ক্ষমতালিপ্সুতা নয় ; শুদ্ধ রাজনীতি চাই
দেশের সর্বোচ্চ আদালতকক্ষ । শেষ রায়ের অপেক্ষা । আগে হাইকোর্টে রায় হয়েছে চাকরী রক্ষার কোন সুযোগ নাই তার । আপীল করা হয়েছিল , আজ সেই আপীলের রায় ।
অন্য অনেকের সাথে আদালতে উপস্থিত আছেন যার চাকরীর বিষয় , সেই আজিজ । হাইকোর্ট সোজা বলে দিয়েছিলেন , চাকুরীবিধি তিনি লংঘন করেছেন চাকুরিরত অবস্থায় । তিনি নাকি এ-দেশ থেকে সকল অনাচার , অবিচার , অস্বচ্ছতা দূর করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি সরকারকে সকল সময় চাপে রাখার মত সারাদেশব্যপী একটি দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনূভব করেন এবং এই লক্ষ্যে প্রচার , প্রচারনাও চালান । যদিও সেই সংগঠন কোনদিন সরকারে যাওয়ার চেষ্টা করবেনা , শুধু বাইরে থেকে অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করে যাবে অপকর্মগুলির সুরাহা না হওয়া পর্য্যন্ত । আদালতে আজিজ এটা অস্বীকার করেননি । হাইকোর্টের রায়ের সময় আজিজ কিছু বলেওছিলন , আইনজীবিরাও ছিলেন , তারাও বলেছিলেন । আজিজ বলেছিলন , আজ মহামান্য আদালত আমাকে দন্ডিত করলেও একদিন আদালত হয়তো অনূধাবন করবেন , আদেশটা ঠিক হয়নি । কারন , আমি তো খারাপ কিছু করিনি , আমিতো রাজনীতি করতে চাইনি । আমি চেয়েছি দেশে যে অপরাজনীতি চলছে , তার শুদ্ধীকরন । এক পর্য্যায়ে আদালতকেই তিনি বলেন অপরাজনীতি চলছে কি-না , বলুন মহামান্য আদালত । এর থেকে পরিত্রানের উপায় খোঁজা কি আমার অন্যায় ? আমি সরকারী কর্মচারী ; আমি তো এদেশের মানূষও । দেশ সম্পর্কে আমার চিন্তা-ভাবনা থাকতেই পারে । কোন অসৎ উদ্দেশ্যে আমি তো এটা করছিনা । মাননীয় আদালত রায় ঘোষনায় বলেন , আজিজ যা বলছেন , তাতে যূক্তি আছে কি নাই , আদালতের বিচার্য বিষয় তা নয় । তিনি জানেন চাকুরীরত অবস্থায় রাজনীতি করা যায়না । কিন্তু তা করেছেন , অতএব তার চাকুরী থাকবেনা । এই রায় ঘোষিত হল ।
তাঁকে দেশের কেউ চিনতনা । তিনি নিজে রাজনীতি করতেনওনা । নোবেলজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং সুশীল সমাজের , মিডিয়ার কিছু ব্যক্তিত্বের কাছে এ-সম্পর্কিত তার কিছু বক্তব্য ছিল লেখনীর আকারে । দেশের মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রচলিত ধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্তকরন এবং এটা কিভাবে সম্ভব , সে সম্পর্কেও তার কিছু লেখা রয়েছে । এগুলি একটি প—স্তিকা আকারে প্রকাশের ও প্রচারের ব্যাবস্থা হয় । দেশের মানুষ , বিশেষতঃ ছাত্রলীগ-যুবলীগ , ছাত্রদল-যুবদল ছাড়া সারা দেশব্যপী বিশাল যে ছাত্র-যুব সমাজ রয়েছে দেশে , যারাই মূলতঃ উক্তরকম দলের প্রধান শক্তি , কেবলমাত্র-ই যারা পারে চাপে রেখে সরকারকে স্বচ্ছতা , জবাবদিহিতা , নায্যতা নিশ্চিত করতে বাধ্য করতে , তাদের মধ্যে প্রচারনা চালানো হয় ; কি কারনে ও কি পদ্ধতিতে সরকারকে চাপে রেখে বাধ্য করা যায় । তারাও এগিয়ে আসার সূচনা করেন বা করতে চান । এমন সময় আজিজের আপীলের শুনানি চলে । ইতিমধ্যে কিছু বিশিষ্ট আইনজীবি স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন তার পক্ষ হয়ে । শুনানির শেষদিন আজিজ আইনজীবিদের বলেন , শেষটা আজ আমি বলব । আদালতের সন্মতি নিয়ে বলা শুরু করেন আজিজ ।
