Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ক্ষমতালিপ্সুতা নয় ; শুদ্ধ রাজনীতি চাই

: | : ২২/১২/২০১৩

দেশের সর্বোচ্চ আদালতকক্ষ । শেষ রায়ের অপেক্ষা । আগে  হাইকোর্টে রায়  হয়েছে চাকরী রক্ষার  কোন সুযোগ নাই তার । আপীল করা হয়েছিল , আজ সেই আপীলের রায় ।

অন্য  অনেকের সাথে আদালতে উপস্থিত আছেন যার চাকরীর বিষয় , সেই  আজিজ । হাইকোর্ট  সোজা বলে দিয়েছিলেন , চাকুরীবিধি তিনি  লংঘন  করেছেন চাকুরিরত  অবস্থায় । তিনি  নাকি এ-দেশ  থেকে সকল  অনাচার , অবিচার , অস্বচ্ছতা  দূর করার উদ্দেশ্যে  প্রতিটি  সরকারকে সকল  সময়  চাপে রাখার মত  সারাদেশব্যপী একটি দল  গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনূভব করেন এবং এই লক্ষ্যে  প্রচার , প্রচারনাও চালান । যদিও  সেই  সংগঠন  কোনদিন  সরকারে  যাওয়ার  চেষ্টা করবেনা , শুধু বাইরে  থেকে  অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করে যাবে অপকর্মগুলির সুরাহা না হওয়া পর্য্যন্ত । আদালতে আজিজ এটা অস্বীকার করেননি । হাইকোর্টের  রায়ের  সময়  আজিজ  কিছু  বলেওছিলন , আইনজীবিরাও  ছিলেন , তারাও  বলেছিলেন । আজিজ  বলেছিলন , আজ মহামান্য  আদালত  আমাকে দন্ডিত  করলেও একদিন  আদালত  হয়তো অনূধাবন করবেন , আদেশটা  ঠিক  হয়নি । কারন , আমি তো খারাপ কিছু করিনি , আমিতো রাজনীতি করতে চাইনি । আমি চেয়েছি দেশে যে অপরাজনীতি চলছে , তার শুদ্ধীকরন । এক পর্য্যায়ে  আদালতকেই  তিনি  বলেন অপরাজনীতি চলছে কি-না , বলুন মহামান্য আদালত । এর থেকে পরিত্রানের উপায় খোঁজা  কি আমার  অন্যায় ? আমি  সরকারী  কর্মচারী ; আমি তো এদেশের মানূষও । দেশ সম্পর্কে আমার চিন্তা-ভাবনা থাকতেই পারে । কোন অসৎ  উদ্দেশ্যে আমি  তো এটা করছিনা । মাননীয়  আদালত  রায়  ঘোষনায়  বলেন , আজিজ যা বলছেন , তাতে যূক্তি আছে কি নাই , আদালতের বিচার্য বিষয় তা নয় । তিনি জানেন চাকুরীরত  অবস্থায়  রাজনীতি  করা যায়না । কিন্তু তা করেছেন , অতএব  তার  চাকুরী  থাকবেনা । এই  রায়  ঘোষিত  হল ।

তাঁকে  দেশের  কেউ  চিনতনা । তিনি নিজে রাজনীতি  করতেনওনা । নোবেলজয়ী  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং  সুশীল  সমাজের , মিডিয়ার কিছু ব্যক্তিত্বের কাছে এ-সম্পর্কিত তার কিছু বক্তব্য ছিল  লেখনীর  আকারে । দেশের  মাদ্রাসা  ছাত্রদের  প্রচলিত  ধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্তকরন এবং এটা কিভাবে সম্ভব , সে সম্পর্কেও তার  কিছু  লেখা  রয়েছে । এগুলি একটি   প—স্তিকা আকারে  প্রকাশের ও  প্রচারের  ব্যাবস্থা  হয় । দেশের মানুষ , বিশেষতঃ  ছাত্রলীগ-যুবলীগ , ছাত্রদল-যুবদল  ছাড়া  সারা  দেশব্যপী  বিশাল  যে  ছাত্র-যুব  সমাজ  রয়েছে দেশে , যারাই মূলতঃ উক্তরকম দলের প্রধান শক্তি , কেবলমাত্র-ই যারা পারে চাপে রেখে সরকারকে স্বচ্ছতা , জবাবদিহিতা , নায্যতা  নিশ্চিত  করতে  বাধ্য  করতে , তাদের  মধ্যে প্রচারনা চালানো  হয় ; কি  কারনে ও  কি  পদ্ধতিতে  সরকারকে  চাপে  রেখে বাধ্য  করা  যায় । তারাও  এগিয়ে  আসার  সূচনা  করেন বা করতে চান । এমন সময় আজিজের  আপীলের শুনানি চলে । ইতিমধ্যে  কিছু  বিশিষ্ট  আইনজীবি  স্বেচ্ছায়  এগিয়ে আসেন তার পক্ষ হয়ে । শুনানির শেষদিন  আজিজ  আইনজীবিদের  বলেন , শেষটা  আজ  আমি  বলব । আদালতের  সন্মতি  নিয়ে  বলা  শুরু  করেন  আজিজ ।

