সুশাসন প্রতিষ্ঠার ভাবনাগুলো
সুশাসন প্রতিষ্ঠার ভাবনাগুলো
দেশ সম্পর্কে আমার ভাবনা সবসময়ই ছিল এবং আছে । অর্থাৎ কিভাবে দেশের উন্নতি হবে , সুশাসন এবং সকলক্ষেত্রে ,সকলসময় কিভাবে ন্যায্যতা বজায় রাখা সম্ভব হবে , সে-চিন্তা আমার থাকে । আমি মনে করি , এদেশে দুটি দল-ই ক্ষমতায় থাকবে সবসময় । এটা পারিবারিক একটা ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে , বিশেষ করে এই উপমহাদেশে । তাই মনে করার কারণ আছে যে , আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এই দুটি দলের মধ্যেই যেকোন একটি ক্ষমতায় থাকবে , কমপক্ষে আরও ২/১ দশক । কিন্তু যেহেতু দল দুটির কোনটি-ই সুশাসন , নায্যতা প্রতিষ্ঠার কোন চেষ্টা কোনদিন করেনি এবং করবেওনা , তাই সবসময় ক্ষমতাসীন সরকারকে সকল ভালো কাজ করতে বাধ্য করানোর একটা প্রক্রিয়া সবসময়-ই থাকা উচিত । ক্ষমতাসীন সরকারকে বাধ্য করানো ছাড়া এগুলি প্রতিষ্ঠা করা মোটেই সম্ভব হবেনা বলে আমি মনে করি । আমাদের অনেক আন্তরিক জ্ঞানী-গুনী ব্যাক্তিত্ব আছেন ; তাঁরা বলেন ভালো , চিন্তা স্বচ্ছ এবং তাঁদের সর্বোচ্চটাই বলেন । এঁরা অধিকাংশই রাজধানীবাসী এবং একত্র হয়ে কিছু বলেন না। অবশ্য তাঁরা একত্র হয়ে আওয়াজ উঠালেও সহায়ক কোন শক্তি ছাড়া তা সরকারকে বাধ্য করানোর জন্য মোটেই যথেষ্ট হবেনা । তাই তাঁদের কথামতো কিছুই হচ্ছেনা ।
প্রতিকারকল্পে ,তাই আমাদেরকে প্রেশারগ্রুপ বা অন্য কোন নামের সারাদেশব্যাপী একটি সংগঠন, যা হবে অরাজনৈতিক , গড়ে তুলতে হবে । সরকারের অনায্যতা, দুঃশাসনের প্রধান প্রধান উদাহরন গুলি হোল– (ক) তাঁরা মনে করেন সংসদ সদস্যগনের কোন দোষ থাকতে পারেনা ; তাঁরা মহান এবং সব সমালোচনার উর্ধ্বে ; তাঁরা কোন দুর্নীতি করতে পারেন না ; তাঁদের দুর্নীতি সম্পর্কে কেউ কোন কথা বলা তো দূরের কথা, সন্দেহও প্রকাশ করতে পারেনা ; (খ) টেন্ডারবাজী ; (গ) চাঁদাবাজী ; (ঘ) দখলবাজী ; (ঙ) থানা দখল করে বসে থাকা এবং থানা প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেওয়া, হস্তক্ষেপ করা ; চ) অর্থনীতির প্রধান একটা উৎস , গার্মেন্ট শিল্পকে রক্ষা করার কোন পদক্ষেপ না নেয়া ; ছ) দুর্নীতিবাজ সরকারী কর্মকর্তাগনের দুর্নীতি উদ্ঘাটনে ও বিচারে অনীহা এবং প্রকারান্তরে উৎসাহিত করা ; জ) সরকারী চাকূরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগবাজী । এ-রকম আরো অনেক ক্ষেত্র উলে¬খ করা যেতে পারে ।
