Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধার

: | : ০৬/০১/২০১৪

রায়হান অফিসে যাবার পরের সময়টা মৌরীর কাটতেই চায় না।

রায়হানের অফিস সকাল নয়টায়। তাকে বাসা থেকে বের হতে হয় আটটার মধ্যে। রাস্তার জ্যাম সহজে বাস পাওয়া যায় না এসব প্রভৃতি কারনেই তাকে আটটার মধ্যে বের হতে হয়। আর সেজন্য তাকে ঘুম থেকে উঠতে হয় ভোর সাড়ে ছ’টায়। মৌরীও তখন ওঠে। রায়হানের জন্য খাবার তৈরী করে। সকালে গরম ভাত না খেয়ে রায়হান অফিসে যেতে পারে না। ভাত ছাড়া অন্য কিছু খেলে সকাল এগারোটার দিকে প্রচন্ড ক্ষুধা লাগে। আর তখন তার হাত-পা কাঁপে।

 

স্বামী অফিস যাবে বলেই যে মৌরী প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে ভাত রান্না করে ব্যাপারটা ঠিক সেরকম না। মৌরী খুব যত্ন সহকারে গভীর আগ্রহ নিয়ে রায়হানের জন্য খাবার তৈরী করে। রায়হানের জন্য মৌরীর প্রচন্ড ভালোবাসা।

রায়হান চলে যেতেই মৌরী খাবার টেবিলটা গুছাতে থাকে। রায়হান কখনই চায়ের কাপটা পুরোপুরি শেষ করে না। আধাআধি খেয়েই চলে যায়। মৌরী টেবিল গুছানোর সময় প্রতিদিন রায়হানের চায়ের বাকীটুকু এক চুমুকেই খেয়ে ফেলে। কেন জানি তার এই কাজটি করতে খুব ভালো লাগে।

 

টেবিল গুছানোর পর মৌরী বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয়। মোবাইলে এসএমএস আসে। ঠিক এসময় এসএমএসের অর্থ একটাই রায়হান অফিসে পৌঁছেছে। সে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে হ্যাঁ তাই। এখন কিছুটা সময় ঘুমাবে। অন্তত: ঘুমুবার চেষ্টা করবে। প্রতিদিন যে সে ঘুমাতে পারে ঠিক সেটা নয়। মাঝে মাঝে তার ঘুমই আসে না। তখন সে টিভি দেখে। সাড়ে ন’টার দিকে দরজার কাছে গেলেই দেখা যায় নতুন পেপার। পেপারওয়ালা দরজার নীচ থেকে পেপার দিয়ে যায়।

 

ঘুম আসছিল না বলে সে পেপারটা নিয়ে আসে। সময় কাটে না বলে সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পেপার পড়ে। রাজনীতি, সারাদেশের খবর, খেলাধুলা, সম্পাদকীয় সবশেষ করে ক্ল্যাসিকাইড বিজ্ঞাপন গুলোতে চোখ বুলায়। হঠাৎ একটা বিজ্ঞাপনে তার চোখ আটকে যায়, ‘আপনি চাইলে একদিনের জন্য হয়ে উঠতে পারেন অসাধারণ সুদর্শন এক যুবক কিংবা সুন্দরী তরুণী।’ আর কিছুই লেখা নেই। শুধু একটা ফোন নাম্বার। মৌরী অবাক হয়। এটা কেমন কথা! একদিনের জন্য সুন্দরী তরুণী।

 

মৌরী ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে। ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। ভাবনায় আসে, তার চেহারার কথা। ভাবে সে কি দিন দিন তার আকর্ষণ হারাচ্ছে? রায়হান কি এখনও প্রথম দিনের মত তাকে ভালোবাসে? বিয়ের এই দুই বছরে তার মাঝে কি বয়সের ছাপ পড়েছে? ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

মৌরী মোবাইলটা হাতে নেয়। ফোন করে সেই অজ্ঞাত নম্বরে।

ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে, ‘হ্যালো।’

‘আমি পেপারে বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করেছি,’ মৌরী জবাব দেয়।

‘হ্যাঁ, বলুন।’

