Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ছিলাম মানুষ হইলাম ভূত

: | : ২১/১২/২০১৩

ভূমিকা: আমার এই শিশুতোষ ভূতের গল্পটি পূর্বে চলন্তিকায় পোষ্ট করে আসছিলাম।ভূলবশত শেষের তিনটি পর্ব বাদ পড়েছিল।এখন আমি শেষের তিন পর্ব সহ পুরো লেখাটি একসঙ্গে  আবার পোষ্ট করছি সবার সুবিধার জন্য। ধন্যবাদ।

মূল গল্প

(একজন আদম সন্তানের ভূত হওয়ার পিছনের ঘটনা)/শিশুতোষ রসাল ভূত কাহিনী

এভাবে কতক্ষণ আর ছাদে ঝুলে থাকতে হবে কে জানে সে  এখন আসিফ সাহেব এর বেড রুম এ যে সিলিং ফ্যান টা আছে সেখানে ঝুলে আছে

সদ্য ত্রিপিটক এ পাড়াতে ভূত হয়ে  এসেছে।

আগের  সপ্তাহে চাদা র ভাগ নিয়ে কথাকাটির এক পর্যায়ে তার বিশ্বাসঘাতক বন্ধু রা  তাকে মেরে শেওড়া গাছের নিচে ফেলে গেছে।

ভাগ্যিস সে সময়ে গাছের উপরে অবস্থান করছিল এই দুই ব্লগ এর ভূতদের দলপতি ঘুটঘুট আর তার সহযোগী মিটমিট ।জানা যায় তাদের নামকরণ তারা নিজেরা করেছেন ঘুটঘুট আর মিটমিট ।তাদের ঘুটঘুটে চেহারা র কারণে নাকি এই নামকরণ ।

তাদের দীর্ঘ ভূত জীবনের ইতিহাস খুব উজ্জল ।এ পর্যন্ত প্রায় একহাজার মেয়ে কে ঘুটঘুট হাসি দেখিয়ে দাত কপাটি লাগিয়ে দিয়েছে। অন্ততপক্ষে পনর হাজার ছেলে মেয়েকে অজ্ঞান করেছে ভেংচি কেটে ।

তবে তারা কোনো সন্ত্রাস এ বা কাওকে জখম করা ভূত সমাজে নীতিবিরুদ্ব ।তারা সুধু খেলতে ভালবাসে বা ভয় দেখাতে পছন্দ করে ।

সেই তার এই গৌরবজ্জল ইতিহাসে আজ এ কোন অবমাননা ?

ছোট দুই বিচ্ছু পিচ্চি র কাছে এই অসন্মান তার ভেংচির বদলে তার মুখে পিচকারী দিয়ে কালি ছিটিয়ে দিল তারপর ভেংচি কেটে বাই ভূত আঙ্কেল বলে হাসতে হাসতে দৌড় দিল
দাতে কিড়মিড় করে প্রতিজ্ঞা করলো এই অপমানের শোধ নিবে ।

সেই অপমানের প্রতিশোধ নিতে আজ ত্রিপিটক এর এখানে আসা ঘুটঘুট এর ইচ্ছে তে।

এত সুন্দর বাচ্চা কে ভয় দেখাবে কি তার ইচ্ছে করছে বুকে জড়িয়ে আদর করতে তার নিজের ছোট ভাই এর কথা মনে পড়তে লাগলো ।

আসিফ কবিতা পড়ছে জোরে জোরে।

আসিফ নজরুল ঢাকা ইউনিভার্সিটির এর অধ্যাপক ।

শুনা গেল নিয়ে গেছে তারে
লাশ কাটা ঘরে
কাল রাতে , ফাল্গুনের রাতে-যখন গিয়েছে ডুবে
পঞ্চমীর চাঁদ, মরিবার হলো তার স্বাধ;

কাদম্বিনী মরিয়া প্রমান করিল যে সে মরে নাই।

সে জোরে বলতে লাগলো রবি বাবু আপনাকে অনেক ভালবাসি শ্রদ্ধা করি কিন্তু তারপর ও বলি আপনার উচিত ছিল এভাবে বলা

কাদম্বিনী বাচিয়া থাকিয়া প্রমান করিল সে মরে নাই সে বাচিয়া ছিল।

হটাত এক ঝফাং শব্দ করে ত্রিপিটক খাটের উপর পড়ল
আসিফ আতকে উঠে বিছানায় বসলো

এই তুই কে ?তোর্ কাপড় চোপড় কোথায় ? তোর্ চেহারা এত বিছরি কেন?

