মায়ার সংসার
আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা।মাঝে মাঝে টিপটিপ বৃষ্টি ঝড়ছে।বাইরে হালকা থেকে মাঝারি আকারের দমকা হাওয়া বইছে । মনটা খুব একটা ভাল নেই মায়ার।সপ্তাহ খানেক ধরে কথা হয়না শিশিরের সাথে। শিশির অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গেছে। মোবাইল ফোনটা বাসায় রেখে গেছে। মাত্র তিন দিনের কথা বলে সে গেছে কিন্তু এক সপ্তাহ পার হওয়ায় মায়ার মন ধীরে ধীরে দূর্বল হতে লাগল। মায়া আর শিশিরের সাত বছর প্রেম, অবশেষে বিয়ে ।একে অন্যের প্রতি ভালবাসা আছে নিখাত।
মায়া ঘরে বসে গুনগুন করে কাঁদছে এমন সময় পাশের ফ্লাটের রিয়া ভাবি কলিং বেল টিপল।
মায়া দরজা খুলে রিয়া ভাবিকে বসতে দিল ।
(রিয়া ভাবি আর মায়ার মধ্যে আলাপ চারিতা)
রিয়া : ভাবি কেমন আছেন ?
মায়া : ভাল।
রিয়া : ভাবি আপনার মুখটা এত মলিন কেন ?
মায়া : ভাবি, শিশির গত সাত দিন যাবৎ বাসায় নেই ।
রিয়া : কোথায় গেছে ?
মায়া : ঢাকার বাইরে অফিসের কাজে ।
রিয়া : কবে আসবে কিছু বলেনি?
মায়া : তিন দিনের কথা বলেছিল কিন্তু সাত দিন হল কোন আসার খবর নেই।
রিয়া : মনে হয় অফিসের কাজ বেড়েছে । ফোনে কথা হয়না ?
মায়া : না।
রিয়া : কেন ?
মায়া : ভূলে ফোন বাসায় রেখে গেছে ।
রিয়া : ও তাই বুঝি ! কিন্তু সে তো অফিসের কারো ফোন থেকে ফোন করতে পারে।
হ্যাঁ পারে,তাছাড়া অলি-গলি সব যায়গায় ফোনের দোকান আছে সে কি দিনে একবার ও ফোন করতে পারেনা ?
মায়া : ভাবি আমার মনে হয় কোন বিপদে পড়েছে ।
রিয়া : ভাবি আমার ও তাই মনে হয়।(রিয়া ভাবি হেসে বলে) ভাবি মনে হ্য় কোন বান্ধবির সাথে আছে , গিন্নির কথা ভুলে গেছে ।
মায়ার মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে তাই ভাবতে শুরু করল।
রিয়া ভাবি এখন যতই বুঝায় মায়া মন ততই শিশিরের প্রতি সন্দ্হে হতে লাগল । মনে মনে ভাবে -না, শিশির এমন কাজ করতেই পারে না।
রিয়া ভাবি তার ফ্লাটে চলে গেল। মায়া একা একা নানা চিন্তা করে আর কাঁদে ।
মায়ার মোবাইলে রিং বাজলো। হালো হালো করতে করতে লাইনটা কেটে গেল। ক্ষানিকক্ষণ পরে আবার রিং বাজে উঠল।এই বুঝি শিশির ফোন করেছে । না । মায়ার মায়ের কন্ঠ।
মায়া কেন আছ ?
ভাল মা, তুমি কেম আছ?
ভাল,জামাই বাবাজি কেমন আছে ?
মা ওতো গত সাত দিন যাবৎ বাসায় নেই,
কি বলিস !! কোথায় গেছে ?
ঢাকার বাইরে
কবে ফিরবে কিছু বলেছে ।
না মা, ওর সাথে কোন কথা নেই, ও আমাকে ফোন করছে না।
তুই কর ।
ওর ফোন তো ভুলে বাসায় রেখে গেছে ।
তা হলে চলে আসবে ।চিন্তা করিসনা। তুই ওর অফিসে খবর নে।
মা আমি ওর অফিস চিনিনা। কখন ও যাইনি।
শোন, আমি সকালে পলাশকে পাঠাব তুই ওকে নিয়ে শিশিরের অফিসে যা।(পলাশ মায়ার ছোট ভাই)।
মায়ার মা ফোন রাখলেই মায়া একা ঘরে ছটফট করতে থাকে। সারা রাত নির্ঘুম। কখন সকাল হবে। রাতে কয়েক বার দরজা খুলে দেখে সূর্য উঠল কিনা।ভোর হলেই শিশিরের খোঁজ নিতে যাবে।
সকাল ৮টায় পলাশ এসে হাজির । আপু চল । দুই ভাই বোন রিক্সা নিয়ে শিরিরের অফিসের দিকে রওয়ানা হল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর অফিস পেল।
অফিসের এক পিয়নের সাথে দেখা। এখানে শিশির নামে কেউ চাকুরি করে?
হ্যাঁ করে কিন্তু সে তো ছুটিতে আছে।
মায়া: না সে তো চট্রগ্রাম অফিসের কাজে গেছে।
না আপনি ভুল জানেন। আচ্ছা আপনি কে ?
