Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

স্পেস-১৪(পুরো অংশ)

: | : ২২/০৩/২০১৪

শ্রাবন্তী চুলে বেণী করবে।মাকে ডাকছে।
-মা,মা?
এমন সময় প্রচণ্ড আলোতে চোখ ঝাঁঝিয়ে গেল।কিছুক্ষণ চোখে কিছু দেখতেই পেল না।চারদিকে যেন প্রচণ্ড অন্ধকার।মিনিট দশেক পর।সবকিছু আবছা আবছা দেখছে।সবকিছু কেমন জানি এলোমেলো লাগছে।আশেপাশে সবকিছু তার বড় অচেনা লাগছে।চারপাশে ভাল করে দেখল।পিছনে তাকাল।তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল।তার বেডটা কই গেল?কেবল গতকাল বেডটা কিনেছে।ডানে তাকাল।বাবা মায়ের সাথে তার একটা ছবি ছিল।খুব চমৎকার ছবি।সে ছবিটা কই গেল?এসব কি হচ্ছে,কিছুই বুঝতে পারছে না।এমন সময় দেখে তার সামনে একটি মেয়ে দাড়িয়ে।অবিকল ওর মত দেখতে।এ কিভাবে সম্ভব,মাথায় কিছুতেই আসছে না।মেয়েটা আবার ফিক ফিক করে হাসছে।
-আপনি কে?
-শ্রাবন্তী।
-তাহলে আমি?
-আপনিও শ্রাবন্তী।
-এ কিভাবে সম্ভব?
-সেটাতো আমি বলতে পারব না।বলতে পারবে এ মহাকাশ যাত্রার প্রধান বিজ্ঞানী মহামান্য টিক।
-আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
-খুব সহজ।এই স্পেস-১৪ টিনডিমুটা গ্রহে যাবে।পৃথিবী হতে ৩০০ বিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরে।
-আলোক বর্ষটা আবার কি?
-এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে।
-আলো আবার দূরত্ব অতিক্রম করে?
-কেন এসব জানেন না?
শ্রাবন্তীর মনে হল,মেয়েটার মাথায় বোধহয় গণ্ডগোল আছে।নইলে এসব আজে বাজে কি সব বলছে?
-তো আমি বাবা মার কাছে কবে যাব?
-সেতো তুমি যেতে পারবে না।আমাকে তোমার বাবা মার কাছে পাঠানো হবে।
এমন সময় একধরণের শব্দ হয়।মেয়েটা শুধু বলল-বিদায়।
সাথে সাথেই মেয়েটা চোখের সামনে হতে উদাও।মেয়েটা কোথায় গেল,কে জানে?চশমা পরা একজন মধ্যবয়সী লোক সামনে এসে দাড়ায়।
-শুভ রাত্রি শ্রাবন্তী।
শ্রাবন্তী কোন কথা বলল না।বেশ রাগ উঠছে।
-কি কথা বলবে না?
-আপনি বিদায় হোন।এখন আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
-তুমি কার সাথে কথা বলছ জান?
-কোন গরু ছাগলের সাথে কথা বলছি না,সেটাতো দেখতেই পাচ্ছি।
-তুমি কি জান মহাকাশযানের প্রধান বিজ্ঞানীর সাথে এভাবে কথা বলা কতবড় গুরুতর অপরাধ?
শ্রাবন্তী হেসে বলে-আপনিই তাহলে টিকটিকি।
-নাম ঠিক করে বলবে।টিকটিকি নয়,টিক।তুমি বোধহয় খুব রেগে আছ।যাচ্ছি।পরে কথা হবে।
লোকটা চলে গেল।শ্রাবন্তী এদিক ওদিক হাটতে থাকে।
গণিতবিদ ফিক গুণ গুণ করে গান গাচ্ছে।গানের লাইন মনে নেই,তবে সুরটা মনে আছে।এসময় জীবাণুবিদ আফিয়া সামনে এসে দাড়ায়।দেখতে ভারি সুন্দর।এমন একটি ভারি সুন্দর মেয়ে জীবাণুবিদ হবে তা মেনে নেওয়া কষ্ট।এমন মেয়েরা পড়বে সাহিত্য নতুবা অভিনয়ের জগতে চলে যাবে।এমন কটকটে জীবাণু নিয়ে গবেষণা করে লাভ আছে?
-বসুন মিস পারফেক্ট বিউটি।
-আপনাকে কতবার বলেছি,আমার একটা নাম আছে।সে নাম ধরে ডাকতে।
-কি করব বলুন,সেটা আমার স্বভাব।সেটা কি আর একদিনে চেঞ্জ করা যায়?
-আপনার সাথে কথা বলাই বৃথা।
-তাহলে চলে যান।আমিতো আর তোমাকে ডেকে আনিনি।
-একটি দরকারি কথা বলতে এসেছিলাম।আপনাকে বলে কোন লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না।
-লাভ যখন হবেই না ধরেই নিয়েছ,তাহলে আর বলে লাভ কি?
আফিয়া রেগে রুম হতে বের হল।ফিকের কেন জানি মানুষকে রাগিয়ে দিতে পারলে খুব ভাল লাগে।শুনেছে,শ্রাবন্তী নামে একটা মেয়ে তাদের সাথে যাচ্ছে।মেয়েটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।একই সাথে যাচ্ছে,অথচ এখনো দেখাই হয় নি,তা কি ভাবা যায়?
-আসতে পারি শ্রাবন্তী?
শ্রাবন্তী কোন কথা বলল না।
-আসব শ্রাবন্তী?
-না,চলে যান।
মেয়েটার কাছে এমন উত্তর পাওয়া অপ্রত্যাশিত ছিল,তবু মেয়েটাকে বেশ লাগল।মনে হল,মেয়েটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
-আপনাকে আমি ঢুকতে বলেছি?
-বল নি।
-তাহলে কি রুমে ঢুকা ঠিক হয়েছে?
-স্পেসের নিয়ম অনুযায়ী,আমরা সবাই সবার রুমে যেতে পারি।অনুমতি না থাকলেও।
-এটা কি ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করছে না?
-এ নিয়ে অভিযোগ থাকলে,স্পেস কমিটির কাছে অভিযোগ করবে।তারা যদি নিয়ম চেঞ্জ করে,তাহলে আর আসব না।
শুনে শ্রাবন্তীর হাসি পায়।যারা তাকে না বলেই ভিন গ্রহে নিয়ে যাচ্ছে,তারা তার অভিযোগ শুনে পদক্ষেপ নিবে,এতটা আশা করা বোধহয় মাত্রাতিরিক্তই হয়ে যাচ্ছে।
-তুমি যে খুব ভাগ্যবতী একজন মেয়ে,সে কি জান?
-ভাগ্য না ছাই।
-আমাদের সাথে যাওয়ার জন্য প্রায় দশহাজার জন আবেদন করেছিল।
-শুধু শুধু তাহলে আমাকে এত কষ্ট দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
-এটাকে কষ্ট বলা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না।বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের মেয়ে পর্যন্ত যেতে চেয়েছিল,তাকেও নেওয়া হয় নি।বুঝেছ,তোমার ভাগ্য কত ভাল বলে আমাদের সাথে যেতে পারছ?
-আমাকে সিলেক্ট করার কারণ শুনতে পারি।
-কমিটি থেকে ঠিক করা হল,একজন অতি সাধারণ মানুষ নিয়ে যাওয়া হবে।সাধারণ মানুষ সমস্যা সমাধানের কথা খুব সাধারণভাবে ভাবে।যেটা মহাকাশযানে কোন সমস্যা হলে খুব দরকার।কারণ আমরা যারা আছি,আমরা ভাবব সমস্যাটা জটিল।তাই সিম্পল উপায় খুঁজব না।কিন্তু সমস্যাটা সিম্পলও হতে পারে।আর তুমি সমস্যাটা সিম্পলভাবে ভাববে-সে জন্যই তোমাকে নেওয়া।
-তাহলে যেকোনো কাউকে নিলেয় হত,আমাকে কেন?
