Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুরমুশ বচণ

: | : ২২/০১/২০১৪

‘নিধুয়া পাথারে’ উড়া অন্ধকার এলোচুলে,
সহস্র বছর ধরে ছুটছ তুমি সম্ভ্রম বাঁচাবে বলে-
ও আমার বাংলা মাগো ওমা বীরাংগনা,
বুটপায়ে পিষ্টে দুরমুশ হলো তোমার আংগিনা-
ক্ষমা আমি করবোনা- মাগো ওদের কিছুতেই ক্ষমা করবোনা ।।

যে আঁচল ঢেকে সন্তানেরে মুখে তুলে দিতে স্তণ্য,
কাদা-ধুলো মাখা তা ঠোটের কোণে মুখখানি তোমার আজ বিষন্ন ।
তোমার বদন ঘিরে উদ্যত কেন হাজারো লক্ষ ফণা-
ক্ষমা আমি করেবানা- মাগো ওদের কিছুতেই ক্ষমা করবোনা ।।

যে নিত্য সোহাগে উঠোন জুড়ে হামাগুড়ি দেয় তোর বুকের মানিক,
কি যাদু বিনি -এক সুতোর টানে কোলে তুলে নিয়ে প্রাণ জুড়াও খানিক ।
সেই পরম মমতায় তোমার বুকে ঘুমিয়ে পড়লো লাখো মুক্তিসেনা-
ক্ষমা আমি করবোনা- মাগো ওদের কিছুতেই ক্ষমা করবোনা ।।

তোমার পবিত্র কাবার কোলে যার পড়েছে লোলুপ দৃষ্টি,
বিষমাখা খঞ্জর হেনে সেই চোখে নামাব অম্ল বৃস্টি ।
সেই শকুণ মুখেতে ছুঁড়ে মারি থু-থু বমনোচ্ছিস্ট ঘৃনা-
ক্ষমা আমি করবোনা- মাগো ওদের কিছুতেই ক্ষমা করবোনা ।।

দূরমুখো মহা মুরখরা তোমায় করেছে প্রশ্নবিদ্ধ,
নরপশু ওরা একাত্তরের হায়েনারই হস্তসিদ্ধ ।
জানি, তোমার উদার বুকে ঠাঁই তাদের কোনদিন হবেনা –
ক্ষমা আমি করবোনা মাগো ওদের কিছুতেই ক্ষমা করবোনা ।।(**)

—- —
(**) এই কবিতাটি উনিশশো একাত্তুর এ খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করা আমার বাস্তব জীবনের অনুভুতি নিয়ে আজ থেকে প্রায় ত্রিশ বছর আগে লেখা ৷ যে হায়েনা-পশুদের নিয়ে আমার তখনকার শিশুমনে ( আমার বয়স তখন ৮/১০ বছর হবে ) এই অনুভুতির জন্ম তারা কিন্তু এ দেশের নাগরিক ছিলনা ৷ আমার মনে আছে – ‘কেল্টং খান’ নামীয় একজন পাকসেনা হাবিলদার (যে অত্যন্ত অত্যাচারী ও বদমেজাজী , যে আমাদের শিশুদের দেখা পেলে উর্দু ভাষায় কি যেন বলতো এবং আমাদের মাঝে অনেকগুলো পাকিস্তানী পয়সা উপরে ছুড়ে মাড়তো এবং আমাদের পয়সা কুড়ানো দেখে একধরনের মজা পেত ) যে কিনা আমাদের গ্রামে এসে কয়েকজন গরীব গোছের মহিলার সম্ভ্রমহানী করে তা দেখে আমরা কয়েকজন শিশুকিশোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, দ্বিতীয়বার সে এলে আমাদের গ্রামের মধ্যে জঙ্গলের ভিতর পুরোনো কুয়া( স্থানীয় ভাষায় ‘বকাতী কুয়া’) যার গভীরতা অনেক সেখানে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব ৷ পরবর্তীতে আমাদের সে প্লান আর বাস্তাবায়িত হয়নি , কারণ , আমরা সেদিনই কয়েক ঘন্টার মধ্যে আমাদের প্রিয় গ্রাম ছেড়ে মুক্তাঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছিলাম ৷ মনে আছে, আমাদের গ্রামের পার্শ্বে নদী পার হতেই দেখি আমার প্রিয় গ্রামখানি দাউ দাউ করে শত্রু সেনাদের দেয়া আগুনে জ্বলছে ৷ সেই বিভৎস স্মৃতি কখনো ভোলার নয় !!

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top