‘আমি আপনাদের বিজ্ঞাপনটার ব্যাপারে জানতে চাই। একদিনের জন্য আপনারা কাউকে সুন্দরী তরুণী বানাতে চাইছেন ব্যাপারটা নিয়ে জানতে চাইছিলাম।’ মৌরী যতটা সম্ভব ধীর গলায় স্পষ্ট উচ্চারণে বলল।

‘আমরা আসলে মানুষকে একদিনের জন্য কারও শরীর ধার দিই।’ ওপাশ থেকে বলল।

‘শরীর ধার দেন!’ মৌরী প্রচন্ড অবাক হয়।

‘হ্যাঁ, আমরা শরীর ধার দিই।’ ওপাশ থেকে বলে। মৌরীর বিস্ময় কাটে না। সে জানতে চায়, ‘শরীর কীভাবে ধার দেন?’

“যেভাবে মানুষ অন্য সব জিনিস ধার নেয় সেভাবেই আমরা শরীর ধার দিই। একদিনের জন্য। মানুষ যেভাবে রেন্ট-এ-কার থেকে গাড়ি ধার নেয় আমরা সেরকম শরীর ধার দিই। আপনি চাইলে আমাদের অফিসে এসে ব্যাপারটা দেখে যেতে পারেন।’ বলেই ওপাশ থেকে তাদের অফিসের ঠিকানা দেয়। মৌরী অবাক হয়ে দেখে যে ঠিকানাটা তার বাসার আশেপাশেই।

 

মৌরী ঘড়ির দিকে থাকায়। সাড়ে এগারোটা বাজে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সে হালকা সাজগোজ করে বেড়িয়ে পড়ে।

ফোনে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী সে একটা দোতালা লাল ইটের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। বাড়ির সামনের শ্বেতপাথরে বড় করে লেখা ‘করিম ল্যাবরেটরী’। নীচে ছোট করে লেখা, ড. মোবাশ্বের করিম।

 

নামটা কেন জানি তার পরিচিত মনে হতে থাকে। সে গেটে ধাক্কা দেয়। ওপাশ থেকে কারও সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না। সম্ভবত কোন দারোয়ান নেই। মৌরী নিজে হাত বাড়িয়ে গেটটা খুলে ফেলে।

 

ভিতরে সুন্দর লম্বা পথ। দুধারে বেশকিছু পাতাবাহারের গাছ আর অসংখ্য গোলাপ। মৌরী মোটামুটি ভড়কে যায়। একসাথে ফুলফোটা এত গোলাপ গাছ সে আগে কখনও দেখেনি। একপাশে ছোট একটা পুকুর। তাতে লাল শাপলা ফুটে আছে আর পুকুরে হুলুদ রঙের চার-পাঁচটা হাঁসের বাচ্চা সাঁতার কাটছে।

 

আরও একটু এগুনোর পর মৌরী একটা রিসিপশন টেবিল দেখতে পায়। কিন্তু সেখানে কেউ নেই। দেয়ালে কাঁচাপাকা দাঁড়িওয়ালা পৌড় একজনের ছবি দেখতে পায়। ছবি দেখে কেন জানি মানুষটাকে তার পরিচিত মনে হতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই সে মনে করতে পারে না।

 

কারও কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে মৌরী আবারও সেই অজ্ঞাত মোবাইল নম্বরটিতে ফোন দেয়। কয়েকটি রিং বাজার পর বিজি টোন আসে। ওপাশ থেকে কল কেটে দেওয়া হয়েছ। সে বুঝতে পারে না, আরও একটু অপেক্ষা করবে নাকি চলে যাবে। মোবাইলের ঘড়ির দিকে তাকায়। সাড়ে বারোটা।

 

যখন সে বের হতে যাচ্ছিল তখনই দরজা খুলে কাঁচাপাকা দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোক বের হয়ে আসেন। ‘যাচ্ছেন বুঝি?’ তিনি জানতে চান।

‘হ্যাঁ, আসলে…’ মৌরী আমতা আমতা করে বলে, ‘আমি আসলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে এসেছিলাম।’

‘তাহলে আপনিই কি তখন ফোন দিয়েছিলেন?’