স্যার আমি ভূত আমার নাম ত্রিপিটক।

তুই ভূত অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আসিফ ত্রিপিটক এর দিকে।

২-আসিফ সাহেব  ত্রিপিটক আর দুই ছেলে একসঙ্গে খেতে বসেছে।

আসিফ এর দুই ছেলে আনোয়ার নজরুল বড় বয়স আট বছর।

সে পড়ে গভ্টমেন্ট লাবরেটোরি স্কুল এ তৃতীয় শ্রেণীতে আর ছোটো মনোয়ার স্কলাস্টিকায় লেভেল ওয়ান।

পড়াশোনায় তারা যেমন ভাল দুষ্টামিতে তাদের ধারকাছে কেউ ঘেষতে পারেনা।

স্কুল পাড়া সবজায়গা থেকে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে।বড় আনোয়ার যা করে ছোট টি তা অনুসরণ করে।

প্রতিদিন বিকাল এ ছাদে  চলে আসে মাকে লুকিয়ে। বাবার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আশেপাশে র সব বাসার ভিতরে দেখতে থাকে তার থেকে দুই তিন টা মাথা বাছাই করে যেসব মাথায় চুল নাই তাদের টাক বরাবর গুলতি নিক্ষেপ।

হয়তবা কোন ভদ্র  লোক  আয়েশ করে জানালার পর্দা সম্পূর্ণ সরিয়ে প্রাকৃতিক বাতাস সেবন করতে করতে খবরের কাগজ পড়ছিলেন তখন ই দুষ্ট আনোয়ার এর গুলতি নিক্ষেপ ভদলোকের নধর টাক লক্ষ্য করে।ভদ্রলোক মাগো বলে  চেয়ার উল্টে মাটিতে পড়ে যায় ।উঠে  বাজখাই গলায় চিত্কার করতে করতে বলতে থাকে সামনে যদি তদের পাই কাছে আল্লাহ র কসম তোগরে কাচা গিল্লা খাইয়া লামু।

বকতে বকতে অদৃশ্য গুলতি নিক্ষেপ কারীকে খুজতে  থাকে।

দুই বিচ্ছু ততক্ষণে হওয়া ।

এইভাবে সেইদিন ঘুটঘুট আর মিটমিট এর সাথে তাদের সংঘর্ষের অবতারণা।

পরশু আনোয়ার আর মনোয়ার স্কুল থেকে ফেরার পথে তালুকদার আঙ্কেল এর সাথে দেখা।

এই আঙ্কেল টা একটা পচা বাজে  আঙ্কেল। এক রিক্সা ওয়ালা কে এত জোরে থাপ্পর মারলো ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি হওয়াতে।

ছোট মনোয়ার বলল দেখছ ভাইয়া আমাদের বাবা কত ভালো ঐদিন রিক্সা ওয়ালার কষ্ট দেখে একশত টাকা দিল আর এই বাজে আঙ্কেল ?

