অনিন্দ্যর হাতে একগুচ্ছ ফুল
কাটায় কাটা রাত্রি বারটা।তটিনী বারান্দায় এসে দাড়াল।আকাশ পূর্ণিমার চাঁদ।বেশ তারার আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।এমন ধবধবে সাদা চাঁদের মাঝে কবি সাহিত্যিকরা কীভাবে এত উপমা দেন,তা ওর মাথায় আসছে না।এতো আহামরি সুন্দর কিছু না।আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হল না।রুমের ভিতর চলে আসল।আনন্দির দিকে তাকালো।ওর ছোট বোন।ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।বেশ ঘুম ঘুমাচ্ছে।মুখটা বেশ শান্ত দেখাচ্ছে।এমন সময় তটিনীর মোবাইলটা বেজে উঠল।আননোন নাম্বার।রিসিভ করল।
-হ্যালো।
অপর পাশ হতে এক ছেলে বলল-আপনি কি তটিনি বলছেন?
-আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।
-অনিন্দ্য রায়,অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
-ও অনিন্দ্য,কী খবর তোমার?
-ভাল,তুমি?
-ভাল।আমার নাম্বার কোথায় পেলে?
-নীলিমার কাছ হতে।
অনিন্দ্য নীলিমা একই সাথে পড়ত।কলেজে তটিনী ওদের সাথে একই সাথে পড়ত।
তটিনী বলতে শুরু করল।
-আমি চতুর্থ সেমিস্টারে আছি।সামনের মাসে পরীক্ষা।
তটিনীর কথা শেষ না হতেই অনিন্দ্য বলা বলল-তোমাদের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ছেলে-মেয়েদের রিলেশনশিপ অনেক ইজি।
-কে বলছে তোমাকে?
-আমি ঘুরতে এসেছিলাম।কয়েকজন বন্ধু বান্ধবী ছিল।তাদের সাথে বেশ চুটিয়ে আড্ডা মেরেছি।
-ও তাই।
-তোমার কি পরিবর্তন হয়েছে?
-আমি কিভাবে বলব?অনিন্দ্য,আমি এখন খাচ্ছি।তোমার সাথে পরে কথা বলি।
-আচ্ছা।
এই বলে অনিন্দ্য ফোন কেটে দিল।তটিনী হাফ ছেড়ে বাঁচল।যত সব ডিসটার্বিওইলিমেন্ট।মিথ্যা কথা না বললে আরও অনেকক্ষণ বকবকানি শুনতে হত।এ ধরণের সিস্টেমে কথা থামিয়ে দিতে অভ্যস্ত।তাই মিথ্যা কথা বলতে খারাপ লাগে না।
ঘড়িতে বারটা পঁয়তাল্লিশ।আনন্দি ঘুমের ঘোরে বিড় বিড় করে কী যেনও বলছে।মুখটা হাসি হাসি।হয়তো আনন্দদায়ক কোনও স্বপ্ন দেখছে।তটিনীর মাথায় অনিন্দ্য অনিন্দ্য ঘুরছে।ওর সাথে যেন কেমনে পরিচয়-মনে করতে চেষ্টা করল।মনে পড়ছে।পরীক্ষা।কলেজের পরীক্ষায়।সিট একই বেঞ্চে পাশাপাশি পড়েছিল।বেশ সাহায্য করেছিল।এরপর মাঝে মাঝে দেখা হত।পড়াশুনা কেমন,কেমন আছ;এসব প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।কিন্তু চোখে মুখে তখন আনন্দ যেন ঢেউ তুলত।আজ পর্যন্ত কোনও ছেলের চোখে মুখে এত আনন্দ দেখেনি।হয়তো হতেও পারে,তার মনের ভুল।
ইন্টার পরীক্ষা গেল।তটিনী ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে পরবর্তী বছর আইটিতে প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছে।দেখতে দেখতে এখন সেভেন সেমিস্টারে।বেশ বন্ধু বান্ধবী জুটে গেছে।
একজন ছেলের চোখে মুখে,কথাবার্তায় ভালবাসার তীব্র গন্ধ দেখতে পায়।যদিও মুখ ফুটে কোনদিন তা বলেনি।যারা বলেছে,তাদের কেউ ভালবাসে বলে বলেনি।চেহারা সুন্দর,শরীরের গঠন ভাল;শুধুই নিছক দৈহিক সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট।বেশ ঘুম ধরেছে।বিছানায় শুয়ে পড়ল।মনে মনে বলল-ভাল থেকো অনিন্দ্য।কাল কথা হবে।ও নিশ্চয় অনেক খুশি হবে।
চোখ বন্ধ করতেই দেখতে পেল-নীল টি শার্ট পরে অনিন্দ্য দাড়িয়ে আছে।হাতে একগুচ্ছ ফুল।কী ফুল যেন?বড় চেনা চেনা লাগছে।