‘হ্যাঁ।’

‘বসুন।’ ভদ্রলোক মৌরীকে ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে বসতে বলেন।

মৌরী বসে।

‘আমি আসলে নিজেকে আরও সুন্দরী তরুণী কিংবা আরও আকর্ষণীয় করার জন্য এখানেই আসিনি।’

‘সেটা আমি আপনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি। আপনি এমনিতেই যথেষ্ট সুন্দরী আর আকর্ষণীয়।’, ভদ্রলোক প্রশংসা করেন।

মৌরী কিছুটা লজ্জিত হয়।

‘আমি এখনও আমার পরিচয়টা আপনাকে দিইনি।’ তিনি বলে চলেন, ‘আমি মোবাশ্বের করিম। অল্প বিস্তর গবেষনা করি। বিজ্ঞানীও বলতে পারেন। জৈব পদার্থবিদ্যার উপরে আমার কিছু গবেষণা  আছে। কষ্ট-টষ্ট করে কোনমতে একটা পিএইচডি করেছি। তাই নামের আগে একটা ডক্টরেট ডিগ্রী যুক্ত করতে পেরেছি। আপাতত এই জীবনে এটাই আমার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। বায়োক্যামিক্যাল ফিজিক্সের উপর আমার একটা হাইপোথিসিস আছে যেটা অনেক আগে “করিম’স প্রকল্প” নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা অবাস্তব বলায় সেটি আর পরিচিতি পায় নাই।’ এ পর্যন্ত বলেই ড. মোবাশ্বের করিম শ্রাগ করেন।

 

ড. করিমের কথা শুনতেই মৌরী বুঝতে পারে কেন ঐ ছবি দেখে আর নামটা শুনে তার পরিচিত মনে হচ্ছিল। মৌরী ইডেন কলেজ থেকে প্রাণীবিদ্যায় মাস্টার্স করেছে। মাস্টার্সে পড়ার সময় তাদের এক শিক্ষক অসাধারণ প্রতিভাবান এক বিজ্ঞানীর নাম এবং ছবি দেখিয়ে টানা বিশ মিনিটের এক মন্ত্রমুগ্ধকর প্রেজেণ্টেশন দিয়েছিলেন। শিক্ষক আক্ষেপ করে বলেছিলেন কোন এক বিচিত্র কারণে এই বিজ্ঞানীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। হয়তো প্রচন্ড অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।

 

‘আমি আপনার সম্পর্কে শুনেছিলাম’, মৌরী জবাব দেয়।

‘কার কাছ থেকে?’

‘আমাদের এক স্যারের কাছ থেকে। স্যারের নাম ইমতিয়াজ। ইডেনে প্রাণীবিদ্যা পড়াতেন।’

‘বুঝতে পেরেছি ইমতিয়াজকে আমি চিনি। সে কিছুদিন হ্যাকেল ল্যাবে আমার সাথে কাজ করেছিল।’ ড. করিম বলে চলেন, ‘ছেলেটা একই সাথে মেধাবী, ধৈর্য্যহীন ও বোকা।’ তিনি মৌরীর দিকে তাকান, ‘এবার বলেন আমি কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’

‘আমি আসলে কৌতুহল বশত এখানে এসেছি। ইমতিয়াজ স্যার বলেছিলেন আপনি কোন এক বিচিত্র অভিমানে পরিচিত সার্কেল থেকে বের হয়ে গিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।’

ড. করিম কিছুদিন চুপ থেকে বললেন, ‘মেয়ে সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ তিনি হেসে বলেন, ‘সেটা বাদ দিন। আপনি হয়তো জানতে চাচ্ছেন আমি কীভাবে আর একজনের শরীর ধার দিই! তাইনা?’

‘দেখুন আমার গবেষণা ছিল জৈব পদার্থবিদ্যায়। কেউ যখন অসুস্থ হয় তখন আমরা বলি,’ তিনি উদাহরন দেবার চেষ্টা করেন, ‘ধরুন, করিম সাহেবকে দেখতে গিয়েছিলাম। আর কেউ মারা গেলে বলি করিম সাহেবের লাশ দেখতে গিয়েছিলাম। তাহলে এই দুই করিম সাহেবের মধ্যে পার্থক্যটা কী? পার্থক্য হচ্ছে একটাতে প্রাণ আছে আর একটাতে প্রাণ নেই। জীববিদ্যার দৃষ্টিতে একটাতে স্মৃতি আছে আর একটাতে নেই। আমি চেষ্টা করেছি মানুষের শরীর থেকে তার স্মৃতিকে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বের করে নিতে।’

মৌরী অবাক বিস্ময়ে শুনতে থাকে, ‘আপনি সেটা পেরেছেন?’