দাড়া মনোয়ার চল এখনি অপারেশন নম্বর ফাইভ সঙ্গে সঙ্গে ছাদে এসে অব্যর্থ নিশানায় তালুকদার আঙ্কেল এর মাথা বরাবর গুলতি নিক্ষেপ।

ঠিক ঐসময়ে আনোয়ার দের  ছাদে যে  আম গাছ টা ছিল তার ডালে ঘুটঘুট আর মিটমিট স্বচক্ষে সেই ঘটনা অবলোকন করছিল।

আনন্দে ঘুটঘুট আর মিটমিট গড়াগড়ি করিয়া হাসছিল তারা বলছিল

সাবাস বীরের বাচ্চা সাবাস মানুষের বাচ্চা

ভূত  দলপতি ঘুটঘুট তোমাদের অভিনন্দন জানাইতেছে।

কিন্তু আনোয়ার মনোয়ার ভয় পেয়ে যায় ঘুটঘুতের এর চেহারা দেখে ভয় পেয়ে ভূত দের নিশানা করলো তাদের ষষ্ঠ গুলতি আর পিচকারী  দিয়ে কালী ছিটিয়ে দিল মনোয়ার

তারপর ভুত্গুলার চোখ ছানাবড়া করে দিয়ে নিচে নেমে গেল দূড় দাড় করে ।

অসহ্য যন্ত্রনায় দাত কিড়মিড় করতে করতে ঘুটঘুট মাটিতে পড়ে গেল

সে বলতে লাগলো এর প্রতিশোধ আমি নিব রে বিছুর বাচ্ছা।

সেই থেকে টানা তিনদিন ধরে ঘুটঘুট আর মিটমিট আনোয়ার দের বাসার রেলিং ধরে ঝুলে ছিল মওকার অপেক্ষায়।

সেই সুযোগ আর আসছিলনা কিন্তু সারাক্ষণ শোনা যাচ্ছিল বিছুগুলির হাসি আর দৌড়া দৌড়ি র আওয়াজ।

কথা হচ্ছিল ঘুটঘুট আর মিটমিট এর মাধ্যে ঠিক এইরূপ।

ঘুটঘুট : এই মিটমিট যন্ত্রণা হইলো তো ভারী

মশা তো ফালা ফালা করে ফেলতেছে রে তোরে ও কি কামড়াইছে  নাকিরে ?

মিটমিট:::জি  ভাই এটা তো বুজতেছিনা আমাদের তো শরীর নাই আমরা সুধু একটা কায়া মশা কি খাইতেছে ভাইজান।

ঘুটঘুট :আমাদের অসহায় মানুষ গুলির কি আছে বল ? আমাদের রাজনীতি তো মানুষ গুলোর রক্ত মাংশ খাইয়া শেষ কইরা লাইছে রে ?মশা খাইয়া আর মজা পাচ্ছেনা রে তাই আমাদের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে ভিক্ষা চাচ্ছে তার ও বাচতে হবে রে ।

মিটমিট  : চলেন ভাইজান লাইট নিভানো  দেখতেছি এখন সময় ভয়  দেখানোর

এরপরে গাছে চলে যাব ভাইজান।খুব ঘুম আইতাছে ভাইজান।

ঘুটঘুট : শোন সুধু কম্বল ফালায় দিবি আর পায়ে একটু সুড়সুড়ি দিবি বেশি কিছু করবিনা কিন্তু।

দুইজনে পা টিপে টিপে আনোয়ার দের বিছানার কাছে এসে বসলো।

কম্বল টেনে সরাতে যাবে ছোট মনোয়ার শোয়া থেকে উঠে বসে পিট্ পিটে চোখে তাকিয়ে রইলো।

ভয় দেখাবে কি তারা ভয় পেয়ে চমকে মুখ লুকানোর চেষ্টা করলো।

আনোয়ার ও উঠে বসলো শোয়া থেকে

আচ্ছা আঙ্কেল তোমার কোন  শয়তানী কাজের জন্য ভূত হয়েছ ? জিজ্ঞাসা করে আনোয়ার।

আমরা কোনো শয়তানি করে ভূত হইনাইরে বাবা মানুষ ই শয়তানি করে মাইরা আমাগোরে ভূত বানাইছেরে

তাই আনোয়ার চিন্তায় ডুবে গেল এই কথা ভেবে ?

কে বেশি খারাপ  মানুষ না ভূত ?