-আমরা খুঁজেছি একজন সতেজ মাথার একজন মানুষ,যে কিনা পৃথিবীর সবকিছুকে খুব সিম্পল ভাবে।
শ্রাবন্তী মুচকি হেসে বলে-জানতাম নাতো,আমি সবকিছু খুব সিম্পল ভাবে দেখি।
-একটা উদাহরণ দেয়,তোমার দাদি মারা গেল।সবাই খুব কাঁদছে।অথচ তুমি কাঁদছ না।তুমি মনে করছ,অতি সাধারণ ঘটনা।জন্ম হলে মৃত্যু হবেই,এ নিয়ে কান্না করার কি আছে?
শ্রাবন্তী বেশ অবাক হল।এ ঘটনাতো এই লোকের জানার কথা না।
–আপনি কিভাবে জানলেন?
-সেন্ট্রাল এজেন্সি দিয়েছে।তাদের কাছে সব মানুষ সম্পর্কে তথ্য আছে।
-আপনারা এডুকেটেড একজন লোক নিতে পারতেন যে এরকম।আমিতো পড়ালেখা বলতে,ওই পড়তে লিখতেই জানি।এর বেশি না।
-আমরাও প্রথমে তাই ভেবেছিলাম।কিন্তু এডুকেটেড লোক হতে সিলেক্ট করতে গিয়ে দেখা গেল,তারা প্রত্যেকেই একেকটা মুখস্তবিদ হয়ে গেছে।যে সমস্যার সমাধান শলভ করা আছে,শুধুমাত্র সে সব সমস্যাই সমাধান করতে পারছে।নতুন প্রবলেম শলভ করতে পারছে না।বিশেষ করে যারা খুব হাই-কোয়ালিফাইড,তাদের মধ্যে সমস্যাটা প্রকট।
-তাহলে বোধহয় পড়ালেখা না করাই ভাল।
-সেতো বলতে পারব না।
-তবে মনে হচ্ছে,সমস্যা সমাধান করার ক্যাপাসিটি আমার বেশ।আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে।
-ঠিক ধরেছ।একটা উদাহরণ দেয়,একবার রুম হতে বিশ হাজার টাকা চুরি হল।তোমার বাবা মাতো খুব আপসেট।বাইরের একটা লোক তালা ভেঙ্গে রুম হতে টাকা নিয়ে যাবে,তা কিভাবে সম্ভব?তুমিই বললে,বাইরের লোক টাকা নেয় নি।নিয়েছে ছোট চাচা।কারণ চাচা একটা ব্যবসা করতে চাচ্ছে,সে জন্যই টাকাটা চুরি করেছে।
-আপনিতো সব জানেন দেখি আমার সম্পর্কে।
-সেন্ট্রাল এজেন্সি সব জানে,তাদের কাছে প্রত্যেক মানুষ কখন কি করছে সব তথ্য আছে।
-ও একবার বলেছিলেন।
-তোমাকে সাথে নেওয়ার আরেকটা বিশেষ কারণ আছে?
-কি?
-তোমার ইএসপি ক্ষমতা আছে।কিছুদিন আগে,তুমি তখন খালার বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে যাচ্ছ।হঠাৎ মনে হল,মায়ের হাতে গরম পানি পড়েছে।মা কষ্টে কাতরাচ্ছে।বাসায় এসে দেখ ঠিক তাই।
শ্রাবন্তী মুচকি হেসে বলে-তাহলে তো আমি সাধারণ কেউ নয়।
ফিকও হেসে বলে-সাধারণ কেউ নও,অতি সাধারণ একজন মানুষ।সেটা কিন্তু আগেই বলেছি।
-বোধহয় বলেছেন,ঠিক খেয়াল নেই।
-তোমাকে একটা বিস্ময়কর তথ্য দেয়।প্রত্যেক মানুষের তেশজোড়া ক্রোমসোম থাকে।কিন্তু পৃথিবীতে তুমিই একমাত্র মানুষ যার একজোড়া বেশি ক্রোমসোম আছে।বিজ্ঞানীরা জোর গবেষণা চালাচ্ছে।কিন্তু কোন কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছে না-এই বাড়তি ক্রোমসোম কোথা হতে এল,বের করার জন্য।
শ্রাবন্তী বুঝতে পারল,তার মধ্যে সব মানুষের থেকে একটা জিনিস ভিন্ন আছে।এই জিনিসটা যে কি,তা বুঝতে পারছে না।কোনদিন নাম শুনেছে কিনা মনে পড়ে না।
-ক্রোমসোমটা কি?
-বাবা মায়ের বৈশিষ্ট্য…
-থাক থাক ওসব জ্ঞানের কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।এর থেকে আরও চমক আছে কিনা,বলুন।
-থাক,অন্যসময় বলব।
-আরে বলেন না?
-এখন উঠি।গান শুনতে ইচ্ছে করছে।
এই বলে ফিক রুম হতে বের হল।কানে লাগাল সাদা রংয়ের হেডফোন।অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে,মজা পাচ্ছে।এই বুঝি নাচানাচি শুরু করবে।
শ্রাবন্তীর অনিকেতের কথা বারবার মনে হচ্ছে।ছেলেটা তাকে নিয়ে একটি প্রেমের উপন্যাস লিখেছিল।ফেসবুকে ম্যাসেজের সাথে এ্যাটাচ করেও দিয়েছিল।পড়া হয় নি।ইচ্ছে হয় নি।কি বুঝে গাধাটা, যে উপন্যাস লিখে?তা আবার ভাব ধরা ম্যাসেজ লিখে পাঠিয়েছে।
ডেয়ার রেসপেকটেড শ্রাবন্তী আপু,
মেঘের সাথে তুমি আর আমি, নামে একটা নভেল লিখেছি।এই নভেলটা আপনার,আমার ও আপনার বড় ভাইয়ের বাস্তবতা নিয়ে লেখা।আর বাকিটুক আমার কল্পনা।ভাল লাগলে পড়বেন,না লাগলে ডিলিট করে দিবেন।হাতের কাছে অপছন্দের জিনিস যত কম থাকে ততই ভাল।আমার সালাম নিবেন।
এমন চ্যাটাং ম্যাসেজ দেখে আর পড়তে ইচ্ছে হল না।আরে বাবা,আমি কি বলেছি উপন্যাসটা আমাকে পাঠাও?নিজেই পাঠিয়ে নিজেই আবার চ্যাটাং ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিচ্ছ।আবার প্রথমেই লিখেছে ডেয়ার রেসপেকটেড শ্রাবন্তী আপু,যেন বয়সে তার থেকে বড়।অথচ ছেলেটা চার বছরের বড়।বেশিও হতে পারে।ইস,মোবাইলটা থাকলে চ্যাট করা যেত।কে কে অনলাইনে আছে বেশ জানতে ইচ্ছে হচ্ছে।কেন জানি উপন্যাসটাও পড়তে বেশ ইচ্ছে।কি লিখেছে উপন্যাসে,কে জানে?রুম হতে বের হল।নভোযানটা ভাল করে দেখবে তাই।একটা বড়সড় স্টেডিয়ামের সমানতো হবেই।
-এই মেয়ে,এই দিকে?
দেখল মধ্যবয়সী একটি মেয়ে ডাকছে।
-কথা কানে যায় না,তোমাকেই ডাকছি।এইদিকে আস।
শ্রাবন্তী কাছে গেল।
-কি যেন নাম তোমার,সুবন্তী?
-না ম্যাডাম শ্রাবন্তী।
-ও শ্রাবন্তী।মনে পড়েছে।আর শুন,আমি কি তোমাকে কখনো পড়িয়েছি?
-না।
-তাহলে তুমি আমায় ম্যাডাম ডাকছ কেন?
-আপনাকে কি বলে ডাকব?
-নাম ধরে ডাকতে পার অথবা আপু বলতে পার।
-আপনার নামটা কি?
-আফিয়া আহমেদ।
-আফিয়া…
এইটুকু বলতেই আফিয়া বেশ বড় বড় করে তাকায়।
-আফিয়া আপনি কি গান শুনবেন?
-তুমি কি আমার সাথে ফাজলামি করছ?
-আপনিইতো বললেন নাম ধরে ডাকতে।
-তুমি আমাকে আপা বলে ডাকবে।আর গান শুনলে নিজ হতেই তোমাকে বলব,আগ বাড়িয়ে তোমাকে বলতে হবে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-এভাবে এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করছ কেন?
