খানভবন হরর
শেষ পর্যন্ত বাড়ীর দলিল আজ বুঝে পেলেন হাতে রহমান সাহেব।তাই তিনি আজ অনেকটা রিলাক্সড।এই বাড়ীটা তার সবছেলেমেয়ের টাকায় কেনা।রহমান সাহেবের চার মেয়ে এক ছেলে।বড় তিনছেলেমেয়ে দেশের বাইরে থাকে।তাদের পাঠানো টাকায় তিনি এই বাড়ীটি কিনেছেন।যদিও এই বাড়ী কেনায় প্রথমে স্ত্রীসহ ছেলেমেয়ে কারও মত ছিলনা।এরকম নির্জন পরিবেশে মূল রাস্তা থেকে ভিতরের দিকে আশেপাশে কোন লোকালয়ের অস্তিত্ব নাই। পরে বাবার প্রবল আগ্রহ দেখে সবাই আর বাধ সাধেনি বাবার ইচ্ছায়।তাও যে সে বাড়ী না কাঁচপুর ব্রিজ থেকে একমাইলের মধ্যে এই বিশাল বাড়ীটা অনেকটা বলা যায় প্রাসদের মত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল যত্নের অভাবে।এরকম বাড়ী এরকম পরিবেশে অনেকটা রাজপ্রাসাদের মত বিশালাকারের কেন কোন কেয়ারটেকার নাই মেইনটেনেন্স নাই সেটা একটা রহস্য।রহমান সাহেবের আপাতত এসবদিকে মনযোগ দেওয়ার মত অবকাশ নাই।তিনি ভীষন উৎফুল্ল মাত্র দশ লাখ টাকায় এই বিশাল বিশ বিঘার মত জমিতে প্রাসাদের মত বাড়ীর মালিক হওয়াতে।বাড়ীর মালিক পাকিস্তানী।চৌধুরী নেওয়াজ খান তার নামানুসরে এই প্রাসাদটির নাম খানভবন।
সকালে ফাইনালী সাইন করে বাড়ীটি বুঝে পেলেন তিনি।তবে বাড়ীর কেয়ারটেকার কে তিনি একেবারে পছন্দ করেননি।
আশেপাশে এত জঙ্গল কেন? পরিস্কার কর না কেন? তার জবাবে অদ্ভুতভাবে মাথা নেড়ে লোকটি ভিতরে ঢুকে গেল।কিছুক্ষন পরে আবার লোকটি ফিরে আসল এবং অনেকটা ফিসফিসিয়ে কথা বলার ভঙ্গিতে বলল
সারা বাড়ীটা কি কিনে ফেললেন নাকি?
হ্যা তিনি খুশীতে বললেন।
স্যার খুবই ভূল করলেন ।এই বাড়ীতে একদিন দুইদিনের বেশী কেও থাকতে পারেনা ফিসফিসিয়ে বলল কেয়ারটেকার।দৌড়ে পর্দা সরিয়ে একটু দেখে এসে আবার বলল স্যার টাকা দিয়েননা এখন ও। দেখে নেন দুইদিন আগে।আপনার টাকা গচ্ছা যাবে স্যার।
ভিতরের রুমে দড়াম করে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনলেন রহমান সাহেব।
কেয়ারটেকার লোকটা এমনভাবে লাফ দিল মনে হচ্ছে তার মাথার উপর জিনিসটা ভেঙ্গে পড়েছে।
তেনারা শুরু করেছেন।ফিসফিসিয়ে বলছে সে।
তেনারা কে? খানসাহেবের ফ্যামিলী কি এখানে থাকেন নাকি? বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে রহমান সাহেব।
এই বাড়ীর আসল মালিক যারা এক পিশাচ ফ্যামিলী কেয়ারটেকার তার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে।
চুপ রাও।রাগে রহমান সাহেবের মুখ দিয়ে উর্দু শব্দ বের হয়ে এল।ফালতু কথা না বলে আশেপাশের জায়গা পরিস্কার কর।আমি দুইদিন পরে এই বাসায় উঠব।পরের সপ্তাহে আমার মেয়ের বিয়ে।আমার মেয়ের বিয়ে এখানে হবে ঠিক করেছি।
ইন্নালিল্লাহ স্যার আজকে ভালয় ভালয় চইলা যান।আর আইসেননা।
রহমান সহেবের বিরক্তির সীমা রইলনা। তার মনে হল এই কেয়ারটেকার কোন চক্রান্ত করার চেষ্টা করছে।বাড়ীর মালিক যেহেতু বাহিরে। সে নিশ্চয় ভাড়া দিয়ে এক্সট্রা ইনকাম করে।এজন্যই হয়তবা সে চায়না বাড়ীটা কেও কিনুক।
কড়া একটা ধমক দিয়ে বলল তুমি ঘর পরিস্কার করার ব্যাবস্থা কর।আমি কালকে আসব দেখব।
আমি পারবনা স্যার মাপ করেন আমারে ।আজকের ট্রেনে আমি দেশের বাড়ী চইলা যামু স্যার।
এই কি বলে আমার লোক দরকার ।আমি তো কাওরে চিনিনা এখানে।তোমারে অনেক টাকা বাড়াই দিব।থাক তুমি।অনুনয়ের ভঙ্গিতে বললেন তিনি।
স্যার আমারে এককোটি টাকা দিলে ও থাকুম না স্যার ।আমরে মাপ করেন ।আমার জীবনের মূল্য সবার আগে।
