আমরা সচেতন নাগরিক
সপ্তাহে একবার বাড়ীতে আসি ।যদিও কলেজ বাড়ী থেকে মাত্র ২০ কিমিঃ দুরে ,তবুও বডিং এ থাকতে হয় । রাস্তার ঘাটের অবস্হা একেবারে বেহাল । ৩৪ নং জাতীয় সড়ক । রাস্তার মাঝে বড় বড় গর্ত ।সবসময় বিপদের আশঙ্কা ।গণতান্ত্রিক দেশ ।দেশের যত উন্নয়ন ,সবটুকুই কাগজে কলমে ।বাস্তবে তার চিহ্ন পর্যন্ত্য নেই ।দেশ স্বাধীন হওয়ার আজ দীর্ঘ্য ৬৫ বছর হয়ে গেল ।কিন্তু আজও কোটি কোটি মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারেনি ।দেশ থেকে ইংরেজরা পালিয়ে গেছে সত্যি ,দেশীয় ব্রিটিশরা আজও সিংহাসনে বসে আছে । তারা চায় শাসন আর শোষণ ।ট্রেনের যাত্রাটা খানিকটা নিরাপদ । আমি ষ্টেশনে এসে ট্রেনে উটে জানালার পাশে বসে পড়লাম ।ষ্টেশন থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে । নাকে রুমাল বেধে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম ।মিনিট পনেরো পরে ট্রেন ষ্টেশন হতে ছেড়ে দিল । আমি মোবাইলটা পকেটে রেখে পাশে বসে থাকা ভদ্রলোকদের আলাপ শুনতে লাগলাম ।কথাবার্তা শুনে মনে হল এরা দেশের সচেতন নাগরিক ।
‘আমাদের দেশের যুবকরা একবারে বিগড়ে গেছে ।এরা শুধু বেকার সমস্যা সৃষ্টি করছে ।গান-বাজনা এতে এদের সমাগম । রাস্তা ঘাটের বেহাল অবস্তা । এসব নিয়ে যদি আন্দোলন করত তবে হয়ত কিছুটা সুরাহা হত ।’ -পাশের বেঞ্চে বসে থাকা ভদ্রলোক সজোরে বলে উটলেন ।আর সবাই লোকটির সাথে সহমত ব্যাক্ত করলেন । আরেকজন বললেন যতদিন দেশ থেকে কংগ্রেসকে নির্মূল করা যাবে না ,ততদিন পর্যন্ত্য দেশের কোনো উন্নতি হবে না । এদের কেউ কংগ্রেসকে , আবার কেউ বিজেপিকে সাপোর্ট করছে । আমার কাছে একটা জিনিস খুব ভাল লাগল . এরা যদিও একেকজন একেকটা দলকে সাপোর্ট করছে কিন্তু এরা সবাই দেশের উন্নতি চায় । আমি সাহস করে বললাম আগামি শনিবার শম্ভূসাগর পার্কের কাছে দেশের বর্তমান পরিস্তিতি নিয়ে এক গণ আন্দোলনের আয়োজন করা হয়েছে । ত আপনারা উপস্তিত থাকবেন । লোকগুলো আমাকে অযতা প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকল ।সবাই আসবে বলে আমাকে কথা দিল । আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বাড়ি ফিরে এলাম । শনিবার সকালে আমি শম্ভূসাগর পার্কে গিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলাম ।যেদেশে ১২০ কোটি মানুষের বাস সেখানে মাত্র ৭০/৮০ যুবকের সমাগম । এত অল্প সংখ্যক মানুষকে নিয়ে এ আন্দোলন সফল করা কি সম্ভব ?কোথায় গেল এরা যারা রাস্তা ঘাটে ,চায়ের দোকান, এখানে সেখানে বসে বড় বড় কথা বলে ?
বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে বাসে দেখলাম জন পাঁচেক লোক সরকারের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই বলছে ।এটা আমাদের ঐতিহ্য যা এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্ম পর্যন্ত্য বহে চলবে । মনে পড়ল সেদিন রাতের ভয়ংকর মূহুর্তের কথা যেদিন সামান্য একটা সাইন বোর্ডের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিল । প্রাণ হারিয়েছিল দুটো ফুটফুটে শিশু ।সেদিনের আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল রাজনীতির দল তাইত এত সমাগম । আর আজকের আন্দোলন ছিল সাধারণ মানুষদের জন্য যারা শোষিত .বঞ্চিত । তাই কেউ এ আন্দোলনের ডাকে সাড়া দেয়নি কারণ এ দেশে কেউ শোষিত ,বঞ্চিত নয় । সবাই সুখী তাই আমিও সুখী ।আমি আজ এদের দলে । আমার মন আজ এদের জন্য এখন আর কাদেনা ।তবে মাঝে মধ্যে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয় ।সরকার নয় আমরা নিজেরাই দেশকে ধ্বংশের মুখে ঠেলে দিচ্ছি ।দেশ স্বাধীন হয়েছে সত্যি কিন্তু আমরা স্বাধীন নয় । আমরা একেকজন দেশের সচেতন নাগরিক ।