-স্পেসটা দেখছিলাম।
-এটা আবার দেখার কি আছে?চারদিকে সব অতি সূক্ষ্ম জিনিসপত্র আছে।না বুঝে দেখা যাবে ভয়ানক অঘটন ঘটাবে।
শ্রাবন্তী খুব শান্ত গলায় বলল-ঘটলে ঘটবে।
আফিয়া মেয়েটার এমন অবিবেচক কথা শুনে বেশ হতাশ হল।আনএডুকেটেড লোক নিয়ে এই সমস্যা,কোন কিছু বুঝতে চায় না।বুঝিয়ে বললেও না।বারবার বলেছিল এমন একজন বকলম লোক কিছুতেই নেওয়া যাবে না।কে কার কথা শুনে?সবাইতো এক একজন মস্তবড় ইন্টেলেকচুয়াল।আফিয়া কিছুটা রেগে বলল-ঘটলে ঘটবে,খুব সহজে বলা যায়।ঘটলে কি হবে,মাথায় কিছু ধরে?
-কি আর হবে,সব যাবে?
-সব যাবে মানে?
-মানে আমরা নাই হয়ে যাব,সরাসরি একেবারে স্বর্গে।
-দেখ এমন পাগলামি টাইপের কথা বলবে না।আর কারও অনুমতি না নিয়ে তোমার রুম হতে বের হবে না।
-সে হবে না।
-কেন?
-চারপাশে টইটই করে ঘুরে বেড়ানো আমার ছোটবেলার অভ্যাস।এত তাড়াতাড়ি তো অভ্যাস ত্যাগ করতে পারব না।
-কথা না শুনলে সে ব্যবস্থাও আছে।এখন তোমার ব্যাপার।
-যা ইচ্ছা করতে পারেন।
এই বলে শ্রাবন্তী রুম হতে বের হল।স্পেসের এক প্রান্তে এসে দাড়ায়।স্বচ্ছ কাচের ভিতর দিয়ে আকাশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।গোলাকার,ডিম্বাকার বেশ কিছু গ্রহের ঘূর্ণন দেখা যাচ্ছে।মাঝে মাঝে কিছু কিছু মেঘ এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করছে।মেঘগুলো খুব বেশি সাদা মনে হচ্ছে।পৃথিবী হতে নরমালি এত সাদাতো মনে হয় না।মায়ের কথা বেশ মনে পড়ছে।যে মার সাথে তার সারাক্ষণ ঝগড়া লেগেই থাকত,মনে হত এ ফালতু মহিলার কাছ হতে কবে মুক্তি পাবে,সে মার ছবি বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে।বারবার মনে হচ্ছে মার সাথে যদি একটি বার কথা বলতে পারত,তাহলে বলত-মা,আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ সো মাচ।মা আমি তোমার সাথে রোজ ঝগড়া করতে চাই।
রোজ চুল বেণী করে দিত।এরপর মুখটা ভাল করে ধুয়ে মুছে আয়নার সামনে নিয়ে দাঁড়াত।বলত-দেখ মা,তুইতো একেবারে রাজকুমারী?পরীর থেকে বেশি সুন্দর।
মায়ের এমন পাগলামি দেখে শ্রাবন্তী হেসে বলত-মা যাওতো।রোজ রোজ এক কথা ভাল লাগে না।
-যা সত্য তাই বললাম।পরীর থেকে বেশি সুন্দর,একথা তোর বিশ্বাস হয় না?
-বিশ্বাস হয়েছে।এবার যাও।
-দুধ এনেছি।দুধটা খেয়ে নে।
-মা প্লীজ রোজ রোজ দুধ খেতে ভাল লাগে না।দুধ খেলেই বমি হয়ে যাবে।
-দুধ না খেলে শরীর ঠিক থাকবে?এমনেতেই দিন দিন রোগা হয়ে যাচ্ছিস।
পীড়াপীড়ি করে দুধ খাওয়ানোর পরে অন্য কাজে যেত।অথচ এখানে কেমন?খাওয়ার কথা কেউ কিছু বলে না।খেতে ইচ্ছে হলে খাও,না হলে না খাও।
-শ্রাবন্তী?
পেছনে তাকিয়ে দেখে ফিক দাড়িয়ে।
-কি করছ এখানে?
-আকাশটা দেখছি।
-ঐ যে চ্যাপ্টা মতন একটা গ্রহ দেখা যাচ্ছে,ওটা আমাদের প্রিয় পৃথিবী।
শ্রাবন্তী বিস্মিত হয়ে বলল-আমাদের পৃথিবী?
-ইয়েস ডেয়ার,আমাদের পৃথিবী?
-এমন কেন?ছোটবেলা হতে তো কমলালেবুর মত গোল শুনে এসেছি।
-তা শুনেছ।আমরা পুরো অংশ দেখতে পাচ্ছি না।কিছু অংশ দেখতে পাচ্ছি।তাই এমন দেখা যাচ্ছে।আর বেশিক্ষণ দেখতে পাব না।বড়জোর মিনিট বিশেক।তাই ভাবলাম শেষ দেখাটা দেখে আসি?
-শেষ দেখা কেন বলছেন?
-যদি পৃথিবীতে ফিরে আসি,তাহলে দেখা যাবে সবকিছু বদলে গেছে।আমাদের বয়স বেড়েছে দেখা যাবে বিশ তিরিশ বছর,পৃথিবীর হয়তো এক-দুইশ বছর হয়ে যাবে।
শ্রাবন্তী কিছু বুঝতে পারছে না।পৃথিবীর বয়স বাড়বে এক-দুইশ বছর,অথচ তাদের বয়স বাড়বে মাত্র বিশ তিরিশ বছর?হতভম্ব হয়ে বলল-এটা কেমন কথা?
-এটাই কথা শ্রাবন্তী।পৃথিবীর সবকিছু আপেক্ষিক।
-এটা আবার কি?
-চিরন্তন বলে কিছু নেই।আগে অনেক কিছুই চিরন্তন মনে করা হত,যেমন সময়।আইনস্টাইন এসে এসব থিওরির পেটে মারলেন লাথি,দেখালেন মহাবিশ্বের সবকিছুই আপেক্ষিক।
-ইনি আবার কে?
ফিক হেসে বললেন-এর নাম কখনো শুননি?
শ্রাবন্তী মাথা নাড়ে।
-পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পদার্থ বিজ্ঞানী।রিলেটিভিটি ল দিয়েছেন?
-কি?
-রিলেটিভিটি ল।আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে কোন কিছু গেলে সময় আর ধ্রুবক থাকে না।
এই বলে শ্রাবন্তীর দিকে তাকায়।মেয়েটা হতাশ হয়ে তাকিয়ে আছে।কিছু যে বুঝতে পারছে না,চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।একটু ঘুরিয়ে বলতে হবে।
-কি কিছু বুঝলে না বোধহয়?
শ্রাবন্তী মাথা নাড়ে।
-কোন ছেলে যখন প্রেমিকার সাথে থাকে,তখন তার কাছে তখন অনেক সময় মনে হবে অল্পসময়।আর প্রেমিককে যদি আগুনের কাছে রাখা হয়,অল্পসময় মনে হবে অনেক সময়।এটাই রিলেটিভিটি ল।
-কি যে হাবিজাবি বলেন,কিছু মাথায় ঢুকে না।
-তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না।মাথায় না ঢুকলে না ঢুকবে।
-আমাদের টিনডিমুটা গ্রহে যেতে কতদিন লাগবে?
-আমরা যে বেগে যাচ্ছি তাতে ৪০০ বিলিয়ন বছর লেগে যাবে।
শ্রাবন্তী শুনেতো বেশ বড় বড় করে তাকালো।বলল-আমরা এত বছর বাঁচব?
-ভাল প্রশ্ন করেছ।আমরা মাসখানিক আমাদের গতিতেই যাব।এরপর ভিনগ্রহের বাসিন্দা ইনফিনিটি ড্রাইভের মাধ্যমে ক্ষণিকেই তাদের কাছে নিয়ে যাবে।তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে আমাদের থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন গুণ এগিয়ে।ইনফিনিটি ড্রাইভ কিভাবে কাজ করে,আমাদের অজানা।তাই ধরা যায় মাসখানিকের মধ্যে তাদের কাছে চলে যাব।
এমন সময় শ্রাবন্তী চিৎকার দিয়ে বলল-আমাদের পৃথিবী কই?
