সোহাগের সুন্দরবন পরিবহন এক্সপ্রেস
প্রথম পর্ব
১ আজকে সোহাগের সুন্দরবন পরিবহন এক্সপ্রেসের যাত্রার প্রথম দিন।তার সাথে আরও দুই বন্ধু আছে।তিনজনের টাকায় তারা এই বাসের মালিক হয়েছে। সে ঠিক করেছে প্রথমবার সব যাত্রীকে বিনাপয়সায় সুন্দরবন ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। একটা নুতুন কাজ শুরু করতে সবার দোয়া নিয়ে শুরু করতে চায়।
কন্ডাকটার রশীদ মিয়া অনেক উত্তেজিত।যদিও এখন সে কোন দায়িত্ব বুঝে পায় নি।কেননা আজকে কোন ভাড়া নেওয়া হবেনা।
আসসালামু আলাইকুম আপনি আপনার পছন্দমত জায়গায় বসুন বলে সবার ব্যাগ যথাস্থানে রেখে দিচ্ছে সে।আপাতত তার কাজ শুধু এটাই।যাত্রীদের কে সসন্মানে সিটে বসিয়ে দেওয়া।
আগের মাসে রশীদ বিরাট এক ধরা খেয়েছে এক ঠক আদম ব্যাপারীর কাছে।বসত ভিটা জমি সব বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চে্ষ্টা করছিল।এদের না আছে কোন অফিস না কোন ঠিাকানা।যেই ফোন নাম্বার টা আছে সেটাতে কখন ও কেউ কথা বলেনা। অসহায় নিরুপায় জমিহারা বাড়ীহারা যখন চিন্তা ভাবনা করছিল আত্মহত্যা করার তখন পথের ধারে সোহাগের সাথে দেখা পরিচয়।সব বৃত্তান্ত শোনার পর সোহাগ তার বাড়ীতে আশ্রয় দিয়েছে কিছুদিনের জন্য।
প্রথম দিন যাত্রী হয়েছে মাত্র দশজন।সোহাগ হতাশ কিছুটা।সে তার সব জমানো টাকা এই বাস কেনাতে ব্যায় করেছে।
ওই রশীদ তুই ছাপার কাগজ দেওয়ালে দেওয়ালে ভাল করি লাগাস নো? আমগো দেশের মানুষ ফ্রী বেড়াইব সুন্দর বনে তারপরে ও আইলনা বেশী মানুষ বুঝলামনা কারনটা।
ভাইজান যাওয়ার খরচ না হয় ফ্রী আসা যাওয়ার খাওয়া বাস পর্যন্ত আসার ভাড়া আর ও দেশের অবস্থা তো ভালনা ভাইজান।কার ও বেড়ানোর মন নাই।
দুর আমার এবারের প্রজেক্ট ফেল হইলে আমি গেছি।ভিক্ষার থালা লইয়া বইতো হইব রাস্তায়।
না না আল্লাহ ভরসা ।আ্লাহ র উপর তোয়াক্কেল করেন।
২ যথাসময়ে তার আরও দুই বন্ধু উপস্থিত হল।বাস ছাড়ল ঠিক এগারটায়।ছাড়ার কথা ছিল আটটায়।দেরী দেখে কিছু যাত্রী অস্থিরভাবে বাসে পায়চারী করছে আর ডিসগাষ্টিং ডিসগাষ্টিং করছে।
ওই কন্ডাকটার গাড়ী ছাড়িসনা কেন মরা একজন চিৎকার দিয়ে উঠল।
দেখছেন ভাইজান কেমন বেশরমের বেশরম।মাগনা যাইতেছে আর আমারে গালি দিতাছে।কানে কানে ফিসফিস করে রশীদ বলে।
যাত্রা শুরু হইতাছে কন্ডাকটার রশীদ ঘোষনা করল।সবাই যাত্রার দোয়া পড়েন। একজন সেইদিকে খেয়াল না করে জোরে ট্রানজিষ্টার চালাইছে।তাতে গান শোনা যাচ্ছে
হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ
এ জীবন জ্বইলা পুইড়া শেষ তো হইল না।
মরা আমার জীবনটা জ্বইলা পুইড়া শেষ হইয়া গেল বিড়বিড় করে বলে এইযে গান বন্ধ করেন শোনেন না কানে ।দুরের যাত্রা আল্লাহর নাম নেন।জায়গায় পৌইছা গান শুইনেন। রশীদ একটু ধমকানোর ভঙ্গিতে বলে।
সোহাগ তার প্রিয় প্লাষ্টিক সাপের খেলনা কাধে বসিয়ে দিল বিষ্নুর কাধে সাপের মূর্তির মতন।
গাড়ী চালানো শুরু করতে পিছনের শোরগোলে গাড়ী থামাতে বাধ্য হল।পিছনের এক লোক সাপ সাপ কলে গো গো করতে অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা।সোহাগ সাপটা হাতে নিয়ে যাত্রীর কাছে আসছে।
কি ব্যাপার রে কি হইছে ? হাতের সাপ নাচতে নাচাতে সে জিজ্ঞসা করে।বেচারা যাত্রীর পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিলনা এটা প্লাষ্টিকের সাপ।বাসে বসে তিনি আরামে নিদ্রা যাচ্ছিল ঘুম ভেঙ্গে তার সাপের সাথে চোখাচোখি।
সোহাগ যতই তার কাছাকাছি আসতেছিল সে শুধু গো গো করতেছে আর বলতেছে
তুই যা যা যা যা।
(পরবর্তীতে)