হঠাৎএকদিন
তৃতীয় পর্ব
বন্ধুর সাথে হাটতে হাটতে আলিম ভীষন ক্লান্ত। কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে কোন জবাব নাই।তারা পুরা আহসান মন্জিল কমকরে তিনবার সব দেখে শেষ করে ফেলেছে।আনোয়ার সেই চুপচাপ একের পর এক ছবি তুলে যাচ্ছে।কমপক্ষে একশ ছবি তুলে ফেলেছে।শুধু মিউজিয়ামের আশেপাশের পরিবশের ছবি।একবার এটাও বলছেনা যে আস বন্ধু তোর ছবি তুলি।আশেপাশে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য থাকতে সে ছবি তুলছে বিভিন্ন জায়গার মাটির।
আলিম আস আমরা দুইবন্ধু ছবি তুলব আনোয়ার বলে উঠে।যেন আলিমের কথাকে মিথ্যে প্রমান করার জন্য এই আহবান।হেসে তাকাল বন্ধুর দিকে আলিম।
বুঝলাম বন্ধু থট রিড করা শুরু করছ।আমার ষ্টমাক কন্ডিশন কি রীড করছ? হেসে জিজ্ঞাসা তার।
করেছি বন্ধু তোমার ষ্টমাক পুরান ঢাকার মোগলাই খাবারের সন্ধানে আছে।তোমার ষ্টমাককে কিছুক্ষন সময় খালি রাখছি কেননা ভরা ষ্টমাকে তোমার মস্তিষ্ক কাজ করতে চায়না।কাজ শেষ করার পর ভূরিভোজ করানো হবে তোমাকে।আপাতত এই বাদামগুলি চিবাও আর আমার সাথে মষ্তিষ্ক খেলাও।বলে আনোয়ার তার দিকে তাকিয়ে হেসে।
অগত্যা কি আর করা।বাদাম চিবাতে লাগল আলিম।
চল মিউজিয়ামের ভিতরে যাওয়া যাক আবার।বলল আনোয়ার।
আবার হতাশায় আর ক্লান্তিতে বলে আলিম।
আর আধাঘন্টা বন্ধু।আমি একজনকে খুজছি।
কাকে ? বন্ধুর কান্ডকারখানায় আলিমের বিষ্ময় বেড়ে চলছে।
তারা মিউজিয়ামের ভিতরে ঢুকে আবার চারিপাশে দেখতে লাগল।
একজন বয়স্ক হুজুর ধরনের গেটআপ করা লোককে দেখা যাচ্ছে সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে।মনে হয় এই আহসান মন্জিলে কাজ করে।আনোয়ারকে দেখা গেল তার দিকে এগিয়ে যেতে।
আসসালামু আলাইকুম চাচা আনোয়ার ভদ্রলোককে দখে বলে উঠে।
আমার নাম আনোয়ারুল হক আর এই আমার বন্ধু আলিমুজ্জামান।আমরা একটা ডিটেকটিভ এজেন্সী থেকে এসেছি ।একটা ইনফরমেশন জানতে চাচ্ছিলাম যদি সাহায্য করতেন বলে একটা ভিসিটিং কার্ড বাড়িয়ে দিলেন ভদ্রলোকের দিকে।
আলিম আবার চমৎকৃত হল বন্ধুর কর্মতৎপরতায়।কোন ফাকে তার বন্ধু ভিসিটিং কার্ড ও বানিয়ে ফেলেছে ।
কি জানতে চান বাবারা ভদ্রলোকের দয়ালু কন্ঠস্বর।
আমি জানতে চাচ্ছিলাম তার নামটা মনে করতে পারছিনা এইমুহূর্তে আরিফ না আবীর।অন্দাজে এক নাম বলল।কাঠাল বাগান থেকে আসে।ষ্টুডেন্ট আপনার এখানে পার্ট টাইম কাজ করে।
ও আচ্ছা আচ্ছা আসাদের কথা বলতেছেন ওর তো আজকে কাজ নাই।কালকে আছে।
বলতে পারবেন এখানে তার কোন কোন আত্নীয় স্বজন আছে?