এই ক্ষেত্রগুলি কিভাবে প্রতিহত করা হবে , কোন ধরনের আন্দোলনের মাধ্যমে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ চলবে, তা সংগঠন বসে সিদ্ধান্ত নিবে । তবে এখানে আমরা সংগঠনটির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করতে পারি । প্রথমেই বলতে হয় , সংগঠনটি হবে সম্পুর্ন অরাজনৈতিক ; এর কোন ক্ষমতালিপ্সুতা কেন , ক্ষমতা গ্রহণেরও কোন পদক্ষেপ থাকবেনা , নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়ার কোন লক্ষ্য থাকবেনা এটার । এই সংগঠন সরকারকে সব সময় চাপের মধ্যে রাখবে এবং সরকার কোন অনাচার শুরু করলে এই সংগঠনের কাজ হবে উক্ত অনাচার পরিশোধনে সরকারকে পরামর্শ দেয়া এবং সরকার তা না মানলে মানতে বাধ্য করানোর ব্যবস্থা গ্রহন করা । দেশে অনাচার , অনায্যতা , দূঃশাসনের অবসান হয়ে গেলে এই সংগঠনের আর কোন কাজ থাকতে হবেনা । আবার যদি অনায্যতা, দুঃশাসনের কোন ঘটনার উদ্ভব হয়, তখন আবার এই সংগঠনের কাজ শুরু হবে । সন্দেহাতীতভাবে গ্রহনীয় দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তিগন, যারা এই দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে চান, তাঁরা হবেন এই সংগঠনের প্রান । তাঁরাই সর্ব বিষয়ে দেশে সংঘটিত অনাচারের , অনায্যতার ঘটনা ঘটার সময় তাৎক্ষনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন কি করা উচিৎ । তদন্ত করতে হতে পারে অনেক ঘটনার । তদন্ত করে পরিশোধনের সুনিদৃষ্ট পরামর্শ সরকারকে দিতে হবে এবং সরকার তা মানতে বাধ্য থাকবে ; সরকারকে বাধ্য করানোর মত জনমত সৃষ্টি করতে হবে এবং তা করতে পারলে এটা সম্ভব হবে অর্থাৎ সরকারকে বাধ্য করা সম্ভব হবে ।
জাতীয় কমিটির শক্তিশালী একটা কাঠামো থাকবে এই সংগঠনটির । সাথে সাথে সারা দেশব্যপী এই সংগঠনের জেলা কমিটি , সম্ভব হোলে উপজেলা কমিটি-ও করা যেতে পারে । এর কারন, জেলায় কোন অন্যায় সংঘটিত হলে সে-অন্যায় পরিশোধনের ব্যাপারে জেলা কমিটির অবশ্যই প্রয়োজন হবে । অন্যায়ের ব্যাপকতা অনূযায়ী পরিশোধনের উপায় অন্বেষন করতে হবে এবং সরকারকে বাধ্য করে তা অবশ্যই পরিশোধন করতে হবে । এটা করতে না পারলে এই সংগঠন করার প্রয়োজন নাই । দেশে সুশাসন , নায্যতা প্রতিষ্ঠার এই পথ ছাড়া আর কোন পথ আছে বলে মনে হয়না । সরকারকে বাধ্য করার একমাত্র পথ জনমত সৃষ্টি করা এবং তা সম্ভব যদি সংগঠনটির সদস্য যারা হবেন , তাঁরা ভালো ভাব-মুর্তির অধিকারী হন । এ–জন্য দুর্নীতিগ্রস্থ, এবং, এমনকি গণমানূষের কাছে দুর্নীতির ক্ষেত্রের সন্দেহজনক কোন মানূষ এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না । সংগঠনটির সকল কমিটি গঠনে এটা মানতে হবে । নতুবা আন্দোলন , সংগ্রাম সফলতা পাবেনা এবং টিকবেনা এই সংগঠন ।
যখন কোন অঘটন ঘটবে, যে-রকম একটা টেন্ডারবাজীর কথা ধরা যাক । যে স্থানে টেন্ডারবাজী ঘটবে, সেখানকার এই সংগঠনের কমিটি ঘটনাটার তদন্ত করবে, এবং তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাবে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে । কেন্দ্রীয় কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক মনে করলে, তা পরিশোধনের জন্য, হতে পারে টেন্ডারটি বাতিলের অথবা তা বজায় রাখার এবং দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করার