প্রভু ! সবই তোমার ইচ্ছে (রম্যগল্প)-শেষ ভাগ
ইচ্ছে না থাকলেও সে দিন নিরালায় মনির সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে গেল। খগেন ঠাট্টার সুরে বলেছিল,কি গো কেমন আছ ?
–তুমি কেমন আছ,খগেন,দা ? মনি নম্রতার সাথে বলে উঠে ছিল।
বাবাঃ,অনেক দূর নেমে এসেছে,মনে মনে কথাগুলি আওড়ে খগেন বলে উঠলো,ভাল রে ভাল। খগেনের মনে সেই গুলতানি পাকিয়ে উঠলো। মনির সঙ্গে আরও একটু রগড় করতে ইচ্ছে হল,খগেন বলে উঠলো,মনি,তোর সে দিনের কথা আমি কিন্তু ভুলি নি।
–না,না,সত্যি অন্যায় হয়ে গেছে–রাগে তোমার জামার কলার ধরে ফেলেছি।
–তা হলে মাফ চা !
তাকাল মনি খগেনের দিকে–খগেনের মুখে সত্যি কি দুষ্ট মিষ্টি হাসি লেগে ছিল ! মনি বলে উঠলো, ঠিক আছে,মাফ করে দেও আমাকে।
না,হাত ধরে ভাল করে বল !
মনি দ্বিধা করল না,খগেনের একটা হাত চেপে ধরে বলে উঠলো,খগেন দা আমায় মাফ কর।
খগেন প্রেমিকের ভান করে ভালোলাগার দৃষ্টি নিয়ে মনির দিকে তাকিয়ে থাকলো। সে দিন থেকেই খগেন মনির ভালবাসার শুরু। খগেন মনে মনে বলে উঠলো,প্রভু ! এও তোমারি খেলা,তোমার কর্ম তুমিই করো গো !
ডাঙায় তোলার ইচ্ছে নেই,জালে বাধিয়ে খেলিয়ে যেতে মন্দ কি। আর খগেন দেখেছে মনির গায়ে অন্তত ভোঁটকা গন্ধটা নেই। আর ছেলেমেয়েদের ছোঁয়া ছুঁই খেলতে তো ভাল লাগবেই,কিন্তু বিয়ে ? খগেন মনে মনে বলল,কভী নেহী ! ঝোপড়ির মেয়েকে বিয়ে নয়।
খগেনের ভালবাসার ভান তখন জমে বসেছে–পার্কের আনাচে কানাচে,অন্ধকারে হাত ধরাধরি,গা জড়াজড়ি করে প্রেমের অবস্থান এগোচ্ছিল ভালই।
পাড়ার লোকেরা,ঝোপড় পট্টির অনেকের চোখেই এ সব পড়েছে। অনেকে আবার টিপ্পনী করতেও ছাড়ে নি।
খগেনের কি–ও তো খেপলা জাল ফেলেছে ! মাছকে ছটফটাতে দেখো,গাত্র সুখ তাতে কম নাকি !
একদিন রাতে মনি এসে কেঁদে কেটে বলল,মনির ইচ্ছে আর না,এবার তাদের বিয়ে করতে হয়।
বিয়ের কথায় চমকে উঠলো খগেন। সে বলে উঠলো,বিয়ে ? তোকে তো আমি কোন দিন ভালই বাসি নি !
–তবে কি এত দিন ধরে খেলা করেছ ? মনি রেগে বলে উঠলো।
না,তোকে মন দিতে পারি নি রে মনি। তুই অন্য কাউকে বিয়ে করে ঘর সংসার কর।
এবার মনি ভীষণ রেগে গেল,তা হলে এত দিন আমার সঙ্গে খেলেছ ?
হাসছিল খগেন,দাঁতপাটি খুলে হাসছিল।
প্রচণ্ড রাগ হল মনির,সে দাঁত কিটমিট করে উঠলো,দু পা এগিয়ে এসে খপ করে খগেনের জামার কলার চেপে ধরে বলল,শয়তান, আমায় নষ্ট করে তুই পার পাবি !
–নষ্ট ! যেন আকাশ থেকে পড়ল খগেন। মনে পড়ল তার,হ্যাঁ একবার নীরবে নিবিড়ে মনিকে নিয়ে খেলা করেছিল বটে ! কিন্তু তাতেই তো ছক্কা হতে পারে না ! খগেন নিজেকে বাঁচাতে বলে উঠলো না, না,আমার কিছু দোষ নাই।
–কিছু দোষ নাই ? তবে আমার পেটে এলো কি করে ?
খগেনের মাথায় এবার বজ্রাঘাত হল। সে মনে মনে বলে উঠলো, প্রভু ! এ ইচ্ছা তোমার হতে পারে না…মনিকে বলল,না,না,এ হতে পারে না,মিথ্যা তুই আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে–খগেন তার মনের ধারালো অস্ত্রগুলি খোলার চেষ্টা করতে লাগলো,দেখ মনি,সত্যি হলে আমরা অন্য ব্যবস্থা নেব–
–কি ব্যবস্থা ? ধারালো চোখ নিয়ে মনি প্রশ্ন করে।
–ওই যাকে বলে–নিপাত–মানে গর্ভ–
–পাত,দাঁড়াও তোমার দেখাচ্ছি মজা,বলে মনি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেল।
এর পরে তৃতীয় দিনের কথা–খগেনকে ঝোপড়ির চার পাঁচ জন ষণ্ডা-গুণ্ডা ঘিরে ধরল। দু চারটে কিল ঘুষি পড়ল ওর নাকে মুখে। ওর নাক মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে এলো। খগেন বেশ ভয় পেয়ে গেল।
ষণ্ডা-গুণ্ডারা শাসিয়ে বলে উঠলো,মনিকে তুই দু দিনের মধ্যে বিয়ে করবি–না হলে তোর বাপের—-।
খগেন আকাশ দিগন্তের দিকে তাকাল,অভ্যাস মত তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো,প্রভু ! এমন ইচ্ছে তো তোমার হতে পারে না !
খগেন রাতের অন্ধকারে ঘর ছেড়ে পালাবার জন্যে বের হল। মনি আগে থেকেই আন্দাজ করেছিল। খগেন দেখল তার সামনে সেই গুণ্ডার দল দাঁড়িয়ে আছে ! ওর নাকে মুখের ওপর ঘুষি পড়ার আগেই ও ভয় পেয়ে বলে উঠলো,আমি মনিকে বিয়ে করব।
শেষে খগেনকে সত্যি সত্যি মনিকে বিয়ে করতে হল–মন্দিরে মন্ত্র পড়ে,ওদের পাড়ার আর ঝুপড়ির বস্তির কিছু লোকের উপস্থিতে।
আজ খগেনের ফুল সজ্জা,খগেন মনি পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে–মনির চোখ বেড়ালের মত ধার–বার বার নেচে উঠছিল। খগেনের চোখ বেড়ালের সামনে ইন্দুরের মত পিটপিট করছিল।
মনি হেসে বলে উঠলো এবার আমরা স্বামী স্ত্রী–না গো ?
খগেন ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,আরও একজন—
–না কিছু না—আমার পেট খালি–বিয়ে করব বলেই ও সব কথা তোমায় বলে ছিলাম !
খগেনের কিচ্ছুটি করার ছিল না–সে কেবল কটমট করে বদ্ধ ঘরের দিগন্ত দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বেজার মনে বলে উঠলো,প্রভু ! এই কি ছিল তোমার মনে ?
সমাপ্ত