ফিক ভাল করে তাকিয়ে দেখে।–ঐ যে ঐ যে হালকা দেখা যাচ্ছে।তাকিয়ে থাক।আর দেখতে পারবে কিনা সেটাতো বলা যায় না।
তারা দুজনে গভীর আগ্রহ নিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে আছে।পৃথিবীর প্রতি যে এত ভালবাসা,এই প্রথম দুইজনে বুঝতে পারল।ক্রমেই পৃথিবী অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।ফিক বলল-হাতটা নাড়া।
দুইজনে হাতটা নাড়িয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানাচ্ছে।হাত নাড়াতে নাড়াতেই পৃথিবীকে আর দেখা যাচ্ছে না।ফিক বেশ বড় করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।শ্রাবন্তীর চোখ টলমল করছে।তার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে।
সপ্তাহখানেক পর।মহামান্য টিক বসে বসে সিগারেট ফুঁকছে।
-স্যার আসব।
কহি-১০০০ প্রজাতির এক রোবট দরজার সামিনে দাড়িয়ে।কহি হচ্ছে কপি অফ হিউম্যান।পাশাপাশি চললে এদের আর মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না।সময়ের সবচেয়ে উন্নতমানের রোবট।
-এসো হিপ।
-মহামান্য টিক,আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
-সরাসরি বলে ফেল।এসব কিছু বলতে হবে না।
-আপনি কেমন আছেন?
-তোমাকে না বললাম যা বলার সরাসরি বল।এসব বলতে হবে না।
-স্পেস কমিটির নিয়ম অনুযায়ী…
-ওসব আমাকে শেখাতে হবে না?তুমি এখন রুম হতে যাও,যন্ত্রণা দিবে না।কোন যন্ত্রের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
-না বলেতো যাওয়া যাবে না।স্পেস কমিটির নিয়ম অনুযায়ী না বলা আমার জন্য অপরাধ হবে।
-আমি এখন ব্যস্ত আছি।তোমার কথা শুনার মুড নেই।
-মহামান্য রেগে যাবেন না।রাগ করা শরীরের জন্য খুব খারাপ।এসময় শরীর ভাল থাকাটা খুব দরকার।
-তোমাকে এসব শিক্ষা দিতে হবে না।তোমাকে যেতে বলছি।তুমি যাও।
হিপ তবুও দাড়িয়ে রইল।মহামান্য টিক শুয়ে পড়ল।
-মহামান্য।
বেশ কয়েকবার হিপ ডাকল।অবশেষে বিরক্ত হয়ে উঠে বসল।
-আচ্ছা বলে তাড়াতাড়ি বিদায় হও।
-শ্রাবন্তী এদিক ওদিক ঘুরাফেরা খুব ঘন ঘন করছে।এতে যেকোনো ধরণের বিপর্যয় হতে পারে স্পেসের।
-এই সামান্য কথা বলার জন্য আর কখনো আমার রুমে আসবে না।
-এটা সামান্য কথা না মহামান্য।
-আর কিছু বলবে।
-না।
-তাহলে যাও।
হিপ রুম হতে বের হয়।বের হয়ে শ্রাবন্তীর রুমে যায়।
-আসতে পারি মহামতি শ্রাবন্তী।
-আসুন।
-আপনি দেখতে খুব সুন্দর।
হিপের ভাবসাব ভাল লাগল না।এভাবে সরাসরি তোষামোদ করার কোন কারণ আছে নিশ্চয়।
-আমি জানি।
-আপনার চোখ দুটি খুব সুন্দর।
-তুমিতো মনে হচ্ছে মেয়ে পটাতে বেশ পটীয়সী।
-আপনাকে ভাল একটা খবর দেয়।
-বলে ফেল।
-আপনার চাচা ব্যবসায় খুব ভাল করছে।কিছুদিনের মধ্যে কোটিপতি হয়ে যাবে।
-ও খুব ভাল খবর।তুমি খুব ভাল।
-মোহিত নামে যে ছেলেটাকে তুমি প্রচণ্ড ভালবাসতে,সে ছেলেটা এখন পর্যন্ত দিব্যি আরেক মেয়ের সাথে প্রেম করে যাচ্ছে।
-তোমার ভাবগতি তো ভাল মনে হচ্ছে না।
-রোবটরা মিথ্যা কথা বলে না।যা সত্য তাই বললাম।
-প্রমাণ দিতে পারবে।
-অবশ্যই।গত পহেলা বৈশাখে তুমি সেজেগুজে শাড়ি পড়ে বের হলে,কিছুক্ষণ পর মোহিত কল দিয়ে বলে,শু,আজ খুব খারাপ লাগছে।আমরা বরং অন্যদিন বের হব।পরের দিন,দুজনে ঘুরতে বের হলে। এত তাড়াতাড়ি শরীর ভাল হয়ে গেল?
-কোন কোনদিন খারাপ লাগতেই পারে।এরকম তো আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে,কিছুতেই বিছানা হতে উঠতে ইচ্ছে হয় না।
-খুব বিশ্বাস দেখি প্রেমিকের প্রতি।
-ভালবাসায় বিশ্বাস না থাকলে তো হবে না।
-আপনাদের মানুষদের ঠিক বুঝতে পারি না।লজিকের চেয়ে বিশ্বাসের এত গুরুত্ব দেন কেন,মাথায় ধরে না।এর জন্য অবশ্য রিলিজন দায়ী।রিলিজনের প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে বিশ্বাস,এটা কোন কথা হল?অথচ সবকিছুতে লজিক ব্যবহার করলে,জীবনটা কত ভাল হত?
-ভাল হত কিনা বলতে পারি না।বিশ্বাসের যে অনেক ক্ষমতা,সে তুমি বুঝবে না।
-কেন বুঝব না?
-কারণ তোমাদের তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে যাতে লজিকের বাইরে তোমরা যেতে না পার।লজিক বাদে বাকি সবকিছু মিথ্যা।কিন্তু দুনিয়াতে এখনও লজিকের বাইরেও অনেক কিছু আছে যাদের ব্যাখ্যা বিজ্ঞান এখনও দিতে পারে নাই।
-এখন পারে নাই,হয়তো কোনদিন পারবে।লজিকের বাইরে কিছু হয় না মহামতি।
শ্রাবন্তী বুঝতে পারল,এর সাথে কথা বলে লাভ হবে না।সে একটার পর একটা যুক্তি দিতেই থাকবে।তার মাথায় ভাল কোন যুক্তি আসছে না।
-হিপ তুমি যাও।আমি এখন ঘুমাব।
-আপনি মিথ্যা কথা বলছেন?
-কি মিথ্যা বললাম?
-আপনি এখন ঘুমাবেন না।আপনি আমার উপর যে বেশ বিরক্ত তা বুঝতে পারছি।
-তাহলে তো বুঝতেই পারছ।এবার সামনে হতে বিদায় হও।
হিপ কথা না বলে রুম হতে বের হল।শ্রাবন্তীর কেমন কেমন জানি লাগছে।মোহিত অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারে,এ কথা ভাবতেই পারছে না।ঘুরতে বের হলে মাঝে মাঝে মোবাইলটা বেজে উঠত।তখন চোখে মুখে কিছু লুকোনোর চিহ্ন দেখা যেত।কথা বলার কিছুক্ষণ পরেই কোন এক অজুহাত দিয়ে চলে যেত।যাক,এ স্পেসে এসে ভালই হয়েছে।নিজের চোখ দিয়ে ভালবাসার মানুষের প্রতারণা দেখতে হচ্ছে না।অনিকেত ছেলেটা কেমন আছে,কে জানে?ছেলেটাকে খুব বেশি অবহেলা করেছে।ছেলেটা যে খুব ভালবাসত,তাতে কোন সন্দেহ নেই।ছেলেটার মুখ খুব বেশি মনে পড়ছে।
-আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?
-তুমি যাবে বলে।
-আমার যাওয়ার পথে আপনি দাড়িয়ে থাকবেন না।
-তোমাকে দেখলে আমার ভাল লাগে।তাই দাড়িয়ে থাকি।যদি দেখা হয়।
-আচ্ছা ভাল করে দেখেন।
-দেখলাম।
-এবার চলে যান।
-তুমি হাঁটলে কেমন লাগে,তা দেখব।তুমি যেতে থাক,আমি দেখি।
-আপনার মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু হবে না?
-এতদিন যখন হল না,তখন আর কবে হবে?