মাননীয় আদালত , মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে আমার চাকুরী গেছে । সর্বোচ্চ আদালতের এই শুনানিতে , এমনকি আমার পক্ষের মাননীয় আইনজীবিগনও চাকুরী থাকার পক্ষে বলতে খানিকটা হলেও দ্বিধা করেন বলে মনে হয়েছে । তাই আমারটা আমি-ই বলি ।
মাননীয় আদালত , আজ এখানে যে রায় হবে , তাতে আমি সন্তোষজনক চিত্তে বাসায় ফিরবো , এটা আমার মন বলছে । আগেও দেখেছি যখনই কোন বিপদে পড়েছি , মনে হয়েছে উদ্ধারের কোন পথ নাই । কিন্তু পরম করূনাময় খোদা তা’লার অসীম কৃপায় উদ্ধারও পেয়ে গেছি , কিছু ক্ষেত্রে অলৌকিকভাবে । আজও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পরম করূনাময়ের কৃপার সীমানার বাইরে আমি , এই অধম এখনও চলে যাইনি ।
আমি বুঝে পাইনা মাননীয় আদালত , দেশে যে অনাচার চলে সব সরকারেরই সময় , তা থেকে মুক্তির সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা আমি কেন করতে পারবনা , যেখানে দেশ আজ ছারখার হতে বসেছে । দেশ রাজনীতিবিদগনের জন্যই তো ছারখার হতে বসেছে । কারন তারাই তো এ-দেশ পরিচালনা করেন । তাদের পরিচালিত এ-দেশ আজ অত্যাচার , অবিচার , অনাচারে ভরে গেছে । বলা যায় , এগুলির সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁচেছে । এর চেয়ে এগুলি বেশী হলে দেশ কোন পর্য্যায়ে চলে যাবে , তা আমরা কল্পনাও করতে পারবনা । এগুলির কারনে উচ্চবিত্ত কিছু তরুন ছাড়া আজকের তরুনরা হাসতে পারেনা , তারা হাসতে জানেনা । এই দুঃখ , এই বেদনা কিভাবে বয়ে বেড়াবে তরুনরা , মাননীয় আদালত , এটা কোটি কোটি টাকার একটি প্রশ্ন ; যার উত্তর ভূক্তভোগীরা যদি জানতে চায় , কিভাবে তাদের আপনি অপরাধী বানাবেন ?
আজকে আপনি কোন পক্ষ নিবেন , সেটা আপনার উপর নির্র্ভরশীল মাননীয় আদালত । রোগশয্যায় শায়িত স্বামীর পাশে বসে মাষ্টার্স করা বেকার যুবক ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় বুক ভাসায় যে মা , গ্র্যাজুয়েট যে ছেলেটি চাকুরী পেতে ঘুষ দিয়ে টাকা ফিরে না পেয়ে পরিবারটাই যার ঋনের জালে জড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে , দারিদ্রের কষাঘাতে পড়ে যে জননী আমার, একটি-ই মাত্র কাপড় , গোসল করে যা না শুকানো পর্য্যন্ত কাপড়হীন অবস্থায় থাকেন , তাদের! নাকি সফেদ সাদা পাঞ্জাবী পরিহিত সন্মানিত নেতাগন , যারা রাজনীতির , দেশের মাঠ দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছেন , আর তাদের চামচারা তাদেরই আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন , কাদের পক্ষ আপনি নিবেন , তা ভেবে দেখতে অনূরোধ করি । খোদার কাছে কি জবাব দেব আমরা মাননীয় আদালত , যদি আমরা সঠিক সিদ্ধান্ত— না নেই ?