হতাশ হয়ে গেলেন রহমান সাহেব প্রথম দিনে ।আশেপাশে কোন দোকানপাট দেখা যাচ্ছেনা।প্রায় দুইমাইল পার হওয়ার পর ছোট্র দোকান পেল তাতে দুইলোক বসে কাজ করছে।তাদের জিজ্ঞাসা করল কোথায় কাজের লোক পাওয়া যাবে।
কাজের স্থান শোনার পর দুইজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করল ।অতঃপর বলল স্যার ওই বাড়ীতে কেও কাজ করতে চায়না।
কেন বলতো? রহমান সাহেব মনের দিক থেকে দমে গেলেন এখন।
জানিনা স্যার।ওখানে কাজ করতে গেলে নাকি সবাই হারায়ে যায়।আর নকি তাদের খুজে পাওয়া যায়না।কয়েকদিন পরে নাকি মানুষের হাড় চুল এসব পাওয়া যায়।এই ঘরের লোকরা নাকি মানুষের রক্ত খায়।দোকানী শিউরে উঠার ভঙ্গীতে গল্প করে।
আশেপাশের জায়গা দেখতে দেখতে রহমান সাহেবের সন্ধা হয়ে যায়।তিনি চিন্তা করলেন কিছু জায়গা ক্লিন করে যাবেন পরের দিন সবাই একসঙ্গে পরিস্কার করবে না হয়।
গেট দিয়ে ঢুকতে ওদিকের জংলা জায়গায় ওনার চোখ পড়ে গেল।একটা বিশাল কাল কুকুর।জিহবা বের করে হাপাচ্ছে।কুকুরটার চাহনিতে এবং আশেপাশের পরিবেশে হঠাৎ একটা অশুভ জিনিসের অস্তিত্ব বোধ করলেন তিনি।
ড্রাইভার ড্রাইভার ডাকছেন তিনি।
এখানে এই দশাসই কুকুর কোথা থেকে আসল কোথা থেকে?ভাবতে ভাবতে কুকুরটা আচমকা তার দিকে দৌড়ে আসতে লাগল।তিনি কিছু বুঝার আগে কুকুরটা দৌড়ে এসে তারে হাতে কামড় দিয়ে বসল এবং কামড়ে ধরে থাকল।
অসহ্য যন্ত্রনায় গুঙিয়ে তিনি চিৎকার করে উঠলেন।তার ড্রাইভার ছুটে এসে লাঠি দিয়ে তাড়া করার চেষ্টা করল কুকুরটিকে।
কুকুরটি প্রথম কিছুক্ষন ঘেউ করল এবং রক্তলাল চোখে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষন।তারপরে লাফ দিয়ে দেওয়াল টপকে পালিয়ে গেল।
ইশশিরে স্যার এত রক্ত এটা কি কুকুর স্যার? এত ভয়ন্কর।আমার এখনও বুক ধড়পড় করতেছে স্যার।
তুমি আমাকে শীঘ্রই কাছাকাছি কোন হসপিটালে নিয়ে চল।
ড্রাইভার ধরাধরি করে রহমান সাহেবকে গাড়ীতে বসাল এবং গাড়ী দ্রুত ছোটাল নিকটস্থ হসপিটালের দিকে।
ডাক্তার তার হাতের ক্ষত দেখে বেশ বিষ্ময় প্রকাশ করল।কুকুরের দাতের দাগ অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।ইন্জেকশান দিয়ে দিল।প্রয়োজনীয় ব্যান্ডেজ করে কিছু ঔষধপত্র সহ তিনি যখন ঘরে ফিরলেন তার নুতুন বাড়ী দেখার আনন্দ কালকে নুতুন জায়গায় শিফট করা সব আনন্দ মন থেকে কর্পূরের মত উবে গিয়েছে।রাতে প্রবল জ্বর আসল ।
তিনি দৌড়াচ্ছেন প্রানপনে।তার পিছনে ছুটে আসছে একদল মানুষ খেকো।তারা তাকে ধরে ফেলেছে।গাছের সাথে শক্ত দড়িতে বাধা হয়েছে ।একদল মানুষ তাকে ঘিরে আছে।কেও বলছে আমি ওর ফুসফুস খাব।একজন বলছে আমাকে একবাটি রক্ত দিও।আরেকজন বলছে আমি ওর মাংস খাব।তার চারিপাশের বাতাসের পচা নাড়িভূড়ির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।সম্ভবত তার আগমনের পূর্বে এখানে আর কোন মানুষের ভোজন পর্ব সমাধা হয়েছিল।এটা বুঝা মাত্র তিনি গূঙিয়ে উঠলেন।হড়হড় করে বমি করে ফেললেন।
হে আল্লাহ এই নরপশু মানুষখেকোদের হাত থেকে আমকে বাচাও।
লাফ দিয়ে তিনি ঘুম থেকে উঠে বসলেন।তার সারা শরীর ঘামে ভিজে চুপসে গিয়েছে।
স্ত্রী উঠে বসলেন জিজ্ঞাসা করলেন কি হয়েছে? কোন স্বপ্ন দেখেছ?
সম্ভবত এই কুকুরের কামড় অস্বাভাবিক গল্প শ্রবন সবকিছু তার মনে এফেক্ট করেছে বেশী এইজন্য এরকম স্বপ্ন দেখেছে।তিনি বাস্তববাদী মানুষ।চিন্তা করলেন এইভাবে দুইদিন রেষ্ট নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।সুতরাং সাব্যস্ত হল আজকে কালকে দুইদিন রেষ্ট নিবে শুক্রবার ভাল দিন দেখে নুতুন বাসায় উঠবে।উঠার আগে নুতুন ঘরে মিলাদ পড়িয়ে নিবে।
(চলবে)