সুনিদ্দৃষ্ঠভাবে পরামর্শ দিবে সরকারের কাছে । কেন্দ্রীয় কমিটি যদি মনে করে, আরও তদন্ত করতে হবে, তবে তা করে একই ভাবে সুপারিশ করবে এবং এই সুপারিশ মানতে সরকারকে বাধ্য করবে । আবার যদি দেখা যায়, কোন খুন হোল এবং সরকার তা এড়িয়ে যাচ্ছে দলীয় কাউকে বাঁচাতে বা অন্য কোন কারনে, অথবা মানবতা লংঘিত হওযার কোন ঘটনা ঘটলো । এবিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্লিষ্ট উপ-কমিটি (যে কমিটিতে থাকবেন এ-সংস্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগন) পুংখানুপুংখভাবে তদন্ত করে সুপারিশ সরকারকে দিবে এবং সরকারকে তা মানতে বাধ্য করবে ।
শেয়ার বাজার কেলেংকারীর সময় একটা তদন্ত কমিটি হয়েছিলো এবং কমিটি কিছু সুপারিশ করেছিলো , যা মানা হয়নি অর্থাৎ সোজাসাপ্টাভাবে বললে, সরকার এ-কেলেংকারীতে জড়িত তার দলীয় লোকদের সাজা না দেওয়ার জন্য সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি । গত কিছুদিনের মধ্যে ব্যাংক-সংক্রান্ত যে কেলেংকারীগুলি হোল, তাতেও সরকারের দলীয় লোকজন জড়িত থাকার কারনে সরকার সামান্য কিছু লোক-দেখানো তদন্ত করলেও এ-গুলির টাকা উদ্ধারের কোন ব্যাবস্থা-ই গ্রহন করেনি । দলীয় লোকজন জড়িত না থাকলে টাকাও উদ্ধার হোত এবং অপরাধীগণও সাজা পেত । আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে দল-ই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, দলীয় লোকজনের প্রতি এ-রকম সহযোগিতা এবং বিচারহীনতা, প্রকারান্তরে, দেশ শাসনে যা চরম অদক্ষতা, অনায্যতা, এগুলি আমরা মানবো আর কতোকাল ?
বিএনপি আমলেও এ-রকম অনেক অনায্যতা, অদক্ষতা হয়েছিলো । দশ ট্রাক অস্ত্র খালাস করা হয়েছিলো, লোক-দেখানো তদন্ত করা হয়েছিলো । দলীয় লোকজনদেরকে অবৈধ অনেক, অনেক সুযোগ তখনও দেয়া হয়েছিলো, একুশে আগস্ট সৃষ্টি করা হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছিলো, টেন্ডারবাজী করা হয়েছিলো ভূরি ভূরি । তখনও থানা ঘিরে বসে থাকতো বিএনপি দলীয় লোকজন এবং তাদের কথামত , এক কথায় দলীয় লোকজন-ই তখনও থানা প্রশাসন চালাতো । এ-আমলের মত তখনও দুর্নীতি, লুটপাট সব-ই চলেছে । সে-আমলে মানূষ বিদ্যুৎ পায়নি, অন্ধকারে থেকেছে । এখন অন্ধকার কিছুটা কেটেছে, তবে রেন্টাল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে । প্রবাসীগন প্রেরিত বৈদেশিক মূদ্রা না আসলে এবং সর্বংসহা ধরীত্রির মতো গার্মেন্ট শ্রমিকরা সব কিছু সয়ে শ্রম বিক্রি না করলে দেশ কোন খাদে গিয়ে পড়ত তা বলা সম্ভব নয় । পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে, কেবলমাত্র ২/১ জন মানুষের দূর্নীতির আকাঙ্ক্ষার জন্য সেতুটা হোলনা বৈদেশিক অর্থায়নে । অথচ শক্তিশালী প্রেশারগ্রুপ বা অন্য কোন নামীয় সংগঠন সারাদেশব্যপী সংগঠিতভাবে বিস্তৃত থাকলে সরকার তখন ঐ ২/১ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হোত এবং বৈদেশিক সহায়তায় সেতুও হোত ।
