Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

পিঁপড়ে ও দাম্ভিক মাছি

: | : ০৮/০৭/২০১৩

কোন এক দুরন্ত বালক বাজার থেকে একটা রসগোল্লা কিনে খেতে খেতে বাড়ি ফিরছিল। তার হাত গলে এক ফোঁটা রস পড়ে গেল রাস্তার ধারে। সেই মিষ্টি রসের গন্ধে ছুটে এলো একটা ছোট্ট কালো পিঁপড়ে। সে মনের সুখে চেটে-চুটে খাচিছল রসটুকু। একটু খেতে না খেতেই ভনভন করে উড়ে এসে জুড়ে বসল একটা মাছি। পিঁপড়েটা খুব বিরক্ত হলো। বলা নেই কওয়া নেই বেয়াড়া মাছিটা রস খাওয়া শুরু করে দিল। এ কেমন আচরণ!
পিঁপড়ে বল্ল, ভাই মাছি, একি করছ তুমি! রসটুকু যে খেয়ে ফেলছ, আমাকে তো কিছুই বল্লে না। এটা কি ঠিক হচেছ তোমার? আমি না কত কষ্ট করে খুঁজে-টুজে বের করলাম এই রসফোটাটি।
মাছিটি তার অসংখ্য চোখ লাল করে তাচিছল্যভরে বল্ল, বারে! তোকে কিছু বলে খেতে হবে মানে? তুই কি আমাকে জঙ্গল থেকে খুঁজে বের করে পরে দাওয়াত করে এখানে নিয়ে এসেছিস নাকি যে তোর কাছে জিজ্ঞেস করে খেতে হবে? ভাগ এখান থেকে।
পিঁপড়ে বল্ল, অবাক কান্ড তো! এমন করে কথা বলছ কেন? সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে আমি এই রসটুকুর সন্ধান করলাম আর তুমি কিছু না বলে হাপুস-হুপুস খাওয়া শুরু করলে। সামান্যতম বিনয়-ভদ্রতা বলে কি কিছু নেই, নাকি? আবার বলছ ভাগ এখান থেকে। বলি, তুমি ভাগবা না আমি ভাগব? গায়ের জোর দেখাও বুঝি!
মাছি বল্ল, গায়ের জোর দেখাব না তো কী? যার যা আছে তাতো দেখাতেই হবে। তোর চেয়ে আমার শক্তি অনেক বেশি। গায়ের জোর কি তুই দেখাবি, না আমি দেখাবো রে দুর্বল সেন?
পিঁপড়ে বল্ল, দেখ শক্তির বড়াই দেখানোটা কিন্তু ঠিক না। শুধু শক্তি দিয়ে সব কিছু হয় না, বুঝেছ? চলো রসটুকু দু‘জনে মিলেমিশে খাই। তুমি অর্ধেক খাও আর আমি খাই অর্ধেক। এবার হলো?
মাছিটি বল্ল, না, মোটেও হলো না। অর্ধেক মানে? তোর কথায় যদি আমাকে তোর সমানই খেতে হয় তাহলে আমার শক্তি-সামর্থের আর মান-মর্যাদা থাকে কই? আমি তো আহাম্মক নই। জানিস না আমার যে শক্তি বেশি। তাই আমি খাব গায়ের জোরে আর তুই আমার কাছে চেয়ে-চিন্তে খাবি। দিলে খাবি আর না দিলে না খাবি, বুঝলি এবার? আমি পুরোটাই খাব। তোকে একটুও দেব না। তুই চোখ বড় করে আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকিস নাতো। আমার পেট খারাপ করবে-ভুরূ কুঁচকে বল্ল মাছিটি।
পিঁপড়ে কষ্ট গোপন করে বল্ল, আমি কি অন্যায় কথা বল্লাম যে আমার কথাটা তুমি মানতেই পারছ না? দু‘জনে ভাগাভাগি করে খেতে অসুবিধা কোথায়, বরং এতে স¤পর্ক ভালো হয়। রসটুকুর সন্ধান পেলাম আমি আর তুমি কিনা গায়ের জোরে খেয়ে ফেলবে, এ কেমন কথা? পিঁপড়ে রাগে শরীর ঝাকিয়ে বল্ল, আমি অর্ধেকটুকু খাব, এটা আমার অধিকার।
মাছিটি রাগে চোখ পাকিয়ে বল্ল, তুই তো ভারী ত্যান্দোড় রে। সামান্য পিঁপড়ে, তোর সাথে স¤পর্ক হলে আমার লাভ কী? লাভ তো পুরোটাই তোর। তোর আবার অধিকার কীশের? শক্তি যাদের অধিকার তাদের। গাও-গতর দেখে কথা বলতে পারিস না? বেশি প্যানপ্যান করবি তো পাখনা দিয়ে এমন ঝড় তুলব, যে ঝড়ের তান্ডবে তুলোর মত উড়ে যাবি।
পিঁপড়ে ভয় মিশ্রিত সাহস দেখিয়ে বল্ল, এত গায়ের জোর দেখিও না। গায়ের জোরে সব চলে না। দেও, আমাকে অর্ধেক দেও -বলেই পিঁপড়া রসে চুমুক দিল।
