মুক্তি যুদ্ধের গল্প-৭ম পর্ব
বর্ষা কাল যায় যায় অবস্থা। নদীর পানি কমে আসছে। নিচু এলাকার মাঠের পানি নদীতে নেমে গেছে। ফলে পাক সেনারা চলা চলের জন্য সুবিধাজনক অবস্থা পেতে থাকল। আমাদের দেশ তো আবার বন্যা বিধৌত দেশ। ফলে বর্ষা কালে দেশের অধিকাংশ এলাকাই বন্যা কবলিত হয়। যে কারনে আমাদের জন্য একটু সুবিধাই ছিল। কারণ পাক সেনারা খুব বেশী প্রয়োজন না হলে কখনও নৌ-পথে কোথাও রওয়ানা হত না। প্রথম দিকে নৌ-পথে মাঝে মাঝে রওয়ানা হত। কিন্তু মুক্তিবাহিনীদের আক্রমনের চোটে তারা পরে নৌ-পথে বের হওয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ তারা দেখল নৌ-পথে আক্রান্ত হলে তারা কোথাও আশ্রয় নিতে পারে না। ফলে বেঘাতে পরে মারা যায়। আক্রান্ত হলে তাদের হেড-কোয়াটার থেকে সহজে কোন সাহায্য তাদের কাছে পৌঁছতে পারে না। অন্য দিকে পাক-সেনারা কেহই সাঁতার জানতো না। নদী পথে আক্রান্ত হলে তারা জলযান থেকে নেমে পালাতেও পারতো না। পাক-সেনাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যেই পানি ভীতি ছিল। যার ফলে সারা বর্ষা কাল ধরে পাক-সেনাদের দেশের ভিতর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত ছিল খুবই সীমিত। এমতাবস্থায় আমাদের আক্রমনও সীমিত হয়ে পরেছিল। কারণ পাক-সেনারা থানা লেবেলের বিভিন্ন অফিসে তাদের আস্তানা গেরে বসেছিল। সেখানে আক্রমন করতে গেলে আমাদেরকেও নৌ-পথে যেতে হত। বর্ষা কালে বন্যা কবলিত কোন থানা আক্রমন করতে গেলে আমাদের থাকতে হত নৌকায় আর পাক-সেনারা থাকতো ক্যাম্পের ব্যাংকারে। ফলে আমাদের চেয়ে তাদের অবস্থান সুবিধাজনক ছিল।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙ্গালীদের মধ্যেও অনেক লোক ছিল যারা ঐ সময়ও ধান্দা বাজির চিন্তায় থাকতো। এমনই একজন লোক ছিল আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। নাম ছিল তার সৈয়দ আলী। তার কাজই দিল নানা ফিকির ফন্দিতে মানুষ জনদের ঠকিয়ে খাওয়া। তখনকার যুদ্ধাবস্থা দেখে সে হয়তো মনে মনে ধরেই নিয়েছিল মুক্তি বাহিনীর লোকেরা এ দেশ স্বাধীন করতে পারবে না। কাজেই সে গোপনে গোপনে পাক-হানাদারদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকল। আমাদের এলাকা থেকে সব চেয়ে নিকটতম হানাদার ক্যাম্প ছিল পাথরঘাটা ফরেষ্ট রেন্জ অফিসে। সৈয়দ আলী চেয়ারম্যান গোপনে নিয়মিত সেই ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ করতে থাকল। কেহ তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাদের বলতো, যাতে পাক-হানাদাররা আমাদের এলাকায় কোন প্রকার আক্রমন না করে সে কারণেই তিনি হানাদার ক্যাম্পে যোগাযোগ রাখেন। আসলে এই কৈফিয়তটি