মাননীয়  আদালত , মহামান্য  হাইকোর্টের  রায়ে আমার চাকুরী  গেছে । সর্বোচ্চ আদালতের এই শুনানিতে , এমনকি আমার পক্ষের  মাননীয়  আইনজীবিগনও  চাকুরী  থাকার  পক্ষে  বলতে  খানিকটা হলেও  দ্বিধা  করেন  বলে  মনে  হয়েছে । তাই  আমারটা  আমি-ই  বলি ।

মাননীয়  আদালত , আজ এখানে  যে  রায়  হবে , তাতে  আমি  সন্তোষজনক  চিত্তে  বাসায়  ফিরবো , এটা আমার  মন বলছে । আগেও  দেখেছি  যখনই  কোন  বিপদে  পড়েছি , মনে  হয়েছে উদ্ধারের কোন পথ নাই । কিন্তু  পরম  করূনাময় খোদা তা’লার অসীম কৃপায় উদ্ধারও পেয়ে গেছি , কিছু ক্ষেত্রে অলৌকিকভাবে । আজও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পরম করূনাময়ের  কৃপার  সীমানার  বাইরে  আমি , এই  অধম  এখনও  চলে  যাইনি ।

আমি  বুঝে  পাইনা  মাননীয়  আদালত , দেশে  যে অনাচার চলে সব সরকারেরই সময় , তা থেকে মুক্তির  সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা  আমি  কেন  করতে  পারবনা , যেখানে  দেশ  আজ  ছারখার  হতে  বসেছে । দেশ রাজনীতিবিদগনের  জন্যই  তো  ছারখার  হতে  বসেছে । কারন তারাই তো এ-দেশ  পরিচালনা  করেন । তাদের পরিচালিত  এ-দেশ  আজ  অত্যাচার , অবিচার , অনাচারে ভরে  গেছে । বলা যায় , এগুলির  সর্বোচ্চ  শিখরে  পৌঁচেছে । এর  চেয়ে  এগুলি  বেশী  হলে  দেশ  কোন  পর্য্যায়ে চলে  যাবে , তা আমরা কল্পনাও করতে পারবনা । এগুলির কারনে  উচ্চবিত্ত  কিছু তরুন  ছাড়া আজকের  তরুনরা  হাসতে  পারেনা , তারা  হাসতে  জানেনা । এই  দুঃখ , এই  বেদনা  কিভাবে  বয়ে  বেড়াবে তরুনরা , মাননীয়  আদালত , এটা কোটি কোটি টাকার  একটি  প্রশ্ন ; যার  উত্তর  ভূক্তভোগীরা  যদি  জানতে চায় , কিভাবে  তাদের  আপনি  অপরাধী  বানাবেন ?