ড. করিম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হেসে বলেন, ‘হ্যাঁ পেরেছি। মোটামুটি চব্বিশ ঘণ্টার জন্য!’

‘অসম্ভব!’

‘খুবই সম্ভব। শুধু আপনার কাছে এমন প্রযুক্তি থাকতে হবে যা দিয়ে আপনি একজনের স্মৃতি বের করতে পারবেন এবং সেই স্মৃতি সংরক্ষণ করার জন্য আপনার কাছে পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে। আর সেই স্মৃতি অন্য এক সুদর্শন কিংবা সুন্দরীর মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করতে পারতে হবে। মানুষ যদি টিস্যু প্রতিস্থাপন করতে পারে তাহলে স্মৃতি কেন পারবে না?’

মৌরীর বিস্ময় তবুও কাটে না।

‘চলুন আপনাকে আমার গবেষণাগার দেখাই।’ ড. করিম প্রস্তাব দেন।

 

মৌরী দোটানায় পড়ি পড়ি করতে বলল, ‘চলুন।’

ড. করিম আর মৌরী সিড়ি ভেঙ্গে দোতলা চলে আসে।

‘এ বাড়িতে আর কে কে আছে?’ মৌরী জানতে চায়।

‘নাহ! সেভাবে আর কেউ নেই। ছুটা দুজন কাজের লোক আছে। তবে তারা নীচতলা এসে কাছ করে যায়। কাজ বলতে রান্নাবান্না আর বাগানটা পরিস্কার করা।’

‘আপনার ল্যাবে কোন অ্যাসিস্ট্যান্ট নেই?’

‘থাকবে না কেন? আছে। তবে সব রোবট।’, ড. করিম দোতলার ল্যাবের দরজা খুলে দেন।

 

ভিতরে তিনজন নিজমনে কিছু একটা করে যাচ্ছে। মৌরী এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে। কারও একজনের নাম ধরে ড. করিম ডাক দেন সে লোকটি হন্ত-দন্ত হয়ে ছুটে আসে। তিনি কী এক বিচিত্র ভাষায় তাকে কিছু বলেন, লোকটি মাথা নাড়ে।

 

মৌরী দেখতে পায় ল্যাবটি সত্যিই অত্যন্ত আধুনিক। সে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। একজন একটি প্রেট্টিডিশের উপর মানুষের হৃদপিণ্ডের মত কিছু একটা রেখে তাতে কিছু যন্ত্রপাতি লাগাতে থাকে।

 

‘এটা মানুষের হৃদপিণ্ড। একেবারে সত্যিকারের। মানুষটা মারা যাবার দু’দিন পর সংগ্রহ করা। এর ভিতর কিছু বায়োচিপস বসিয়ে দূর্বল চার্জ দিয়ে দেখা হচ্ছে হৃদপিণ্ডটার কার্যক্ষমতা পুনুরুদ্ধার করা যায় কিনা।’

“কিন্তু হৃদপিণ্ডের যে কোষ থাকে সেটাতো নষ্ট হয়ে যাবার কথা না?’

‘ঠিক ধরেছেন, আমার গবেষণাটা ঠিক এখানেই। আমি জীবকোষের নষ্ট হয়ে যাওয়াটা প্রলম্বিত করতে পেরেছি। ধরুন যে কোষ আটচল্লিশ ঘণ্টায় নষ্ট হয়ে যাবে সেটাকে মোটামুটি আটচল্লিশ হাজার ঘণ্টা পর্যন্ত নিতে পারছি।’

‘অসম্ভবের মত বলছেন।’

ড. করিম কোন প্রতিবাদ না করে হালকা হাসেন। মৌরী দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে।

ড. করিম ল্যাবের অন্য একজনের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলতে থাকেন। মৌরী কাছে আসে। ‘আপনি রোবটের কথা বলেছিলেন, কই?’ সে জানতে চায়।

‘এরাই রোবট।’

‘এরাই?’ সে অবাক হয়, ‘এরাতো মানুষ!’