মাননীয় আদালত , দুর্নীতি এবং দুঃশাসনের ধারাবাহিকতা যদি আমরা লক্ষ্য করি , দেখতে পাব, এরশাদ যত দুশ্চিন্তা নিয়ে দুর্নীতি করতেন , এখনকার নেতারা এবং সরকারী লোকজনের মধ্যে সেই দুশ্চিন্তার কোন ছিঁটেফোটাও নাই নিশ্চিন্তমনে এযুগে দুর্নীতি করা যায় । গ্রাম-গঞ্জে আগে টেস্ট-রিলিফের কাজ , রাস্তা-ঘাটের কাজ বেশ ভালো মানেরই হত । তারপর ধীরে ধীরে এই মান কমতে কমতে এখন এমন অবস্থায় এসেছে যে , ভৌতিক ভৌতিক সব নাম দেখিয়ে এখন টেস্ট-রিলিফের খাদ্য-শস্য , টাকা আত্মসাত করা হয় । এজন্য কারো কোন সাজা হয়না । পাকা রাস্তার কাজ এখন এরকম মানে এসেছে যে , এর নীচে আর কোন মান হয়না । ঋন জালিয়াতি আগে কি পরিমানে হত আর এখন কি পরিমানে হচ্ছে , সাম্প্রতিক হলমার্ক কেলেংকারীসহ অন্যান্য বড় বড় ব্যাংক জালিয়াতিগুলোর দিকে দেখলে তা পরিষ্কার হয় । রাজনৈতিক ক্যাডার কর্তৃক থানাসমূহের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের পরিমানও দিনকে দিন আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে । এরকম হতে থাকলে থানার কোন প্রয়োজনই থাকবেনা একসময় । রাজনৈতিক দলীয়করন প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে চলে এসেছে । মিডিয়াতে এটা ছিলনা , এটাতেও এসে গেছে । মিডিয়া আজ আওয়ামীপন্থী এবং বিএনপিপন্থী , এই দুইভাগে সুস্পষ্টভাবে বিভাজিত হয়ে গেছে । এই স্রোতের পক্ষে যারা , তারা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে । আর যারা এই স্রোতকে মেনে নিতে পারছেনা অর্থাৎ প্রশাসনে , মিডিয়ায় , পুলিশেসহ সব সার্ভিসেই এই স্রোতের বিরুদ্ধের কিছু ব্যক্তি আছেন , তারা কি করবেন মাননীয় আদালত ?
সরকারের সকল অপকর্র্মের ক্ষেত্রে প্রতিবাদের ঝড় তোলার জন্য এদেশে একটি শক্তিশালী সংগঠন প্রয়োজন । কারন প্রতিবাদ না করে এরকমভাবে একটা সভ্য দেশ চলতে পারেনা , চলতে আমরা দেবনা । এতে সকল শ্রেনী-পেশার মানূষের সমর্থন লাগবে । নাহলে সংগঠনটা ততখানি শক্তিশালী হবেনা , যতখানি শক্তিশালী হলে একটি সরকারকে সবসময় সকল অপকর্ম থেকে বিরত রাখা যায় । চাকুরীবিধি লংঘন করলেও আজ আমাকে এজন্য সাজা দেয়া যায়না যে , আমাকে সাজা দিলে এই সংগঠনের প্রতি সমর্থন দিতে অনেকে এগিয়ে আসতে ভয় পাবেন এবং তাতে এটা সেরকমভাবে বিস্তৃতিলাভ করবেনা । দেশও তলিয়ে যেতে থাকবে অন্ধকারের অমানিশায় ।
অনেকক্ষন কথা বলে একটু থামেন আজিজ । তাকান এদিক-ওদিক । না , কারো সমর্থনের আশায় নয় । কারন তিনি জানেন এবং বিশ্বাস করেন , দেশের প্রতি অনুভূতিসম্পন্ন সকল শ্রেনী-পেশার মানূষ এরকম উদ্যোগ সমর্থন না করে পারেননা । দেখেন , কিছু মানূষ , তাদের মধ্যে আইনজীবিরাও আছেন , প্রসন্ন দৃষ্টি মেলে তার বক্তব্য শুনছিলেন যা তখনও ধরা আছে ।
