বিজয় দেখেছি, বিজয়ের স্বাদ আজও পাইনি
বিজয়ের ৪২ বছর। আমরা আবারও স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি বহুদলীয় টেকসই গণতান্ত্রিক ক্ষুধা, দারিদ্র ও দূর্নীতি মুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। এক একটি বছর যায়। চোখে হতাশা দেখি। আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখি। ৪২টি বছর এভাবে আমরা স্বপ্ন দেখে আসছি। বুকে লালন করে আসছি স্বাধীনতার চেতনা। বার বার শাসকগোষ্ঠীর কাছ থেকে আমরা প্রতারিত হচ্ছি। বেকার সমস্যা দূরীভূত করা, প্রশাসনে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চত করা ও দূর্নীতি মুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে সরকার গঠন করে তারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে দুর্নীতি ও লুন্ঠনের মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়াত্বের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। একইভাবে বিরোধী দলগুলো সরকারের দূর্নীতি ও অনিয়মের শান্তিপূরর্ণ প্রতিবাদ ও গঠনমূলক সমালোচনার পথ পরিহার করে আন্দোলন ও গণতন্ত্রের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও ধ্বংসযজ্ঞর মাধ্যমে দেশকে ধবংসস্তুপে পরিণত করছে। একটি পক্ষ মুখে শুধু নিজেদের স্বাধীনতার স্বপক্ষের বলে দাবী করে জাতিকে বিভক্ত করছে। অথচ তারাই ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকে। স্বাধীনতা কোন একক দল বা গোষ্ঠীর কৃতিত্ব নয়। বাংলার প্রত্যেকটি মানুষে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ অবদান রয়েছে স্বাধীনতায়। স্বাধীনতার মহানায়ক যেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান, তেমনি অসামান্য অবদান রয়েছে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মেজর জিয়াউর রহমান সহ প্রত্যেকটি মানুষের।
প্রায়ই সংবাদপত্রে দেখা যায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। অথচ অনেকে মুক্তিযুদ্ধ না করে, কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেও মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র যোগাড় করে সরকারি ভাতা পাচ্ছে, তাদের সন্তানরা সরকারী চাকরিতে কোটার সুবিধা পাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শেষ্ঠ সম্পদ। তারা দেশের টানে যুদ্ধ করেছিল, সরকারী সুযোগ- সুবিধা পাওয়ার জন্য নয়। তবুও তাদের পরিবারের আর্থিক সহায়তা ও নিরাপত্ত দায়িত্ব সরকারের কাছে দেশের প্রত্যেকটি মানুষ আশা করে। তবে অবস্থা সম্পান্ন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সরকারি আর্থিক সহয়তা পাওয়ার প্রয়োজন সাধারণ মানুষ মনে করে না। তেমনি প্রতিষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, নাতি-নাতনীদের কোটায় চাকরি সুবিধা দেওয়াটা শুধু বৈষম্যই সৃষ্টি করে।
আজ সোনার বাংলায় সোনার সন্তানদের যথেষ্ট অভাব। সত্য কথা বলার বুদ্ধিজীবীর অভাব। স্বাধীনতা দিবস, শহীদ দিবস ও বিজয় দিবসে বিশেষ পোশাক, ব্যাজ পড়ে, শহীদ মিনারে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে তোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে, টেলিভিশন চ্যানেলে কিছু বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার, রাজ পথে সভাসমাবেশ করার মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনা অর্জিত হয় না। স্বাধীনতার মূল চেতনা অর্জন করতে হলে এসবের পাশাপাশি জাতিকে আজ বদলে যাও, বদলে দাও স্লোগানে অঙ্গিকারবদ্ধ হয়ে একত্রিত হতে হবে। দূর্নীতি, ক্ষুধা ও দারিদ্র্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শপথ নিয়ে সামনে এগোতে হবে। তবেই আমাদের সর্বোচ্চ মানব পতাকার রেকর্ড বিশ্ববাসীর কাছে মর্যাদা পাবে। আমরা বিশ্ব দরবারে সত্যিকারে মাথা উচু করে গর্ব করতে পারব আমাদের সোনার বাংলা নিয়ে।