ছিল তার একটি মিথ্যা অযুহাত মাত্র। আসলে সে যোগাযোগ রাখতো যাতে পাক-বাহিনী টিকে গেলে তার ব্যবসায় কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। মূলত সৈয়দ আলী চেয়ারম্যান খুবই ধূর্ত প্রকৃতির একজন লোক। সে মোটেই পড়ালেখা জানতো না। তবে চেয়ারম্যান হওয়ার পরে সে সুন্দর করে একটি সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর শিখেছিল। তার কাছে কেহ কোন কাগজ পত্র নিয়ে গেলে সে”সৈ আলী” লিখে খুব সুন্দর করে একটি স্বাক্ষর দিত।তার স্বাক্ষর দেখে বুঝার কোন উপায় ছিল না, সে লেখা পড়া জানত না।পরে শুনেছি চেয়ারম্যান হওয়ার পর সে বাংলা পড়তেও শিখেছিল। প্রথম জীবনে পড়া লেখা করার মত তার আর্থিক অবস্থা ছিল না। শুনেছি তার মা আমাদের এলাকায় ধানের চাল বানিয়ে সংসার চালাতো। তোমরা হয়তো গ্রাম দেশের ঢেকিতে চাল ছাটাই করে কিভাবে কোন দিন দেখওনি। তোমরা কি ঢেকি দেখেছ? আমি বললাম-
শুভ বললো- দেখিনি।
আমি বললাম- ঢেকি একটি লম্বা কাঠ দিয়ে তৈরী করতে হয়। ধর, ৭/৮ ফুট লম্বা একটি কাঠ চৌ শিরা করে চেঁছে তার এক মাথায় অনুমান ২ ফুট দূরে একটি কাঠের দন্ড লাগাতে হয়।এই দন্ডটি দুটি কাঠের খুটির উপর স্থাপন করতে হয় ,যাতে লম্বা কাঠটি মাটি থেকে উচুতে থাকে। লম্বা কাঠের অপর প্রান্তে উলটো ভাবে আরো একটি কাঠের দন্ড লাগাতে হয়। এটিকে বলে চুরণ। এই চুরণের মথায় একটি লোহার পাত লাগানো থাকে। এখন ঢেকির পিছন দিকে দাঁড়িয়ে পা দিয়ে নিচের দিকে চাপ দিলে চুরণ লাগানো মাথা উঁচুতে উঠে আসে, তার পর পা সড়িয়ে নিলে চুরণ লাগানো মাথা নিচে নেমে এসে আঘাত হানে। যেখানে আঘাত হানা সেখানে মাটিতে গর্ত করে ছোট বালতির আকারের একটি নোট তৈরী করতে হয়। এই নোট কাঠের মধ্যে গর্ত করেও তৈরী হতে পারে আবার বালি সীমেন্টের মিশ্রণ দি্য়েও তৈরী হতে পারে। এই নোটে ধান দিয়ে ঢেকির পিছনে বার বার চাপ দিতে হয়। ঢেকির পিছনে এই চাপ দেওয়াকে ঢেকিতে পাড় দেওয়া বলে। এভাবে অনবরত পাড় দিলে ধানের পেট থেকে চাল বেড়িয়ে আসে। সে যুগে আমাদের দেশে ধান ভাঙ্গানোর কোন মেশিন ছিল না। ফলে বাড়ির মহিলারা ঢেকিতে ধান বানতো। আসলে ধান বানতো কথাটি ঠিক নয়। কথাটি হবে ধান ভাংতো। যে বাড়িতে লোকজন বেশী তারা নিজেরা ধান ভাঙ্গাতে না পারায় গরীব মহিলাদের দ্বারা ধান ভাঙিয়ে নিত। ঐ সময় এক মন ধান ভাঙ্গিয়ে দিলে এক সের চাউল দেওয়া হত। আমাদের এই চেয়ারম্যানের মা বাড়ি বড়ি গিয়ে ধান ভাঙ্গিয়ে ছেলে মেয়েদের বড় করেছে বলে শুনেছি। এলাকায় প্রবাদ আছে একদিন খাবার না থাকায় এই সৈয়দ আলী সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কোন খাবার না পেয়ে শুধু কয়লা খেয়ে দিন