব।বিশেষ করে তোর বিয়ের কাহিনী।
-ওকে।
এই বলে সমুদ্র কল কেটে দেয়।তার খুব আনন্দ লাগছে।কতদিন ধরে বন্ধুকে দেখে না?
পরদিন বিকেলবেলা।দরজা নক হতেই সমুদ্র দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে।আকাশ সাহেবি পোশাকে দাড়িয়ে আছে।একে অপরকে জড়িয়ে ধরে।
-নমস্কার আন্টি,ভাল আছেন?
-আছি বাবা,তুমি ভালতো?
-হু।বউদি,তটিনী ওরা কই?
-আছে বাবা।পাশের ঘরে।
সমুদ্র ডাকল-চন্দ্রা,তটিনী তোরা কই?দেখে যা কে এসেছে?
টেবিলের উপর কেক রাখা হয়েছে।আকাশ দেখে বলল-কেক এত আগেই সাজিয়ে রেখেছিস কেন?কেক তো রাত্রে কাটবে।
-তোর বউদির কান্ড।সকাল হতে কেক সাজিয়ে বসে আছে।বলে,তুই আসার সাথে সাথেই কেক কাটা হবে।অথচ কান্ড দেখ,তুই এসেছিস,তোর বউদীর দেখা নেই।মা,ডাক দাও তো?
সমুদ্রের মা পাশের রুমে যায়।সমুদ্র হেসে বলে-তটিনীকে বোধহয় সাজাচ্ছে।
-কি রে,তোর বউদি তোর সামনে দাড়িয়ে?দেখ,কেমনভাবে হাসছে।
আকাশ কাউকে দেখতে পেল না।–কি রে আমেরিকা থেকে কি চোখ নষ্ট করে ফেলেছিস?
আকাশ দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে।বড় বড় করে তাকায়।বুঝতে পারছে না,চোখে কি তার সত্যিই সমস্যা?
-তটিনী,এই তোমার কাকা।অনেক রাত ভরে যার গল্প করলাম।
আকাশ তটিনীকেও দেখতে পেল না।চোখে বুঝি মারাত্নক ধরণের সমস্যা হল।
-কি রে,তটিনীকেও দেখতে পাচ্ছিস না।
আকাশ হতভম্ব গলায় বলল-না।
-সত্যিই সত্যিই তো চোখের বারটা বাজিয়েছিস।মা দেখতো কান্ড,জ্বলজ্যন্ত দুইজন মানুষ দেখতে পাচ্ছে না।বুঝেছি দুই একদিনের মধ্যেই চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।এই হাততালি দে,তটিনী কেক কাটছে।
সবাই হাততালি দিয়ে বলল-হ্যাপি বার্থ ডে ডেয়ার তটিনী।
সমুদ্র বিছানা হতে উঠে বলল–মা আমি বাইরে থেকে একটু আসছি।এই পাঁচ মিনিট।কোক নিয়ে আসি।আকাশ আবার কোক খুব পছন্দ করে।
সমুদ্র বাইরে যেতেই আকাশের হাত ধরে সমুদ্রের মা কান্নাকাটি শুরু করে।বলে-বাবা,আমার ছেলেটার বাবা কি হল?ভার্সিটিতে একেবারে ভাল ছেলে পাঠালাম।ছেলে এল এই হয়ে।আগের জন্মে কত যে পাপ করেছিলাম বাবা?
-আন্টি শান্ত হন।
সমুদ্রের মা কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে-যতটুকু জেনেছি,চন্দ্রা নামের একটি মেয়েকে ও খুব ভালবাসত।মেয়েটার বিয়ের দিন থেকেই সমস্যা শুরু।কয়েকদিন সেন্সলেস ছিল।সেন্স ফিরার পর শুধু বারবার বলত-মা,চন্দ্রাকে ডাক দাও।একসময় মেয়েটাকে না পেয়ে সবকিছু ভাংচুর শুরু করে।বেশ অনেকদিন শিকল দিয়ে বেধে রাখতে হয়েছে।ডাক্তার অনেক দেখিয়েছি বাবা।এখন কিছুটা ভালর পথে।এইরকম ভাল থাকলেও হত।
আকাশ অপরাধবোধে ভূগে।রুমাল দিয়ে চোখের জল মুছে।তার কাছে জীবনের হিসাব বড় গন্ডগোল লাগছে।
তিন চারদিন পর।আকাশ শপিংমলে ঢুকছে।পেছন হতে কে যেন ডাকছে?কন্ঠটা বেশ চেনা চেনা লাগছে।পেছনে তাকিয়ে দেখে।
-আমি চন্দ্রা।
ভাল করে দেখে।মেয়েটা বেশ মোটা হয়ে গেছে।যৌবনের সৌন্দর্য গেছে কমে।
-ভাল আছেন দাদা।
-এইতো আছি বেশ।তুমি?
-বেশ ভাল।
-মোহিত কই?
-ও মাসখানেকের জন্য লন্ডন গেছে।
-ও।
-সমুদ্র দা কেমন আছে?
আকাশ মুচকি হেসে বলে-খুব সুখে আছে।স্ত্রী চন্দ্রা।
-কি?
-বউয়ের নাম চন্দ্রা।
-ও।
-ঠিক তোমার মত দেখতে।এত মিল যে দেখলে অবাক হয়ে যাবে।একটি খুব সুন্দর মেয়েও আছে।নাম তটিনী।
-দাদাতো তাহলে খুব সুখে শান্তিতে আছে।সংসারটা দেখতে বেশ ইচ্ছে করছে।
-এমন সুখে পৃথিবীতে আর কেউ নেই। দেখবে?চল।
-বউদি আবার কি মনে করে?
-কিছু মনে করবে না।সে খুব ভাল মেয়ে।
রিকসায় উঠে।চন্দ্রার দেরি সইছে না।রিকসাওয়ালাকে বলছে-মামা,একটু জোরে চালান।
রিকসা হতে নেমেই একটি গলির ভিতর ঢুকে।একটি বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়।আকাশ নক করে।কেউ আসছে না।কেউ আসছে না কেন?চন্দ্রার সমুদ্র দার
সংসার দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে।খুব খুব।