Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

খানভবন হরর

: | : ১৮/০১/২০১৪

পীী

দ্বিতীয় পর্ব

তিনি দৌড়াচ্ছেন আর দৌড়াচ্ছেন ।হাপরের মত বুক উঠানামা করছে। ওনাকে তাড়া করছে বিশালদেহী এক হাউন্ড আর কিছু মাংশাসী নেকড়ে।দৌড়াতে দৌড়াতে একসময়ে পড়ে গেলেন মাটিতে।উঠতে চাচ্ছেন পারছেন না।মাটির সাথে শক্ত করে যেন কেও পা আটকে রেখেছে।নেকড়েগুলি নিকটে চলে এসেছে।ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন তিনি

এই অবস্থায় লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন তিনি।ঘুমালে এরকম দূঃসহ দেখছেন গত দুইদিন ধরে।

সকাল থেকে সাজ সাজ রব।সবাই নুতুন বাড়ীতে উঠবে।রহমান সাহেবের ছোট মেয়ে সামিয়ার বিয়ে পরের মাসে।এই উপলক্ষে পরিবেশ বেশ আনন্দমূখর।সামিয়ার যত খালা মামা ফুফু চাচা সবাই এই অনুষ্ঠানের জন্য চলে এসেছে।কেও কেও গ্রাম থেকে ও চলে এসেছে অনেক দিনের প্রোগ্রাম করে। সামিয়ার সব চাচাত ভাই বোন মিলে দিনরাত জোরে গান বাজিয়ে চলেছে।রহমান সাহেব এই আনন্দের সাথে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করতে পারছেন না কিছুতেই।টেবিলের সকালের নাস্তা দেওয়া হয়েছে অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে।স্ত্রী শাহানা ওনাকে খুজতে খুজতে এসে দেখেন বারান্দায় চুপচাপ বসে আছেন।স্বামীকে তিনি কখন ও এরকম কর্মহীন চুপচাপ বসে থাকতে দেখেন না।তার স্বামী সবসময় ব্যস্ত থাকতে ভালবাসেন কাজ নিয়ে।খুবই কর্মঠ প্রকৃতির।

কি ব্যাপার শরীর খারাপ নাকি। আপারা সবাই টেবিলে অপেক্ষা করছে নাস্তা নিয়ে।স্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করে।তাছাড়া কিছুক্ষনের মধ্যে বাস চলে আসতেছে।

আমরা সবাই না নুতুন বাসায় উঠব আজকে।আপা ভাই সবাই অনেক খুশী বলতেছে আমরা যদি না ও থাকি পরে শপিং মল করতে পারব বা ভাড়া ও দিতে পারব।বলল বুদ্ধিমানের কাজ করছি।

কি জানি তিনি হতাশার গলায় বললেন। এখন ওই বাড়ীতে উঠার আগ্রহ ও আর পাচ্ছেন না।কেয়ারটেকার আর ছেলেমেয়েদের কথা তার শোনা উচিত ছিল।এখন চাইলে ও টাকা ফেরত পাবেন না।তার চেয়ে বড় কথা সব আত্মীয়স্বজন সহ মেয়ের বিয়ে এই অলক্ষুনে বাড়ীতে উঠতে ওনার মন এখন একেবারে সায় দিচ্ছেনা। এই বাড়ীতে উঠার বিপক্ষে ও কিছু বলা যাবেনা।যেহেতু ওনার আগ্রহে এই বাড়ী কেনা।

যথাসময়ে যাত্রা শুরু হল ।বিশাল বাস ভাড়া করা হয়েছে সামিয়ার এনগেজমেন্ট উপলক্ষে।ঠিক হয়েছে এক সপ্তাহ তারা নুতুন বাসায় থাকবে ।এনগেজমেন্ট শেষ হলে চলে আসবে।পড়ন্ত বিকালে এসে তারা খানভবনে পৌছল।স্ত্রী মেয়ে আত্মীয় স্বজন সবাই অনেক উত্তেজিত।

ওয়াও সামিয়া এত পালেস রে।এই বাড়ী আমারে লিখে দিলে আন্কেল তোর মত খেদী পেচীরে বিয়ে করতে আমি রাজী।সামিয়ার এক ছেলে বন্ধু মজা করে বলে।

তোমার যেই চেহারা কোন বড়ধরনের উপঢৌকন ছাড়া তোমারে আগে কেও বিয়ে করে নাকি আরেক বান্ধবী ফোড়ন কেটে বলে।

বাড়ীঘর দেখে স্ত্রী শাহানা অনেক খুশী ।সব বাথরুম ফিটিংস খুবই আধুনিক ।গ্যারাজটা মার্বেল পাথরের ।পুরা বাড়ীর মেঝে অত্যাধুনিক বিদেশী টাইলসে করা।

দেখেশুনে রহমান সহেব এখন একটু ভাল বোধ করছেন।সব তার মনের ভয় ।

সন্ধার দিকে মিলাদ হবে সেই আয়োজন হচ্ছে চারিদিকে।মসজিদ থেকে এক হুজুর কে নিয়ে আসা হয়েছে।সবাই তার আগে যে যার পছন্দমত রুম নিয়ে রেষ্ট নিচ্ছে।পুরা বাড়ীটায় প্রায় দোতলা তিনতলা মিলে একশ কামরা আছে।

সামিয়া তার ভাই বোন বন্ধু বান্ধবী দের নিয়ে তিনতলা আর ছাদ দখল করল। প্রতিটা রুমে সব রাজকীয় ডিজাইনের পালংক।

এই বেডগুলি কি তোরা বাড়ীর সাথে পেয়েছিস সামিয়ার এক বান্ধবী সোনিয়া জিজ্ঞাসা করে।

