রাজার ঈশ্বরসাধনা
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা।এক দেশে এক রাজা ছিল।রাজার ছিল পাঁচ বউ।বড় বউ মোহিতা।এরপর যথাক্রমে চন্দ্রা,নন্দিতা,নন্দিনী,মোহিনী।রাজা তাদের ডাকল।পাঁচ বউ রাজার সামনে এসে বসে।
-সংসার আর ভাল লাগছে না।রাজ্য তোমরাই চালাতে পারবে।আমি বনে চলে যাব।ঈশ্বর সাধনা করব।জীবনের অনেকটা দিন তো ভোগেই চলে গেল।
মোহিতা কাঁদ কাঁদ হয়ে হাত ধরে বলে-আমরা কি নিয়ে থাকব মহারাজ?
-আমিতো কিছু নিয়ে যাচ্ছি না।
-আমাদের রাজ্য চাই না মহারাজ।আমরা শুধু আপনাকে চাই।তোরা কি বলিস?
সবাই মাথা নাড়ে।
রাজা বলে-এ জীবন হচ্ছে বন্ধন।এ বন্ধন হতে আমি মুক্ত হতে চাই।
-যদি যাবেন,তবে আমরাও যাব।
বাকিরা মাথা নাড়ে।
-আচ্ছা যাও।আমি ভেবে দেখি।
সবাই চলে যায়।রাজা দীঘির সিড়িতে বসে।পূর্ণিমার চাঁদ জলে খেলা করছে।রাজা যত বাড়ই দেখছে ততবারই মুগ্ধ হচ্ছে।আকাশের দিকে তাকায়।অনেক তারা।সাদা সাদা মেঘ।এর মাঝে চাঁদকে লাগছে অদ্ভূত সুন্দর।ঠিক করল,আর না পরিবারের বন্ধন।এখনি বনে চলে যাবে।হাটতে হাটতে কোথায় চলে এল,নিজেই বুঝতে পারল না।ভোর হবে হবে এমন সময় একটা বন খুজে পেল।বনের ভিতর ঢুকে পড়ে কিছুটা জায়গা পরিস্কার করে।এরপর গাছের পাতা বিছিয়ে ঘুমায়।খুব ঘুম ঘুম ধরছে।কয়েক ঘন্টা ঘুমের পর বেশ ক্ষিধা লাগে।
-নন্দিনী,নন্দিনী, খাবার নিয়ে আস।
ক্ষণিকেই ঘুমের ঘোর কেটে যায়।দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বউগুলোর মুখ বারবার ভেসে উঠছে।একেজন একেকভাবে আনন্দ দেয়।মোহিতা বলে গল্প,চন্দ্রা গায় গান,নন্দিতা খুব সুন্দর নাচে,নন্দিনী আকে ছবি,মোহিনী শুনায় কবিতা।বনের গাছপালা হতে ফল সংগ্রহ করে খেল।এরপর ধ্যান শুরু করে।নাকের কাছে কি যেন ভনভন করছে,শুধু ভনভন না,কিসে যেন কামড়াছে?চোখ খুলে।মশা মাড়ার কয়েকটা চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে আবার ধ্যান শুরু করে।চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই গজ গজ করে কিসের আওয়াজ যেন হয়,যেন ভয়ানক কিছু তেড়ে আসছে।রাজা ভয়ে ভয়ে সাথে সাথেই চোখ খুলে-দেখে একটি বনমোরগ যাচ্ছে।দেখে বেশ লোভ হল।মনে হল,ধরে খেতে পারলে বেশ হত।
-এই মনু,মোরগটা ধরতো।
বলেই মনে পড়ে যায়,সেতো আর প্রাসাদে নেই।সে এখন বনে।যেই উঠে ধরতে যাবে,তখনি দেখে মুরগির হদিস নেই।রাজা এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞবদ্ধ হয়,যাই হোক ধ্যান হতে কিছুতেই উঠছে না।ধ্যান করা শুরু করে।মনে মনে গডকে জপতে থাকে।মশার গুণ গুণ অসহ্য হয়ে উঠছে।গড সাধনার সময়ও যদি এমন সমস্যা করে,এটা কোন কথা হল।একেবারে শয়তানগুলো হাড়ে হাড়ে অকৃতজ্ঞ।তারপর আবার কামড়।মনে হচ্ছে চামড়া চামড়া খুলে খুলে পড়ছে।এমন সময় শম শম করে বাতাস বইতে থাকে।প্রচন্ড ঝর হবে হয়তো।রাজাতো মনে মনে অস্থির।কখন মাথার উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে,সে চিন্তায় গডের নাম মুখে জপ করা বন্ধ হয়ে গেছে।মনে একটি ছবি ভেসে উঠে,কয়েকজন লোক তাকে কফিনে করে কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।রাজা চমকে উঠল।তবু চোখ খুলল না।এবার কিসের গর্জন যেন শুনতে পেল?এরকম ডাক শুধু হিংস্র পশুরাই ডাকে,তার রাজসভার মন্ত্রীর কাছ হতে শুনা।শব্দটা আরও জোরালো হচ্ছে।রাজা এবার আর চোখ না খুলে পারল না।পিতৃপ্রদত্ত প্রাণটা রক্ষা করা আগে দরকার।তাই এক দৌড়ে বন হতে বের হয়ে পড়ে।রাজপ্রসাদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।তার প্রিয় বউরা কেমন আছে।তাদের কথা খুব মনে পড়ছে।