Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “নরক”

: | : ০৭/০৭/২০১৩

পর্ব -৭

এই বর্ষা সেই বর্ষা নয়, আমার ক্ল্যাসমেইট রেহানার খালা’ত বোন বর্ষা। রেহানার সাথে কাছে এল। আমার কণ্ঠের প্রশংসা করে বলল এত সুন্দর করে আর কাউকে নাকি গাইতে শোনে নি কখনো। রবীন্দ্রনাথ শোনলে নাকি আমাকে পুরষ্কৃত করতেন।

মেয়েটির কথা শোনে মনে হল আমার মতন ভালো গায়ক পৃথিবীতে আর একটিও নেই। মেয়েটির মুখে এমন ভারী প্রশংসা শোনে সেদিন-ই গান গাওয়া ছেড়ে দিলাম। আর কখনো গাইনি, ভবিষ্যতেও গাইবো না।

গান ছেড়ে দিলাম ঠিক-ই, কিন্তু মেয়েটিকে এখনো পিছু ছাড়াতে পারছি না। রেহেনার সাথে মাঝে মধ্যেই আসত আমাদের কেন্টিনে। একেবারে গায়ে পড়েই আমার সাথে মিশতে চাইতো। প্রেম ভালোবাসার ভাব দেখায়। ল পড়ছে। দেখতে খুবই সুন্দরী। লম্বা, চিকন চাকন দেহের অধিকারী। চশমা পরে। আমার ধারনা ওর মতন সুন্দরী মেয়ে পৃথিবীতে আর একটিও নেই, থাকলেও আমার চোখে পড়ে নি। আর পড়বেই কীভাবে ? মেয়েদের সৌন্দর্য দেখার জন্য যে দৃষ্টিতে তাকাতে হয়, সেই দৃষ্টিতে কখনো কারো দিকে তাকাই নি যে। বলা চলে তাকানোর সময় পাই নি। আর সময় পেলেও প্রেম ভালোবাসার মোহ থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি সর্বদা। কারণ আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শোনে ডাক্তারী পড়া শেষ করার পরও সকল মেয়ের বাবাই আমাকে পাগল বলবে।

আর কোনো মেয়ের বাবাই তার মেয়ের হাত একজন পাগলের হাতে দিতে রাজি হবেন না। সে জন্যই এসবের দিকে মনযোগ দেই নি।

কিন্তু এই মেয়েকে কিছুতেই বুঝাতে পারছি না। সবকিছু শোনার পর এমন একটা ভাব দেখাল, যেন আমার সবি তার কাছে স্বর্গনীলা বলে মনে হচ্ছে।

শহরের নামকরা ব্যবসায়ীর একমাত্র কন্যা। বড়লোকদেরকে নিয়ে এই এক সমস্যা, তাদের চোখে যদি একবার কোনো কিছু ভালো লাগে তা নিয়েই নাচানাচি করবে।

