খানভবন হরর
পঞ্চম পর্ব
আচমকা সাইরেনের শব্দটা থেমে গেল।কিছুক্ষন অখন্ড নিস্তব্দতা।খানভবনের ভিতরের মানুষগলি এই মুহূর্তে নিশ্বাস নিতে ভূলে গিয়েছে।সবাই সবার হাত ধরে গোল হয়ে বসে আছে।ক্ষুধা তৃষ্ণা ঘুম সব চলে গিয়েছে।মেয়েরা ওয়াশরুমে একসঙ্গে তিনচার জন মিলে যাচ্ছে।সোনিয়ার ঘটনার পরে একান্ত দরকার না পড়লে কেও ওয়াশরুমে ও যাচ্ছেনা।আবার টানা বিরতিহীনভাবে পো পো করে সাইরেনের মত শব্দ হচ্ছে নীচের কোন রুম থেকে।কিছুক্ষনের জন্য থামল আবার শব্দটা শুরু হয়ে গেল।পুলিশদের গ্রুপটা উঠে দাড়াল।সব অস্র শস্র প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নীচের তালা যাওয়া ঠিক করল।মেয়েদের সাথে আহত পুলিশ সহ আর ও দুইজন পুলিশ আছে।ছেলেরা আরেকদিকে গোল হয়ে আধাশোয়া অবস্থায় বসে আছে।কেও খাটে বসতে বা শুতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছে।
তরুন পুলিশটি প্রায় অচেতনের মত।প্রবল জ্বরে কাপছে।বারবার মা মা বলে ডাকছে।
ইস একে তো হসপিটালে নিতে হবে।পাশের পুলিশটি বলল।ভাই আপনাদের কার ও কাছে কোন পেইন কিলার আছে?
একজন এগিয়ে এসে পেইনকিলার খাইয়ে দিল পুলিশটিকে।
রহমান সাহেবরা আর সব ছেলে মিলে তিন গ্রুপ হল।দুই গ্রুপে তিনজন পুলিশ সহ দশজনের দল তৈয়ার হল।পুলিশের লিডারের সাথে একজন পুলিশ রহমান সাহেব তার দুইভাই আর দুই ভাইয়ের পাচ ছেলে।সবার হাতে লাঠি ছুরি টর্চ লাইটসহ প্রয়োজনীয় জিনিস ।আর দুইপুলিশের হাতে পিস্তল তাক করা আছে।বাকী দুইদল দোতলা তিনতলা ভাল করে খুজে দেখার দায়িত্ব নিয়েছে।রহমান সাহেবরা খুজতে এসেছেন সবচেয়ে বিপদজনক জায়গায়।বেজমেন্ট আন্ডারগ্রাউন্ডে।একদিকে আছে কারপার্কিং এর জন্য বিশাল জায়গা।ঘুটঘুটে অন্ধকার বেসমেন্টে।
লাইট জ্বালান নি কেন এখন ও পুলিশের লিডারটি ধমকে জিজ্ঞাসা করল রহমান সাহেবকে।তাড়াতাড়ি হাতড়ে হাতড়ে লাইট খুজতে লাগলেন তিনি।কোথাও পেলেন না ।টর্চের আলোয় দেখতে চেষ্টা করলেন।
তখনি দেখলেন কিছু একটা দৌড়ে আসছে তাদের দিকে ।
পুলিশের লিডারটি চিৎকার দিয়ে উঠলেন সবাই ভিতরে যান দৌড়ে।প্রানীটি লাফ দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল তার গায়ে।পুলিশটি এলোপাথারি গুলি করতে লাগল।ছুটে প্রানীটি অন্যদিকে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ব্যাথায় পুলিশটি মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে।প্রানীটি একথাবড়ায় তার হাতের মাংস নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে।
সবাই ধরাধরি করে তাকে ভিতরে ঢুকাল শক্ত করে বেজমেন্টের দরজা বন্ধ করে দিল।
লাইট নাই যেহেতু এখন দেখা সম্ভব না।কালকে দিনের আলোয় ভালভাবে দেখতে হবে।পুলিশের লিডারটি যন্ত্রনাজড়িত কন্ঠে বলে।
দ্বিতীয় গ্রুপ দোতালা তন্ন তন্ন করে দেখছে যেখানে আছে সামিয়ার ছেলেবন্ধুরা আর তার সাথে তিনজন পুলিশ।শিহাব শরীফ আনিস রফিক চারজন ঘরের চারকোনায় দাড়িয়ে দেওয়াল টোকা দিয়ে দেখছে।তাদের সঙ্গে আছে তিনজন পুলিশ।
একজন হঠাৎ চিৎকার দিল।শিহাব বলে সামিয়ার যে বন্ধু একদিকের দেওয়ালে গর্তের মত আবিষ্কার করল।গর্তে চাপ দিতে স্লাইডিং ডোরের মত দুইপাল্লা দুইদিকে সরে গেল।সবাই উত্তেজনায় চিৎকার দিয়ে উঠল।ভিতরে দেখা গেল বড় কাবার্ড জাতীয় আলমারীর মত। ভোটকা কটু ঝাঝালো গন্ধে সবাই কাশতে শুরু করল। কাবার্ডের লাইট জ্বালাতে ভিতরের দৃশ্য দেখে আতকে উঠল সবাঈ।সারা কাবার্ড ছোপ ছোপ রক্ত অসংখ্য কাক শকুনী টাইপের পাখীগুলি সবগুলি গলা বিচ্ছিন্ন ।অসংখ্য পাখীর মাথা চারিদিকে ছিটানো নোংরা বিষাক্ত পরিবেশ।
সাহসী পুলিশ টি শিউরে উঠল।
এসব কি? এখানে কি করছে? আপনারা বললেন যে আজকে প্রথমদিন উঠলেন এই বাসায় তাই না?
হ্যা আমি তো তাই জানি।সামিয়ার হতভম্ব বন্ধুটি উত্তর করে।সামিয়ার কাছে তো তাই শুনলাম ।আগের সপ্তাহে বাড়ীটা কিনেছে।
দরজা বন্ধ করে ভয়কম্পিত হৃদয়ে তারা নীচে নেমে এল।
তিনতলা য় তৃতীয় গ্রুপ খুজে দেখছে।ওয়াশরুমে ঢুকে একজন চিৎকার দিয়ে উঠল।
বাথটাবে হেলানোর ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে একজন লোক ।হাত পা বাধা অবষ্থায়।সারা শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।বুকে হৃদিন্ডের জায়গায় গভীর ক্ষত।।তার চোখ ভয়ে আতন্কে বিষ্ফোরিত হয়ে আছে।বুঝতে কষ্ট হয়না লোকটা এখন মৃত।
সবাই দৌড়ে নীচে নেমে আসল।ভয়ে আতন্কে সবার গলা শুকিয়ে গিয়েছে।