৩আসিফ  সাহেব ত্রিপিটক ঘুটঘুট মিটমিট আনোয়ার  মনোয়ার সবাই একসঙ্গে সকাল এর নাস্তা বানাচ্ছে আসিফ এর স্ত্রী আনোয়ার এর মা  দেশের বাহিরে আছে

শিক্ষার মান উন্নয়নকল্পে তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলোর করণীয়  ” ইউনিসেফ এর সেমিনার  এ যোগ দিতে আফরিন আনোয়ার মনোয়ার এর মা বার্লিন গিয়েছেন মনোয়ার এর কান্নাকাটিতে প্রথমে তিনি ভাবলেন যাওয়া  ক্যানসেল করে দিবেন তার স্বামীর অনুপ্রেরনায় পিড়াপিড়িতে তিনি কিছুটা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সেমিনার এ যোগদান এর জন্য গত সপ্তাহে বার্লিন এ গিয়েছেন।

প্রথম কয়েকদিন মনোয়ার এর খুব মন খারাপ আর কান্নাকাটিতে যাচ্ছিল মাকে  ছাড়া এখন তার মন বেশ ভালো ভূত আঙ্কেল দের পেয়ে ।

ইতিমধ্যে মনোয়ার তার সবচেয়ে প্রিয় ভিডিও গেম  টা ত্রিপিটক আঙ্কেল কে গিফট করেছে যেটা    কিছু দিন আগে  সে সারা  পৃথিবীর বিনিময়ে দিতে রাজি ছিলনা।

একটা কথা বলা পাপ্পি ছিল সেটা  দিল ঘুটঘুট আঙ্কেল কে আর তার প্রিয় ঠাকুরমার ঝুলি  দিল মিটমিট আঙ্কেল কে।দুই আঙ্কেল তাকে জড়িয়ে  চুমু খেতে   খেতে অস্থির  করে ফেলল ।

আনোয়ার মনোয়ার মনে আজ আনন্দের  কোনো সীমা নাই আজকে তাদের মনে হচ্ছে পিকনিক সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করা।

বাবা পরোটা বানাচ্ছে ত্রিপিটক আঙ্কেল আলু কাটছে

ঘুটঘুট  আঙ্কেল পেয়াজ কাটছে আর ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদছে।

বাবা জিজ্ঞাসা করেছে ঘুটঘুট তোমার কি হয়েছে ?

স্যার মায়ের কথা মনে পড়ে গেল মাও এভাবে পেয়াজ কাটতে কাটতে কাদত বলে সে আবার একটু  ফুফিয়ে উঠলো  ।

মিটমিট  আঙ্কেল ডিম ফাটছে অতি উত্শাহের সাথে তাওয়ায় পরোটা দিচ্ছে আর সেকছে

সিদ্বান্ত হলো ঘুটঘুট আঙ্কেল ভাজবে আলু

ত্রিপিটক ভাজবে ডিম

আসিফ সাহেব বেলিতেছিল পরোটা

মিটমিট তা দিচ্ছিলো তাওয়ায়

 

তার প্রথম রুটি সেকা হয়ে  গেছে এক বিরাট শিল্পকর্ম চারিদিকে গোল গোল পোড়া  দাগ

 

মিটমিট কবে তুই শিখবি কবেরে ?

তার প্রথম রুটি সেকা হয়ে  গেছে এক বিরাট শিল্পকর্ম চারিদিকে গোল গোল পোড়া  দাগ

মিটমিট কবে তুই শিখবি কবেরে ?  উস্মা ভরে বলে ঘুটঘুট

আমার আলু ভাজি যে  খায় সে সারাজীবন মনে রাখে বুজলিরে মিটমিট দাড়ায়ে দাড়ায়ে  দেখ

যখন কানাডা লন্ডন যাবি হোটেল রেস্টুরেন্ট এর পেয়াজ আলু কাটা ছাড়া আর কোনো  কাজ  নাই

