একজন মুক্তিযোদ্ধা
আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে নগরী
আকাশের কালো ধোঁয়া
জানিয়ে দিলো পাকসেনার ক্রুদ্ধো উপস্থিতি
বাতাসে জীবন্ত পশুপাখির পোড়া বিভৎস গন্ধ
নিষ্ঠুর সৈনিকের একহাতে খসে আসছে যুবতীর পরনের বস্ত্র
নির্মম বুটের নিচে রক্তফেনা মুখে শিশুর ভয়ার্ত চিৎকার
অন্য হাতে গর্জে উঠছে স্টেনগানের হিংস্র নল
রাস্তায় রাস্তায় তাজা রক্তের ছোপ ছোপ দাগ, অসহায় দেশ।
এই অসহায় দেশের সম্মান বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে
রাইফেল হাতে শত্রুর কোলে ঝাপিয়ে পড়েছিল
একজন মুক্তিযোদ্ধা;
কঠিন নিশানা তাক করে একে একে মুক্ত করেছিল
জনপদের পর জনপদ ।
একটা গুলি এসে
ফুসফুস ফুটো করে জানিয়ে দিয়েছিল মৃত্যুর যন্ত্রণা,
তবুও সামনে এগিয়েছিল জীবন দিতে;
সে আজ কেমন আছে ?
সে বিজয়ের পতাকা হাতে নিয়ে ছুটে গিয়েছিল বসতভিটায়;
কাউকে খুঁজে পায়নি আর!
জায়গা জমির দখল নিয়েছে অন্যজন
সেই থেকে স্বজনহারা নিঃস্ব কিছু নেই তার
স্বাধীনতার সূর্যটা যে ছিনিয়ে এনেছিল
জীবন যুদ্ধে সে আজ পরাজিত।
ছেঁড়া ফুসফুসে নিঃশ্বাস নিতে বড় কষ্ট হয়
হাসপাতালের করিডরে শুয়ে শুয়ে সে
স্বপ্ন আঁকা এই দেশ থেকে মুক্তির প্রহর গুনছে।
কি দেখার কথা ছিল আর কি দেখছে সে।
গভীর রাতের নিস্তদ্ধতা ভেঙে একটা কুকুর দীর্ঘ স্বরে ডেকে উঠলো
তারপর জোরে ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল মুক্তিযোদ্ধা।
ঘুম ঘুম চোখে ডাক্তার এসে
বুকে বার দু’য়েক চাপ দিয়ে জানিয়ে দিল, সে আর নেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শায়িত হবে সরকারের কত আয়োজন!
বেঁচে থাকতে যে ছিল পচা আবর্জনার মতো অবহেলায়
মরে গিয়ে সে পেল গার্ড অব অনার।
লজ্জা আর অপমানে লাল সবুজের পতাকায় ঢেকে
সে আজ শুয়ে আছে জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে।
হয়তোবা ক’দিন পর সে মিশে যাবে মাটির সাথে
তার কবরে থাকবে না কোন ইটের গাঁথুনি
থাকবেনা কোন নেমপ্লেট
তখন সে
পরম শান্তিতে শুয়ে শুয়ে এই মাটির গন্ধ নেবে একাকী।