‘না এরা রোবট। এদের শরীরটা দেখে আপনার মনে হচ্ছে এরা মানুষ। আপনার ধারনাটা একেবারে ভুল না। এদের শরীরটার প্রায় পুরোটা মানব শরীর। শুধু মস্তিষ্ক আর শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশে আমার কিছু বায়োচিপস ঢুকাতে হয়েছে।’

 

মৌরীর বিস্ময় কাটছেই না। তার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে বাংলাদেশের এইখানে বসে কেউ একজন এই ধরনের ল্যাবরেটরী তৈরী করতে পারে।

 

‘আমি যখন গবেষণা শুরু করি তখন কোন এক বিচিত্র কারণে মানুষের অমরত্ব নিয়ে ভাবতে থাকি। তখনই ভাবনা আসে যদি মানুষের স্মৃতিকেই আমি সংরক্ষণ করতে পারি তাহলে সেটাইতো আসলে অমরত্ব। স্মৃতির বাহক হচ্ছে একটা বস্তুগত শরীর। যেমন এইসব…’, তিনি মানুষ রোবটগুলোকে দেখিয়ে বলেন, ‘শরীরের মাঝে আমি কিছু স্মৃতি কিছু গাণিতিক আর জৈববিজ্ঞানের জ্ঞান ঢুকিয়ে দিয়েছি ফলে এরা এইসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে।’

 

একটু থেকে তিনি আবার যোগ করতে থাকেন, ‘এখন ধরুন আপনার স্মৃতিকে যদি আমি আলাদা করে কোন একটি সুন্দরী তরুণীর দেহে ঢুকিয়ে দেই তবে আপনি দেখতে পাবেন যে হঠাৎ করেই আপনি অন্য একজনে বদলে গেছেন।’

 

ড. করিম একটা প্রজেক্টর অন করে বিশাল স্ক্রীনের মাঝে বেশকিছু সুদর্শন যুবক আর সুন্দরী তরুণীর ছবি দেখাতে থাকেন। আপনি চাইলে একদিনের জন্য আপনি এদের কারও মাঝে নিজেকে দেখতে পারেন। এমনকি কোন যুবকের শরীরেও!’

 

মৌরী তার হাতঘড়ির দিকে তাকায়। পৌণে চারটা।

‘এই ছবিগুলোর শরীর কি আপনার কাছে আছে?’ মৌরী প্রশ্ন করে।

ড. করিম হালকা হাসির ভাব করেন কিন্তু উত্তর দেন না।

 

‘আমি আজ যেতে চাচ্ছি।’, মৌরী বলে।

‘আচ্ছা।’, ড. করিম জবাব দেন।

 

তারা দু’জনই ল্যাব থেকে বের হতে থাকেন। হঠাৎ করেই মৌরী ভাবে, দেখিনা একজনের শরীরের মাঝে নিজের স্মৃতি ঢুকালে কেমন লাগে! মৌরী একটা ঘোরের মাঝে পড়ে যায়।

 

পরিশিষ্টঃ

দরজা খুলতেই সালমাকে দেখে রায়হান বিমুঢ় হয়ে যায়। অসম্ভব এ হতেই পারে না। দু’বছর আগে সালমার মৃত্যু ঘটেছে। তাও রায়হানের নিজের হাতে। এ অসম্ভব!

‘তুমি?’ রায়হানের গলা থেকে স্বর বের হতে চায় না।

‘হ্যাঁ আমি! চিনতে পেরেছ আমাকে।” মৌরী বলে।

অবিকল সেই একই স্বর। রায়হান ভয় পেয়ে যায়। মৃত মানুষ কীভাবে ফিরে আসে!

রায়হান দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে। ‘কী হলো? ভিতরে ঢুকবে না?’, মৌরী তাড়া দেয়।

রায়হান কোনমতে ঢুকে। এদিক ওদিক তাকায়। মৌরীকে খুঁজে। কোথাও দেখতে পায় না। সম্ভবত বাইরে গেছে।

সে একটা ঘোরের মাঝে পড়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই রায়হান তার দু’হাত সালমার গলায় দেখতে পায়। রায়হান ভাবে যে ভাবেই হোক মৌরী আসার আগেই তাকে কাজটা সাড়তে হবে।

শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে সালমার মত দেখতে মৌরীর গলা চেপে ধরে। ঠিক যেমনটি সে করেছিল তিন বছর আগে। ঠিক তিন বছর আগে।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top