‘আম আদমি’ পার্টির বিস্ময়কর উত্থান
বেশ কিছুদিন থেকেই শোনা যাচ্ছিল, পাশের দেশ ভারতে ’আম আদমি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে এবং কার্যক্রম চালাচ্ছে। বছর দুই আগে আন্না হাজারে সারা ভারতব্যপী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আমরন অনশন শুরু করেছিলেন, আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই অনশন আন্দোলনের দ্বিতীয় ব্যক্তি। তিনি ম্যাগসেইসেই পুরস্কারে ভূষিত একজন ব্যক্তিও বটে। ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, প্রথমে টাটা এবং পরে আয়কর বিভাগে চাকরী করতেন। কিন্তু আয়কর বিভাগের চলমান দুর্নীতি সহ্য করতে না পেরে চাকরী ছেড়ে দিয়ে এনজিও এবং সামাজিক-রাষ্ট্রিক পরিবর্তনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। ম্যাগসেইসেই পুরস্কারটা অর্জন করেন তিনি তখনই।
আন্না হাজারের দুর্নীতি-বিরোধী অনশন তখন বেশ সাড়া জাগানো আন্দোলন ছিল তখন। বলা যায় ভারতীয় শাসক শ্রেণীর ভীত কেঁপেই উঠেছিল তখন। পরে এক সময় সেটা স্তিমিত হয়ে যায়, তবে ভারতীয় সমাজে সে আন্দোলন প্রচন্ডরকমের একটা ধাক্কা দিয়ে যায়। সব শ্রেণীর তরুনরা, যাদের মধ্যে মিডিয়ার তরুন কর্মীদের অতি বিশেষ অবদান ছিল, সেই আন্দোলনের সামনে এসে পড়েছিল। ভারতীয় নারী সমাজের অবদানও সেই আন্দোলনে অপরিসীম, দুগ্ধপোষ্য শিশু নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তারা সামনে থেকে আন্না হাজারেকে সমর্থন জানিয়ে গেছেন সারাক্ষন। আইন-শৃংখলা বাহিনী আন্না হাজারেকে আন্দোলন থেকে গ্রেফতার করে ভারতের সবচেয়ে সুরক্ষিত কারাগার তিহার জেলে নিয়ে গিয়ে চব্বিশ ঘন্টাও বন্দী করে রাখতে পারেনি। তরুন সমাজের প্রচন্ড বিস্ফোরনমুখ অবস্থায় সসন্মানে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের এই সময়টাতে সরকারের সাথে সকল ধরনের সমন্নয় সাধন করার জন্য তিন সদস্যের যে কমিটি ছিল, অরবিন্দ কেজরিওয়াল ছিলেন সেই কমিটির প্রধান।
সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আম আদমি পার্টির উত্থান, যে উত্থান আজ ভারতীয় শাসকগোষ্টির ভিতই কাঁপিয়ে দিয়েছে। অসততার এই যুগেও সন্দেহাতীতভাবে সৎ শীলা দীক্ষিত নামে কংগ্রেস বিধায়ক একজন, যাঁর হাত থেকে গত ১৫ বছর হাতছাড়া হয়নি দিল্লীর আসনটি এবং আধুনিক দিল্লীর রূপকারও বলা হয় যাঁকে, প্রবল প্রতাপশালী তিনি পরাজিত হয়েছেন ; আসনটিতে বিজয়ী হয়েছেন এ-সময়কার তরুন সমাজের হিরো অরবিন্দ কেজরিওয়াল। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক তাঁদের চাকরী ও সময়ের কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করেই দিন-রাত শ্রম দিয়ে গেছেন নির্বাচনে আম আদমির পক্ষে। সংগঠন এবং নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় অর্থেরও হিসাব অত্যন্ত কঠোরভাবে রাখা হয় পার্টিতে। চারটি রাজ্যের মধ্যে একটিতে বিধানসভা নির্বাচনে ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টি পেয়েছে আম আদমি পার্টি, ৩২টি বিজেপি এবং ৮টি কংগ্রেস। এককভাবে কোন দল সেখানে সরকার গঠন করতে পারবেনা কারো সাহায্য ছাড়া। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলছেন, তিনি কাউকে সমর্থন দিবেননা, এবং কারো সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করবেনওনা। দৃঢ়চেতা এই নেতার চোখ আসলে সারা ভারতব্যপী সুশাসন নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যেই ধাবিত তিনি। অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অভিবাদন আপনাকে।