দেশের শিক্ষিত প্রকৌশলীরা বিশেষ করে যারা সরকারী চাকরী করে, অধিকাংশই দূর্নীতিতে আকুন্ঠ নিমজ্জিত । সেজন্য কোন রাস্তা বা ব্রীজ নির্মান করলে সেটা টেকেনা, রাস্তায় মানহীন মালামাল ব্যাবহার করতে বাধা দেয়না, অনেকে আবার উৎসাহ দেয় । সব সরকারের আমলেই এরকম হয় । এ-জন্য সব সরকারের আমলেই নির্মিত প্রায় অধিকাংশ অবকাঠামো নির্মানের পর খুব কম সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় । যত দিন যাচ্ছে , অতীতের সরকারের তুলনায় চলমান সরকারের অদক্ষতা, অনায্যতা, দূর্নীতি করার মানসিকতা বেড়েই চলছে । এ-রকমভাবে চলতে পারেনা, চলতে দেওয়া উচিৎ হবেনা, আমাদেরকে সঠিক পথ অবশ্য অবশ্য-ই বের করতে হবে ; নতুবা ভবিতব্যের কাছে আমরা দায়ী থাকবো ।
সরকারকে বাধ্য করার পথ অত্যন্ত কঠিন । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে বাধ্য করার পথ-ও ভিন্ন হবে । তবে মূল কিন্তু একটাই , জনসমর্থন এবং জনগনকে সম্পৃক্তকরন । জনসমর্থন আসবে দাবী যদি যথার্থ হয় এবং জনগনকে সম্পৃক্তকরন সম্ভব হবে নেতৃত্বের গতিশীলতার কারনে । তবে সব কিছুই সম্ভব হবে জনগনের কাছে এই সংগঠনের নেতৃত্ব ও সদস্যগনের ব্যক্তিগত গ্রহনযোগ্যতার উপর । এ সংগঠনের নেতা এবং সদস্যগন যদি ব্যক্তিগতভাবে মানূষের কাছে গ্রহনযোগ্য না হন , তবে কখনই নেতাদের ডাকে মানূষ এগিয়ে আসবেন না । জনগন বলতে প্রধানতঃ এ-দেশের ছাত্র ও যুব সমাজকে বোঝানো হচ্ছে ।
এ-দেশে ছাত্রলীগ আছে, আছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং যুব সংগঠনসমূহ । এদের কর্মকান্ড দেশের মানূষের কাছে অজানা নয় । সংগঠনগুলি নিজ নিজ মূল দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলে এবং মূল দলের সাথে একীভূত হয়ে কাজ করে । মূল দলের শক্তির উৎস-ই এই ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো । এই ছাত্র-যুব সংগঠন সমূহ ছাড়াও বিশাল ছাত্র, যুব সমাজ এদেশে রয়েছে, যারা কেউ রাজনীতিতে নেই ; কিন্তু দেশ-সমাজ নিয়ে বিভিন্ন স্তরের চিন্তা-ভাবনা তাদের মধ্যে রয়েছে । এরা দেশের শাসনকর্তাদের উপর বিরক্ত, বিক্ষুব্ধ । এরা দীর্ঘদিন পরিবারের অভিভাবকগনের অভাব, দুঃখ-দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে এসেছে, চারপাশের মানুষজনের জীবন-যাপন প্রত্যক্ষ করে এসেছে ; অন্যদিকে সমাজের জনপ্রতিনিধি , সরকারী কর্মকর্তাসহ অন্যান্য দুর্নীতিবাজদের কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করে আসছে । এরা রাষ্ট্রের অন্যায়-অবিচারের শিকার । ত্যাগী কিছু ভালোমানূষ রাষ্ট্র হতে সকল অন্যায়, অবিচার দূর করার কাজে এদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে, সংযূক্ত হতে আহ্বান জানালে নিশ্চিতভাবে তারা এগিয়ে আসবে । এই ছাত্র-যুবা গোষ্টিকে কখন-ই ডাকা হয়নি সেভাবে । অন্যায় রোখার জন্য উদাত্ত আহবান এদের কখনোই জানানো হয়নি । তাদের কখনোই বলা হয়নি যে, দেশের কাছে তাদের কিছু ঋন আছে এবং এই ঋন তার শোধ করা উচিত । এই ঋন তাকে শোধ করতে হবে দেশের জন্য কাজ করে ।