-আপনি জানেন আমার একটা রিলেশন আছে।
-তো কি হয়েছে?এখনকার যুগের রিলেশন ভাঙ্গতে কয়দিন?
-আপনি সত্যিই পাগল।
-আমারও তাই মনে হয়।আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
-এ তো কমন ডায়লগ।নতুন কিছু থাকলে বলেন।
-তোমার সাথে পরিচয় হবার পর,১৪ সংখ্যাটি আমার খুব প্রিয় হয়েছে।আমার কেন জানি মনে হয়,এই সংখ্যার সাথে তোমার জীবনের সুন্দর কোন ঘটনা জড়িত।
-আপনার মাথায় কি এসব আউলফাউল চিন্তা সবসময় ঘুরতেই থাকে?
-বোধহয় বেশি ভালবেসে ফেলেছি,তাই।
-পড়াশুনা কি একেবারে চুলায় দিলেন?
-দিলাম।ও করে আর কি হবে?
-লেখালেখি করে জীবন যাবে?
-যাচ্ছেতো।
-লেখালেখি তো আপনাকে ভাত দিবে না।
-ও নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে হয় না।ভাত না জুটলে খাব না।
-বিয়ে করতে হবে না?
-যাকে বিয়ে করতে চায়,সেতো আর বিয়ে করবে না।শুধু নিজের জীবন নিয়ে আমার চিন্তা হয় না।দেখা যাক কি হয়?
-তাহলে আর কি করবেন,বিরহের লেখা লিখতে থাকেন।তা ছাড়া তো আপনার আর কোন কাজ নাই।যাই।
-শুন।
-বলেন।
-একটা সায়েন্স ফিকশন লিখছি।নাম স্পেস-১৪।
-এখানে আগের মত ছ্যাকা খাওয়া প্রেমের কাহিনী লিখবেন না।আর নায়িকা যেন ভুলেও আমার মত না হয়।আপনি তো আবার আমাকে নায়িকা না ভেবে লিখতে পারেন না।
-চেষ্টা করে দেখি।
-আর সময় হলে নিজের দিকে একটু তাকাবেন।চুলগুলো বড় বড়,স্রেফও করেন না বোধহয় অনেকদিন।দেখলেই মনে হয় উন্মাদ।আজই সেলুনে যেয়ে চুল কাটবেন,স্রেফ করবেন।
-হু।
এমন সময় হিপ রুমে প্রবেশ করে বলল-মহামতি শ্রাবন্তী,শ্রাবন্তী?কি হল,আপনি শুনতে পাচ্ছেন না।
শ্রাবন্তী নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বলল-বল?
-এখন মিটিং আছে।এখনি যেতে হবে।
-আমার ভাল লাগছে না।ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
-জানেন যে মিথ্যা কথা বলে আমার সাথে লাভ নেই।আমি মিথ্যা ধরতে পারি।
-আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।
-ইচ্ছে না করলেও যেতে হবে।যাওয়া বাধ্যতামূলক।
-আমি যাব না।
এই বলে শ্রাবন্তী শুয়ে পড়ল।যা হবার হবে।
মিটিং শুরু হয়ে গেছে।মহামান্য টিক হিপকে বলল-শ্রাবন্তীকে আসতে বলেছিলে?
-ইয়েস মহামান্য।
-আসছে না কেন?
-উনি আসবেন না।
-কেন?
-ঘুমাবেন।
টিক শুরু করলেন।
-মহামন্য পৃথিবীর অসাধারণ মেধাবীগণ,সবাই আশা করি ভাল আছেন।আমি অতি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে,টিনডিমুটা গ্রহের প্রাণিরা ইতিমধ্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে।তারা বলেছে,আর কয়েকদিন গেলেই আমরা তাদের দূরত্ব সীমার মধ্যে চলে যাব।তাই আমাদের পনেরো বিশদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।তিন চারদিন পর ইনফিনিটি ড্রাইভে করে তাদের কাছে ক্ষণিকেই চলে যাব।
কথা শেষ হওয়ার পর পরই আফিয়া হেসে বলে-সেতো খুব ভাল খবর।আমারও দেরি সইছে না।মনে হচ্ছে এখনি যেতে পারলে ভাল হত।
এবার ফিক আফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-এত খুশি হবেন না মিস বিউটি।আমরা ঐ স্পেসে যাব কিনা তা নিয়ে আমাদের আরও ভাবতে হবে।
হঠাৎ এমন কথা বলার কোন কারণ খুঁজে পেলেন না টিক।মনে মনে বেশ বিরক্ত হলেন।আফিয়া মুখটা কিছুটা কঠিন করে বলল-আপনি কি সবসময় একটা না একটা ঝামেলার কথা বলবেনই?কোন সময় যদি একটা আশার বাণী পাই আপনার কাছ থেকে।
-দেখ,আমার কাছে যা মনে হয় তা বলতে আমি দ্বিধা বোধ করি না।সে আশারি হোক আর নিরাশিরই হোক।
-দয়া করে আপনি আপনার কথাটা ভাল করে বলবেন?
-একটা বিষয় চিন্তা করে দেখেছ,তারা আমাদের গাছপালা,প্রাণী এসব কিছু চায় নি।
-এতে চিন্তা করার কি আছে?
-বুঝেছি তোমার মাথায় এসব আসবে না।তুমিতো প্রথাগত ধারণার বাইরে কিছু চিন্তা করতে পার না।
আফিয়া কিছুটা রেগে বলল-আপনি আমাকে অপমান করছেন?
ফিক মুচকি হেসে বলল-বোধশক্তি তো তোমার বেশ।
আফিয়া এবার বেশ রেগে গেল।রেগে বাইরে চলে গেল।ফিক বলতে শুরু করে-মহামান্য টিক,আমরা যেমন কোন দুর্লভ প্রাণী চিড়িয়াখানায় রেখে দেয়,তা দেখে সবাই মজা পায়,কেউ আবার প্রাণীটার গায়ে খোচা দেয়।যে মেয়েটাকে আমরা দিতে যাচ্ছি,তাকে এমন অবস্থার মধ্যে ফেলে দিতে পারি না।শুধু মেয়েটা না,এমন হল আমাদের কাউকে আর আসতে দেওয়া হল না।সবাইকে চিড়িয়াখানার ভিতর বন্দী করে রাখা হল।
টিক বলল-এমন হওয়ার সম্ভাবনা আমি দেখছি না।তারা অতি সভ্য প্রাণী।
-সেই জন্যই তো ভয় আর বেশি মহামান্য।আমরাও তো কম সভ্য নই।মানব কল্যাণের জন্য আমরা যেমন বিভিন্ন প্রাণীকে গবেষণার জন্য উৎসর্গ করি,তারাও জ্ঞান অর্জনের জন্য মেয়েটিকে এমন কি আমাদের সবাইকে ব্যবহার করতে পারে।এমন কি আমাদের টুকরা টুকরা কেটে কি কি আছে ভিতরে দেখতে পারে।
-আমাদের সাথে তাদের একটা চুক্তি আছে।সেই চুক্তি অনুযায়ী তারা শুধু মেয়েটাকে নিবে,তার বিনিময়ে তাদের সমস্ত জ্ঞান আমাদের দিবে।
-তাহলে তো এর মধ্যে আরও ভয়াবহ কথা লুকিয়ে আছে।
-মানে?
-শুধু মাত্র একটি মেয়ের জন্য তাদের সমস্ত জ্ঞান দিবে,এটা আমাদের জন্য খুব বেশি প্রাপ্তি হল না?
টিক মুচকি হেসে বলল-তাতো বটেই।অতি সভ্য ও উন্নত প্রাণী বলে কথা।
-মহামান্য টিক,আমি যা বলতে চেয়েছি,তা বুঝতে পারেন নি।
-এভাবে পেঁচিয়ে কথা না বলে সরাসরি বল।এত পেঁচালে কিভাবে মূল কথা বুঝব?
-তাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে?
-আগে বিশ্বাস করি নি,আফিয়ার মুখে শুনেছি।এখন দেখছি তুমি সত্যি সত্যিই বড় ধরনের উন্মাদ।উদ্দেশ্যটা কি তুমি আমাকে বলতে পারবে?