না বাবারা তা জানিনা আপনারা কালকে আসেন আমি পরিচয় করায়ে দিবনে।তখন সব জিজ্ঞাসা করে নিবেন না হয়।বললেন ভদ্রলোক।
মিউজিয়াম থেকে তারা ঢুকল রেষ্টুরেন্টে।মোরগ পোলাও হালিম দুইটা অর্ডার করল বন্ধুর জন্য।
আলিমের এত ক্ষুধার্ত মনে হল নিজেকে।খাওয়ার ডিশে প্রায় ঝাপিয়ে পড়ল সে।গোগ্রাসে খেতে শুরু করল।কিছুক্ষন খাওয়ার পর দেখল তার বন্ধু এখন ও খাওয়ায় হাত ই দেয়নি।কি যেন গভীরভাবে চিন্তা করছে।
বন্ধু খাও খাও।চোর ডাকাতদের রেষ্ট দাও।তোমার মাথাকে রেষ্ট দাও।আলিম খাওয়া মুখে বলে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আলিমের শরীর যখন আর চলছেনা চিন্তা করছে একটা চমৎকার ভাত ঘুমের তখন আধাখাওয়ার খেয়ে তার বন্ধু উঠে দাড়াল।
চল বন্ধু খুনে বাড়ী।
আমি অনেক টায়ার্ড আনোয়ার।আলিম হাই তুলতে তুলতে বলে।
এজন্য বন্ধু তোমাকে কাজ শেষ না করে খাওয়াতে চাচ্ছিলামনা।আনোয়ার বলল হেসে।
তাদের রিকশা বিল্ডিং এর কাছে আসতে দেখল একটা বাইশ থেকে চব্বিশ বছরের ছেলে ডানে বায়ে চোরের মত তাকাতে তাকাতে পট করে বিল্ডিং এর ভিতরে ঢুকে গেল।
আনোয়ার লাফ দিয়ে রিকশা থেকে নেমে বলল তুই ভাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।আমি ভিতরে যাচ্ছি।বলে দ্রুত সামনের ছেলেটিকে অনুসরন করল।
ছেলেটির মনে হয় তাড়া আছে।দুই তিন লাফে তিনতলায় উঠে গিয়ে এক দরজায় নক করল।ভিতর থেকে একটা মেয়ের ফিসফিসে কন্ঠ শোনা গেল।
ওহ হো তুমি আবার আসছ।আমরা অনেক বিপদে আছি।এইটুকু শুধু শুনল আনোয়ার।দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে আর কোন কথা শুনতে পারলনা।
আনোয়ার দোতলা পর্যন্ত উঠেছিল।এখন আবার সে নেমে কেয়ারটেকারকে খুজতে লাগল ।
অনেকক্ষন ডাকাডাকির পর দেখা গেল কেয়ারটেকারের মুখ।
ওহ স্যার আসছেন? আপা এখন বাসায় আছেন।যাইতে পারেন।
কেয়ারটেকারের কথামত তিনতলার একটা রুমে এসে দরজা নক করল তারা।আনোয়ার নিশ্চিৎ রহ্স্যময় ছেলেটা এখন ঘরের ভিতরে আছে।তাদের কি সম্পর্ক জানতে হবে।
তিনতলার বামদিকে অ্যাপার্টমেন্টে প্রথম তারা নক করল।যে বাসায় ছেলেটি ঢুকেছে।ভিতর থেকে ভয়ার্ত মেয়েলী কন্ঠ শোনা গেল
কে?আলিম বলতে নিচ্ছিল প্রতিবেশী।তাকে থামিয়ে আনোয়ার বলে উঠল পুলিশের লোক।তাদেরকে নার্ভাস করা ছিল আনোয়ারের উদ্দেশ্য।যাতে এদের যদি কোন গোপন ইনফরমেশন থাকে তা বলে ফেলে নিজেদের নির্দোষ রাখার স্বার্থে।
কিছুক্ষন পরে দরজা খুলে গেল।ভিতরে দেখা গেল খুব পরিচ্ছন্ন ভদ্র চেহারার একটি মেয়ে।মেয়েটিকে দেখলে একনজরে বোঝা যায় সে সবার পছন্দ মনযোগ কাড়তে অভ্যস্থ।কিন্তু এই মুহূর্তে সে কোন কারনে ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে আছে।প্রানপনে সে এই ছাপ লুকিয়ে সহজ থাকার চেষ্টা করছে।
বসুন সোফা দেখিয়ে বলে মেয়েটি।আপনার জন্য কি করতে পারি।স্বাভাবিকভাবে যদিও কথা বলার চেষ্টা করছিল তা স্বত্বেও কন্ঠস্বরের কাপুনী লুকিয়ে রাখতে পারলনা।
