অগ্নিচক্ষু!
সুমন রিকশায় বসে আছে। সচরাচর সে রিকশায় ওঠে না। কাছাকাছি জায়গায় পায়ে হেঁটে যায়। আর দূরে কোথাও গেলে লোকাল বাস। তবে রুবা সাথে থাকলে হাঁটা যায় না। সে হাঁটতে পছন্দ করে না। সে পছন্দ করে রিকশা। রিকশাচালক কষ্ট করে রিকশা টানে। রিকশাওয়ালার রিকশা টানার কষ্ট প্রেমকে আনন্দদায়ক করে। কষ্টের বিনিময়ে আনন্দ।
তবে আজকে আনন্দ হচ্ছে না। দুজন যথাসম্ভব দু পাশে চেপে বসেছে। একজনের শরীরে যাতে আরেকজনের শরীর না লাগে। শরীরে শরীর লাগলে অন্যরকম অনুভূতি হবে। এই অনুভূতি রাগ কমিয়ে দেবে। এটা ঠিক হবে না। কেউই আগে থেকে রাগ কমানোর চেষ্টা করবে না।
তুমি আমায় ভালোবাসো না, এটা আগে বললেই পারতে।
-ভালোবাসি না কে বলল?
তাহলে আমার বাবার সাথে কথা বলতে তোমার সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা বুকে।
মানে?
-পুলিশ র্যাব ইত্যাদি দেখলে আমার বুকে ব্যাথা করে।
একটা বাজে কথা বলবা না। আমার বাবা ভালো মানুষ।
-তুমিই না সেদিন বললা… তোমার বাবা রিমান্ডে কার মাথা ফাটায়ে ফেলছে।
চোর ডাকাতদের মারবে না?
-আমিও চোর। ক্লাশ টেনে একবার বাবার পকেট থেকে ২০০০ টাকা চুরি করছিলাম। আমার বাবা আমারে মারে নাই।
ফালতু কথা রাখো তো!
-এটা মোটেও ফালতু না। পুলিশের কাছে সবাই আসামি। আর নিজের মেয়ের প্রেমিক হল দাগী আসামি। আসামি মানে সর্বনাশ। দাগী আসামি মানে সাড়ে সর্বনাশ।
এই রিকশা থামেন তো…
বলার সাথে সাথে রিকশা থেমে গেল। রিকশাওয়ালা বোধহয় কমান্ডের অপেক্ষা করছিল। কমান্ড পাওয়ার সাথে সাথে রিকশা বন্ধ। রুবা রিকশা থেকে নেমেই হাঁটা ধরল।
-কই যাও? আমার কাছে টাকা নাই। ভাড়া দেবো কেমনে?
রুবা কথা শুনে চুপচাপ আগের জায়গায় চলে আসে। ব্যাগে হাত ঢোকায়। টাকা খুঁজতে থাকে। পুরোটা সময় সে তীক্ষ্ণ চোখে সুমনের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ থেকে আগুনের হলকা বেরুচ্ছে। সুমন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। ওই চোখের আগুন দেখেই সুমন রুবার প্রেমে পরেছে। সেই প্রেম এখন আরও গাঢ় হচ্ছে। তবে চোখের আগুন তীব্র। এই আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়।
তবে সব প্রেমিক ই প্রেমিকার দৃষ্টির আগুনে পুড়ে ছাই হতে চায়। ছাই হওয়া আনন্দময়।