Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উপন্যাস ” পাথরের মানুষ ” পর্বঃ ৫

: | : ১২/০১/২০১৪

গত মাসে ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছে এখনো রেজাল্ট আউট হয়নি ।
হঠাত্‍ একদিন হেড স্যার এসে সংবাদ দিল , আলম ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে এবং সবার উর্ধ্বে ওর মার্ক । তাই উলিপুর থানার টি এন ও সাহেব মাদ্রাসায় এসে আলমকে সংবর্ধনা দিবেন । এ শুভ বার্তা বড় ভাই শুনে ফোনে আলমকে বললো ,
তোর এ বৃত্তি পাওয়াতে আমি মোটেও খুশি হয়নি । কারণ শেষ ভাল যার সব ভাল তার । তোকে বি সি এস পর্যন্ত এমন ভাল রেজাল্ট দেখতে চাই । তবেই আমি খুশি হব ,বুঝতে পারছো ?
ভাইয়া আপনি ভরসা রাখেন , ইনশা আল্লাহ ।

আজ বৃহস্পতিবার , মাদ্রাসাকে হরেক রকম ফুল ও রঙ্গিন কাটা কাগজে সাঁজানো হয়েছে । মনোরঞ্জন ও আকর্ষণীয় করে সাঁজানো হয়েছে সংবর্ধনা স্টেজ । শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহোদয়গণ ও ছাত্র ছাত্রীরা হাজির হয়েছে এ অনুষ্ঠানে । সবার আগে এক গোছা ফুল হাতে নিয়ে মাদ্রাসা গেটে অপেক্ষায় নায়িকা পূর্ণিমার মত একটি মেয়ে ।
কে মেয়েটি ? কি তার পরিচয় ? জানা আবশ্যক কার জন্য সে এতো সেঁজে গুজে অপেক্ষা করছে ?
ওর নাম হুমায়রা , একদিকে সে আলমের সহপাঠী অন্য দিকে এ মাদ্রাসারই মাহফুজার স্যারের তৃতীয়া মেয়ে ও বিশিষ্ট শিল্পপতি হাজী মুকুলের ভাগিনী । মনে হচ্ছে মেয়েটি আলমকে অভ্যার্থনার জন্য অপেক্ষায়মান । ঠিক তাই , আলম গেটে আসা মাত্র ফুলের তোড়াসহ হাত বাড়িয়ে বলল ,
এই নাও , তোমার সফলতার জন্য আমার নগন্য উপহার । হুমায়রার দিকে অপল দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে ভাবছে , যেন আকাশ থেকে পরি নেমে এসেছে লাল টকটকে চেহারা , মায়াবী মুখ , টানা টানা দুটি চোখ ,ঠোঁট দুটি গোলাপের পাঁপড়ি ও ফুটন্ত সূর্যমূখী ফুলের মত সুন্দর লাগছে হুমায়রাকে । আলমও একটি স্মার্ট ছেলে চেহারা ঠিক নায়ক জিতের মত । হুমায়রা ভাবল আলমকে ওর চির সঙ্গী বানাবে , এ সল্প সময়ে দুজন দুজনকে নিয়ে অনেক কিছুই স্বপ্ন দেখল । দুজন আবেগে সুখের নীরও বাঁধলো ।
কি হলো , আমার উপহার নিবেনা ? হুমায়রা জিজ্ঞাসা করলো । আলম চমকে উঠে জবাব দিল ,
হ্যাঁ , অবশ্যই ।
ফুলের তোড়াটি নিয়ে হুমায়রাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল ।
সংবর্ধনার কার্যক্রম শুরু হলো , শিক্ষকগণ একের পর এক সবাই বক্তৃতা দিলেন । তাঁদের প্রত্যেকের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে একই উপদেশ দেন ,সবাই যেন আলমের মত গৌরবময় রেজাল্ট করে ।
টি এন ও সাহেব অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায় আলমের অনুভূতি জানতে চাইলেন । আলম বলল ,
আমার এ সামান্য সফলতার অনুভূতি নেই । কারণ শেষ ভাল যার সব ভাল তার । যেদিন আমি বি সি এস পাশ করব সেদিন প্রাণ খুলে অনুভূতি প্রকাশ করব । সব শেষে টি এন ও সাহেব খুশি হয়ে একটি ইংলিশ ডিকশনারী ও নগত ২০০০০ টাকা উপহার দিলেন । অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা হলো , যার যার মতে আপন নিলয়ে সবাই ফিরে গেল ।

বাড়িতে ফিরে আসা মাত্র মা আলমকে খেতে দিলেন কিন্তু ওর অরুচি বোধ হলো বারংবার হুমায়রার চাঁদ মুখখানি ভেসে ওঠে চোখের সমুখে । কখনো সে মেয়েদের দিকে তাঁকায়নি । তাই প্রথম দর্শনে হুমায়রাকে অপূর্ব ভাল লাগছে । মন চাচ্ছে ওকে নিয়ে কোন এক অচিন রাজ্যে হারিয়ে যেতে । মা রাগ করে বলল ,
রুচি না থাকলেও জোর করে খেতে হয় , নইলে অসুস্থ হয়ে পরবে ।
মায়ের জিদ সহ্য করতে না পেরে খেতে বসলো । কিন্তু খেতে পারছেনা , সূর্যমূখী বদনখানি ভেসে উঠছে ভাতের ওপর । দু এক বার মুখে দিয়ে পেট ভর্তি পানি খেল । তারপর গিয়ে বসল পড়ার টেবিলে , বই হাতে নিয়ে পেজ উল্টায়ে দেখে প্রত্যেক পৃষ্ঠায় হুমায়রার প্রতিচ্ছবি , পড়তে পারছেনা মাথা ঝিঁ ঝিঁ পোকার মত ঘুরতে লাগল ।
হঠাত্‍ চিত্‍কার দিয়ে বলল ,
মা , আমি পাগল হয়ে গেছি ।
কি হয়েছে বাবা ?
মাথা ঘুরছে , পৃথিবীটা এলোমেলো মনে হচ্ছে । মা , আমি পাগল হয়ে গেছি , কোথায় আছি কি করছি ; আমি কোন কিছুই বলতে পারছিনা ।
চিন্তা করিসনা বাবা , সব ঠিক হয়ে যাবে । আয় মাথায় ঠান্ডা পানি দিয়ে দেই ।

( চলবে )

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top