কাটিয়ে দিয়েছিল। যাই হোক শুনেছি সৈয়দ আলীর প্রথম জীবন শুরু হয় ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টের বাজাইল ভিট অফিসের অফিস বয় হিসেবে। সেখান থেকেই ফরেষ্টারদের সাথে হৃদ্যতা তৈরী করে কাঠ চোরচালানী শুরু করে। ফরেষ্টারদের সাথে যোগা যোগ করে ছোট খাটো একটি বনের ডাক নিত, সেটার অযুহাতে সারা বছর বনের কাঠ চোরা চালান করে বিক্রয় করতো। এই কাঠের ব্যবসাতেই কয়লা খাওয়া সৈয়দ আলী একদিন অনেক টাকার মালিক হয়। কথায় বলে না,অবস্থা ফিড়লে তার পরিবেশও পরিবর্তিত হয়। সৈয়দ আলীর বাড়িতে বড় বড় দুতালা টিনের ঘর ছিল। যার ফলে কোন সরকারী কর্মকর্তা এলাকায় আসলে তার বাড়িতেই অবস্থান করতে শুরু করলো। ক্রমে ক্রমে এলাকায় তার পরিচিতি বাড়তে লাগল। আবস্থাটা এমন হল যে কোন সিভিল অফিসার আসলেও তার বাড়িতেই থাকে আবার কোন পুলিশ অডিসার আসলেও তার বাড়িতেই থাকে। ফলে বিভিন্ন প্রকারের দালালী করে তার অর্থাগমন ঘটতে থাকলো স্রোতের বেগে। ফলে এক সময় তাকে কেহ বুদ্ধি দিল যে,চেয়ারম্যান না হলে এলাকায় তেমন নাম ছড়ায় না। কিন্তু চেয়ারম্যান হওয়ার পিছনে অন্তরায় ছিল তখন আমাদের ইউনিয়নের চলতি চেয়ারম্যান হামীদ আলী। তিনি অত্যান্ত ভাল লোক ছিলেন। সে থাকতে তো আর সৈয়দ আলী চেয়ারম্যান হতে পারবে না। একদিন দেখা গেল বাজাইলের একটি স্রোতস্বিনী নদীতে হামীদ চেয়ারম্যানের লাশ ভেসে আছে। পুলিশ সৈয়দ আলী চেয়ারম্যানের পক্ষ্যেই ছিল। এলাকার সকল শ্রেনীর লোকেরাই অনুমান করলো যে, এ কাজ সৈয়দ আলী চেয়ারম্যানই করিয়েছে। কিন্তু প্রমান করার কোন উপায় ছিলনা। ফলে মামলা ধামা চাপা পরে গেল। পরবর্তী নির্বাচনে সৈয়দ আলী অনায়াশে চেয়ারম্যান হয়ে গেল। সাথে সাথে তার সামাজিক মর্যাদাও বেরে গেল। আর তখন তার কাঠের ব্যবসাও চলতে থাকলো অপ্রতিরোদ্ধ গতিতে। অল্প দিনেই সে এলাকায় অগনিত টাকার মালিক হয়ে গেল। কাজেই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বা তার পরবর্তী সময়ে যাতে তার চোরাই কাঠের ব্যবসা ভাল ভাবে চলতে পারে সেই পথ সুগম রাখার জন্যই সে পাক-সেনাদের ক্যাম্পে যোগাযোগ রাখতো। এলাকার সবাই যেন তাকে ভয় করে সেই রকম একটা চিন্তা তার মাথায় খেলে গেল। আর তার ফলোশ্রুতিতেই সে পাথরঘাটা হানাদার ক্যাম্পে যোগাযোগ করে আগষ্ট মাসের শেষের দিকে একদল পাক-সেনা তার বাড়িতে নিয়ে এল। এলাকার মহিলা যারা পারলো তারা তো পালালো, কিন্তু যারা পালাতে পারলো না, সে রকম বেশ কিছু মহিলা ধর্ষীতা হল। আমরা সংবাদ পেয়ে এলাকায় অবস্থান নিতে থাকলাম পাক-সেনাদের আক্রমন করার জন্য। অবশ্য রাতে আক্রমন করলে তারা আমাদের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারবেনা। কিন্তু বাঁধ সাদলো আমাদের এলাকার মুরুব্বীরা। তারা বললেন, এখানে আক্রমন করলে পরে অনেক পাক-সেনা এসে আমাদের গ্রাম জালিয়ে দিবে। তাতে আমাদের এলাকার অনেক বড় ক্ষতি হবে। ফলে বাধ্য হয়ে ঐ সময় আমরা পাক সেনাদের আক্রমন করতে পারলাম না। পর দিন পাক-হানাদার বাহিনী পাথরঘাটা ক্যাম্পে চলে গেল।