মাননীয় আদালত , স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আপনারাও অনেকসময় রায় দেন বিবেকের তাড়নায় । আবার বলা শুরু করেন আজিজ । আপনারা সরকারকে কিছু পর্যবক্ষন দিতে পারেন , যেমন , (১) প্রশাসনে কোন দলীয়করন করতে পারবেনা সরকার , সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে ; (২) থানা প্রশাসনে রাজনৈতিক ক্যাডারদের কোনরকম হস্তক্ষেপ চলবেনা ; পুলিশ প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে , তবে তারা সঠিকভাবে কাজ করছে কি-না রাজনীতিবিদগন কর্তৃক তা যাচাই করতে হবে ; (৩) দুর্নীতি , তা রাজনীতিবিদই করুক বা সরকারী কর্মকর্তা , সঠিক এবং নায্য বিচার করতে হবে ; (৪) দলীয় অংগ সংগঠনের পক্ষে না হয়ে সরকারকে জনসাধারনের পক্ষে সকল সময় কাজ করতে হবে , ইত্যাদি । আমরা সবাই মিলে এভাবেই প্রতিটি সরকারের আমলে সরকারকে সকল রকম অনাচার , অবিচার করা থেকে দূরে রাখতে পারব ।
মাননীয় আদালত , অনেকে ভাবতে পারেন , রাজনীতি আপনা-আপনি শুদ্ধ হয়ে যাবে । শুদ্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য কোন দল করতে হয় ? এ-বিষয়ে বলতে চাই , মানূষ যাতে কূ-পথে না যায় , সেজন্য কেন আমরা তৎপর থাকি , কেন আমরা তাকে চাপ প্রয়োগ করি যাতে সে অপরাধ না করে ? এটাও সেরকম বিষয় । আসলে চাপ না থাকায় এবং শাস্তি না হওয়ায় রাজনীতিবিদরা ধরাকে শরা জ্ঞান করছেন । আমরা সেই জায়গাটাতে বাধা দিতে চাই । আর কিছু নয় । এভাবে আমরা রাজনীতিকে শুদ্ধ করতে চাই মাননীয় আদালত । যাতে এদেশের বেকার আপামর যূব-গোষ্টী তথা তাদের অসহায় পরিবারগুলো স্বস্তি পায় । আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার কোন লক্ষ্য নাই এবং সেভাবে আমরা সংগঠিত হবোওনা কখনও ।
আমি আর বেশি কিছু বলবনা । দীর্ঘদিন ইঞ্জিনিয়ারিং চাকুরী করা সত্ত্বেও আমার কোন সম্পদ নাই । আমার চাকূরীচ্যুতির হাইকোর্র্টের রায় যদি বহাল রাখা হয় আজ , তবে আমাকে স্রেফ পথে বসতে হবে । তবু চাকুরী যাওয়ার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমি এই দলগঠন সম্পর্কিত কথাগুলি প্রচার করেছি শুধুমাত্র বিবেকের তাড়নায় । এগুলি না করে থাকতে পারিনি আমি । কারন আমি জানি রাজনীতি শুদ্ধকরনের আর কোন পথ নাই , নাই এবং নাই । মাননীয় আদালতের কাছেও সম্ভবতঃ নাই । তাই আজ আমি আমার পক্ষে আদালতের রায় প্রত্যাশা করে আমার বক্তব্য শেষ করছি ।
পিনপতন নিস্তব্ধতাটা আস্তে আস্তে কেটে গিয়েই আবার শুরু হল যখন মাননীয় আদালত বলে উঠলেন , আজই রায় হবে , তবে ঘন্টাখানেক পর ।
ঘন্টাখানেক পর রায় প্রদানের উদ্দেশ্যে আদালত আসন গ্রহন করলে আবার পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে আসে । মাননীয় আদালত বলতে শুরু করেন , আজ আমরা হাইকোর্র্টের রায়কে বহাল রাখতেই এসেছিলাম । কিন্তু আমার বলতে দ্বিধা নাই যে , জনাব আজিজ যা বলেছেন , তাতে আমরা যূক্তি আছে প্রচুর । হাইকোর্ট রায়ের পর্যবক্ষনে বলেছিলেন , আজিজ যা বলেছেন , তাতে যুক্তি আছে কি নেই তা আদালতের বিচার্য বিষয় নয় । আসলেই তাই , আইনের ভাষাই এটি । আমরা আইনের নতুন কোন বিষয়ের অবতারনা করতে চাইনা , তবে আজিজের বক্তব্যের গভীরতা উপলব্ধি করতে চাই এবং সবাইকে তা করতে বলি । এই উপলব্ধি করতেই আমি এক ঘন্টা সময় নিয়েছি রায় দিতে । পরম দয়াময় খোদা তা’লাকে হাজির নাজির