Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

আমার দেখা পৃথিবী

: | : ২৭/০৬/২০১৩

॥২॥

একদিন আমার খালাত ভাই (ঘনিষ্ঠ বন্ধুও বটে) চেঙ্গিস আর আমি মহোছেন আউলিয়া জিয়ারতে যাচ্ছি। বয়সটা আমার আনুমানিক পনের কি বা ষোল। চেঙ্গিসের আরেকটু বেশি–আঠার-ঊনিশ। তবে তার জেনিউইন্‌‌ নাম চেঙ্গিস নয় ‘আইয়ুব খাঁন’। আমরা বন্ধুরা মিলে আমাদের দুষ্টবুদ্ধিতে তার নাম আবিষ্কার করি ‘চেঙ্গিস খাঁন’। কারণ তার হাঁটাচলাতে এমন এক ভঙ্গিমা ছিল যা সাধারণের পক্ষে সম্ভব কম। তার নিতম্বশ্রী উগান্ডার পাছাসুন্দরীকেও হার মানায়। তাই ‘চেগা’ থেকে ‘চেঙ্গিস’ উপাধিটা একেবারে ব্যঙ্গার্থে। আবার কেউ কেউ ঠাট্টার ছলে বিলাইমারা চেঙ্গিস খাঁনও বলত।

 

পতেঙ্গা আঠার নম্বার দিয়ে সাম্পানে করে কর্ণফুলী পার হচ্ছি। তখন কর্ণফুলীর উপর কোনো সেতু ছিল না। পারাপারের জন্যে বোট বা সাম্পানই একমাত্র খেয়া। যাত্রীবোঝার ভারে সাম্পানের কানায় কানায় পানি–মনে হচ্ছে এক্ষুনি তলিয়ে যাবে। ভয়ে চেঙ্গিস আর আমি মনে মনে আল্লানাম জপছি। অন্যরা যার যার মনিবকে কেমন স্মরণ করছে জানি না। আনন্দে দেখছি মাঝি গান গাচ্ছে, ‘অরে কর্ণফুলী রে সাক্ষী রাখিলাম তোরে…’ মাঝির গলায় যেন মধুর সুর। তখন অগায়কের গলায় কথা আর সুরের ভ্রান্তি যে থাকে আদৌ জানা ছিল না। যা শুনছি মনে মনে তাই মধুর বলে আখ্যায়িত করছি এবং ভাবছি, এ মাঝি যদি চর্চা করে তা হলে দুনিয়া-কাঁপানো গায়ক হতে পারে। আহা! অবহেলায় অযত্নে কত প্রতিভাবান পড়ে থাকে অনাদরে–কে তার খোঁজ করে। এক ভদ্রলোক সপরিবারে পার হচ্ছে, মাঝির গানে মুগ্ধ হয়ে নামার সময় দেখি বেশ বকশিস দিয়ে বলল, ভারী মিষ্টিগলা–চর্চা করলে দাম পাবে। এ দামের কথায় মাঝি কী বুঝল জানি না, মাথা নেড়ে মনে হয় বকশিসের খুশিমনে বারবার সালাম জানাচ্ছে। এ দামের কথার মাথামণ্ডু আমরাও কিচ্ছু বুঝি নি তবে।

 

রুস্তুমহাট দেখি ভারি সুন্দর জায়গা। জিয়ারতশেষে খুব ঘুরাঘুরি করলাম। আসলে জিয়ারতটা অলীক কথা, উদ্দেশ্য আমাদের ভ্রমণ এবং দর্শন। শুনা যায়, এ আউলিয়া পাথরে ভেসে কোথা হতে এসেছিল আজও তার তথ্য পাওয়া যায় নি। জেলেরা নাকি তাঁকে ধ্যানমগ্নাবস্থায় নদীতে পেয়েছিল ভাসমান। তারা তাঁকে কূলে তুলে নেয়। এবং তারাই ওখানে একটি শণের ছাউনি ঘর করে দেয়। তারপর তিনি ইন্তেকাল করলে কিছু মুসলিমের দ্বারায় তারাই তাঁকে এ কর্ণফুলীর তীরে সমাহিত করে। বহু বছরপর আবার ওদেরকে স্বপ্নে দেখানো হয় ওঁর কবর কর্ণফুলীতে বিলীন হতে চলেছে, তাঁকে যেন দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়। এত বছরপর ওঁকে অক্ষত অবস্থায় রুস্তমহাটে পুনরায় দাফন করা হয়। এবং সকলে অবাক হয় যে, এত বছর একটি দেহ সদ্য দাফনকৃত লাশের মতো তরতাজা কীভাবে রয়! সেই লম্বা বৃতান্ত–যোগীরা নাকি প্রতি বছর শণ দিয়ে ছাউনির দায়িত্বে এখনো আছে। আর এক-এক বেড় ছাউনির পর এক-একবার গোছল করতে হয় তাদের। এসব কথা এখনো মুখরিত আছে। মস্ত পাথরটা বর্তমানে মাজারে সংরক্ষিত আছে দেখা যায়।

চলবে…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top