আজকে  আপনি  কোন  পক্ষ  নিবেন , সেটা আপনার  উপর  নির্র্ভরশীল মাননীয় আদালত । রোগশয্যায়  শায়িত  স্বামীর  পাশে বসে মাষ্টার্স  করা  বেকার  যুবক  ছেলেকে জড়িয়ে  ধরে কান্নায়  বুক ভাসায়  যে মা , গ্র্যাজুয়েট  যে  ছেলেটি  চাকুরী  পেতে  ঘুষ দিয়ে  টাকা  ফিরে  না  পেয়ে  পরিবারটাই  যার  ঋনের জালে জড়িয়ে  পালিয়ে  বেড়াচ্ছে , দারিদ্রের  কষাঘাতে  পড়ে  যে  জননী আমার,  একটি-ই  মাত্র  কাপড় , গোসল  করে  যা  না শুকানো পর্য্যন্ত  কাপড়হীন অবস্থায় থাকেন , তাদের!  নাকি  সফেদ  সাদা পাঞ্জাবী  পরিহিত  সন্মানিত  নেতাগন , যারা রাজনীতির , দেশের  মাঠ  দাপড়িয়ে  বেড়াচ্ছেন , আর তাদের চামচারা তাদেরই আশ্রয়-প্রশ্রয়ে  অপকর্ম  করে  বেড়াচ্ছেন , কাদের পক্ষ  আপনি  নিবেন , তা  ভেবে  দেখতে  অনূরোধ  করি  । খোদার কাছে  কি জবাব  দেব  আমরা  মাননীয়  আদালত , যদি  আমরা  সঠিক  সিদ্ধান্ত—  না  নেই ?

 

মাননীয়  আদালত , দুর্নীতি  এবং  দুঃশাসনের  ধারাবাহিকতা যদি  আমরা লক্ষ্য করি , দেখতে  পাব, এরশাদ  যত  দুশ্চিন্তা  নিয়ে দুর্নীতি  করতেন , এখনকার  নেতারা  এবং  সরকারী  লোকজনের  মধ্যে  সেই  দুশ্চিন্তার  কোন  ছিঁটেফোটাও  নাই নিশ্চিন্তমনে  এযুগে দুর্নীতি  করা  যায় । গ্রাম-গঞ্জে  আগে টেস্ট-রিলিফের  কাজ , রাস্তা-ঘাটের  কাজ বেশ ভালো মানেরই  হত । তারপর  ধীরে  ধীরে এই  মান কমতে  কমতে এখন এমন অবস্থায় এসেছে যে , ভৌতিক  ভৌতিক  সব  নাম দেখিয়ে  এখন  টেস্ট-রিলিফের খাদ্য-শস্য , টাকা  আত্মসাত  করা  হয় । এজন্য  কারো  কোন  সাজা  হয়না । পাকা রাস্তার কাজ  এখন  এরকম  মানে  এসেছে যে , এর  নীচে  আর  কোন মান হয়না । ঋন  জালিয়াতি  আগে  কি  পরিমানে হত  আর  এখন  কি  পরিমানে  হচ্ছে , সাম্প্রতিক  হলমার্ক  কেলেংকারীসহ  অন্যান্য  বড় বড় ব্যাংক জালিয়াতিগুলোর দিকে দেখলে তা পরিষ্কার হয় । রাজনৈতিক ক্যাডার কর্তৃক থানাসমূহের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের  পরিমানও  দিনকে  দিন আশংকাজনকভাবে  বেড়ে যাচ্ছে । এরকম  হতে থাকলে থানার কোন প্রয়োজনই থাকবেনা একসময় ।  রাজনৈতিক  দলীয়করন  প্রশাসনের  সকল  ক্ষেত্রে চলে এসেছে । মিডিয়াতে এটা ছিলনা , এটাতেও এসে গেছে । মিডিয়া আজ আওয়ামীপন্থী এবং বিএনপিপন্থী , এই  দুইভাগে  সুস্পষ্টভাবে  বিভাজিত  হয়ে  গেছে । এই  স্রোতের পক্ষে যারা , তারা  দিব্যি  চালিয়ে  যাচ্ছে । আর যারা এই  স্রোতকে  মেনে  নিতে  পারছেনা  অর্থাৎ  প্রশাসনে , মিডিয়ায় , পুলিশেসহ  সব  সার্ভিসেই  এই  স্রোতের  বিরুদ্ধের  কিছু ব্যক্তি  আছেন , তারা  কি  করবেন  মাননীয়  আদালত ?