করে আমি গভীরভাবে ভেবেছি , কি রায় আমার দেয়া উচিত । আমি অনূধাবন করেছি , হাইকোর্র্টের রায় বহাল রাখলে এটা আজিজের উপর অন্যায় করা হবে । আসলেই , তিনি যেমনটা বলেছেন , সরকারের উপর আদালতের কিছু পর্যবেক্ষন দেয়া উচিত । কারন সরকার তো অনাচার , অবিচার করার শেষ সীমায় পৌচেছে । শুধু এই সরকারই নয় , সব সরকারই তা করেছে । সরকার যদি অন্যায় , অবিচারের শেষ পর্যায়ে পৌছে , তবে আমাদের কিছু পর্যবেক্ষন না থাকাটা আসলেই তো , অপকর্ম হচ্ছেনা, এটাই মেনে নেয়া । এটা গভীর অনূধাবনের বিষয় এবং এটা আমাদের নাই , হয়নি বলে আসলেই আমরা দুঃখিত । আসলেই গ্রাম-গঞ্জের কুড়েঘরগুলিতে বিরাজমান কান্না বুঝতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি এটা স্বীকার করতে আমার কোন লজ্জা নাই । কারন আমাদের চাকুরীই তো তাদের মুখে হাসি ফোটানো ।
এগুলো অনূধাবন করার কথা তো তার না । তিনিতো একজন ইঞ্জিনিয়ার , সরকারী চাকূরী তার । আর সকলের মত আলস্যে গা ভাসিয়ে দিনযাপন করা তার দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিনত হওয়াটা স্বাভাবিক । কিন্তু তা না করে দেশ সম্পর্কে তার চিন্তাভাবনা কত গভীরে , তা সবাই আমরা শুনলাম । হাইকোর্র্টের রায়ের সময় এই গভীরতাকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি । আইন বড় না এই গভীরতা , সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকবে । কারন মানূষে মানূষে চিন্তার ফারাক রয়েছে । এবার রায় ঘোষনার পালা এবং আমি তা ঘোষনা করছি ।
(১) জনাব আজিজ চাকুরী করবেন কি-না , সেটা তার উপর ছেড়ে দেয়া হল । আজকের বক্তব্যের সাথে যতদিন তার কর্র্মের মিল থাকবে , ততদিন অন্যকোন বিষয়ে তিনি অপরাধী না হলে তার চাকুরী কেউ বাতিল করতে পারবেনা । তবে আমার মতে তিনি চাকুরী না করুক । দেশের জন্য সেটাই ভালো হবে ।
(২) সরকার তার চাকুরী বাতিল করার সময় থেকে এ-পর্যন্ত সম্পূর্ন বেতন তাকে প্রদান করতে হবে । তিনি যদি চাকুরী না করেন , তবে যথানিয়মে পেনশন পাবেন । এ-ব্যাপারে সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হল ।
(৩) দু’এক লাখ টাকার বেশী তার কোন সম্পদ আছে কি-না , তা সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখতে নির্দেশ দেয়া হল । যদিও জানি এবং বিশ্বাস করি , আজ আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি কোন মিথ্যা কথা বলেননি এবং তিনি মিথ্যা কথা বলেননা বলে আমি বিশ্বাস করি ।
রায় পড়া হলে নিস্ত—ব্ধতা ভেঙ্গে গিয়ে আদালতকক্ষে বিরাট একটা আলোড়ন সৃষ্টি হল । কপালের কাছে ডান হাতটা উঠিয়ে বিজ্ঞ আদালতকে সালাম দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ঘুরতেই আজিজ দেখলেন বিচারপতি তাকে বলছেন , আসেন হাতটা কমপক্ষে মিলিয়ে যান । কাছে যেতেই মাননীয় বিচারপতি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন , এবার আসেন । জনাকীর্ন আদালতকক্ষ অবাক চোখে তা প্রত্যক্ষ করল ।
আদালতকক্ষ থেকে প্রস্থান করলেন তিনি । ভেতরে তখনও আলোড়ন ও হাততালির ঝড় চলছে ।