আমরা সৈয়দ আলী চেয়ারম্যানকে শাস্তি দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা তৈয়ার করলাম। পরিকল্পনা মোতাবেক দিন নির্ধারিত হল। আমরা অপারেশন সৈয়দ আলী সম্পন্ন করার জন্য রওয়ানা হলাম। অন্ধকার রাত। এর মধ্যে ঘুড়ি ঘুড়ি বৃষ্টি হতে শুরু করলো। পাহাড়ীয়া মাটির রাস্তা। লাল মাটি।ভিজলে একদম কাঁদা হয়ে যায় এবং প্রচুর পিচ্ছিল হয়। গভীর রাত হওয়াতে রাস্তা ঘাটে কোন লোক জনের সাথে দেখা হচ্ছিল না। সে যুগে অবশ্য একটা সুবিধা ছিল। কোন লোকের সাথে দেখা হলেও সে ইচ্ছে করলেও আমাদের পৌঁছানোর আগে সৈয়দ আলী চেয়ারম্যানকে আমাদের সম্পর্কে সংবাদ দিতে পরতো না। কারণ তখন কার দিনে তো আর এখন কার মতো মোবাইল ফোন ছিল না। তখনকার দিনে কোন লোক আমাদের আগে গিয়ে সংবাদ দিতে চাইলে তাকে দৌঁড়ে যেতে হতো। কাজেই তেমন কোন ঘনিষ্ঠ জন না হলে এরকম রিস্ক কেহ নিত না।যাই হোক আমরা তো সব সময়ই যাত্রা কালে থাকতাম প্রতিশোধের নেশায়। কাজেই রাস্তা খারাপ, কাঁটা, কাঁদা এ সব আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারতো না। সৈয়দ আলী চেয়ারম্যানের বাড়িতে দুতলা ঘরই ছিল দুটো। পূর্ব ভিটার ঘরে সৈয়দ আলী ও পশ্চিম ভিটার ঘরে তালেব আলী থাকতো। আমরা অপারেশনে যাওয়ার আগে সব সময়ই অপারেশন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতাম। সে দিন আলোচনা হলো সৈয়দ ঘরে প্রবেশ করণ নিয়ে। কারণ সৈয়দ আলীকে রাতে ডাকলে সে দরজা খোলে আমাদের কাছে আসবে এমনটা আশা করা যায়না। তখন যদি দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে হয় তবে নিচ তলায় সহজেই ঢোকা যাবে, কিন্তু দুতলায় এত সহজে ঢোকা যাবে না। রেকি করার সময় দেখা গেছে দুতলার পিছনে একটি করে পায়খানা আছে। পায়খানার খুঁটি লম্বা অনুমান ১৫/১৬ ফুট হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, তারা স্বেচ্ছায় দরজা না খুললে একটি গ্রুপ সামনের দরজায় আঘাত করে ঘরের লোকজনদের সামনে ব্যস্ত রাখতে হবে এবং একই সাথে অপর কেহ পায়খানার খুঁটি বেয়ে উপরে উঠে টিন খোলে তার পর পায়খানা দিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে। সেই মোতাবেক পায়খানার টিন খোলার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সাথে নিলাম। আমরা সৈয়দ আলীর