-উদ্দেশ্য অনেক হতে পারে।তবে সে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।যতদিন পর্যন্ত ভাবা শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত তাদের দূরত্ব সীমার মধ্যে যাওয়া ঠিক হবে না।
-তোমার সাথে আমি একমত নই।স্পেস-১৪ চলতেই থাকবে।অন্য কিছু বলার থাকলে বলতে পার।
-একটি মেয়েকে এভাবে জেনেশুনে আমরা বিপদের মধ্যে ফেলতে পারি না।
-বড়-কিছু পেতে হলে কিছু ত্যাগ করতেই হবে।এ নিয়ে দুঃখ না করাই ভাল।
-তাহলে মহামান্য আপনাকেই ওদের উপহার হিসেবে দেয়।
মহামান্য টিক এবার কিছুটা রেগে গেলেন-আমি আর মেয়েটা এক হলাম?
-না হওয়ার কি আছে,আপনিও মানুষ সেও মানুষ।
-তোমার মাথা বোধ হয় পুরোপুরি গেছে।
এই বলে টিক রুম হতে বের হলেন।ফিক নিজের মাথার চুল নিজেয় টানতে লাগলেন।ইচ্ছে হল এক একটা করে সব চুল ছিঁড়ে ফেলতে।মানুষগুলো এই সহজ হিসাব বুঝতে পারছে না কেন,মাথায় ধরছে না।হাতে খুব একটা বেশি সময়ও নেই।মাত্র তিন চারদিন।এই তিন চারদিনেই যা করার তা করতে হবে।
-কি,আপনি একাই বসে আছেন?
পেছন ফিরে দেখে শ্রাবন্তী।
-কাউকে দেখছি না যে?হিপ যে বলল মিটিং হবে।
-মিটিং শেষ।
-আপনি কি কোন কারণে মনঃক্ষুণ্ণ?
ফিক মুখ কিছুটা হাসি হাসি করে বলল-না কিছু না?
-আপনি কিছু লুকাচ্ছেন মনে হচ্ছে।আপনার হাসিতো কখন এমন শুকনো হয় না।
-না এমনিই,সব ঠিক আছে।চল বের হই।
এই বলে তারা রুম হতে বের হল।একটা কৃত্রিম জলাশয়ের সামনে বসল।
-আপনি কখনো দীঘিতে সাতার কেটেছেন?
-আমিতো সাতার পারি না শু।
-দীঘিতে এদিক ওদিক সাতার পারা যে কি মজা,এখনি সাতার পাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।সবচেয়ে কখন বেশি মজা হয়,জানেন?
ফিক মুচকি হেসে বলল-নাতো?তুমি জান?
শ্রাবন্তী বেশ হেসে বলে-এ কি এটাও জানেন না?তাহলে জানেন কি?
-কি যে জানি,তাওতো জানি না শু।বেশ জানতে ইচ্ছে করছে যে শু।
-ঝড় বাদলের দিনে,সবাই মিলে সাতার কাটার যে কি মজা,বলে বুঝানো যাবে না।আপনি কখনো মাছ ধরেছেন?
ফিক মাথা নেড়ে না বাচক উত্তর দেয়।
-ও, জীবনে বিশাল জিনিস মিস করেছেন জনাব।যখন টোন তলাবে,আর তখন বড়শি উঠাব,কি যে টান টান উত্তেজনা?কি যে ঘোরের মধ্যে দিন কেটে যায়,বুঝাই যায় না।আর মাছ ধরলে তো আনন্দের সীমা থাকে না।
-তোমার জীবন তো তাহলে বেশ মজার ছিল।
-মজার মানে খুবই মজার।আপনি কখনো নৌকায় করে ভরা পূর্ণিমায় ঘুরে বেরিয়েছেন?
ফিক আবার মাথা নেড়ে না বাচক উত্তর দেয়।
-কি বলেন,এমন চমৎকার সুন্দর দৃশ্য মিস করেছেন!পৃথিবীতে এমন সুন্দর দৃশ্য আর হয় না।বিলের চারদিকে থইথই করা পানি।আকাশে রূপালী চাঁদ।চাদের রূপালী আলোয় ঝিকমিক করছে পানি।বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।এর মাঝে ঝড়ো বাতাস,গলা ছেড়ে গান¬-সে কি যে অদ্ভুত আনন্দ আসে মনে প্রাণে,সে আমি বুঝাতে পারব না।
-আমার তো এমন আবহাওয়ায় বেশ ঘুরতে ইচ্ছে হচ্ছে।
শ্রাবন্তী বড় ধরণের শ্বাস নিয়ে বলল-সে কি আর পাওয়া যাবে জনাব?
ফিক শ্রাবন্তীর দিকে ভাল করে তাকায়।চোখে মুখে এমন পরিবেশ পাওয়ার তীব্র আকুতি দেখা যাচ্ছে।শ্রাবন্তী বলতে থাকে-খুব ভোরে কখনও খালি পেয়ে শিশির ভেজা ঘাসে হেটেছেন?
-না।
-না,আপনি তো দেখি পৃথিবীর কোন চমৎকার কিছুর স্পর্শই পান নি।এসব সুন্দর দৃশ্য দেখেন নি বলেই এমন অজানা অনিশ্চত গন্তব্য যেতে পারছেন।
ফিকের পৃথিবীতে ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে।এত সব সুন্দর দৃশ্য ছেড়ে ভিনগ্রহে যাচ্ছে চিড়িয়াখানার পশু হওয়ার জন্য, কোন মানে হয়?আগে বুঝতে পারলে যেতই না।পৃথিবীর সব সুন্দর সুন্দর দৃশ্যগুলোর স্পর্শ নিত।তার বেশ খারাপ লাগে।।ফিক নিজের রুমের দিকে গেল।মন খারাপ হলে একা একা থাকা বাল্যবেলার অভ্যাস।শ্রাবন্তীর অনিকেতের কথা মনে পড়ছে।বিশেষ করে অনিকেতের একটা চিঠি।
প্রিয় শ্রাবন্তী,
আমার আজ কিছু করার নেই শ্রাবন্তী।তোমার কথা ভাবতে ভাবতে আমার সারাটাদিন কেমন চলে যায়,কিছুতেই বুঝতে পারি না।বিশ্বাস কর,তোমাকে না ভেবে একটু সময়ও আমার কাটে না।সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যা রাত্রি সবসময় মাথার ভিতর শুধু তুমি,তুমি আর তুমি।যেন পৃথিবীতে শুধু তুমিই আছ আর কিছু নেই।
ইতি
অনিকেত
-ফুল কিসের জন্য এনেছেন?
অনিকেত মুচকি হেসে বলে-পথ দিয়ে আসতে ছিলাম।এমন সুন্দর ফুল দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না।মনে হল,ফুলটা তোমার খুব পছন্দ হবে।
-একদম বাজে।কখনও আর আমার জন্য ফুল নিয়ে আসবেন না।ফুল আমার ভাল লাগে না।
-আচ্ছা এরপর আর আনব না।
-আপনি কী চান একটু দয়া করে বলবেন?
-আপাতত ফুলটা নাও।
-আচ্ছা নিলাম।আপনি চলে যান।
-কিছুক্ষণ থাকি।তোমার কাছাকাছি থাকতে আমার খুব ভাল লাগে।
-আমার একটা রিলেশন আছে,আপনি কেন বুঝতে চান না?
-সেতো আমি নিজেও বুঝতে পারি না।পৃথিবীতে এত মেয়ে আছে,তবু তোমাকে কেন যে এত ভাল লাগে বুঝতে পারি না।
-ভালবাসা একদিক থেকে হয় না।এছাড়া আমার আপনাকে পছন্দ না।
-এখন নয়,পরেতো পছন্দ হতেও পারে।
-না আপনাকে নিয়ে আর পারা যায় না।আমি ভাল থাকি ,এটাতো আপনি চান?
-তুমি ভাল থাক এটাই তো আমার সবসময়ের চিন্তা।
-তবে আমার পিছন ঘুর ঘুর করা বন্ধ করেন।তাহলে আমি খুব ভাল থাকব।
অনিকেত হেসে উঠে।এমন কথা শুনে কষ্ট পাওয়ার কথা,হেসে উঠল কেন,বুঝতে পারল না শ্রাবন্তী।
-হাসলেন যে?
-একটা কথা ভেবে?
-কি কথা?