আপনার ঘর গুলি ঘুরে ফিরে দেখা যায় আনোয়ার বলছে অনেকটা আদেশের ভঙ্গিতে।পরক্ষনে সে নিজেকেএকটু সংশোধনের ভঙ্গিতে বলল মানি করতে চাচ্ছিলাম আপনার নিরাপত্তার জন্য।
ঠিক বুঝতে পারলামনা আপনার কথা।আমার বাসা কেন দেখতে চাচ্ছেন আর আমার কোন বিপদের আশংকা করছেন?বলল মেয়েটি কাপা গলায়।বুঝা যাচ্ছে এতক্ষনে সে বেশ ভয় পেতে শুরু করছে।
ভিতরের রুম থেকে তীক্ষ চিৎকার ধ্বস্তাধ্বস্তির আওয়াজ পেয়ে সবাই দৌড়ে বেডরুমে আসল।
কেও একজন লাফ দিয়ে জানালা দিয়ে ওপাশের ছাদে গিয়ে পড়ল এবং অন্ধকারের মধ্যে নিমিষে অদৃশ্য হয়ে গেল।তার চেহারা অবয়ব কিছুই বোঝা গেলনা। খাটের পাশে একটা ছেলে গুরুতর আহত অবষ্থায় পড়ে রয়েছে।তার পাজরে বিশাল আঘাতের দাগ মাত্রই হয়েছে।বোঝা যাচ্ছে অজ্ঞাত আততায়ী তাকে খুন করার চেষ্টা করেছিল।
মেয়েটি চিৎকার করে ছেলেটির পাশে বসে পড়ল।
আসাদ তুমি ঠিক আছ? কে এইভাবে তোমাকে এইভাবে আঘাত করতে পারে?হাউমাউ করে কাদতে শুরু করল।
আনোয়ার দৌড়ে এসে দেখার চেষ্টা করল আততায়ীকে ততক্ষনে আততায়ী হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হল।আসাদকে হলি ফ্যামিলী হসপিটালে নেওয়া হল।আসাদের সঙ্গে মেয়েটি এবং আনোয়ার রা হাসপাতালে আসল।
রাত এগারটায় হসপিটাল থেকে বের হল বাসার উদ্দ্শ্যে দুইজন পুলিশ কে আসাদের জিম্মায় রেখে।
টিকটিকি খেয়াল কর গলিতে ঢুকার মুখে আনোয়ার বলল সাবধানে।
আলিম লাফ দিয়ে পা ঝাড়া শুরু করল।
বন্ধু আমাদের পিছনে ফেউ লেগেছে সাবধান হও।এ গিরগিটি টিকটিকি না।তাকে সম্ভবত লাগানো হয়েছে আমরা কোথায় থাকি সেটা দেখার জন্য।
ওহ মাই গড কি বলিস তোতলাতে শুরু করল আলিম ভয়ে।
অন্য একটা বাসার গেটে ঢুকে যা।নিজের বাসায় পরে যাব।ফিসফিসিয়ে বলে আনোয়ার।
আনোয়ার ভয় লাগতেছেরে গুলি করবে না তো?
না মনে হচ্ছে আমাদের গতিবিধি দেখার জন্য আসছে।আলিম কুইক একটা খোলা গেট দেখা যাচ্ছে ।নিঃশব্দে ঢুকে পর।আবার এই বাসার এরা যেন টের না পায়।খেয়াল রাখিস।
দুইজনে পাচমিনিট গেটের আড়ালে লুকিয়ে রইল।তারপর মাথা ঝুকিয়ে দেখল রাস্তায় কেউ আছে নাকি?
যাক চলে গেছে আলিম।চল বন্ধু বাসায় যাওয়া যাক।অনেক ধকল গেল সারাদিন তোমার উপর
তা আর মনে করিয়ে দিসনা।এখন ও ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে।
তোমার দরকার চমৎকার আট ঘন্টার সাউন্ড স্লিপ। কালকের কাজ হবে আরও বিপদজনক। কাজের জন্য তোমাকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে বন্ধু।
ওরে বন্ধু তুই একা একা বীরত্ব দেখাগে আমি ওয়াটসন হওয়ার কোন শখ নাই।আমি বেচে থাকতে চাই।বলল আলিম রেগে উঠে।
এবং যেনতেনভাবে ?
আনোয়ার জানে ভাল করে যতই আলিম চিল্লাফাল্লা করুক বন্ধুর প্রতি টান তার অসীম।বন্ধু যা করবে নির্ধিদ্বায় সে ও তাই করবে।
হেসে বন্ধুর দিকে তাকাল তারপর সান্তনার ভঙ্গিতে পিঠ চাপড়ে দিল আবার।
(চলবে)