মাছিটি তেড়েমেড়ে এসে বল্ল, পিঁপড়ে রে পিঁপড়ে, তোর কপালে জানি কত খারাপি আছে আজ। এই রসে আরেকটা চুমুক দিবি তো তোর দফা রফা করে ছাড়ব বলে দিলাম।
পিঁপড়ে রাগে শরীর ঝাকিয়ে বল্ল, তাইলে আমি কি রস খাব না? অবশ্যই খাব, এটা আমার।
মাছিটা একটু এগিয়ে এসে পিঁপড়ের গালে একটা গাট্টা মেরে বল্ল, এটা তোমার, নাহ্? জানে বাঁচতে চাস তো সরে যা। নইলে এই আঁঠালো রসের মধ্যে এখন আস্ত পুঁতে ফেলব তোকে।
পিঁপড়ে মনের দুখে কেঁদে কেঁদে চলে গেল।
মাছিটি ঝামেলামুক্ত হয়ে গেল। পাখনা দিয়ে হাত, মুখ, চোখ, পা মুছে-টুছে খুশি মনে বেশ আয়েশ করে রসে চুমুক দিল। ওম্মা, একি! সেই কালো পিঁপড়েটি আবার ধেই ধেই করে এদিকে আসছে যে! তার পেছনে অসংখ্য পিঁপড়ের লম্বা বহর! রসের ফোঁটার চারপাশে ওরা দল বেধে এসে ঘুরতে লাগল। এই দেখে তো মাছিটি ভনভন আওয়াজ তুলে পেশি শক্তি দেখাতে লাগল। মাছিটি মল্লযোদ্ধার মত দাঁড়িয়ে চারদিকে সতর্ক চোখ ঘোরাতে লাগল।
পিঁপড়েটি মুখ বাড়িয়ে টিপ্পনি কেটে বল্ল, কী খবর মাছি ভাই। খাওয়া বন্ধ করে এমন করছ যে! যুদ্ধ-টুদ্ধ বাঁধাবে নাকি?
মাছিটি মুখ বাঁকিয়ে তাচিছল্য করে বল্ল, যুদ্ধ? ছে ছে ছে! তোদের সাথে যুদ্ধ করে আমার সম্মানটুকু খোয়াব? পিঁপড়ে মেরে হাত কালা! তোরা আমার তুলনায় কিছই না। আমার শক্ত পাখার বাড়ি আর ঝাপটানিতে না তোরা ছাইভষ্মের মত উড়ে দেশান্তরি হবি। এখানে চক্কর মেরে লাভ নেই, লাভের মধ্যে তোরা শক্ত মা‘র খাবি তারপর ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে ঘরে যাবি। সুতরাং ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যা। আমাকে শান্তিতে রসটুকু খেতে দে। এই বলে মাছিটি রসে সূড় ডুবিয়ে দিব্যি খাওয়া শুরু করে দিল। মাছির দুঃসাহস দেখে কালো পিঁপড়েটি দ্রুত এগিয়ে গিয়ে রসে চুমুক দিল। আর অমনি গোঁয়াড় মাছিটি পিঁপড়েটাকে ঠেঁসে ধরল রসের মধ্যে। ুদ্র পিঁপড়েটি মহা ফাঁপড়ে পড়ে গ্যাঁ গোঁ শুরু করে দিল। আর কোনো কথা নেই, ঐক্য, শৃঙ্খলা আর পরিশ্রমের ণিপুন কারিগর শতশত পিঁপড়ে চঞ্চল হয়ে চারদিক থেকে ঘিরে ফেল্ল মাছিটাকে। তারা চোখের পলকে চলবল করে মাছির হাতে পায়ে, বুকে-পিঠে, চোখে-মুখে চড়ে কুটুস-কাটুস-কুট-কুট-কুট্টুস করে বেদম কামড়াতে লাগল। শুরু হয়ে গেল পিঁপড়ে মাছির জদ্দ জিহাদ। মাছিটি প্রাণপণ চেষ্টা করছে পাখা ঝাপটিয়ে ছুটে পালাবার। কিন্তু পারছে না। পিঁপড়েগুলো তার সমস্ত শরীর কামড়ে আঁঠার মত লেগে আছে। অসংখ্য পিঁপড়ের আক্রমনে বেহুঁশ হয়ে গেল মাছিটি। মাছিটি দিশেহারা হয়ে ভো ভ্যা করে কি যেন বলতে চেয়েছিল; বলতে পারলো না। দেখতে দেখতে পিঁপড়েগুলো মাছিটিকে রসফোটায় চুবিয়ে দলা পাকিয়ে একদম মোয়া বানিয়ে ফেল্ল। আর যায় কই।
আপ্রাণ চেষ্টা করেও মাছিটি অসংখ্য পিঁপড়ের সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে নিজেকে রা করতে পারল না। ুদ্র ুদ্র পিঁপড়ের বৃহৎ শক্তির কাছে নির্মম পরাজয় হলো দাম্ভিক মাছিটির। পরে পিঁপড়েগুলো খুব মজা করে মাছিশুদ্ধ রসটুকু খেয়ে ফেল্ল। তারপর বীরদর্পে চলে গেল আপন ঠিকানায়।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top