আমার নাম মায়া, শিশিরের স্ত্রী।
ও ! ভাবি, বসেন,বসেন।চা দেই । ভাবি আমাদের কোন শাখা তো চট্রগ্রাম নেই আর শিশির স্যার তো ছুটিতে দেশে গেছে , আপনি কিছু জানেনা ?
না। আমি জানি সে অফিসের কাজে আছে । কবে আসবে কিছু বলে গেছে বা কত দিনের ছুটি নিয়েছে ?
আমি জানিনা, তবে স্যারের কাছে জেনে আসি ? না হয় আপনিই স্যারের সাথে দেখা করেন ।
না আপনি জেনে আসেন।
আচ্ছা।
মায়া আর পলাশ খুবই চিন্তায় পরে গেল । ছুটি নিল অথচ বাসায় কিছুই জানাল না।
অফিসের সি,ই,ও এর রুম থেকে বের হয়ে (পিয়ন রবিন) জানাল :
শিশির স্যার তার মায়ের অসুখের কথা বলে ছুটি নিয়েছে এবং গত কালকে তার জয়েন্ট করার কথা ছিল ।
মায়া এখন সত্যিই বিচলিত হয়ে গেল। কি করবে এখন সে …।
মায়া আর পলাশ বাসায় ফিরে এল । রাত ৮ টায়
মায়ার মা – মায়া শিশিরের খোঁজ পেলি ?
মায়া : না, মা সে নাকি মায়ের অসুখের কথা বলে ছুটি নিয়েছে ।
মায়ার মা- নিতেও পারে ।
মায়া: তা সে আমাকে বলবে না।
মায়ার মা- বলেনাই যদি তুই যেতে না দিস।যাক, সে তবু মাকে দেখতে গেছে । আমি ভেবে ছিলাম কোন বিপদে পড়েছে কিনা।
মায়া: মা আমি কি করব ?
তুই কালকে পলাশকে নিয়ে ওর বাড়ি যা।
মা আমি তো ওর বাড়িতে যাইনি ।আর ওর মা-বাবা তো আমাকে মেনে নেয়নি।
বোকা, এটাইত সময়। দেখবি এবার আর কিছু বলবে না।
না মা আমি যাব না, কালকে পলাশকে পাঠাই,ও দেখে আসুক তার পর আমি যাব।
মায়ার মা- ঠিক আছে আমি পলাশ কে বলে দিতেছি।
পলাশ পরের দিন খুব সকালে শিশির গ্রামের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে রওয়ানা হল। সে এই প্রথম তার বোনের শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। একদিকে নতুন যায়গা তার পর তাদের সাথে তেমন ভাল সম্পর্ক নেই।কারন মায়া আর শিশিরে পছন্দের বিয়ে। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মেনে নেয়নাই ।
দুপুরের দিকে পলাশ তার বোনের গ্রামের শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পৌছল। প্রথমে শিশিরের বাবার সাথে দেখা । সালাম দিয়ে পলাশ তার পরিচয় দিল।
পলাশ: আঙ্কেল কেমন আছেন ?
শিশিরে বাবা: ভাল, তোমাকে তো চিনলাম না,
আমি ঢাকা থেকে আসছি । আমার নাম পলাশ (শিশির ভাইয়ের স্ত্রীর ছোট ভাই)।
পাশে থেক শিশিরের মা-তুমি আমাদের বাড়ি কেন?
পলাশ : ভাইয়া কোথায় ?
শিশিরের মা : তা দিয়ে তোমার দরকার কি ?
পলাশ : আন্টি সালামুওয়ালাইকুম। আপনি নাকি অসুস্থ?
কে বলল ?
পলাশ : ভাইয়ার অফিস থেকে শুনলাম ।
শিশিরের মা : ছিলাম,এখন সুস্থ।
পলাশ : যাক। ভাল ।
শিশিরের মা : কি ভাল ।তুমি আমাদের বাড়ি কেন সেটা বল।
পলাশ : না, শুনলাম আপনি অসুস্থ তাই আপনাকে দেখতে এলাম।
শিশিরের মা : তাই !! আমাকে তোমাদের দেখতে হবেনা , আমাকে দখার অনেক লোক আছে।
পলাশ : আন্টি ভাইয়া কোথায়?
শিশিরের মা : শ্বশুর বাড়ি
পলাশ : শ্বশুর বাড়ি !? সে আমাদের বাসায় যায়নি।
শিশিরের মা : তোমাদের বাসা হবে কেন ? সে তার নতুন শ্বশুর বাড়ি ।
পলাশ : আন্টি কি বলেন ?
শিশিরের মা : ঠিকই বলছি ।ওটা ছিল ওর ভুল। এখন সে বুঝতে পেরেছে তাই আমাদের পছন্দে বিয়ে করেছে ।
পলাশ : এ কি করে সমভব। না এটা হতে পারেনা। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে করতে পারেনা । আমরা আইনের আসয় নেব।
শিশিরের মা : যাও যা খুশি তাই কর। তুমি এখন যেতে পার।
পলাশ : আমি শিশির ভাইয়ার সাথে কথা বলে তার পর যাব।
বাড়ি নেই, সে শ্বশুর বাড়ি তোমাকে আগেই বলেছি ।
পলাশ খুবই ক্ষুদার্ত । এক গ্লাস পানিও খেতে দিলনা ওরা। খুবই ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। চলবে..।