সোহাগ এর সুন্দরবন পরিবহন এক্সপ্রেস
পঞ্চম পর্ব
মায়া লাগাইছে পিরীতি শিখাইছে
দেওয়ানা বানাইছে
কি যাদু করিয়া রে বন্দে
মায়া লাগাইছে।
রশীদ উদাসীন ভাবে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হাটছে।আশেপাশে দশাশই মহিলাটির অনুপস্থিতি দেখে রশীদ মিঞা চান্স নেওয়ার চেষ্টা করল।পছন্দের মেয়েটির পাশে গিয়ে ঘুরঘুর করতে করতে তার প্রিয় হাবিব ভাই এর গানটি গাইতে লাগল।মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছে না আদৌ সে গান শুনছে বা আদৌ তার মনে রেখাপাত করছে এই গান ।তবে তার দশাশই আত্মীয় না কি মা এর মনে বিশাল রেখাপাত করছে রশীদের এই গান।কোন ফাকে দৌড়ে রশীদের পিছনে এসে দাড়াল।
ওই পোলা তোরে কইছিনা আমার বেবীর থেকে দুরে থাকবি।দাত খিচিয়ে বাজখাই গলায় বলল দশাশই মহিলাটি।
আল্লাহরে খাইছে আমারে তার হাতে বাশী ছিল একটা।বাজানোর পরিকল্পনা নিচ্ছিল ওই মেয়ার মনযোগ পাওয়ার জন্য।বাশী হাত থেকে পড়ে গেল।আতকে উঠে বুকে থুথু দিল।
বাপরে কি খায়রে এরকম পালোয়ানের চেহারা।মাগো বিয়ার সময় আগে মেয়ের মা দেখুম। মুটকী মহিলা বাতিল মাগো আমারে টোকা দিলে উইড়া আরেক মাথায় পড়মু।মনে মনে বকতে থাকে মহিলারে।
আমারে সেই বান্দা পাও নাই ।এক কোটি টাকা দিলে ও তোমার মত দশাশই শ্বাশুড়ী আমার দরকার নাই।
রাতটা সবার নির্বিঘ্নে কাটল ।যদিও মাঝে মাঝে দুরের বন থেকে হায়না র হা হা হাসি আর শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকে অনেকের ই পিলে চমকে ভয়ে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। দরজার বাহিরে অবশ্য চৌকিদার তাদের সাহস দেওয়ার চেষ্টা করছিল এই ডায়লগ দিয়ে
তফাৎ যা সব ঝুট হ্যায়।এই চৌকিদার টি একটু শিক্ষিত।সে একফাকে রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের অনেক গল্প পড়ে ফেলেছে।সুযোগ পেলে সে এই জ্ঞান বিতরনে বসে পড়ে।ক্ষুধিত পাষান এর এই ডায়লগ তার বড়ই প্রিয়।সে আচমকা জোর গলায় যখন বলে উঠে
তফাৎ যা হায়েনার দল ।মনে হয় হায়নারা কিছুক্ষনের জন্য ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায়।যদিও কিছুক্ষন পরে নুতুন উদ্দোমে হায়নাগুলি শুরু করে আবার হাসি
হা হা হা হা হা হা ।
ঘরের সব মানুষদের সাহস দেওয়ার জন্য বলে উঠে সব ঝুট হ্যায়।আপ নিশ্চিত রহিয়ে।কিছুটা বাংলা হিন্দী মিলিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে।
এখন বাজে সকাল আটটা।সাব্যস্ত হল নাস্তা খাওয়ার পর সবাই এদিক ওদিক ঘুরে দেখবে বারটা পর্যন্ত । এরপরে ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে বাস ছাড়বে।
এতক্ষন পর্যন্ত রশীদ মিঞার ভাল সময় কাটছিল।কিন্তু এখন সে আছে ওই দশাশই মহিলার ডাইরেক্ট তত্বাবধানে।মহিলার দুই চোখ ক্রমাগত তাকে অনুসরন করে যাচ্ছে।বিরক্ত হয়ে মনের দূঃখে সে বনবাসী হবে বলে ঠিক করল।মানি সে চিন্তা করল বনের একটু ভিতরে গিয়ে দেখে আসবে।ভিতরে ঢুকে এক বিশাল কাটাওয়ালা মান্দার গাছ পেল তার নীচে বসে আপন মনে বাঁশী বাজাতে শুরু করল।
পদ্মার ঢেউ রে মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যা রে
ওই পথে যে কেও ছিল তার জানা নাই।
আমি হারায়েছি তারে।ওই গানের সুর তুলছিল বাশীতে।
ট্রানজিষ্টারধারী এসে পাশে বসল।দুইজনের এখন গলায় গলায় ভাব।
আহা আহা ভাইজান চমৎকার ভাইজান আপনার বাশীর আওয়াজ।এ্ক্কেবারে দিলেত গিয়া লাগল।শুধু ট্রানজিষ্টার ধারীর দিলে একা লাগেনি দেখা যাচ্ছে।অতিকায় এক অজগর টাইপের সাপ বাশীর কম্পনে ঢুলতে ঢুলতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
দুইজনে ও সন্মোহিতের দৃষ্টিতে সাপটির দিকে তাকিয়ে আছে নড়াচড়া ভূলে।আল্লাহ খোদার নাম ভিতর থেকে জপা শুরু হয়ে গিয়েছে বাহিরে কোন শব্দ না করে।দুইজনে পাথরের মত পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে সাপটির দিকে।সাপটা এখন ও তার জায়গা ছেড়ে নড়ছেনা।অলস ভঙ্গিতে রশীদের দিকে তাকিয়ে আছে।রশীদের তাই মনে হল।যেন তার কোন তাড়াহুড়া নাই ।আয়েশী ভঙ্গিতে একটু নড়ন দিয়ে আবার পলকহীন চোখে রশীদ দের দিকে তাকিয়ে থাকল।
ভাইজান বাশী থামাইলেন কেন? কাদার ভঙ্গিতে ট্রানজিষ্টারধারী বলে উঠে।বাজাইতে থাকেন।থাইমেন না।
কি যে বলেন ভাইজান বাজনা বেশী পছন্দ হইলে যদি আরও কাছাকাছি আইসা বসে।রশীদ আতন্কের স্বরে বলে।
দুইজন অতিরিক্ত নিঃশব্দে আস্তে আস্তে উঠে দাড়াল।
একটু দুরে সোহাগ রে দেখা যাচ্ছে।
রশীদ ভয় পাইসনা ।চুপ কইরা মাটি না নড়াই বইসা থাক।আমি আসতাছি দাড়া।
সোহাগ ভাইজান চইলা আসছে।আর রশীদের কোন ভয় নাই।সে জানে ভাইজান যে কইরা ই হোক তারে বাচাইব।আল্লাহ পাক ভাইজানরে সীমাহীন ক্ষমতা দিছে।
সোহাগ অন্যদিকে একটা লাঠি ছুড়ে দিল।সাপটা কি বুঝল কে জানে।কিছুক্ষন ফনা তুলে এদিক ওদিক আয়েসী ভঙ্গিতে নড়াচড়া করে আ্স্তে আস্তে দুরে বনের দিকে চলে যেতে থাকল।
(চলবে)