সরকারের  সকল  অপকর্র্মের  ক্ষেত্রে  প্রতিবাদের  ঝড়  তোলার  জন্য  এদেশে  একটি শক্তিশালী সংগঠন প্রয়োজন । কারন প্রতিবাদ  না  করে  এরকমভাবে একটা  সভ্য  দেশ  চলতে  পারেনা , চলতে  আমরা  দেবনা । এতে  সকল  শ্রেনী-পেশার মানূষের  সমর্থন  লাগবে । নাহলে  সংগঠনটা  ততখানি  শক্তিশালী  হবেনা , যতখানি  শক্তিশালী  হলে  একটি  সরকারকে  সবসময়  সকল  অপকর্ম  থেকে  বিরত  রাখা  যায় । চাকুরীবিধি  লংঘন করলেও  আজ  আমাকে  এজন্য  সাজা  দেয়া  যায়না  যে , আমাকে  সাজা  দিলে  এই  সংগঠনের  প্রতি  সমর্থন  দিতে  অনেকে  এগিয়ে  আসতে  ভয়  পাবেন এবং  তাতে  এটা  সেরকমভাবে  বিস্তৃতিলাভ  করবেনা । দেশও তলিয়ে যেতে থাকবে অন্ধকারের অমানিশায় ।

অনেকক্ষন  কথা  বলে  একটু  থামেন  আজিজ । তাকান  এদিক-ওদিক । না , কারো  সমর্থনের  আশায়  নয় । কারন তিনি জানেন এবং বিশ্বাস  করেন , দেশের  প্রতি  অনুভূতিসম্পন্ন সকল  শ্রেনী-পেশার মানূষ  এরকম  উদ্যোগ সমর্থন না করে পারেননা । দেখেন , কিছু  মানূষ , তাদের  মধ্যে  আইনজীবিরাও  আছেন , প্রসন্ন  দৃষ্টি  মেলে  তার  বক্তব্য  শুনছিলেন  যা  তখনও  ধরা আছে ।

মাননীয়  আদালত , স্বতঃপ্রণোদিত  হয়ে  আপনারাও  অনেকসময়  রায়  দেন  বিবেকের  তাড়নায় । আবার  বলা শুরু করেন আজিজ । আপনারা  সরকারকে  কিছু  পর্যবক্ষন  দিতে  পারেন , যেমন , (১) প্রশাসনে  কোন  দলীয়করন  করতে  পারবেনা সরকার , সিনিয়রিটির  ভিত্তিতে  পদোন্নতি  দিতে  হবে ; (২) থানা  প্রশাসনে  রাজনৈতিক  ক্যাডারদের কোনরকম হস্তক্ষেপ চলবেনা ; পুলিশ  প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে  কাজ করতে দিতে  হবে , তবে তারা সঠিকভাবে  কাজ  করছে  কি-না রাজনীতিবিদগন কর্তৃক তা  যাচাই করতে  হবে ; (৩) দুর্নীতি , তা রাজনীতিবিদই  করুক বা সরকারী  কর্মকর্তা , সঠিক এবং নায্য  বিচার  করতে  হবে ; (৪) দলীয় অংগ সংগঠনের  পক্ষে  না  হয়ে  সরকারকে  জনসাধারনের  পক্ষে  সকল  সময়  কাজ  করতে  হবে , ইত্যাদি । আমরা সবাই মিলে  এভাবেই  প্রতিটি  সরকারের  আমলে  সরকারকে  সকল  রকম  অনাচার , অবিচার  করা  থেকে  দূরে  রাখতে  পারব ।

মাননীয়  আদালত , অনেকে  ভাবতে  পারেন , রাজনীতি  আপনা-আপনি  শুদ্ধ  হয়ে  যাবে । শুদ্ধ  হয়ে  যাওয়ার  জন্য  কোন  দল করতে  হয় ? এ-বিষয়ে  বলতে  চাই , মানূষ  যাতে  কূ-পথে  না  যায় , সেজন্য  কেন  আমরা  তৎপর  থাকি , কেন  আমরা  তাকে  চাপ প্রয়োগ করি  যাতে  সে অপরাধ না  করে ? এটাও  সেরকম  বিষয় । আসলে চাপ না থাকায় এবং শাস্তি না হওয়ায় রাজনীতিবিদরা  ধরাকে শরা জ্ঞান করছেন । আমরা সেই জায়গাটাতে বাধা দিতে চাই । আর কিছু নয় । এভাবে আমরা রাজনীতিকে  শুদ্ধ  করতে  চাই  মাননীয়  আদালত । যাতে  এদেশের  বেকার আপামর  যূব-গোষ্টী তথা তাদের অসহায় পরিবারগুলো  স্বস্তি  পায় । আমাদের  ক্ষমতায়  যাওয়ার  কোন  লক্ষ্য  নাই এবং  সেভাবে  আমরা  সংগঠিত  হবোওনা কখনও ।