আমাদের জনপ্রশাসনকে নির্জীব করে অর্থাৎ সরকারের আজ্ঞাবহ করে রাখা হয়েছে । আসলে জনপ্রশাসন তো সরকারী আইন-কানুন মোতাবেক-ই চলবে । জনপ্রশাসন বলতে এখানে পুলিশ , মন্ত্রনালয়সহ সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বোঝনো হচ্ছে । সরকারের নীতি-নির্ধারনী মহল আইন পাশ করবে এবং সেই সমস্ত আইনের বাস্তবায়ন ঘটাবে জনপ্রশাসন । এই জনপ্রশাসনকে প্রতিটি সরকার এমনভাবে কুক্ষিগত করে রাখে যে, সেখান থেকে কর্মকর্তাদের বের হয়ে আসার কোন উপায় থাকেনা যদি কেউ চাকরী করতে চায় । জ্যেষ্ঠতা ভেঙ্গে দলীয় কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে পদোন্নতি দিয়ে, লোভনীয় ও ক্ষমতাপুর্ন পদে বসিয়ে, বিরোধী-মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তাদের দলন করে প্রতিটি সরকার-ই জনপ্রশাসনকে আজ্ঞাবহ এবং কুক্ষিগত করে রাখে । অনেক কর্মকর্তা আবার সরকারের এরকম নীতির সুযোগে বিভিন্ন রকম অবৈধ সুবিধা নেয় । এভাবেই সরকারের সাথে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটা নেয়া-দেয়ার সম্পর্ক তৈরী হয়, যেখানে সম্পর্কটা হওয়া উচিত নির্দেশ প্রদান এবং পালনের ।
এর মধ্যেও প্রতি সার্ভিসেই মানবিক কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন , যারা এই নেয়া-দেয়ার সম্পর্কের বিরোধী এবং এটা তারা মেনেও নিতে পারেন না । কিন্তু চাকুরিতে থেকে তাদের কিছু আসলে করার থাকেনা । তাই তারা মনে বড় ব্যাথা নিয়ে সব কিছু সহ্য করে কোনমতে কাজ করে যান । পুলিশ বাহিনীতে কিছু কর্মকর্তা আছেন , যাঁরা চান না থানা রাজনৈতিক ক্যাডার কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত হয়ে থাকুক ও তাদের কথামত চলুক । কিন্তু চাকুরী হারানোর ভয়ে কিছু না বলে তারা চুপ-চাপ থাকেন । ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেও অনেকে আছেন , যারা টেন্ডারবাজি চাননা এবং হলে তার আশু সমাধান এবং প্রযোজ্যক্ষেত্রে দোষীদের সাজা চান । কিন্তু তারাও অসহায় হয়ে থাকেন । কারন সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করলে বিভাগীয় মামলার ঝামেলায় পড়তে হয়, ক্ষেত্র বিশেষে চাকুরীও চলে যায় । তাই তারা প্রতিবাদী না হয়ে গোবেচারা হয়ে দিন যাপন করেন । দেশে অনায্যতার বিরুদ্ধে সারাদেশব্যাপী প্রতিবাদী কার্য্যক্রম শুরু হলে জনপ্রশাসনের এ-সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগন নিশ্চুপ বসে থাকবেন, মনে হয়না । প্রকাশ্যে না হলেও কিছু ভূমিকা অবশ্য-ই রাখবেন যার যার অবস্থান থেকে, সাধ্যমত ।