তখন  কি করবি গলায় আবার ফাস লাগাবি না না খাইয়া থাকবি ? কাজ কাজ ই কোনো কাজ অসন্মানের কিছু নাইরে মিটমিট।

এই কথার মানে ব্যাখ্যা করলো ঘুটঘুট আসিফ সাহেব এর কাছে।

স্যার মিটমিট তার বউ এর ঝগড়া কইরা আত্মহত্যা করছে এমন বোকা মানুষ হয় যদি  দেখতাম  সংসদ এর সামনে আমাদের মন্ত্রিগুলার সামনে মরছিশ একটা প্রতিবাদ হিসাবে আমাদের রাজনীতিতে সেন্স  আনানোর জন্য বুঝতাম  যদিও তুই এখন ভূত অন্ততপক্ষে মানুষের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে এই ভূত হওয়া ।

মিটমিট হাতের চেটোয় তার চোখ মুছতে লাগলো

স্যার আমার বউ আর ছেলেটার লাগি খুব খারাপ লাগের বলে আজকে যদি সুযোগ পাইতাম বউ রে তোর্ জন্য তিন রেস্টুরেন্ট এ কাজ করতাম রে তোরে সব  শাড়ী গয়না কিনে দিতাম রে আপন মনে কষ্টের সঙ্গে বলতে থাকে।

পরিবেশ একটু ভারী  হওয়াতে  আসিফ গা ঝাড়া বসলেন।

মিটমিট তুমি তাড়াতাড়ি টেবিল রেডি কর আনোয়ার মনোয়ার রে নিয়ে

ঘুটঘুট তেলের কড়াই তে পেয়াজ দিয়ে বলে আমার আলু ভাজি খা সারাজীবন মনে রাখবি

পেয়াজ কড়াই তে পড়া মাত্র  ধপ করে আগুন  ধরে  গেল কড়াই তে।

ওরে বাপরে বলে পিছনে উল্টা খেয়ে পড়ল মিটমিট বাকি সবার অবস্থাও করুন পোড়ার গন্ধে কাশতে কাশতে সবার নাভীশ্বাস উঠে গেল।

গায়ের ময়লা  ঝেড়ে উঠতে উঠতে মিটমিট বলল কৌতুকের স্বরে ঘুটঘুতের উদ্দেশ্যে।

ঠিক কয়েছেন ভাইজান এই আলুভাজির কথা ভোলে সাধ্য কার ? আমি আরেক টূ হলে ভাজি হয়ে যাচ্ছিলাম।

ঘুটঘুট কটমট করে তাকালো মিটমিট এর দিকে ভাবখানা এরকম সুযোগ পাইয়া তুই আমারে একহাত নিলি আমার প্রতিজ্ঞা   তোরে আলু ভাজি খাওয়াব।

আমার নাম ঘুটঘুট বাবার নাম  দুরদুর মায়ের নাম  পুটপুট আর আমার ভাই বিখ্যাত চুরচুর।

কলিং বেল  এর  আওয়াজ  এত ভোরে কে আসল ?

দরজা খুলে আসিফ  সামনে মসজিদ এর হুজুর আর মুয়াজ্জিন কে দাড়িয়ে থাকতে  দেখল ।

আসালামুয়ালায়কুম ওরাহমাতুল্লাহ  আসিফ সাহেব আপনার সব  কুশল তো  ?

আসিফ মাথা  নাড়ে   সালামের  জবাব  দিয়ে

জনাব  মুয়াজ্জিন সাহেব বললেন  উনি  আজান  দেওয়ার  সময় কি যেন দেখেছেন আপনার ঘরের বারান্দায় সেই থেকে উনি ভীত হয়ে আছেন বললেন হুজুর কাশতে কাশতে অস্বস্তিতে ।

আমার বাসায় ভয় পাওয়ার মত কিছু নাই তাছাড়া আমি সাহসী মানুষ অযথা ভয় পাইনা বলল আসিফ বিরক্তির স্বরে।