হ্যা এরা আমাদের ফার্নিশড বাড়ী দিয়েছে।বাবা তো তাই বলল সমিয়া বলে।

সবাই গোলকরে বসে গল্প করছে আর হাসছে ।হঠাৎ নীচে দড়াম করে কি যেন পড়ার আওয়াজ পেয়ে সবাই ছুটে এল।দোতালার দেওয়ালের কাছে বিশাল আলমারী টা উল্টে পড়ে আছে।

সবাই চোখ বড় করে বলছে ভাগ্যিস আলমারীর পাশে কেও ছিলনা ।তাহলে কি হত ওরে বাপরে বলতে বলতে ধুম করে বিশাল আওয়াজের সাথে এই রুমের খাট ভেঙ্গে পড়ল।

স্ত্রী বলছে এই ফার্নিচার তো মনে হচ্ছে সব পুরানো ।ভেঙ্গে পড়ছে কেন ।কিন্তু সেটা ও বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছেনা।ফার্নিচারের বার্নিশ এখন ও ঝকঝক করছে।সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।কিছুই বুঝতে পারছেনা।

এই সময় উপরে তিনতলা থেকে কার প্রানভয়ে আর্তনাদ শোনা গেল।সবাই দৌড়ে লাফিয়ে তিনতলায় আসল।

বাথরুমের দরজা ভিতরের দিকে কেও জোরে পিটিয়ে যাচ্ছে।ভিতর থেকে সামিয়ার বান্ধবীর চিৎকার শোনা যাচ্ছে।

দরজা খোল দরজা খোল বলে সে বাড়ী দিয়ে যাচ্ছে।দরজা খুব শক্ত করে লেগে আছে আর বেচারী মেয়েটা ভয়ে আত্মচিৎকার করে যাচ্ছে।তিনজন দশাসই পুরুষ ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলতে পারছেনা।মনে হচ্ছে অসূর শক্তির কেও একজন শক্ত করে ভিতরথেকে শক্ত করে দরজা চেপে ধরে আছে। হাতুড়ী দিয়ে বাড়ী দিয়ে অবশেষে লক ভাঙ্গা হল।সোনিয়া ভিতরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

পানির ঝাপটা দিয়ে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনা হল। সবাই তাকে গোল করে ঘিরে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন কারনে সে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে।প্রথম কিছুক্ষন সে কথা বলতে পারলনা তোতলানোর জন্য।

তার ভাষ্য কেও একজন বাথটাবে শক্তভাবে জড়িয়ে পানিতে ডুবানোর চেষ্টা করছিল। অনেক ধাক্কাধাক্কির পরে ওটা তাকে ছেড়ে গেছে তখন সে বাথটাবে পানির রঙ লাল রক্তের মত।এরপর তার আর কিছু ই মনে নাই।

ধে্ৎ যত রাবিশ কথা ।এটা কি হরর মূভি পাইছিস তুই এক বন্ধু বকা দিয়ে উঠে।

সবাই অস্বাভাবিক গম্ভীর হয়ে গেল।একটু আগের আনন্দের ছাপ সবার মন থেকে মুছে গিয়েছে।সবাই চিন্তান্বিত হয়ে হাটাহাটি করছে।

যথাসময়ে হুজুর আসল মিলাদ পড়ানো শুরু হল। মিলাদের শুরুতে আল্লাহুম্মা সাল্লিওয়ালা এইটুকু পড়ে হুজুর চারিদিকে তাকাতে লাগল।

আপনাদের মধ্যে কেও কি আমারে গালি দিছেন ভাইজান।হুজুর ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল।

সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।

এসব কি বলেন হুজুর ।বিরক্তির স্বরে সামিয়ার এক চাচা জবাব দিলেন।আবার পড়েন।

হুজুর আবার পড়া শুরু করতে চিৎকার দিয়ে থেমে গেলেন গালে হাত দিয়ে।

এবার আর কোন সন্দেহের অবকাশ রইলনা এই বাড়ীতে অস্বাভাবিক কোন কিছুর উপস্থিতি সম্পর্কে।হুজুরের গালে পাচ আঙ্গুলের দাগ বসে গিয়েছে।

হুজুর পাগলের মত চিৎকার করে যাচ্ছে।আমারে পাগল খানা থেকে নিয়ে চল।শয়তানের ঘর থেকে বাচাও।

রহমান সাহেব তাড়াতাড়ি পুলিশে ফোন করলেন ইমার্জেন্সী পুলিশ ফোর্স পাঠানোর জন্য।

সবাই যার যার আপনজনের হাত ধরে গোল হয়ে পরস্পরকে ঘিরে বসে আছে।এখন সবার মনে আতন্ক আসতে শুরু করছে একটু একটু করে।ঠিক এই সময় ঘরের সব পাওয়ার অফ হয়ে গেল।

সব মেয়েরা ভয়ে চিৎকার করে কান্না শুরু করল।এই বাড়ীতে পাওয়ারফুল জেনারেটর বসানো আছে বাড়ীওয়ালার বক্তব্য পাওয়ার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জেনারেটর অটমেটিক্যলি অন হয়ে যায়।এখন ও কেন কাজ করছেনা জেনারেটর।

সাহস করে রহমান সাহেব আল্লাহর নাম দিয়ে উঠে দাড়ালেন পাওয়ার চেক করার জন্য। ঠিক এই সময়ে পাওয়ার ফিরে আসল।

কিন্তু সামিয়া কোথায় ।সামিয়া কোথায় গেল ।

স্ত্রী শাহানা সামিয়া সামিয়া চিৎকার করে ডাকছেন আর ভয়ে কাদছেন।সবার চোখে মুখে আতন্কের বিশাল ছাপ।

(চলবে)

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top