-এখন তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ।একদিন হয়তো এমন সময় আসবে যেদিন আমাকে কাছে চাইবে,আমাকে দেখার জন্য ছটফট করবে,কিন্তু কিছুতেই আর আমাকে পাবে না।
শ্রাবন্তী বিরক্ত হয়ে বলে-আপনার মাথাটা বুজেছি পুরোপুরি গেছে।কথা বলাই বৃথা।
-মহামতি মহামতি
পেছনে তাকিয়ে দেখে হিপ।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে-বল।
-এখানে কি করছেন?
-এইতো বসে আছি।
-আমি আপনার পাশে বসতে পারি।
-বস।
হিপ শ্রাবন্তীর পাশে বসল।
-একটা ভাল খবর আছে।
-বলে ফেল।
-অনিকেত নামের ছেলেটার লেখক হিসেবে বেশ নাম ডাক হয়েছে।
শ্রাবন্তীর চোখ মুখ চকচক করে উঠল।খুব ভাল লাগছে।এত ভাল লাগছে কেন,বুঝতে পারল না।
-একটা বিয়েও করেছে।
শ্রাবন্তী চমকে উঠে বলল-কি?
-ছেলেটা কয়েকদিন হল বিয়ে করেছে।
ক্ষণিকেই শ্রাবন্তীর মনটা খারাপ হয়ে গেল।কান্না আসতে চাইল।যে ছেলেকে বারবার অবহেলা করেছে,তার বিয়ের কথা শুনে এমন লাগছে কেন?যেন কি এক অমূল্য সম্পদ তার ছিল,যেন আর নেই।বুকটা খুব শূন্য শূন্য লাগছে।
-একি আপনি কাঁদছেন?
-হু।
-কেন?
-সে তুমি বুঝতে পারবে না।এর নাম ভালবাসা।
-এটা আবার কি?
-এক ধরণের অনুভূতি।
-আমি কি আপনার হাতটা ধরতে পারি?
-আচ্ছা ধর।
হিপ শ্রাবন্তীর হাত ধরে।
-তোমার হাত ধরার ইচ্ছে হল কেন?
-দেখছি আমার ভিতর কোন অনুভূতি কাজ করে কিনা?
শ্রাবন্তী বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল- কি করে?
-কিছু মনে হচ্ছে না।
-সে জন্য তুমি যন্ত্র আর আমি মানুষ।
-অনুভূতি থাকলেই একজন মানুষ হয়ে যায়?
-হু।
-তাহলে আমরাও একদিন মানুষ হয়ে যাব।আমাদের ভিতর অনুভূতি দেয়া খুব একটা কষ্টের কাজ বলে মনে হয় না।
শ্রাবন্তী হেসে বলে-বেস্ট অব লাক।
মহামন্য টিক বেশ চিন্তায় আছেন।পাঁচ ছয়দিন হয়ে গেল,এখনো দূরত্ব সীমার মধ্যে স্পেস -১৪ যায়নি।এমন তো হওয়ার কথা না।এ সময়ে টিনডিমুটা গ্রহে থাকার কথা।ও গ্রহের প্রাণীর সাথেও যোগাযোগ হচ্ছে না।এমন সময় জীবাণুবিদ আফিয়া রুমে প্রবেশ করে।
-আমি কিছু বুঝতে পারছি না মহামান্য?
-কি?
-এসব কি ঘটছে?
-আবার কি কান্ড ঘটল?
-আমরা এখনো দূরত্ব সীমার মধ্যে আসতে পারি নি কেন?
-বুঝতে পারছি না।আরেকটা ব্যাপার তারাও আমাদের সাথে যোগাযোগ করছে না।তারা কি চাচ্ছে না,আমরা তাদের গ্রহে যায়?
আফিয়া কিছুটা ভেবে বলে-আমার তো অন্যরকম মনে হচ্ছে।
-কি রকম?
-আমরা সম্ভবত পৃথিবীর দিকে যাচ্ছে।
-মানে কি?
-আমাদের নভোযানের গতিপথ কেউ ঘুরিয়ে দিয়েছে।ঘুরিয়ে একেবারে অপোজিট করে দিয়েছে।
টিক উদ্বিগ্ন হয়ে বলে-এসব কি বলছ?
-কম্পাসের মুখ দেখে আসলাম।পৃথিবীর দিকে ঘুরানো।
-তাহলে তো উলটো দিকেই যাচ্ছে।
-রাডারটাও ডিএক্টিভেট করা।
-সেজন্যই তো ওদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে না।
-এসব উলটো পালটো হচ্ছে কেন?
-যদি অভয় দেন,তবে একটা কথা বলতে পারি।
-বল।
-এসব জনাব ফিকের কাজ বলে মনে হয়।
-কোন প্রমাণ আছে?
-এতে প্রমাণ দেখানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।এমনিতেই বুঝা যায়।উনার কথার ধরণ শুনলেই বুঝা যায়।
-হতে পারে।
-হতে পারে কি,অবশ্যই হবে।
এমন সময় ফিক প্রবেশ করে।দুইজনে একেবারে চুপসে গেল।
-আপনারা একেবারে চুপসে গেলেন যে?
টিক বলল-কিছু বলবে?
-আমি মিটিংয়ে বলেছিলাম,ভিনগ্রহের প্রাণিদের উদ্দেশ্য আছে।আমি সম্ভাব্য উদ্দেশ্য খুঁজে বের করেছি।
-বলে ফেল।
-প্রথমত ঐ গ্রহে গেলে আমরা কেউ ফিরে আসতে পারব না।তারা আমাদের সবাইকে চিড়িখানার ভিতর রেখে দিবে।এমনভাবে স্টক কালচার করে রাখবে যেন আমরা জীবন মৃতের মাঝামাঝি অবস্থায় কোটি কোটি বছর থাকি।আমাদের জিনোম গঠন বের করে অতি উন্নত জাতের মানুষ তৈরি করবে।এরপর আমাদের প্রিয় পৃথিবী আক্রমণ করে সকল মানুষ মেরে ফেলবে।শুধু থাকবে তাদের সৃষ্টি মানুষ।আমরা হারিয়ে যাব তাদের কাছ হতে।
টিক গলার স্বর কঠিন করে বলল-এসব তাহলে তোমার কাজ?
ফিক কিছু বুঝতে পারল না।বলল-কি?
আফিয়া কড়া দৃষ্টিতে ফিকের দিকে তাকাল।বলল-এমন ভাব ধরছেন যেন কিছু জানেন না?
-কথাটা কি একটু ভালভাবে বলতে পারেন মিস বিউটি?
-আমরা পৃথিবীর দিকে যাচ্ছি,আর রাডারটা ডিএক্টিভেট করা।
ফিক হেসে বলল-এটাতো খুব ভাল খবর।পৃথিবীটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।
-এ কাজটা কেন করলেন?
-যা হওয়ার তা ভালই হয়।তবে আমাকে দোষ দেওয়া অনর্থক।
-আপনে ছাড়া এ কাজ কে করতে পারে?
-তুমিও করতে পার।
মহামান্য টিক বিরক্ত হয়ে বলল-হিপ এটা পারবে না।কারণ ওকে এমন বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয় নি।শ্রাবন্তীও পারবে না।তাহলে আমরা তিনজনের কেউ একজন করেছি নিঃসন্দেহে।
ফিক মাথা নেড়ে বলল-খুব ভাল যুক্তি।তবে আমি কাজটি করিনি।
মহামান্য টিক আফিয়ার দিকে তাকায়।আফিয়া বলল-এমন কাজ করা আমার পক্ষে অসম্ভব।
-তোমাদের কথা শুনে মনে হয় আমিই কাজটি করেছি।দুইজনের কেউ যেহেতু কর নি।
ফিক মুচকি হেসে বলে-আমারও তাই মনে হয়।
টিক রেগে বললেন-কি আমি কাজটি করেছি?
-সচেতনে হয়তোবা করেননি,অচেতনে করেছন।
-দেখ,সবসময় ফাজলামি করবে না।কার পৃথিবীতে যাওয়ার এত গরজ,তা শুনেই তো বুঝা যায় কে কাজটা করেছে।
-আপনি যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন।
-তুমি কাজটা ঠিক কর নি।
-আমিতো বলেছি,কাজটা করি নি।
-যাই হোক,সব ঠিক করে দিচ্ছি।
কয়েকদিন পর।হিপ শ্রাবন্তীর সামনে বসে আছে।ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
-আমি যেন কেমন অনুভব করছি?