জনাব সবকিছু কে অবহেলা করবেন না আমাদের জ্ঞানের বাহিরে অনেক  কিছু আছে যেমন ভূত জ্বিন প্রেত ।

কিছু তাবিজ দিয়ে বলল ঘরের  চার  কোনায় রেখে দিবেন আর শুনলাম আপনার ছেলে দুইটি মানসিক ভাবে অসুস্থ সবাইকে  নাকি ঢিল পাটকেল ছুড়িয়া মারে বলে অস্বস্তিভরে কাশতে থাকে ।এই দোয়া পড়বেন আর তার সাথে আয়াতুল কুরচি  সবসময় পড়বেন বলে হুজুর দোয়ার   বই দেন  হাতে এবং নিজে পড়তে থাকেন  দুরুদে  শেফা ওয়া ইয়াশফি সুদুরা ক্বাউমিম   মুমিনিনা’ ওয়া  শিফাউল লিমা ফিস সুদুর ইয়াখরুজু মিম  বুতুনিয়া শারাবুম মুখতালিবুন অলোয়ানুহু  ফিহি  শিফাউল লিন  নাস ।সঙ্গে সঙ্গে হাতের লাঠি দিয়ে  দরজায় আঘাত করতে করতে বলেন।

সরে যা  সব ভূত প্রেত শকুনির দল আল্লাহ রাসুলের দোহাই  তোরা  মানুষের লোকালয় ছেড়ে যা।

হুজুর এর আত্মচিত্কার এ ত্রিপিটক দের মন গলে গেল তারা অবিলম্বে আসিফ সাহেব এর বাসা ত্যাগ করে তাদের বাসস্থান সেই শেওড়া  গাছে ফিরে গেল ।

আসিফ এর বিরক্তির সীমা রইলোনা

ভিতর থেকে আনোয়ার মনে মনে ভাবে এবার তোমাদের পালা হুজুর আঙ্কেল আমার গুলতির লক্ষ্য হবে তোমাদের একজনের টুপি আরেকজনের দাড়ি ।

সেদিনের পর থেকে আজপর্যন্ত প্রায় দশদিন পার হলো ত্রিপিটক ঘুটঘুট আর মিটমিট কে আসিফ সাহেব এর বাসার ত্রিসীমানায় দেখা যায়নি। আসিফ সাহেব প্রতিদিন দরজায় এসে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। তার মন টা বিষন্ন হয়ে যায় যখন মনে হয় আহারে ওরা না খেয়ে চলে গেছে।
আনোয়ার মনোয়ার সবসময়ে মনমরা হয়ে বাসায় বসে থাকে। এমনকি তাদের প্রিয় গুলতি খেলা তারা বন্ধ করে দিয়েছে কয়দিন হলো। তাদের হট্রগলে পাড়া সবসময় অস্থির থাকে। পথচারী এ বাসার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এখন অবাক হয়ে ভাবে কি কয়েছে এই বাসায় কেউ মারা যায়নি তো ?

মসজিদ এর মুয়াজ্জিন সাহেব অবশ্য খুব বড় মুখ করে বলছে এটা আল্লাহ র কালাম বাসার চার কোনে পুতে দিয়ে আসছি।ভুতের গোস্ঠি র গায়ে আগুন ধরায় দিছি।

আনয়ারদের মা কালকে বার্লিন থেকে এসে পৌছেছে সেমিনার শেষ করে। তিনি নিয়ে এসেছেন আনোয়ার আর মনোয়ার এর অনেক পছন্দের খেলনা। কিন্তু উনি বাচ্ছাগুলি র কোনো আনন্দ বা উত্তেজনা দেখছেন না। স্বামীর অবস্থা ও একইরূপ।

কি ব্যাপার তোমাদের কি হয়েছে আসিফ ?আফরিন জিজ্ঞাসা করে উত্কন্ঠায় দেখে মনে হচ্ছে ভুতের বাড়ি এটা।

আসিফ তাড়াতাড়ি সহজ ও স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।
একটু শরীর খারাপ ছিল মনোয়ার এর কোনরকম মিনমিন করে বললেন তিনি।