আমি আর বেশি কিছু বলবনা । দীর্ঘদিন ইঞ্জিনিয়ারিং চাকুরী করা সত্ত্বেও আমার কোন সম্পদ নাই । আমার চাকূরীচ্যুতির  হাইকোর্র্টের  রায়  যদি  বহাল  রাখা  হয়  আজ , তবে  আমাকে  স্রেফ  পথে বসতে  হবে । তবু চাকুরী  যাওয়ার  সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমি এই দলগঠন  সম্পর্কিত  কথাগুলি  প্রচার  করেছি  শুধুমাত্র  বিবেকের  তাড়নায় । এগুলি  না  করে  থাকতে  পারিনি আমি । কারন  আমি  জানি  রাজনীতি  শুদ্ধকরনের  আর  কোন  পথ  নাই , নাই  এবং  নাই । মাননীয়  আদালতের  কাছেও  সম্ভবতঃ  নাই । তাই  আজ  আমি  আমার  পক্ষে  আদালতের  রায়  প্রত্যাশা  করে  আমার  বক্তব্য  শেষ  করছি ।

পিনপতন  নিস্তব্ধতাটা  আস্তে  আস্তে  কেটে  গিয়েই  আবার  শুরু  হল  যখন  মাননীয়  আদালত  বলে  উঠলেন , আজই  রায়  হবে , তবে ঘন্টাখানেক পর ।

ঘন্টাখানেক  পর  রায়  প্রদানের  উদ্দেশ্যে  আদালত  আসন  গ্রহন করলে  আবার  পিনপতন নিস্তব্ধতা  নেমে আসে । মাননীয় আদালত  বলতে শুরু করেন , আজ  আমরা  হাইকোর্র্টের  রায়কে  বহাল  রাখতেই  এসেছিলাম । কিন্তু  আমার  বলতে  দ্বিধা নাই যে , জনাব  আজিজ  যা  বলেছেন , তাতে  আমরা  যূক্তি আছে প্রচুর । হাইকোর্ট   রায়ের পর্যবক্ষনে বলেছিলেন , আজিজ যা বলেছেন , তাতে  যুক্তি  আছে  কি নেই  তা আদালতের  বিচার্য  বিষয়  নয় । আসলেই তাই , আইনের  ভাষাই এটি । আমরা আইনের  নতুন  কোন  বিষয়ের  অবতারনা  করতে  চাইনা , তবে  আজিজের  বক্তব্যের  গভীরতা উপলব্ধি  করতে চাই এবং সবাইকে তা  করতে  বলি । এই উপলব্ধি  করতেই  আমি এক ঘন্টা  সময়  নিয়েছি  রায়  দিতে । পরম  দয়াময়  খোদা  তা’লাকে হাজির  নাজির  করে আমি গভীরভাবে ভেবেছি , কি রায় আমার দেয়া উচিত । আমি  অনূধাবন করেছি , হাইকোর্র্টের  রায় বহাল রাখলে এটা  আজিজের  উপর  অন্যায়  করা হবে । আসলেই , তিনি যেমনটা বলেছেন , সরকারের উপর আদালতের কিছু পর্যবেক্ষন  দেয়া  উচিত । কারন সরকার  তো  অনাচার , অবিচার  করার শেষ  সীমায়  পৌচেছে । শুধু  এই  সরকারই  নয় ,  সব সরকারই  তা  করেছে । সরকার  যদি  অন্যায় , অবিচারের  শেষ পর্যায়ে পৌছে , তবে  আমাদের  কিছু  পর্যবেক্ষন  না  থাকাটা আসলেই  তো , অপকর্ম  হচ্ছেনা, এটাই  মেনে নেয়া । এটা  গভীর অনূধাবনের  বিষয় এবং এটা  আমাদের  নাই , হয়নি  বলে আসলেই  আমরা  দুঃখিত । আসলেই  গ্রাম-গঞ্জের  কুড়েঘরগুলিতে  বিরাজমান  কান্না  বুঝতে  আমরা  ব্যর্থ  হয়েছি এটা স্বীকার করতে  আমার  কোন  লজ্জা  নাই । কারন  আমাদের  চাকুরীই  তো  তাদের  মুখে  হাসি  ফোটানো ।