দেশে সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটলো, বিশেষ করে সাঈদীর রায়ের পর যে তান্ডবগুলি চললো সারা দেশব্যপী, তাতে মানূষ জান-মালের নিরাপত্তা পেয়েছে, বললে সঠিক বলা হবেনা । জামাত-শিবির কর্তৃক হিন্দুদের উপর অনেক অত্যাচার হয়েছে, তাদের অনেক ক্ষতি করা হয়েছে ; সরকার তাদের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে । কিন্তু কেন, কেন সরকার জান-মালের নিরাপত্তা দিতে পারবেনা ? কি নেই সরকারের ! সরকার সেনাবাহিনী ডাকতে পারতো । না পারার কিছু ছিলনা । সরকারপ্রধান যে কোন সময় যে কোন প্রতিষ্ঠানকে যে কোন বৈধ নির্দেশ দিতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটি উক্ত বৈধ নির্দেশ পালন করতে বাধ্য । আসলে বিগত চার বছরের কর্মকান্ডের ফলে হয়তো সরকার সেনাবাহিনী ডাকার নৈতিক সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে । নতুবা জামাত-শিবিরের এতো সাহস হয় তান্ডব চালানোর ? আসলে নিজেদের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে অবৈধ সূযোগ-সুবিধা ভোগ করতে দিয়ে সরকার মিত্রহীন হয়ে পড়েছে । এর-ই প্রতিফলন সেনাবাহিনী ডাকতে না পারা ।
এ-দেশে আইনের শাসন, সকল ক্ষেত্রে নায্যতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় সরকারগুলোকে তা করতে বাধ্য করার একটি শক্তিশালী প্রেশারগ্রুপ অথবা অন্য কোন নামীয় এ-ধরনের একটি সংগঠন কার্য্যকর থাকা, যে সংগঠন ক্ষমতার জন্য কোনসময় কোন ধরনের চেষ্টা করবেনা । এ-রকম সংগঠন সার্থকতা লাভ করতে পারে কেবলমাত্র প্রচন্ড জনসমর্থনের ভিত্তিতে এবং সেই ভিত রচিত হতে পারে দূঃশাসনের প্রত্যক্ষ শিকার ঐ ছাত্র-যুবকদের দ্বারা, আগে বলা হয়েছে যাদের কথা।
সত্যি বড়ই অবাক লাগে যখন সরকারী , আধা-সরকারী যেকোন নিয়োগ আসে, দেখা যায় শুধু তদবির পার্টি আর অবৈধ অর্থের ছড়াছড়ি । এতোটাই অদক্ষ এই সরকারগুলো যে একটা নিয়োগ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারেনা । বাংলাদেশে এই সরকারগুলোকে চ্যালেঞ্জহীনভাবে আর ছেড়ে দেয়া যায়না, ছেড়ে দেয়া উচিত হবেনা । কত অত্যাচার করতে চায়, কত রক্ত চায় দলগুলো সুশাসন, নায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য, তা দেশের বঞ্চিত, অবহেলিত ছাত্র-যুবক-জনতাকে বলে যেতে হবে। দিন এসে যেতে হবে, আর নয় ।
সন্দেহাতীতভাবে সৎ আর বলিষ্ট কিছু মানুষ এখনও আছেন এদেশে, যাঁরা এ-ডাক ডাকতে পারবেন ডাকার মতো করে এবং তাঁদের ডাক নিশ্চিতভাবে শুনবে এই ছাত্র-যূবকেরা। আমাদের সকলের সন্মিলিত উদ্যোগই পারে শুধু সকল শ্রেনী-পেশার মানূষকে একীভূত করে এরকম একটি বিরাট-বিশাল প্রেশারগ্রুপ জাতীয় সংগঠন সৃষ্টি করতে এবং দেশ থেকে সকল অনায্যতা , অসততা , অদক্ষতা দুর করে একে একটি মানবতাবাদী, উদারনৈতিক এবং কল্যানকর রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে ।
মার্চ / ২০১৩।