কই দেখিত তাড়াতাড়ি আফরিন এসে ছেলর গায়ে হাত দিয়ে জ্বর দেখার চেষ্টা করে।

এতক্ষণে মনোয়ার ফুফিয়ে কাদতে শুরু করে

আম্মু ত্রিপিটক আঙ্কেল আমার ভিডিও গেম না নিয়ে চলে গেছে., আমি আঙ্কেল কে ওটা গিফট করছিলাম।

ত্রিপিটক আঙ্কেল সে কে ? প্রশ্নবোধক চোখে জিজ্ঞাসা করে আসিফ কে ?

আসিফ অস্বস্তিভরে কাশতে থাকে। সে বুঝতে পারছেনা তার স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর কি দিবে।

মনোয়ার যাওত বাবা আম্মুর জন্য না তুমি গিফট কিনেছ সেটা দেখাও এটা বলে পরিবেশ টা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল।

একটু শরীর খারাপ ছিল মনোয়ার এর কোনরকম মিনমিন করে বললেন তিনি।

কই দেখিত তাড়াতাড়ি আফরিন এসে ছেলর গায়ে হাত দিয়ে জ্বর দেখার চেষ্টা করে।

এতক্ষণে মনোয়ার ফুফিয়ে কাদতে শুরু করে

আম্মু ত্রিপিটক আঙ্কেল আমার ভিডিও গেম না নিয়ে চলে গেছে., আমি আঙ্কেল কে ওটা গিফট করছিলাম।

ত্রিপিটক আঙ্কেল সে কে ? প্রশ্নবোধক চোখে জিজ্ঞাসা করে আসিফ কে ?

আসিফ অস্বস্তিভরে কাশতে থাকে। সে বুঝতে পারছেনা তার স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তর কি দিবে।

মনোয়ার যাওত বাবা আম্মুর জন্য না তুমি গিফট কিনেছ সেটা দেখাও এটা বলে পরিবেশ টা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিল।

এদিকে শেওড়া গাছের ঢালে শুয়ে আছে ত্রিপিটক, ঘুটঘুট আর মিটমিট। তাদের মন বড়ই উদাস। কেন যে এই দুইটা বিছু পিচ্ছির কথা এত মনে পড়ছে।

তাদের মধ্যে কথা হচ্ছিল ঠিক এইভাবে।

ঘুটঘুট : মিটমিট রে অত্যাধিক বিষন্ন লাগতেছে কিছু ভালো লাগতেছেনারে। কাওরে ভেংচি কাইটা ও মনে আনন্দ হইতেছেনা।

মিটমিট : ঠিক কয়েছেন ভাইজান আমার ও সুধু ওই বাচ্চা দুইটার লাইগা পরান পড়তেছে।

তাদের কথার উত্তরে ত্রিপিটক কিছু বলতেছেনা। সে উদাস হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।

হটাত সে গাছ থেকে লাফ দিয়ে পড়ল মাটিতে তারপর বলল চললাম বাই

কোথায় কোথায় ঘুটঘুট আর মিটমিট ও লাফ দিয়ে নিচে নামল।

বাচ্চা গুলোর কাছে।

তিনজনে দ্রুততার সাথে উড়তে উড়তে আসিফ এর বাসার দিকে আসতে লাগলো রাস্তায় অনেক কে অজ্ঞান করে।

আসিফ সাহেব এর বাসার কাছে পৌছে লাফ দিয়ে বারান্ধায় নামল। দেখল ছোট মনোয়ার সুন্দর একজন মেয়ের কোলে শুয়ে আছে।

তাদেরকে দেখা মাত্র মনোয়ার তালি দিয়ে উঠলো খুশিতে

ত্রিপিটক আঙ্কেল এসেছে কি মজা ত্রিপিটক আঙ্কেল এসেছে।

৪মনোয়ার চিত্কারে মাথা নিচের দিকে নামিয়ে ফেলল ত্রিপিটক। সে কিছুতে মনোয়ার এর মা র সামনে পড়তে চায়না।