এগুলো  অনূধাবন  করার  কথা  তো তার  না । তিনিতো  একজন  ইঞ্জিনিয়ার , সরকারী  চাকূরী  তার । আর  সকলের  মত আলস্যে  গা  ভাসিয়ে  দিনযাপন  করা  তার  দৈনন্দিন  অভ্যাসে  পরিনত  হওয়াটা স্বাভাবিক । কিন্তু  তা  না  করে  দেশ  সম্পর্কে তার  চিন্তাভাবনা  কত গভীরে , তা সবাই আমরা শুনলাম । হাইকোর্র্টের  রায়ের  সময়  এই  গভীরতাকে  বিবেচনায়  নেয়া  হয়নি । আইন  বড়  না এই  গভীরতা , সেটা  নিয়ে  বিতর্ক  থাকবে । কারন  মানূষে  মানূষে  চিন্তার ফারাক রয়েছে । এবার রায় ঘোষনার  পালা  এবং  আমি  তা  ঘোষনা  করছি ।

(১) জনাব  আজিজ  চাকুরী  করবেন  কি-না , সেটা  তার  উপর  ছেড়ে  দেয়া  হল । আজকের  বক্তব্যের  সাথে যতদিন তার কর্র্মের  মিল  থাকবে , ততদিন  অন্যকোন  বিষয়ে  তিনি  অপরাধী  না  হলে তার চাকুরী কেউ  বাতিল  করতে  পারবেনা । তবে  আমার  মতে  তিনি  চাকুরী  না  করুক । দেশের  জন্য  সেটাই  ভালো  হবে ।

(২) সরকার  তার  চাকুরী  বাতিল  করার  সময়  থেকে এ-পর্যন্ত  সম্পূর্ন  বেতন তাকে প্রদান করতে হবে । তিনি যদি চাকুরী না করেন , তবে  যথানিয়মে  পেনশন  পাবেন । এ-ব্যাপারে  সংস্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষকে  নির্দেশ  দেয়া  হল ।

(৩) দু’এক  লাখ  টাকার  বেশী  তার  কোন  সম্পদ  আছে  কি-না , তা  সকল  সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষকে তদন্ত  করে  দেখতে  নির্দেশ দেয়া  হল । যদিও জানি এবং বিশ্বাস করি , আজ  আদালতে  দাঁড়িয়ে  তিনি  কোন  মিথ্যা  কথা  বলেননি এবং তিনি মিথ্যা কথা বলেননা বলে আমি বিশ্বাস করি ।

রায়  পড়া  হলে  নিস্ত—ব্ধতা  ভেঙ্গে  গিয়ে  আদালতকক্ষে  বিরাট একটা আলোড়ন সৃষ্টি হল । কপালের  কাছে ডান  হাতটা উঠিয়ে বিজ্ঞ  আদালতকে  সালাম  দিয়ে  বের হয়ে যাওয়ার  জন্য  ঘুরতেই  আজিজ দেখলেন  বিচারপতি তাকে বলছেন , আসেন  হাতটা কমপক্ষে  মিলিয়ে  যান । কাছে যেতেই মাননীয় বিচারপতি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন , এবার আসেন । জনাকীর্ন আদালতকক্ষ  অবাক  চোখে তা  প্রত্যক্ষ  করল ।

আদালতকক্ষ  থেকে  প্রস্থান  করলেন  তিনি ।  ভেতরে  তখনও  আলোড়ন ও হাততালির  ঝড়  চলছে ।

 

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top