জীবন চক্র (দ্বিতীয় পর্ব)
বর্ষায়
বর্ষার বর্ষণে গ্রামের রাস্তা ভিজে একাকার। ঘর থেকে বাইরে বেরুলে শুধু কাদা আর কাদা। পায়ে ঘা হয়েগেছে মমিন মিয়ার। ঘরে বসে থাকলে তার চলে না । তাই প্রতিদিন কাদামাটি মাড়িয়ে গঞ্জে যেতে হয় । আর যাওয়া আসা করতে করতে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে সাদা হয়ে কেমন বিশ্রী ঘা হয়ে গেছে। রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে বেশ চুলকায়। ইদানীং হাতের চামড়া গুলো কেমন খসখসে হয়ে গেছে। ছনের চাউনি দেয়া ঘরে মাঝে মাঝে বৃষ্টির পানি ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পড়ে। সারের কাগজ (পলিথিন) গুজে দিয়ে পানি পড়া বন্ধ করেন প্রায় প্রতিদিন।
মমিন মিয়ার ছেলের বউ সুমি কদম ফুল দারুণ ভালবাসে। বর্ষা এলে পুকুর পাড়ের কদম গাছে অজস্র ফুল ফোটে, কদমের সুভাস অন্যরকম এবং আকর্ষণীয়। ঘরে খাবার চাউল নেই , বউয়ের কদম ফুল প্রীতি দেখে শাশুড়ির মেজাজ চড়ে যায়। নতুন বউ বলে কিছু বলেননা। এদিকে নিজের মেয়েটা সারাদিন বউয়ের সাথে কি সব বকবক করে কথা বলে তিনি তা জানেন না। বিড়ির ঠোঙ্গা গুলো নিজে একাই বাধেন। দুজনে হাত লাগালে তো বেশ হয়। অভাবের সংসার তাই বিড়ি বাধার কাজ করেন মমিনের স্ত্রী । দিনে চার পাঁচ হাজার বিড়ি বেঁধে পনের বিশ টাকা আয় করেন। সেই বিড়ি নিয়ে প্রতিদিন গঞ্জের কারখানায় যেতে হয় মমিন মিয়াকে।
বড়ছেলে ঢাকায় থাকে , গার্মেন্টসে কাজ করে । যা বেতন পায় তাতে নাকি তার নিজের চলে না । মাঝে মাঝে কিছু টাকা দেয় তাতে কিইবা হয়। ছোট ছেলে আজিজ মানুষের বাড়িতে কামলা খাটে। বলতে গেলে তার রুজিতেই সংসার চলে। শান্ত ছেলে। কারো প্রতি কোন অভিযোগ নাই। বর্ষায় মাঠে কাজ কর্ম নাই , তাই পাশের গ্রামের নজু মুন্সির ছেলের সাথে নৌকা বায়। সকালে যায় রাতে ফিরে, কোন কোন দিন ফেরে না ।
ছেলেটার বিয়ে দিতে হবে । কিন্তু মমিন মিয়া ভয় পান। একেতো সংসারে অনেক লোক। কাজের লোক তো বলতে গেলে আজিজ । তাই অপেক্ষা করে সুদিনের । সেই সুদিন কবে আসবে তা তার জানা নাই ।
গঞ্জ থেকে ফেরার পথে বিলের মাঝে শাপলা ফুল দেখে এই বৃদ্ধ বয়সে মমিন মিয়া নেমে যান বিলে। লুঙ্গিটা কাছা মেরে বিচিত্র ভঙ্গিতে সাঁতার কেটে বিলের মাঝ থেকে অনেক গুলো শাপলা তুলে নেন। বাড়িতে এসে ছেলের বউ কে দেখেন কদম ফুল খোঁপায় জড়িয়ে বসে আছে ঘরের দাওয়ায়। তার হাতে শাপলা ফুল দিয়ে বলেন
নাও মা এগুলো এই বেলা রেধে ফেল।
জি বাবা বলে বউ শাপলা নিয়ে ঘরের ভেতর পা বাড়ায়।
শোন এখানে দুইটা রেখে যাও। আর একটু লবন দিয়ে যাও। কাঁচা শাপলা লবন দিয়ে খেতে বেশ লাগে। বউ খেয়েছ কখন।
হ্যাঁ বাবা খেয়েছি ছোট বেলায়।
http://cholontika.com/2013/06/29/ Edit View Post