শ্রাবন্তী বিস্মিত হয়ে বলল-তোমার আবার অনুভূতি আছে।
-মহামতি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভাল লাগে।
-হঠাৎ করে কি মানুষ হয়ে উঠলে?
-এর নাম কি ভালবাসা মহামতি?
-তোমার আর কেমন কেমন লাগে?
-আপনার হাত ধরতে ইচ্ছে করে।মনে হয়,সবসময় তোমার পাশাপাশি থাকি।
-আর কি মনে হয়?
-আপনে শুনলে রেগে যেতে পারেন।
-কি এমন কথা যে রেগে যাব?
হিপ চুপ করে থাকে।
-কি চুপ করে আছ কেন?
-আপনাকে কিস করতে ইচ্ছে করে।
শ্রাবন্তী শুনে একেবারে হতবাক হয়ে গেল।এসব কি বলছে রবোটটা?
-হিপ তুমি যাও।আর কখনও আমার সামনে আসবে না।
হিপ বসেই থাকে।
-তোমাকে যেতে বলেছি।
-আমি একবার শুধু তোমাকে কিস করতে চাই।আমি নিজেকে সামলাতে পারছি না।
-তুমি যাবা?
হিপ চলে গেল।শ্রাবন্তীর মাথা ঘুরতে লাগল।এসব হচ্ছেটা কি?কয়েক ঘণ্টা পর।মিটিং বসেছে।
টিপ বলল-হিপ এসব কি সত্যি?
-কি?
-শ্রাবন্তীর সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করেছ?
-সত্যি।
-এমন আচরণ কেন করছ?
-জানি না।
ফিক বলল-তোমার রুমে হিউম্যান ব্রেইনের উপর একটা বই পেলাম।এই বইটা পড়ে তোমার ব্রেইনের অপারেশন করেছ।
-না,এমন করিনি।আমি কেন এমন আচরণ করছি,তার ব্যাখ্যা আমি নিজেও জানি না।
-মিথ্যা কথা বলবে না।
-আপনি খুব ভাল করে জেনে থাকবেন রোবটরা মিথ্যা কথা বলতে পারে না।
-তুমি বলেছ,মোহিত অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে। আর অনিকেত বিয়ে করেছে।শ্রাবন্তীর মন হতে এই দুইজনকে সরানোর সূক্ষ্ণ পরিকল্পনা।এরপরেও বিশ্বাস করতে হবে তুমি মিথ্যা বলতে পার না।
-সেন্ট্রাল এজেন্সির সাথে আমার যোগাযোগ আছে।পৃথিবীতে কি ঘটছে,সব আমার জানা।
টিক বিস্মিত হয়ে বলল-এই দূরত্বে তো যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হওয়ার কথা না।
-প্রথম থেকেই আছে।এটা একটা গোপন বিষয়।অন্যদের জানানো নিষেধ ছিল।
ফিক বলল-নভোযানকে উলটো দিকে চালানো,রাডার ডিএক্টিভেট করা,এসব তুমি কেন করেছিলে?
-আমি এসব করি নি।
-তুমি এটা করেছ,কারণ তুমি ভাল করেই জান,উপহার হিসেবে ভিনগ্রহের প্রাণীদের শ্রাবন্তীকে দেওয়া হবে।আর তুমিতো শ্রাবন্তীর মোহে পড়ে আছ।
হিপ চুপ করে আছে।
-কি কথা বলছ না কেন?
-আমার কিছু বলার নেই।
-তুমি যে মিথ্যা বলছ,তাতে কোন সন্দেহ নেই।তোমার গলার স্বর সত্য বললে একরকম হবে,মিথ্যা বললে হালকা চেঞ্জ হবে-এইরকমভাবেই তোমাকে তৈরি করা হয়েছে।এটা আমি ছাড়া এই নভোযানের আর কেউ জানে না।এমনকি তুমিও না।তুমি ব্রেইনের অপারেশন করে এমন করতে পার ভেবেই এই অপশনটা রাখা হয়েছিল।কি কথা বলছ না কেন?
হিপ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।টিপ বলল-তুমি আজ হতে ইনএক্টিভ হয়ে যাবে।এখন হতেই।
হিপ কথা বলতে যাবে,এমন সময় ডিএক্টিভেট করে দেওয়া হল।শ্রাবন্তী মুখটা কিছুটা বিবর্ণ করে বলল-সামনে আমাদের বিপদ।
মহামান্য টিক বলল-কিভাবে বুঝলে?
-আমার মনে হচ্ছে।
-মনে তো অনেক কিছুই হয়।
ফিক মৃদু কন্ঠে বলল-জানেন তো,ওর ইসপি ক্ষমতা আছে।
আফিয়া বিরক্ত হয়ে বলল-এসব এবনরম্যাল কথা বন্ধ করাই ভাল মনে করছি।
টিক বলল-আমরা কি মারা যাচ্ছি?
শ্রাবন্তী বলল-তেমন কিছু মনে হচ্ছে না।শুধু মনে হচ্ছে বিপদ আছে।
-মারা যখন যাচ্ছি না,তবে আমরা যাচ্ছি।
ফিক বলল-আমি শ্রাবন্তীকে ওদের হাতে তুলে দিতে রাজি নই।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তবে কি যেতে রাজি?
এই বলে ফিকের দিকে তাকায়।ফিক মাথা নাড়ে।শ্রাবন্তীও রাজি।
সপ্তাহখানেক পর।টিনডিমুটা গ্রহে কেবলমাত্র ল্যান্ড করেছে।নভোযান হতে নামার পর সবাই চেতন হারিয়ে গেল।
-শু,শু?
শ্রাবন্তী বুঝতে পারছে না সে জীবিত না মৃত।
-শু,শু?
-কে?
-আমি টিনডিমুটা গ্রহের অধিবাসী।আপনাকে এ গ্রহে আসার জন্য অভিনন্দন।
-আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?
-আপনার মাথা স্ক্যান করে সব তথ্য পেয়েছি।
-আমি জীবিত না মৃত?
-আপনার দেহ পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে।আমাদের পরিবেশে আপনাদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।আবাদত জীবন মৃতের মাঝামাঝি আছেন।
-আমরা কি মারা যাচ্ছি?
-আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।খুব শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবেন।আমরা কৃত্রিম দেহ লাগিয়ে দেব।
-আমাদের মূল দেহ থেকে কি মাথা একেবারে ভিন্ন হয়ে গেছে?
-একদম।আপনাদের মাথা এখন আমাদের ল্যাবে সংরক্ষিত আছে।
-আমরা কি আর আমাদের গ্রহে ফিরে যেতে পারব না?
-অবশ্যই যেতে পারবে।
-কবে?
-এইতো কয়েকদিনের মধ্যে।
-আমাকে তো আপনাদের গিফট হিসেবে দেওয়ার কথা ছিল।
-আপনি তো এখানে থাকতে রাজি নয়।আমরা কাউকে জোর করি না।আর আপনাদের সব ইনফেরমেশন আমাদের জানা হয়ে গেছে।শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে লাভ কি?
-আপনাদের নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা ছিল?আপনাদের খারাপ উদ্দেশ্যও আছে,এমন কথাও উঠেছিল নভোযানে।
-জানি।আপনারা কি কি ভেবেছেন,সব আমাদের জানা।আপনাদের এই বলে আশ্বস্ত করতে পারি যে অন্য গ্রহ আক্রমণ করা আমাদের নীতিবিরুদ্ধ।এটা আমরা কখনই করব না।
-ক্ষমা করবেন।
-না না কি বলছেন?এমন ভাবনা তো হতেই পারে।
কয়েকদিন পর।
-শু শু?
-এইতো আপনাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
-ধন্যবাদ।
-উপহার হিসেবে আমাদের সমস্ত জ্ঞান দিয়ে দিলাম।আর পৃথিবীতে যাওয়ার পর আপনারা একেবারে আগের মত ভাল মানুষ হয়ে যাবেন।আর মাঝখানের সময় স্বপ্ন দেখতে দেখতে যাবেন।বিদায়।আবার আসার আমন্ত্রণ রইল।
সাথে সাথেই শ্রাবন্তীর সামনে দুটি ছেলের ছবি ভেসে উঠে।দুইজনেই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে।তার খুব পরিচিত মুখ।তাদের নাম যেন কী,কিছুতেই মনে পরছে না।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top