Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন এবং এই প্রজন্মের ভাবনা

: | : ১১/১২/২০১৩

মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন

মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন।
আমাদের এই আধুনিক প্রজন্মের অনেকে এই মানুষটির নাম শুনে হয়তো ভাবতে বসবে, ইনি আবার কে? ব্যাপারটা এমনিই স্বাভাবিক। সব প্রজন্মের সব মানুষ যে, সকল মহা মনীষিদের চিরকাল মনে রাখবে এমন কোন কথা নেই। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার ব্যাতিক্রমও হয়। মানুষ মানুষকে মনে রাখে, আবার মানুষের মন থেকে সরেও যায়।

মানুষ বেঁচে থাকে তাঁর কর্ম ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মানুষ সেই সুন্দরের সৃষ্টি আর কর্মকে বন্দনা করে আসছে। একজন সৃজনশীল কীর্তিমান স্মরণীয় মানুষের স্মৃতিময় কীর্তিগুলো ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পায়। সময়ের হাত ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ইতিহাসের পাতা থেকে বের করে আনে অমর কীর্তিগাঁথা। স্মৃতির পাতা উল্টালে হাজার বছর আগের মানুষটিও একসময় নতুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে ওঠে। তাঁর কর্ম, সৃষ্টি ও কীর্তি-কে সম্মান জানাতে এক ধরনের মানসিক তাড়না অনুভব করে। সেই আদর্শকে লালন করতে গিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম মহা মানবের অমর কীর্তিগাঁথাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার দায়ভার বহন করে। মহান মানুষটির সৃষ্টি, কীর্তি সবকিছুই হয়ে উঠে সমাজের জন্য অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়। সেই মানুষটির জন্য গর্ববোধ করে প্রতিবেশী, সমাজ, দেশ, জাতি, রাষ্ট্র তথা বিশ্বের অনেকে। শিল্প সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় যে যে কাতারে অনুরাগী সেই কাতারের লোকজন সেই দায়ভার বহন করে চলে। তা না হলে জীবনের সৃষ্টির প্রতিটি অপরূপ ভান্ডার একটা নির্দ্দিষ্ট সময়ের পর নিঃশেষ হয়ে যেতো।

তেমনি একজন কীর্তিমান মহা মানব মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অর্ন্তগত পশ্চিম গুজরা (নোয়াপাড়া) গ্রামে ১৮৪৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গোপী মোহন রায় এবং মাতার নাম রাজ রাজেশ্বরী। ভারতীয় উপমহাদেশে মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন নামে নিজের পরিচিতি ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে।

পাঁচ বছর বয়সে কবি তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৮৬৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম স্কুল (বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ (বর্তমানে প্রেসিডেন্সী বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ১৮৬৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগে এফ, এ এবং জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনষ্টিটিউশন (ষ্কটিশচার্চ কলেজ) থেকে ১৮৬৯ সালে বি,এ পাশ করেন।

অনন্য মেধাবী এই মহাকবি বি,এ পাশ করার পর কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে প্রতিযোগীতামুলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার, ত্রিপুরা এবং সর্বশেষ ফেনীতে প্রায় আট বছর ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরেট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ফেনীতে অবস্থান কালীন সময়ে তাঁর অসাধারন কর্মদক্ষতায় একটি জঙ্গলাকীর্ণ স্থানকে মনোরম শহরে পরিণত করেন এবং ১৮৮৬ সালে ফেনী হাই স্কুল (বর্তমানে ফেনী সরকারী পাইলট হাই স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাত্র একুশ বছর বয়সে কর্মজীবন শুরু করে দীর্ঘ ছত্রিশ বছর সরকারী চাকুরী করার পর ১ জুলাই ১৯০৪ সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

কবি যখন এফ,এ (বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক)-এর ছাত্র তখন তাঁর প্রথম কবিতা ”কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি” ছাপা হয় তৎকালীন অন্যতম খ্যাতনামা পত্রিকা ”এডুকেশন গেজেট”-এ। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ”অবকাশ রঞ্জিনী”-র প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১লা বৈশাখ ১২৭৮ বাংলা এবং দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয় ২৯ জানুয়ারী ১৮৭৮ সালে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগুলোর মধ্যে- পলাশীর যুদ্ধ (১৮৭৫), রৈবতক (১৮৮৭), কুরুক্ষেত্র (১৮৮৩) এবং প্রভাস (১৮৯৭) অন্যতম।

তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে ক্লিওপেট্রা (১৮৭৭), অমিতাভ (১৮৯৫), রঙ্গমতি (১৮৮০) উল্লেখযোগ্য। তিনি ভাগবত্গীতা এবং মার্কন্ডেয় চন্ডীর পদ্যানুবাদ করে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর গদ্য রচনা এবং আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ”আমার জীবন” একটি নান্দনিক উপন্যাসের মতোই সুখপাঠ্য। তিনি ”ভানুমতি” নামে একটি উপন্যাসও রচনা করেছিলেন।
১৯০৯ সালের ২৩ জানুয়ারী বাংলা সাহিত্যের এই উল্লেখযোগ্য কবি মৃত্যুবরণ করেন।

প্রজন্মের ভাবনা

আজ আর প্রজন্মের দায় অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। পাশ্ববর্তী গ্রামে জন্মগ্রহন করে একটিবারও মনে হয়নি এই মহাকবির স্মৃতি বিজড়িত অবহেলিত বেহাত হয়ে যাওয়া ভিটেটুকু একবার দেখে আসি। কতটা অবহেলায় পরে আছে সেই মহাকবির জন্মস্থান। গ্রামের আকাঁ বাঁকা পথ ধরে রামচন্দ্র হাট হয়ে মিদ্দার পাড়ার সরু রাস্তা বেয়ে রঘুনন্দন চৌধুরীর হাটে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন-এইতো উত্তরে একটু সামনে গেলেই বড় সেনের দীঘির পশ্চিম পাড়ে উনার বাড়ী। আর একটু সামনে এগিয়ে গেলে পি, কে, সেন হাটের পুলের কাছে নিশ্চারঘাট খাল পাড়ে মহাকবির শ্মশান ক্ষেত্রে গড়ে উঠছে ”মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স”।
স্মৃতি কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বার

মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলো। কাদা মাখা মাটির রাস্তা ধরে মিনিট পাঁচেকের পায়ে হাটা পথে সামনে এগুতেই চোখে পড়ল চারপাশে সোনালী ধানের ক্ষেত। ধানের ক্ষেতের শেষ প্রান্তে মগদাই খালের কোল ঘেষে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ”মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স।”

সংসদীয় আসন রাউজান, চট্টগ্রাম-৬ এর সম্মানিত সংসদ সদস্য রাউজানের উন্নয়নের কান্ডারি জনাব এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বেহাত হয়ে যাওয়া কবির পারিবারিক সম্পত্তি পুনঃরুদ্ধার করেন। তারই সহযোগীতা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রায় দুই কোটি টাকা অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে এই সুদৃশ্য কমপ্লেক্স। তাতে কবির ম্যুরাল স্থাপিত হচ্ছে।

কবির মৃত্যর একশত বছর পরে হলেও তাঁর জন্মস্থানে এরকম একটি সুদৃশ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করে তাঁর সৃষ্টি ও কীর্তির যথাযথ সংরক্ষণে বর্তমান প্রজন্মের এগিয়ে আসাটা অত্যন্ত সুখকর। এতে আগামী প্রজন্ম এই মহাকবির জীবন সম্পর্কে আরও বেশী করে জানতে আগ্রহী হবে।
সুদৃশ্য মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন স্মৃতি কমপ্লেক্স

রাউজানের এই প্রত্যন্ত গ্রামীণ জনপদে সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে যোগ হচ্ছে এক ভিন্ন মাত্রা। সামাজিক বহুমূখী উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে কবির এই স্মৃতি কমপ্লেক্স মাইলফলক হিসাবে কাজ করবে। শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনপদের সংস্কৃতিসেবী মানুষগুলো ফিরে পাবে নতুন উদ্দীপনা। সেই সাথে দেশ ও দেশের বাইরেও এর পরিচিতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে এবং আশা করছি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ সরকার এই মহাকবির কীর্তি গাঁথা ও স্মৃতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সুত্রঃ উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top