মিষ্টি লাউ
আমি তাকে বলি মিষ্টি লাউ।চেহারার গঠন লাউয়ের মতন,আর হাসিটা খুব মিষ্টি।তাই ডাকি মিষ্টি লাউ।তো মিষ্টি লাউ নতুন প্রেমে পড়েছে।প্রেমিকার বর্ণনা দিচ্ছে।
-দোস্ত,মেয়েটা এত এত চমৎকার,না দেখলে বুঝতে পারবি না ।ওর কাছে গেলে হা হয়ে তাকিয়ে থাকি।পৃথিবীতে এমন সুন্দর মেয়ে আর দ্বিতীয়টা নেই।
বন্ধুর ভূয়সী প্রশংসা শুনে বললাম-তাহলে তো সুন্দরী গাধীর একটা পথ হল।
বন্ধু কিছুটা রেগে বলল-দেখ,তুই আমাকে যা ইচ্ছে বলিস,কিন্তু ওর নামে কিছু বলবি না।তাতে রক্ত মাথায় উঠে যেতে পারে।
আমি মুচকি হেসে বললাম-ভয় হচ্ছে,রক্ত চুলে উঠে যায় কিনা?উঠলে কি আজব ব্যাপার হবে বলতো,ধমনী শিরার মতন চুল দিয়ে রক্ত চলাচল করছে।গিনেস বুকে নাম উঠে যাবে,এই প্রথম মিষ্টি লাউ নামক এক ব্যক্তির চুল দিয়ে ধমনী শিরার মত রক্ত চলাচল।
-তোর কি ফাজলামি করার স্বভাব যাবে না?
-ফাজলামি কই করলাম,এমন হলে গিনেস বুকেতো নাম উঠবেই।
-জানিস কাছে গেলেই বুকটা এত ধড়ফড় করতে থাকে,মনে হয় সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেই পারবি না।
-নো প্রভলেম।সাথে সাথে শুয়ে শুয়ে পড়বি।শুয়ে শুয়ে গাধীর মুখখানি দেখবি।
-ভাই তোর সাথে কথা বলাই বৃথা।একটা কথা যদি ভালভাবে বলিস।
এমন সময় লাল শাড়ি পরে একটা মেয়ে আমাদের সামনে দাড়ায়।মিষ্টি লাউয়ের দেখি বুক ধড়ফড় করছে।মৃদু কণ্ঠে বলল-মৃদুলা,আমার বন্ধু সমুদ্র।সমুদ্র ও মৃদুলা।
সমুদ্র হেসে বলল-আপনিই সে মিস ওয়ার্ল্ড।দেখে মুগ্ধ হলাম।ছেলের নাট বল্টুতো সব ঢিলে করে দিয়েছেন।আপনাকে ছাড়া ওর মুখে আর কোন ভাষায় নেই।
মৃদুলা মুচকি হাসে।বলে-নাট বল্টু ঢিলে হলে আর কি করার,তাড়াতাড়ি পাগলাগারদে নিয়ে যান।
মিষ্টি লাউ দেখি বেশ বিব্রতবোধ করছে।চোখমুখ যেন ঘনকুয়াশায় ভরা।আর আমরা দুজনে হাসছি।মৃদুলা মিষ্টি লাউকে বলল-কাল সকালে বের হতে পারব না।কাল সকালে হবে
কথা শেষ না হতেই আমি বললাম-এত তাড়াতাড়িই হবে।প্রেম হল এই মাত্র কয়দিন।বন্ধুর তো সেই পাওয়ার দেখছি।তো ছেলে না মেয়ে হবে?
ভেবেছিলাম মৃদুলা রেগে যাবে।তা দেখি সে আরও হেসে কুটিকুটি।বলল-টেস্ট করিয়ে তো দেখিনি,দেখা যাক কি হয়?
মিষ্টি লাউ যে বিরক্তির চূড়ান্ত সীমায়,তা ওর চোখ মুখ দেখলেই বুঝা যাচ্ছে।যেকোন সময় রক্ত চুলে উঠে যাবে মনে হচ্ছে।গলার স্বর কঠিন করে বলল-সকালে তুমি কি করবে?
-কলেজে যাব।একটার সময় কলেজ ছুটি হবে।ঠিক একটায় গেটে দাঁড়াবে।
এই বলে মেয়েটা চলে গেল।
-এভাবে না ডুবালে হত না?
আমি চারপাশে কিছু একটা খুজতে লাগলাম।ও বলল-এভাবে কি খুজছিস?
-পানি।
-এখানে পানি আসবে কোথা হতে?
-তুই না বললি তোকে ডুবিয়েছি।আমি তো পানিই খুজে পাচ্ছি না।পানি ছাড়া তোকে ডুবালাম কিভাবে?
-আচ্ছা বাদ দে,কেমন দেখলি?
আমি চিৎকার দিয়ে বললাম-দারুণ।
ওর চোখমুখ দেখি ঝলমল করছে।–বলেছিলাম না খুব সুন্দর।
-ঠিক।একদম গোলআলুর মত।
-মানে কি?
-রাউন্ড পটোটো বিউটি।
ঘন্টাখানিক পর।আমি বললাম-প্রেম যদি করতেই হয়,আমার জিএফের মত মেয়ে দেখে করা উচিৎ।একেবারে জগৎসুন্দরী।সারাপৃথিবী যেন ওর আলোয় আলোকিত।
মিষ্টিলাউ বিরক্ত হয়ে বলল-এবার তো থাম।একটু পরেতো দেখবই।দেখি কতটা আলোকিত হই?
এমন সময় আমার জিএফ সামনে এসে দাড়ায়।আমি বললাম-মিষ্টি লাউ,আমার জিএফ।মোহিতা ও মিষ্টি লাউ।
মিষ্টি লাউ হেসে বলল-আলোকিত হলাম।
মোহিতা কিছুটা অবাক হয়ে বলল-মানে কি?
-না,গাধাটা বলছিল,পৃথিবীর সমস্ত কিছু আপনার দ্বারা আলোকিত।ছেলেটার মাথাতো একেবারে আউট করে দিয়েছেন।
-নো প্রবলেম,সামনে টাইট দিয়ে দিব নি।আর শুন,কাল বিকেলে বের হব।ঠিক চারটায় মোড়টায় দাঁড়াবে।
এই বলে ও চলে গেল।আমি হেসে বললাম-দেখলি তো,কত সুন্দর?
মিষ্টি লাউ চিৎকার দিয়ে বলল-খুব সুন্দর।
-দেখতে হবে না কার জিএফ?
-তা তো দেখতে হবেই।তবে এখন হতে তোমাকে বুড়ো দাদু বলে ডাকব।
-কেন?
-অমন বুড়ীমার সাথে প্রেম হলে এর থেকে আর কি বলতে পারি?
পরক্ষণে বুঝতে পারলাম,প্রেমিকার সৌন্দর্য আসলে প্রেমিকের মনে মনে,প্রেমিকের কল্পনায়।যে সৌন্দর্য প্রেমিকার চোখে মুখে প্রেমিক দেখতে পায়,তা তার মন আরোপিত সৌন্দর্য।