গত এক বছর ধরে বর্ষাও আমাকে নিয়ে নাচানাচি করছে। আমাকে নিয়ে যাবে চটপটি খেতে, কাবাব খেতে, হালিম খেতে। আগে অবশ্য একদিন নিয়ে গিয়েছিল চাইনিজ খাওয়ানোর জন্যে। আমি যখন বললাম ডাল ভাত খেতে আমার পছন্দ, চাইনিজ নয়। তারপর থেকেই নাকি চাইনিজ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আমার সাথে ফুটপাতে দাড়িয়ে ফুসকা খায়।
আমাকে নিয়ে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াবে বলে ওদের জলপাই রঙের পাজারো গাড়ীটি নিয়ে এসেছিল একদিন। পাজারো গাড়ী যেহেতু বিলাসিতার অংশ, সেজন্য আমি গাড়ীতে উঠতে রাজি হলাম না। ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে, জৈষ্ঠের প্রচন্ড গরমের মধ্যে আমার সাথে রিকশা করে শহরময় ঘুরে বেড়াল।
সেদিন-ই বুঝে গেছি এই মেয়ের মাথায় গন্ডগোল আছে। জিজ্ঞাসও করেছিলাম একদিন। হাসতে হাসতে বলল, মাথায় গন্ডগোল না থাকলে ডাক্তারের পিছু নিয়েছি কেন ?
বুঝতে পারলাম কথায় যুক্তি নামের একটা প্যাঁচ আছে। আর প্যাঁচ থাকবেই না কেন ? পড়ছে যে উকালতি। উকিলরাই তো সকল প্যাঁচের মূল। প্যাঁচ লাগিয়ে কখনো নিরপরাধীকেও অপরাধী বানিয়ে ফেলছে। আবার কখনো অপরাধীকেও খালাস পায়িয়ে দিচ্ছে। তবে বর্ষা কোনো প্যাঁচ না মেরে মাঝে মাঝে সোজা সাফটা বলে, আমাকে বিয়ে করবে।
এই কথা শোনলেই আমি রীতিমত তব্দা লেগে যাই। অজুহাত দাড় করিয়ে বলি, আমাকে বিয়ে করলে গ্রামে গিয়ে থাকতে হবে।
ক্ষণকাল বিলম্ব না করে বলে, আমার সাথে নাকি কবরে থাকতেও আপত্তি নেই।
বর্ষাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে মাঝে মাঝে আমি নিজেই রোগি হয়ে যাই। যে স্বপ্ন ও দেখছে তা তো কখনই পূরণ হবার নয়। আর স্বপ্ন ভাঙ্গার আঘাত সইতে পারবে তো ? বর্ষাকে দেখলেই একটি কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়ে যায়।
ওহে বিহঙ্গম তুমি কিসের আশায়
বসিয়াছ উচ্চ ডালে সুন্দর বাসায়
নীল নভোমন্ডলে উড়িয়া উড়িয়া
কত সুখ পাও, আহা ঘুরিয়া ঘুরিয়া . .

 

এত তাড়াতাড়ি কীভাবে যে এতগুলো দিন কেটে গেল ঠিক বুঝতে পারছি না। গতকাল ফাইনালের শেষ দিন ছিল। বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়ার এক রকম ইতি হয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী আজ আমার বাড়ি চলে যাবার কথা, যেতামও তাই। গতকাল বর্ষা এসেছিল। রীতিমত কারফিউ জারি করে গেছে, ও না আসা পর্যন্ত হোষ্টেল থেকে বের হওয়া নিষেধ।
আজ আমাকে নিয়ে যাবে ওর বাবার কাছে। ওর বাবা মতিহার চৌধুরী নাকি আমাকে দেখতে চেয়েছেন। আমাকে দেখে পছন্দ হলেই নাকি বিয়ে। এই কথাটি শোনার পর থেকেই বর্ষার জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে, আমাকে নিয়ে বর্ষা যে স্বপ্ন দেখছে ওর বাবার সাথে দেখার হবার সঙ্গে সঙ্গে সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। কারো স্বপ্ন ভেঙ্গে যাক আমি তা চাই না। তাই রাতে শুয়ে শুয়ে ঠিক করেছিলাম ওকে না বলেই ভোরেই বাড়ি চলে যাব।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পর কেন যেন হঠাৎ মোড বদলে গেল। জানি না কেন বর্ষাকে না বলে যেতে ইচ্ছা করছে না। মেয়েটিকে ভালো না বাসলাম, কৃতজ্ঞতা বলে একটা কথা আছে। গত এক বছর ধরে মেয়েটি আমার সাথে প্রেম প্রেম ভাব দেখিয়েছে সেজন্য না হোক, বছর জুড়ে চটপটি খায়িয়েছে, হালিম খায়িয়েছে, মাঝে মাঝে বিরিয়ানি খায়িয়েছে, অন্তত এজন্য তো বলে যাওয়া উচিৎ, নইলে অনেক কষ্ট পাবে।
এতদিন মনে মনে আমাকে হয়ত পাগল ভেবেছে, এভাবে না বলে চলে গেলে ছোটলোক ভাবতে পারে। এত সহজে এমন ছোট মানের একটি অপবাদ মাথায় নিতে পারব না বলে বর্ষাকে না বলে বাড়ি যেতে পারছি না।  (এই উপন্যাসটি 2013 বই মেলায় প্রকাশিত)

(যা না বললেই নয়- এই উপন্যাসের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে 1971 থেকে 1993 পর্যন্ত)

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top