বাড়িতে পৌঁছে চতুর্দিকে রেকি করে আগে ডিউটি লাগালাম। কারণ সৈয়দ আলীর বাড়ির লোকজন ডাক চিৎকার করলে তাকে সাহায্য করতে তার কিছু চামচা লোক আসতে পারে। পরিকল্পনা ছিল চতুর্দিকে পাহাড়া বসিয়ে আমরা কয়েক জন ঘরের সামনের দরজায় নক করে দরজা খুলতে বলবো। দরজা যদি না খোলে তবে দরজা ভাঙ্গার জন্য দরজায় আঘাৎ করতে থাকবো। দরজায় আঘাত করতে থাকলে ঘরের ভিতরের সকল লোক দরজা রক্ষা করার জন্য নিচে নেমে আসবে। আর সেই ফাঁকে দুইজন স্বশস্র মুক্তি যোদ্ধা পিছনের পায়খানার খুটি বেঁয়ে উপরে উঠে টিন খোলে ভিতরে ঢুকে যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ চলতে থাকলো। সামনের দরজায় আঘাত করার পর ভিতর থেকে ভিতর থেকে ডাক চিৎকার শুরু করলো। আমরা নিজেদের পরিচয় দিলাম। তাদেরকে বার বার জানালাম যে, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। তার পরও তারা কোন ভাবেই দরজা খুলছিল না। আমরা সামনের দরজায় আঘাত করে করে ঘরের লোকদের ব্যস্ত রাখলাম। বাড়ির লোকদের ডাক চিৎকারে চেয়ারম্যানের চামচা লোকেরা এগিয়ে এল। কিন্তু আমরা মুক্তিযোদ্ধা এই পরিচয় পেয়ে কেহই আর অধিক দূর অগ্রসর হলো না। সামনের দরজা ভাঙ্গার চেষ্টার শব্দে সবাই ব্যস্ত থাকায় পিছন দিক থেকে আমাদের দুই জন মুক্তি যোদ্ধা পায়খানার টিন খুলে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল। তারা ঘরের ভিতরে ঢুকে ঘরের লোক জনদের জিম্মী করে তাদের দিয়ে সামনের দরজা খুলাল। সৈয়দ আলীর একটি বন্ধুক ছিল, সেটা আমরা নিয়ে নিলাম। তাদের দ্বারা অন্যসব ঘরের দরজা খুলিয়ে সকল ঘর তল্লাশী করলাম।কিন্তু সৈয়দ আলীকে পাওয়া গেল না। বাড়ির লোকজনেরা বললো, সে আগের দিন সন্ধ্যায় জরুরী কাজে কালিয়াকৈড় চলে গিয়েছে। আসলে আমাদের সংগৃহীত সংবাদ মতে সে বিকেল পর্যন্ত বাড়িতে ছিল। কাজেই কালিয়াকৈড় যাওয়ার কথা নয়। সম্ভবত আশ পাশের কোন বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে থেকে থাকবে। আমরা সৈয়দ আলীকে না পেয়ে তার বন্ধুকটি নিয়ে চলে এলাম। সৈয়দ আলীর আয়ূ থাকাতে এ যাত্রায় সে বেঁচে গেল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা সৈয়দ আলীকে আর কিছু বলেনি। কারণ সৈয়দ আলী আমাদের এলাকায় পাক-সেনাদের এনেছিল ঠিকই, কিন্তু পাক- সেনারা আমাদের এলাকায় এক জন মহিলা ধর্ষণের অভিযোগ ছিল বটে কিন্তু তাতে সৈয়দ আলীর সরাসরি কোন সম্পৃক্ততা ছিল না ।তা ছাড়া হানাদাররা আমাদের এলাকায় ঘর বাড়ির কোন ক্ষতি করেনি। ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তার আর কোন সমস্যায় পরতে হয়নি। আমরা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম। ।