Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

নিরুদ্দেশ রুমা

: | : ১৪/০১/২০১৪

মেয়ে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উটছে । দেখতে দেখতে সতেরটি বছর কেটে গেল । মা বাবার একমাত্র মেয়ে ।সবেমাত্র হায়ার সেকেন্ডারি ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে ।রেজাল্ট বের হলে ভাল একটা পাত্র দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবেন । মেয়ের কোন কিছুর অভাব যেন না হয় তাই মা এখন থেকে বিয়ের কেনা কাটা শুরু করে দিয়েছেন । বিয়ের শাড়ী ,ছুড়ি , পাটি ,বাসন আর কত কিছু । শ্বাশুড় বাড়ীতে মেয়েকে শ্বাশুড়ির কোচা খেতে যেন না হয় এই নিয়ে মায়ের যতসব চিন্তা । এরি মধ্যে দু এক জায়গা থেকে বিয়ের সম্বন্ধও এসেছে ।পোষ মাসের আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে মা জানিয়ে দিলেন । দুটো নয় ,তিনটো নয় একমাত্র কন্যা । যার তার হাতে মেয়েকে আবার তুলে দিতে পারেন না । তাছাড়া মেয়ের বিয়ে ধূমধাম করে দিতে চান ।

সামনের শুক্রবারে মেয়ের বিয়ে ।সমুস্ত বাড়ী আলোময় । ঘরে পা রাখার জায়গা নেই । টঙ্গি ঘর খুলে দেওয়া হয়েছে । সবার মুখে হাঁসি । শিশুর কান্না ,মেয়েদের হাঁসির আওয়াজে সারা বাড়ী যেন নতুন করে বাকশক্তি পেয়েছে । বৃদ্ধদের বিড়ির টানে ধোওয়া কুণ্ডলি পাকাইয়া উপর দিকে ফুপিয়ে উটছে । একজন নবাগত আগন্তক বাড়ীর পাশ কেটে যেতে টের পাবে বিয়ে বাড়ী বলে । বিয়ের প্যান্ডেল দেখার মত । পাশের দু তিন গায়ে এমনটা হয়েছে বলে সন্দেহ জাগে ।
সকাল ৭ টা হয়ে গেল রুমাকে দেখা যাচ্ছে না । মাসি গিয়ে দেখলেন ,ঘর ভিতর দিকে লক করা । হয়ত রাত্রে ঘুমাতে দেরী হয়েছে তাই ডাকাডাকি না করে চলে এলেন । খাবার সময় হয়ে গেল এখনও রুমা উটছে না দেখে কাজের মেয়েকে পাঠালেন খোজ নিতে । আবারও সেই একি দৃশ্য । অনেক ডাকাডাকি পর দরজা খুলছে না দেখে সবাই চিন্তিত হয়ে পড়লেন । দরজা ভেতর দিকে লক অথচ মেয়ের কোন সাড়া শব্দ নেই । মা সহ্য করতে না পেরে ‘ও মাই গো’এই একটি মাত্র বাক্য বলে মূর্ছা গেলেন । সবাই ধরাধরি করে মা কে বিছানায় শুইয়ে দিলেন ।একজনকে পাঠালেন ডাক্তার ডাকতে । হঠাত চোখ পড়ল পেছনের জানালার দিকে । জানালার একটা কপাট খুলা । উকি মেরে দেখলেন জিনিসপত্র সব ঠিক ই আছে । শুধু রুমাকে দেখা যাচ্ছে না ।সবাই ঘরের ভেতর ঢুকতে চায় ।টেলাটেলি করে ঘরে ঢুকে দরজা জানালা খুলে লাইট জ্বালিয়ে রুমাকে দেখা গেল না । সারা বাড়ী স্তব্দ হয়ে গেল । কারও মুখে কোনো কথা নেই । একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে । কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না । খবর টা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল । সবাই কান ঘেষাঘষি করতে লাগল ।
হয়ত কোন বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গেছে এই বলে কেউ সান্তনা দিচ্ছেন । আবার কেউ কিছু না বলে শুধু কানাকানি মাতামাতি নিয়ে ব্যাস্ত ।বড় ভাই একেবারে পাগলের মত বারান্দায় ঘোরপাক খাচ্ছেন । কি করবেন কিছু বুঝে উটতে পারছেন না ।যে মেয়ে কোনদিন কাউকে কিছু না বলে বাড়ী থেকে বেরুয়নি সে আজ ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিখোজ । কেউ বললেন ,ওকে খুজে আর লাভ নেই । ও পালিয়ে গেছে । তাহলে লোকের কথা কি সত্যি । কোনদিন ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করি নি । তাহলে আজ কাউকে কিছু না বলে ও এভাবে চলে গেল কেন ? অন্তত একটি বার মনের কথা খুলে বললেত পারত । বারবার এই একটি কথা ভাবতে ভাবতে বড় ভাই বারান্দায় পায়চারি করছেন । লোকের সামনে মুখ দেখাবেন কি করে । কাল বাদ পরশু বোনের বিয়ে । কি বলে এই বিয়ে ভঙ্গ করবেন ?
বাবা মেয়ের বিয়ের ফার্নিচার আনতে সেই ভোরে না খেয়ে বের হয়েছিলেন । বাড়ীতে ঢুকতে সবাই মুখের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে তিনি খানিকটা বিস্মিত হয়ে পড়লেন । তিনি জিজ্ঞেস করলেন , কি হয়েছে ? কারও মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । কিছুসময় পর সবকিছু পরিস্কার হয়ে উটল । মেয়ে পাশের গ্রামের একটি ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে । এমনটা হওয়ার কথা ছিল না । তার মাথা ঘুরে উটল । এদিকে মা বারবার মূর্চা যাচ্ছেন । বাবা একগ্লাস জলে চেয়ে মাটিতে বসে পড়লেন । তার চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোটা টপ করে মাটিত পড়ল । সতেরো বছর ধরে একটু একটু করে জমানো স্বপ্ন আজ বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে গেল ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top