আফরিন ছেলের কোথায় একটু হাসলেন

ভাবলেন ছেলে কল্পনা করে কি বলছে। এসে জানালা পর্দা দিয়ে ঢেকে দিল।

মনোয়ার আবার কান্না জুড়ে দিল আমি ত্রিপিটক আঙ্কেল যাব।

ত্রিপিটক রা মন খারাপ করে আবার তাদের বাসস্থান সেই শেওড়া গাছে ফিরে এলো।আস্তে আস্তে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেল আনোয়ার মনোয়ার বিহীন জীবনে। তারা এটা মেনে নিল যতই তারা এখন মানুষকে ভালোবাসুক তাদের পক্ষে এখন আর মানুষের সঙ্গে সহবস্থান এ থাকা সম্ভব না।তাদের ডাইমেনশন আর মানুষের ডাইমেনশন এক না, দুজন দুজন কে মাঝে মাঝে দেখবেনা। মন থেকে তারা দূর করার চেষ্টা করলো এই দুই ছেলের স্মৃতি। সুধু ত্রিপিটক এর যখন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার ছোট ভাই টি র যখন মনে করে একই সঙ্গে আনোয়ার মনোয়ার এর কথা মনে করে বুকের ভিতর টনটন করে উঠে। তখন সে নিজে একাই ঘুটঘুট আর মিটমিট কে না জাগিয়ে লুকিয়ে একবার এসে দেখে যায় তার ভাই কে এবং ছোট দুই ছেলেকে।

আনোয়ার মনোয়ার আস্তে আস্তে অভস্থ ত্রিপিটক আঙ্কেল ব্যতিত। সকালে আসিফ সাহেব তাদের কে স্কুল এ পৌছে দেন আর বিকালে ওনার স্ত্রী আফরিন নিয়ে আসেন। তাদের দুষ্টামি একেবারে চলে গেছে। প্রতি টা সাবজেক্ট এ তারা দুইভাই ভালো মার্কস পায়। পাড়া প্রতিবেশী তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মুয়াজ্জিন আঙ্কেল একদিন জিলাপি নিয়ে আসলেন এবং তাদেরকে অনেক আদর আর দোয়া করে গেলেন। যাওয়ার আগে উনি আবার ঘরটাকে দোয়া আর ফু দিয়ে ঘর টাকে আবার বেধে দিয়ে গেলেন।

প্রতিদিন আসিফ সাহেব স্কুল যাওয়ার পথে এসে একবার শেওড়া গাছটার নিচে দাড়ান।
ছোট মনোয়ার প্রশ্ন করে “বাবা এখানে কি ত্রিপিটক আঙ্কেল থাকেন?

আসিফ সাহেব তার জবাব দেন না। তার মনে হয় এই গাছের উপর থেকে নিচ্চয় এই ছেলেগুলো তাদেরকে দেখছে। সত্যি ওই সময়ে ত্রিপিটক রা তাদের কে চোখের জল ফেলতে ফেলতে দেখতে থাকে কিন্তু তারা আর সামনে আসেনা। খোদা র এই পৃথিবীর নিয়মের ব্যতিক্রম তারা আর করতে চায়না। মানুষ এর সমাজ এক আর ভুতের সমাজ আরেক। এই দুই সমাজের মিলন কখনো সম্ভব নয়। তারা প্রকৃতির নিয়ম ভেঙ্গে আর কোনো বিপর্যয় ডেকে আনতে চায়না এই পৃথিবীতে এই বাচ্চা দুইটার জীবনে।

ভালো থাক তোমরা ফিসফিসিয়ে বলে তারা।

বাবা ছেলে যেন তাদের এই ভয়েস শুনে। আস্তে আস্তে তারা তাদের কর্মস্থল এর দিকে রওয়ানা হয়ে বাস্তব কে স্বীকার করে।

সমাপ্ত

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top